‘মর্টার শেলে ভর্তি’ ইয়েমেন
যুদ্ধবিধ্বস্ত
ইয়েমেনের বাসিন্দা মোহাম্মদ আকবর ভেবেছিলেন, পবিত্র রমজান মাসের পুরোটা
সময়ে নিজের বাড়িতেই থাকবেন। তিন সন্তানের এই জনকের ভাগ্যে ভিন্ন কিছু
নির্ধারণ করা। দেশটিতে আজ সোমবার থেকে রমজান মাস শুরু হয়েছে। এবার রমজানে
স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে শরণার্থীশিবিরেই থাকতে হবে তাঁকে। যুদ্ধে গৃহহীন
আকবর এই প্রথম রোজ শুরু করতে যাচ্ছেন ঘরের বাইরে। পুরোনো সেই সুখের
দিনগুলোর কথা আজ খুব বেশি মনে পড়ছে তাঁর।
আকবরের মতো ইয়েমেনের আরও অনেক বাসিন্দাকে এবার রমজান কাটাতে হবে নিজ ঘরের বাইরে, শরণার্থীশিবিরে। পুরো ইয়েমেনই এখন যুদ্ধের সরঞ্জাম, গোলা-বারুদে ভর্তি। চারপাশে ধ্বংসস্তূপ আর ভুখা মানুষের হাহাকার।
বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে জানানো হয়, গত বছরের জুন মাসে আকবর ও তাঁর পরিবারকে আল-মুনথের গ্রাম থেকে পালিয়ে আসতে হয়েছে। লোহিত সাগরের শহর হোদেইদার কাছে হুতি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে সৌদি নেতৃত্বাধীন জোট-সমর্থিত ইয়েমেনের সরকার বাহিনী সাঁড়াশি অভিযান চালালে আকবরদের পালিয়ে আসা ছাড়া কোনো উপায় ছিল না। বন্দর শহর ও এর আশপাশের হাজার হাজার পরিবার পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়।
হোদেইদা থেকে দক্ষিণে প্রায় ১৩০ কিলোমিটার দূরত্বের সরকারনিয়ন্ত্রিত খোখা এলাকার শরণার্থীশিবিরে এএফপির সঙ্গে কথা হয় আকবরের। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি এএফপিকে বলেন, ‘এক বছর ধরে আমরা এখানে আছি। পুরো এক বছর, এখনো আমরা বাড়িছাড়া। এরপরও আমরা ধৈর্য ধরে আছি। বাকিটা আল্লাহর ইচ্ছা।’
হোদেইদায় অস্ত্রবিরতির বিষয়ে যুদ্ধে জড়িত পক্ষগুলো গত বছরের ডিসেম্বরে সুইডেনে সম্মত হলে লোকজনের মনে তা আশার সঞ্চার করেছিল। কিন্তু যুদ্ধ অব্যাহত থাকলে সে আশা দ্রুত ফিকে হতে থাকে। বন্দুকযুদ্ধে পড়ে যাওয়ার আশঙ্কায় বেশির ভাগ লোক বাড়ি ফিরতে ভয় পান। আকবরেরও কোনো উপায় নেই। নিজের বাড়ি ছেড়ে আসার সময় তিনি শুধু জামাকাপড় আনতে পেরেছিলেন। আর সঙ্গে ক্রাচ। কারণ, শারীরিক প্রতিবন্ধী আকবর ক্রাচ ছাড়া চলতে পারেন না। আকবরের স্ত্রী ও তিন সন্তান রয়েছে। তিন সন্তানই প্রতিবন্ধী। বালুর ওপর টাঙানো তাঁবুতে তাঁরা অনেক কষ্টে দিনাতিপাত করেন। এ অবস্থায় তীব্র তাপমাত্রায় ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত রোজা রাখাও সহজ নয়।
আকবর বলেন, ‘বাড়িতে পবিত্র রমজানের সময় সব ধরনের খাবার থাকত আমাদের, যেমন: স্যুপ, দই। কিন্তু এবার আমরা গৃহহীন। আমি প্রতিবন্ধী, আমার সন্তানেরা প্রতিবন্ধী। এ কারণে আমরা কোনো কাজ করতে পারি না।’
এরপরও মাসে খাবার সহায়তা পান বলে কৃতজ্ঞ আকবর। তিনি বলেন, বিশ্বের জন্য তাঁর একটি কথাই বলার আছে, ‘আমাদের দিকে তাকান। আমার এবং আমার পরিবারের দিকে তাকান।’
