মোদি ২.০ এবং ভারতের পশ্চাদমুখী রূপান্তর by হাসান আসলাম শাদ
পাকিস্তান যেখানে এখনও ধর্মীয় উগ্রবাদের প্রভাব কাটিয়ে ওঠার জন্য লড়ছে, সেখানে ভারত সেই একই পথে হাঁটতে শুরু করেছে।
উপমহাদেশে যে গতিতে সবকিছু উল্টা দিকে চলেছে, সেটা বিশ্বকে হতবাক করে দিয়েছে। ভারত বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্র হিসেবে বিশ্ব বিবেক হিসেবে নিজেদের ধারণা দেয়ার পর এবং চীনের উচ্চাকাঙ্ক্ষার বিরুদ্ধে এবং সমস্যাশঙ্কুল পাকিস্তানের বিপরীতে নিজেদের একটা শক্তি হিসেবে তুলে ধরার পর এটা শুরু করলো। তিন সপ্তাহের কম সময়ে, ভারত তার আগের ইমেজটা নষ্ট করে ফেলেছে। বিশ্ব এখন ভারতকে একটা সর্বগ্রাসী রাষ্ট্র হিসেবে দেখতে শুরু করেছে এবং একবিংশ শতকের অন্যতম বিপজ্জনক সন্ত্রাসের জন্মদাতা হিসেবে বিবেচনা করতে শুরু করেছে।
পাকিস্তান এখনও তাদের ক্ষত মেরামত করছে
এই কুখ্যাতিটা এক সময় পাকিস্তানের সাথে ছিল। বহু দশক ধরে ধর্মীয় চরমপন্থার আগুনে নিজেদের আঙ্গুল পুড়িয়েছে পাকিস্তান। ‘কৌশলগত গভীরতার’ একটা ধারণা তাদের নীতি নির্ধারকদের অন্ধ করে রেখেছিল যারা দেশকে একটা বিপজ্জনক ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিয়েছিল। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও রাষ্ট্র এক সাথে মিলে যাওয়ায়, পরিস্থিতি খারাপ থেকে খারাপতর হয়েছিল। পরিস্থিতি এতটা খারাপ পর্যায়ে চলে গিয়েছিল যেখানে দুর্বলতাগুলো উন্মুক্ত হয়ে পড়েছিল। ভারতকে তখন খুব বেশি কিছু করতে হয়নি। পাকিস্তানের নিজের কর্মকাণ্ডের কারণেই ভারতকে ভালো দেখাচ্ছিল সে সময়।
পাকিস্তানের যেভাবে জন্ম হয়েছিল এবং যেভাবে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতীয়রা কোরাস জারি রেখেছিল, সে সবের কারণেই এটা সম্ভব হয়েছিল। এখন পর্যন্ত পাকিস্তান তাদের ক্ষত কাটিয়ে উঠতে পারেনি।
অর্থনৈতিক ইস্যু, এফএটিএফ, ব্যাপক দুর্নীতি, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতের প্রচারণা, সবকিছু মিলিয়ে পাকিস্তানের দুর্ভোগ বেড়েছে। টিকে থাকার জন্য পাকিস্তানের একটা শিক্ষার দরকার ছিল। শিক্ষা পাওয়ার পর সূর্যের খুব কাছাকাছি চলে যাওয়ার পর পাকিস্তান সেখান থেকে ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নিতে পেরেছে।
সীমান্ত জুড়ে ধর্মীয় চরমপন্থার উত্থান হচ্ছে
এই পুরো সময়টাতে মূলত সকলের অগোচরে একটা উগ্রজাতীয়তাবাদী ধর্মীয় উন্মাদনা সীমান্তে মাথাচাড়া দিয়েছে। আরএসএস আর তাদের ক্যাডাররা – যারা এক সময় মূলধারার বাইরে ছিল – তারা এখন জাতীয় মধ্যমঞ্চে চলে এসেছে। ভারতের যে ধর্মীয়, জাতিগত এবং বর্ণগত সুক্ষ্ম বৈশিষ্ট্য রয়েছে যেটা ভারতের জটিল সামাজিক কাঠামোর অংশ, দেশের প্রতিষ্ঠাতা পিতারা সেখানে কখনও হাত দেননি। ভারতের বহুত্ববাদকে সংরক্ষণের জন্য তারা এটা করেছিলেন।
আরএসএস এবং বিজেপি এই বহুত্ববাদের প্রতিকৃতিকে একটু একটু করে ধ্বংস করে দিচ্ছে। বিশ্বের চোখের সামনেই অসামান্য গতিতে ভারতে এই ঘটনা ঘটছে।
