কাশ্মীর: ভারতের আফগানিস্তান by মুনির আকরাম
আধুনিক
ভারতের ইতিহাস যখন লেখা হবে, তখন সম্ভবত এটা উল্লেখ থাকবে যে, হিন্দু
ভারতের আধিপত্যের উচ্চাকাঙ্ক্ষা কাশ্মীরে মারা পড়েছিল। আফগানিস্তানকে
যৌক্তিকভাবেই ‘সামাজ্যগুলোর কবরস্থান’ বলা হয়। ১৯ বছর পর যুক্তরাষ্ট্র এখনও
তাদের দীর্ঘতম যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে সেখানে।
অধিকৃত জম্মু ও কাশ্মীরে ভারত যুদ্ধ চালাচ্ছে ৭০ বছরেও বেশি সময় ধরে। সেখানে ভারতের সাত লাখের মতো দখলদার সেনা যুদ্ধ করছে। আফগানিস্তানে যে কোন সময় সোভিয়েত ইউনিয়ন বা পরে যুক্তরাষ্ট্র-ন্যাটোর নেতৃত্বাধীন সেনা সংখ্যার চেয়ে এটা সাত গুণ বেশি। কাশ্মীরের যুদ্ধ কেবল তখনই শেষ হবে যখন নয়াদিল্লী বুঝতে পারবে যে তারা কাশ্মীরী জনগণের মনোবলকে ভাঙতে পারবে না এবং নিজেদের তারা বিশাল ক্ষতি করছে।
ভবিষ্যৎটা এখন প্রায় দৃশ্যমান হয়ে গেছে।
প্রথমত, কাশ্মীরে ভারতের দখলদারিত্বের অবৈধতার বিষয়টি এখন ব্যাপকভাবে মানুষের জানা হয়ে গেছে।
সিকিউরিটি কাউন্সিল এবং জাতিসংঘ মহাসচিব আবারও কাশ্মীরে গণভোটের ব্যাপারে জাতিসংঘের প্রস্তাবের বিষয়টি জোর দিয়ে উল্লেখ করেছেন। ভারত এই প্রস্তাবকে লঙ্ঘন করছে।
দ্বিতীয়ত, বিবাদ মীমাংসার জন্য মোদি সরকার শান্তিপূর্ণ আলোচনা ও সমঝোতার সমস্ত দরজা বন্ধ করে দিয়েছে। তারা পাকিস্তানের সাথে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা এবং তৃতীয় পক্ষের মধ্যস্থতা – উভয়কেই প্রত্যাখ্যান করেছে। ৫ আগস্টের একতরফা পদক্ষেপের পর ভারত বলেছে যে, পাকিস্তানের সাথে আলোচনার কিছু নেই। শুধু ‘পাকিস্তান-অধিকৃত কাশ্মীরকে’ ভারতের কাছে ফিরিয়ে দেয়া নিয়ে আলোচনা হতে পারে।
এমনকি কাশ্মীরীদের সাথে আলোচনার ব্যাপারটিও চিন্তা করছে না ভারত সরকার। এখন এটা দিল্লীর অধীনে সরাসরি শাসিত হবে। ভারত পরিস্কারভাবে একটা সামরিক সমাধান বেছে নিয়েছে। কাশ্মীরী মুসলিমরা অস্তিত্বের হুমকিতে পড়ে গেছে। নিজের মাতৃভূমিকে হিন্দু ঔপনিবেশবাদীদের দ্বারা সংখ্যালঘুতে পরিণত হওয়াকে তারা সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে প্রতিহত করবে। তাদের মুক্তির সংগ্রামকে বেগবান করা ছাড়া আর কোন উপায় এখন বাকি নেই।
কাশ্মীরের জনসংখ্যার মানচিত্রকে বদলে দিতে বিজেপি যে ‘চূড়ান্ত সমাধান’ গ্রহণ করেছে, সেটা বাস্তবায়ন করতে গিয়ে মারাত্মক মানবাধিকার লঙ্ঘন করা হবে এবং মানবিক আইন ভঙ্গ করা হবে এবং যেটা অধিকৃত কাশ্মীরে গণহত্যার সূচনা করতে পারে।