ভারতের ধারণাটা কি ছিল, সেটা কি না জানার ভান করবো আমি? কিন্তু আরএসএস ও বিজেপি ভারতকে যেটা করতে চলেছে, দেশের প্রতিষ্ঠাতা পিতারা সেটা দুঃস্বপ্নেও ভাবেননি।
পাকিস্তান যে আগুনে নিজেদের আঙ্গুল পুড়িয়েছে, সেই একই আগুনে এখন ভারত হাত দিয়েছে। কাশ্মীরে ভারত কি কাজটাই না করলো। ভারতের অতীতের দিকে তাকান। বর্তমানে পাকিস্তানকে ইতিবাচক হওয়ার জন্য আলাদা কিছু করতে হচ্ছে না। ভারত নিজেই পাকিস্তানের জন্য সেই কাজটা করে দিচ্ছে। কত দ্রুত দুই দেশের ভূমিকা বদলে গেছে।
মোদির নির্লজ্জ ফ্যাসিবাদ
আরএসএসের কর্মকাণ্ডকে কেউ কেউ ‘সংখ্যাগরিষ্ঠের দস্যুতা’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। এটা অতি সাধারণীকরণ হয়ে গেছে। এই হলো সেই নির্লজ্জ ফ্যাসিবাদের চূড়ান্ত রূপ, বহু দশক ধরে যেটা লালন করে আসা হয়েছে। নরেন্দ্র মোদি এই ফ্যাসিবাদী ব্রিগেডের শীর্ষে বসে আছেন এবং আন্দোলনের চেহারা হিসেবে কাজ করছেন। এই ফ্যাসিবাদী কারখানাকে যারা চালাচ্ছেন, তাদের মধ্যে ধর্মীয় ব্যক্তি থেকে নিয়ে কর্পোরেট শক্তিগুলো রয়েছে যারা সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দুদেরকে হিন্দুত্ব মূলধারায় টানার জন্য কাল্পনিক গল্পগাঁথা তৈরি করে। বর্তমানের ভারত অতীতের পাকিস্তানকে ছাড়িয়ে গেছে।
জম্মু ও কাশ্মীরের মর্যাদা বাতিলের সিদ্ধান্তকে আরএসএসের প্রথম অর্জন হিসেবে দেখা হচ্ছে। তাদের আরও এ ধরনের ‘অর্জন’ সামনে অপেক্ষা করছে। আরএসএস সংখ্যালঘুদের ‘বিচ্ছিন্ন’ করে ফেলেছে এবং এই নতুন লেন্সের ভেতর দিয়েই এখন ভারতকে দেখা হচ্ছে। এর আগে এই ধরনের বিচ্ছিন্নতার অভিযোগ ছিল পাকিস্তানের বিরুদ্ধে। এখন, ভারত নিজেদের মুসলিম ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের বিচ্ছিন্ন করে ফেলছে। জুতার মাপ ঠিক রাখতে ভারত এখন নিজের পা কেটে ফেলছে।
ভারতের উদ্দেশ্য ও পদ্ধতি
হিন্দুরা ঐতিহাসিকভাবে সংখ্যালঘুদের হাতে কি ধরনের দুর্ভোগ নির্যাতনের স্বীকার হয়েছে, সে সব কথাবার্তায় ঘুরে ফিরে এসেছে আরএসএস আর বিজেপির কথাবার্তায়। সংখ্যালঘুদেরকে অপদস্থ করে, নিজেদের রীতিনীতি মানতে বাধ্য করে এবং এমনকি বিলুপ্ত করে দিয়ে তাদেরকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হবে। মোদি হলো সেই উদ্ধারকারী পৌরাণিক শাসক যিনি হিন্দুদের বিরুদ্ধে এইসব অন্যায়কে উল্টে দিবেন এবং হিন্দুদের অধিকারের জন্য লড়বেন। শক্তিই এখানে তাদের কাঙ্ক্ষিত অস্ত্র।
এই নতুন লড়াইয়ে সব কিছুকেই বৈধ মনে হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে লেখা বিষয়কে বাতিল করা এবং শেখা বিষয়গুলোকে ভুলে যাওয়া। ভারতের সংবিধান ও সামাজিক যে সব ধারণার উপর ভিত্তি করে ভারত প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, সেগুলোকে এখন আগের রাজনৈতিক পরিবারগুলোর ভুল হিসেবে বর্ণনা করা হচ্ছে। সমাজের রীতিনীতিই যেখানে বদলে দেয়া হচ্ছে এবং সংখ্যালঘুদেরকে যেখানে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হচ্ছে, সেখানে সংবিধান পরিবর্তন করাটা খুব একটা গুরুত্ব রাখে না।
ভারতের অবস্থান
ভারতের মূলধারায় যে সব প্রতিক্রিয়া পাওয়া যাচ্ছে, সেটা থেকেও বোঝা যাচ্ছে যে সবকিছু কোন দিকে চলেছে: হিন্দুদের ‘বলপূর্বক ধর্মান্তর’ এবং যেভাবে মুসলিমরা বহুগুণে বাড়ছে, তাতে আরএসএসের কর্মকাণ্ড তাদের হিসেবে বৈধ। একটা হিন্দু রাষ্ট্রের হিন্দু পরিচয় সংরক্ষণের চেষ্টার মধ্যে কোন সমস্যা নেই। এবং এই প্রতিক্রিয়ার তালিকা আরও দীর্ঘ।
আরএসএসের কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করা হলেই বলা হচ্ছে: যে সব হিন্দু পণ্ডিতদের কাশ্মীর থেকে জোর করে বের করে দেয়া হয়েছে, তাদের কি হবে? ঐতিহাসিকভাবে মুসলিমরা হিন্দুদের যে অধীনস্থ করে এসেছে, তার কি হবে? কাশ্মীরে পাকিস্তানের সন্ত্রাসবাদের কি হবে? অতীতের ভুল দিয়ে তাই বর্তমানের কর্মকাণ্ডকে হালাল করা হচ্ছে। এটা একটা নিঃশেষ প্রক্রিয়া।
একটা হিন্দু রাষ্ট্র সৃষ্টির প্রক্রিয়াটা এগিয়ে নেয়া হচ্ছে। ভারতের বহুত্ববাদীতার মধ্যে মন্দির আর রাষ্ট্রকে কখনও এক করে দেখা হয়নি। কিন্তু ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ভারত নিজেকে ধ্বংসের দিকে চলেছে, যেখানে মন্দিরকে ব্যবহার করে রাষ্ট্রকে বিভক্ত করা হবে। ভারতের এতে শঙ্কিত হওয়া উচিত। খুবই শঙ্কিত হওয়া উচিত।
লেখক ওমানের একটি শীর্ষ ল ফার্মের কর্পোরেট ও ইন্টারন্যাশনাল প্র্যাকটিস বিভাগের প্রধান। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড ল স্কুলের একজন গ্রাজুয়েট এবং আন্তর্জাতিক আইন বিষয়ে লেখাপড়া করেছেন।
উপমহাদেশে যে গতিতে সবকিছু উল্টা দিকে চলেছে, সেটা বিশ্বকে হতবাক করে দিয়েছে। ভারত বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্র হিসেবে বিশ্ব বিবেক হিসেবে নিজেদের ধারণা দেয়ার পর এবং চীনের উচ্চাকাঙ্ক্ষার বিরুদ্ধে এবং সমস্যাশঙ্কুল পাকিস্তানের বিপরীতে নিজেদের একটা শক্তি হিসেবে তুলে ধরার পর এটা শুরু করলো। তিন সপ্তাহের কম সময়ে, ভারত তার আগের ইমেজটা নষ্ট করে ফেলেছে। বিশ্ব এখন ভারতকে একটা সর্বগ্রাসী রাষ্ট্র হিসেবে দেখতে শুরু করেছে এবং একবিংশ শতকের অন্যতম বিপজ্জনক সন্ত্রাসের জন্মদাতা হিসেবে বিবেচনা করতে শুরু করেছে।
পাকিস্তান এখনও তাদের ক্ষত মেরামত করছে
এই কুখ্যাতিটা এক সময় পাকিস্তানের সাথে ছিল। বহু দশক ধরে ধর্মীয় চরমপন্থার আগুনে নিজেদের আঙ্গুল পুড়িয়েছে পাকিস্তান। ‘কৌশলগত গভীরতার’ একটা ধারণা তাদের নীতি নির্ধারকদের অন্ধ করে রেখেছিল যারা দেশকে একটা বিপজ্জনক ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিয়েছিল। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও রাষ্ট্র এক সাথে মিলে যাওয়ায়, পরিস্থিতি খারাপ থেকে খারাপতর হয়েছিল। পরিস্থিতি এতটা খারাপ পর্যায়ে চলে গিয়েছিল যেখানে দুর্বলতাগুলো উন্মুক্ত হয়ে পড়েছিল। ভারতকে তখন খুব বেশি কিছু করতে হয়নি। পাকিস্তানের নিজের কর্মকাণ্ডের কারণেই ভারতকে ভালো দেখাচ্ছিল সে সময়।