তৃতীয়ত, ভারতের ঔদ্ধত্য ও শত্রুতা, তাদের হিন্দুত্ব জাতীয়তাবাদ এবং কাশ্মীরী জনগণের উপর চাপিয়ে দেয়া দৃশ্যমান নির্যাতনের কারণে পাকিস্তান তাদের ভীতিমূলক অবস্থান থেকে বেরিয়ে কাশ্মীরের মুক্তি আন্দোলনের প্রবল মিত্র হয়ে উঠেছে।
কাশ্মীর আবারও পাকিস্তানের প্রধান ইস্যু হয়ে উঠেছে। বিজেপির পদক্ষেপের কারণে ভারতের সাথে পাকিস্তানের স্বাভাবিক সম্পর্কের আশা আবারও ধূলিস্যাৎ হয়ে গেছে। একই সাথে আলোচনার মাধ্যমে কাশ্মীর সমস্যা সমাধানের আশাও শেষ হয়ে গেছে।
ইসলামাবাদের মধ্যে এই ধরনের একটা ধারণা ক্রমেই বাড়ছে যে, বিজেপির দমন নীতির কারণে কাশ্মীরের স্থানীয় জনগোষ্ঠির মধ্যে বড় ধরনের সহিংসতা উসকে দেবে যেটার মোকাবেলা করা হবে কঠিন। ভারত যদি হুমকি দেয় বা শক্তি প্রয়োগের চেষ্টা করে, পাকিস্তানের এ আত্মবিশ্বাস রয়েছে যে, তারা নয়াদিল্লীকে জবাব দিতে পারবে, কারণ তাদের কাছে পারমাণবিক প্রতিরোধ সক্ষমতা রয়েছে।
কাশ্মীরে ভারতের দীর্ঘ দখলদারিত্ব আফগানিস্তানের মতো একটা চোরাবালি পরিস্থিতি হতে চলেছে। এটা ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর নৈতিকতা নষ্ট করবে, তাদের নীতিকে বিভক্ত করবে এবং তাদের অর্থনীতিকে শুকিয়ে দেবে। অতীতের ঔপনিবেশিক শক্তিগুলোর মতো, ভারত শেষ পর্যন্ত জনসমর্থনপুষ্ট গেরিলাদের বিরুদ্ধে এই যুদ্ধ হারবে।
এখানে হয়তো আরও ১০ বা এমনকি ২০ বছরও লাগতে পারে। কিন্তু অটল হিন্দুকুশের মতো কাশ্মীরের বীর জনতা এক দিন হিন্দু ভারতের আধিপত্যবাদী স্বপ্নকে কবর দেবেই।
>>>লেখক জাতিসংঘে নিযুক্ত পাকিস্তানের সাবেক রাষ্ট্রদূত
অধিকৃত জম্মু ও কাশ্মীরে ভারত যুদ্ধ চালাচ্ছে ৭০ বছরেও বেশি সময় ধরে। সেখানে ভারতের সাত লাখের মতো দখলদার সেনা যুদ্ধ করছে। আফগানিস্তানে যে কোন সময় সোভিয়েত ইউনিয়ন বা পরে যুক্তরাষ্ট্র-ন্যাটোর নেতৃত্বাধীন সেনা সংখ্যার চেয়ে এটা সাত গুণ বেশি। কাশ্মীরের যুদ্ধ কেবল তখনই শেষ হবে যখন নয়াদিল্লী বুঝতে পারবে যে তারা কাশ্মীরী জনগণের মনোবলকে ভাঙতে পারবে না এবং নিজেদের তারা বিশাল ক্ষতি করছে।
ভবিষ্যৎটা এখন প্রায় দৃশ্যমান হয়ে গেছে।
প্রথমত, কাশ্মীরে ভারতের দখলদারিত্বের অবৈধতার বিষয়টি এখন ব্যাপকভাবে মানুষের জানা হয়ে গেছে।
সিকিউরিটি কাউন্সিল এবং জাতিসংঘ মহাসচিব আবারও কাশ্মীরে গণভোটের ব্যাপারে জাতিসংঘের প্রস্তাবের বিষয়টি জোর দিয়ে উল্লেখ করেছেন। ভারত এই প্রস্তাবকে লঙ্ঘন করছে।
দ্বিতীয়ত, বিবাদ মীমাংসার জন্য মোদি সরকার শান্তিপূর্ণ আলোচনা ও সমঝোতার সমস্ত দরজা বন্ধ করে দিয়েছে। তারা পাকিস্তানের সাথে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা এবং তৃতীয় পক্ষের মধ্যস্থতা – উভয়কেই প্রত্যাখ্যান করেছে। ৫ আগস্টের একতরফা পদক্ষেপের পর ভারত বলেছে যে, পাকিস্তানের সাথে আলোচনার কিছু নেই। শুধু ‘পাকিস্তান-অধিকৃত কাশ্মীরকে’ ভারতের কাছে ফিরিয়ে দেয়া নিয়ে আলোচনা হতে পারে।