পাকিস্তানের যেভাবে জন্ম হয়েছিল এবং যেভাবে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতীয়রা কোরাস জারি রেখেছিল, সে সবের কারণেই এটা সম্ভব হয়েছিল। এখন পর্যন্ত পাকিস্তান তাদের ক্ষত কাটিয়ে উঠতে পারেনি।
অর্থনৈতিক ইস্যু, এফএটিএফ, ব্যাপক দুর্নীতি, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতের প্রচারণা, সবকিছু মিলিয়ে পাকিস্তানের দুর্ভোগ বেড়েছে। টিকে থাকার জন্য পাকিস্তানের একটা শিক্ষার দরকার ছিল। শিক্ষা পাওয়ার পর সূর্যের খুব কাছাকাছি চলে যাওয়ার পর পাকিস্তান সেখান থেকে ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নিতে পেরেছে।
সীমান্ত জুড়ে ধর্মীয় চরমপন্থার উত্থান হচ্ছে
এই পুরো সময়টাতে মূলত সকলের অগোচরে একটা উগ্রজাতীয়তাবাদী ধর্মীয় উন্মাদনা সীমান্তে মাথাচাড়া দিয়েছে। আরএসএস আর তাদের ক্যাডাররা – যারা এক সময় মূলধারার বাইরে ছিল – তারা এখন জাতীয় মধ্যমঞ্চে চলে এসেছে। ভারতের যে ধর্মীয়, জাতিগত এবং বর্ণগত সুক্ষ্ম বৈশিষ্ট্য রয়েছে যেটা ভারতের জটিল সামাজিক কাঠামোর অংশ, দেশের প্রতিষ্ঠাতা পিতারা সেখানে কখনও হাত দেননি। ভারতের বহুত্ববাদকে সংরক্ষণের জন্য তারা এটা করেছিলেন।
আরএসএস এবং বিজেপি এই বহুত্ববাদের প্রতিকৃতিকে একটু একটু করে ধ্বংস করে দিচ্ছে। বিশ্বের চোখের সামনেই অসামান্য গতিতে ভারতে এই ঘটনা ঘটছে।
ভারতের ধারণাটা কি ছিল, সেটা কি না জানার ভান করবো আমি? কিন্তু আরএসএস ও বিজেপি ভারতকে যেটা করতে চলেছে, দেশের প্রতিষ্ঠাতা পিতারা সেটা দুঃস্বপ্নেও ভাবেননি।
পাকিস্তান যে আগুনে নিজেদের আঙ্গুল পুড়িয়েছে, সেই একই আগুনে এখন ভারত হাত দিয়েছে। কাশ্মীরে ভারত কি কাজটাই না করলো। ভারতের অতীতের দিকে তাকান। বর্তমানে পাকিস্তানকে ইতিবাচক হওয়ার জন্য আলাদা কিছু করতে হচ্ছে না। ভারত নিজেই পাকিস্তানের জন্য সেই কাজটা করে দিচ্ছে। কত দ্রুত দুই দেশের ভূমিকা বদলে গেছে।
মোদির নির্লজ্জ ফ্যাসিবাদ
আরএসএসের কর্মকাণ্ডকে কেউ কেউ ‘সংখ্যাগরিষ্ঠের দস্যুতা’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। এটা অতি সাধারণীকরণ হয়ে গেছে। এই হলো সেই নির্লজ্জ ফ্যাসিবাদের চূড়ান্ত রূপ, বহু দশক ধরে যেটা লালন করে আসা হয়েছে। নরেন্দ্র মোদি এই ফ্যাসিবাদী ব্রিগেডের শীর্ষে বসে আছেন এবং আন্দোলনের চেহারা হিসেবে কাজ করছেন। এই ফ্যাসিবাদী কারখানাকে যারা চালাচ্ছেন, তাদের মধ্যে ধর্মীয় ব্যক্তি থেকে নিয়ে কর্পোরেট শক্তিগুলো রয়েছে যারা সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দুদেরকে হিন্দুত্ব মূলধারায় টানার জন্য কাল্পনিক গল্পগাঁথা তৈরি করে। বর্তমানের ভারত অতীতের পাকিস্তানকে ছাড়িয়ে গেছে।
জম্মু ও কাশ্মীরের মর্যাদা বাতিলের সিদ্ধান্তকে আরএসএসের প্রথম অর্জন হিসেবে দেখা হচ্ছে। তাদের আরও এ ধরনের ‘অর্জন’ সামনে অপেক্ষা করছে। আরএসএস সংখ্যালঘুদের ‘বিচ্ছিন্ন’ করে ফেলেছে এবং এই নতুন লেন্সের ভেতর দিয়েই এখন ভারতকে দেখা হচ্ছে। এর আগে এই ধরনের বিচ্ছিন্নতার অভিযোগ ছিল পাকিস্তানের বিরুদ্ধে। এখন, ভারত নিজেদের মুসলিম ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের বিচ্ছিন্ন করে ফেলছে। জুতার মাপ ঠিক রাখতে ভারত এখন নিজের পা কেটে ফেলছে।