এমনকি কাশ্মীরীদের সাথে আলোচনার ব্যাপারটিও চিন্তা করছে না ভারত সরকার। এখন এটা দিল্লীর অধীনে সরাসরি শাসিত হবে। ভারত পরিস্কারভাবে একটা সামরিক সমাধান বেছে নিয়েছে। কাশ্মীরী মুসলিমরা অস্তিত্বের হুমকিতে পড়ে গেছে। নিজের মাতৃভূমিকে হিন্দু ঔপনিবেশবাদীদের দ্বারা সংখ্যালঘুতে পরিণত হওয়াকে তারা সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে প্রতিহত করবে। তাদের মুক্তির সংগ্রামকে বেগবান করা ছাড়া আর কোন উপায় এখন বাকি নেই।
কাশ্মীরের জনসংখ্যার মানচিত্রকে বদলে দিতে বিজেপি যে ‘চূড়ান্ত সমাধান’ গ্রহণ করেছে, সেটা বাস্তবায়ন করতে গিয়ে মারাত্মক মানবাধিকার লঙ্ঘন করা হবে এবং মানবিক আইন ভঙ্গ করা হবে এবং যেটা অধিকৃত কাশ্মীরে গণহত্যার সূচনা করতে পারে।
তৃতীয়ত, ভারতের ঔদ্ধত্য ও শত্রুতা, তাদের হিন্দুত্ব জাতীয়তাবাদ এবং কাশ্মীরী জনগণের উপর চাপিয়ে দেয়া দৃশ্যমান নির্যাতনের কারণে পাকিস্তান তাদের ভীতিমূলক অবস্থান থেকে বেরিয়ে কাশ্মীরের মুক্তি আন্দোলনের প্রবল মিত্র হয়ে উঠেছে।
কাশ্মীর আবারও পাকিস্তানের প্রধান ইস্যু হয়ে উঠেছে। বিজেপির পদক্ষেপের কারণে ভারতের সাথে পাকিস্তানের স্বাভাবিক সম্পর্কের আশা আবারও ধূলিস্যাৎ হয়ে গেছে। একই সাথে আলোচনার মাধ্যমে কাশ্মীর সমস্যা সমাধানের আশাও শেষ হয়ে গেছে।
ইসলামাবাদের মধ্যে এই ধরনের একটা ধারণা ক্রমেই বাড়ছে যে, বিজেপির দমন নীতির কারণে কাশ্মীরের স্থানীয় জনগোষ্ঠির মধ্যে বড় ধরনের সহিংসতা উসকে দেবে যেটার মোকাবেলা করা হবে কঠিন। ভারত যদি হুমকি দেয় বা শক্তি প্রয়োগের চেষ্টা করে, পাকিস্তানের এ আত্মবিশ্বাস রয়েছে যে, তারা নয়াদিল্লীকে জবাব দিতে পারবে, কারণ তাদের কাছে পারমাণবিক প্রতিরোধ সক্ষমতা রয়েছে।
কাশ্মীরে ভারতের দীর্ঘ দখলদারিত্ব আফগানিস্তানের মতো একটা চোরাবালি পরিস্থিতি হতে চলেছে। এটা ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর নৈতিকতা নষ্ট করবে, তাদের নীতিকে বিভক্ত করবে এবং তাদের অর্থনীতিকে শুকিয়ে দেবে। অতীতের ঔপনিবেশিক শক্তিগুলোর মতো, ভারত শেষ পর্যন্ত জনসমর্থনপুষ্ট গেরিলাদের বিরুদ্ধে এই যুদ্ধ হারবে।
এখানে হয়তো আরও ১০ বা এমনকি ২০ বছরও লাগতে পারে। কিন্তু অটল হিন্দুকুশের মতো কাশ্মীরের বীর জনতা এক দিন হিন্দু ভারতের আধিপত্যবাদী স্বপ্নকে কবর দেবেই।
>>>লেখক জাতিসংঘে নিযুক্ত পাকিস্তানের সাবেক রাষ্ট্রদূত
No comments