ভারতের উদ্দেশ্য ও পদ্ধতি
হিন্দুরা ঐতিহাসিকভাবে সংখ্যালঘুদের হাতে কি ধরনের দুর্ভোগ নির্যাতনের স্বীকার হয়েছে, সে সব কথাবার্তায় ঘুরে ফিরে এসেছে আরএসএস আর বিজেপির কথাবার্তায়। সংখ্যালঘুদেরকে অপদস্থ করে, নিজেদের রীতিনীতি মানতে বাধ্য করে এবং এমনকি বিলুপ্ত করে দিয়ে তাদেরকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হবে। মোদি হলো সেই উদ্ধারকারী পৌরাণিক শাসক যিনি হিন্দুদের বিরুদ্ধে এইসব অন্যায়কে উল্টে দিবেন এবং হিন্দুদের অধিকারের জন্য লড়বেন। শক্তিই এখানে তাদের কাঙ্ক্ষিত অস্ত্র।
এই নতুন লড়াইয়ে সব কিছুকেই বৈধ মনে হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে লেখা বিষয়কে বাতিল করা এবং শেখা বিষয়গুলোকে ভুলে যাওয়া। ভারতের সংবিধান ও সামাজিক যে সব ধারণার উপর ভিত্তি করে ভারত প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, সেগুলোকে এখন আগের রাজনৈতিক পরিবারগুলোর ভুল হিসেবে বর্ণনা করা হচ্ছে। সমাজের রীতিনীতিই যেখানে বদলে দেয়া হচ্ছে এবং সংখ্যালঘুদেরকে যেখানে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হচ্ছে, সেখানে সংবিধান পরিবর্তন করাটা খুব একটা গুরুত্ব রাখে না।
ভারতের অবস্থান
ভারতের মূলধারায় যে সব প্রতিক্রিয়া পাওয়া যাচ্ছে, সেটা থেকেও বোঝা যাচ্ছে যে সবকিছু কোন দিকে চলেছে: হিন্দুদের ‘বলপূর্বক ধর্মান্তর’ এবং যেভাবে মুসলিমরা বহুগুণে বাড়ছে, তাতে আরএসএসের কর্মকাণ্ড তাদের হিসেবে বৈধ। একটা হিন্দু রাষ্ট্রের হিন্দু পরিচয় সংরক্ষণের চেষ্টার মধ্যে কোন সমস্যা নেই। এবং এই প্রতিক্রিয়ার তালিকা আরও দীর্ঘ।
আরএসএসের কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করা হলেই বলা হচ্ছে: যে সব হিন্দু পণ্ডিতদের কাশ্মীর থেকে জোর করে বের করে দেয়া হয়েছে, তাদের কি হবে? ঐতিহাসিকভাবে মুসলিমরা হিন্দুদের যে অধীনস্থ করে এসেছে, তার কি হবে? কাশ্মীরে পাকিস্তানের সন্ত্রাসবাদের কি হবে? অতীতের ভুল দিয়ে তাই বর্তমানের কর্মকাণ্ডকে হালাল করা হচ্ছে। এটা একটা নিঃশেষ প্রক্রিয়া।
একটা হিন্দু রাষ্ট্র সৃষ্টির প্রক্রিয়াটা এগিয়ে নেয়া হচ্ছে। ভারতের বহুত্ববাদীতার মধ্যে মন্দির আর রাষ্ট্রকে কখনও এক করে দেখা হয়নি। কিন্তু ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ভারত নিজেকে ধ্বংসের দিকে চলেছে, যেখানে মন্দিরকে ব্যবহার করে রাষ্ট্রকে বিভক্ত করা হবে। ভারতের এতে শঙ্কিত হওয়া উচিত। খুবই শঙ্কিত হওয়া উচিত।
লেখক ওমানের একটি শীর্ষ ল ফার্মের কর্পোরেট ও ইন্টারন্যাশনাল প্র্যাকটিস বিভাগের প্রধান। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড ল স্কুলের একজন গ্রাজুয়েট এবং আন্তর্জাতিক আইন বিষয়ে লেখাপড়া করেছেন।
No comments