২০১৪ সাল থেকে সরকারি বাহিনীর সঙ্গে লড়াই করছে হুতি বিদ্রোহীরা। তবে পরের বছর থেকে যুদ্ধ ভয়াবহ আকার ধারণ করে যখন সৌদি জোট এতে হস্তক্ষেপ করে। ত্রাণদাতা সংস্থাগুলোর মতে, যুদ্ধে হাজার হাজার মানুষ মারা গেছে। ৩৩ লাখ মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েছে। দেশটির জনসংখ্যার দুই-তৃতীয়াংশ ২ কোটি ৪১ লাখ লোকের জরুরি ভিত্তিতে সহায়তা প্রয়োজন। ইয়েমেনের জনগণের জীবনযাত্রায় হোদেইদা বন্দর মূল ভূমিকা পালন করে। সেখানে গত বছরের ১৮ ডিসেম্বর থেকে যুদ্ধবিরতি চললেও থেমে থেমে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছেই। দুই পক্ষের বিরুদ্ধেই যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের অভিযোগ রয়েছে। এই সংঘাত পবিত্র রমজান মাসেও বন্ধ হওয়ার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।
সরকারি বাহিনীর একজন দাবি করেন, হুতি বিদ্রোহীরা হোদেইদা বন্দর ও বিমানবন্দরের নিচে অনেক টানেল খুঁড়েছে।
সেখানের হোদা ইব্রাহিম (৩৯) নামের একজনের প্রত্যাশা, পবিত্র রমজান মাসে অন্তত দুই পক্ষই যেন যুদ্ধবিরতি মেনে চলে। চার সন্তানের এই মা বলেন, ‘আমাদের এখন সব সময় গ্যাস ও জ্বালানির খোঁজে থাকতে হয়। এই মাসের আধ্যাত্মিকতার অভিজ্ঞতা লাভেরও সময় নেই আমাদের। এবারের রমজান মর্টার শেলে ভর্তি। আমাদের আশা, পরিস্থিতি এর চেয়ে বেশি খারাপ হবে না।’
যুদ্ধে অনেক মানুষ চাকরি হারিয়েছেন। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সানা থেকে সরকারের অস্থায়ী রাজধানী আদেনে স্থানান্তরিত হওয়ার পর ২০১৬ সালের আগস্ট থেকে বেশির ভাগ সরকারি কর্মচারী বেতন পাচ্ছেন না।
মুহাম্মদ হোসেন নামের একজন আক্ষেপ করে বলেন, ‘আগে যেভাবে রমজান পালন করতাম, এখন আর তা পারব না। আমাদের কেনাকাটার সামর্থ্যও নেই। আমরা অবরুদ্ধ। বেতনও নেই।’
সৌদি আরবের সঙ্গে জোটের আরেক সদস্য সংযুক্ত আরব আমিরাত গত মাসে, বিশেষ করে রমজান মাস উপলক্ষে ইয়েমেনকে ২০ কোটি মার্কিন ডলার সহায়তা দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের আন্তর্জাতিক সহায়তাবিষয়ক মন্ত্রী রিম আল-হাশিমি গত সপ্তাহে অভিযোগ করেন, সানাসহ বিদ্রোহী–নিয়ন্ত্রিত এলাকায় সাহায্য পৌঁছাতে বাধা দিচ্ছে হুতি বিদ্রোহীরা।
আকবরের মতো ইয়েমেনের আরও অনেক বাসিন্দাকে এবার রমজান কাটাতে হবে নিজ ঘরের বাইরে, শরণার্থীশিবিরে। পুরো ইয়েমেনই এখন যুদ্ধের সরঞ্জাম, গোলা-বারুদে ভর্তি। চারপাশে ধ্বংসস্তূপ আর ভুখা মানুষের হাহাকার।
বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে জানানো হয়, গত বছরের জুন মাসে আকবর ও তাঁর পরিবারকে আল-মুনথের গ্রাম থেকে পালিয়ে আসতে হয়েছে। লোহিত সাগরের শহর হোদেইদার কাছে হুতি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে সৌদি নেতৃত্বাধীন জোট-সমর্থিত ইয়েমেনের সরকার বাহিনী সাঁড়াশি অভিযান চালালে আকবরদের পালিয়ে আসা ছাড়া কোনো উপায় ছিল না। বন্দর শহর ও এর আশপাশের হাজার হাজার পরিবার পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়।
হোদেইদা থেকে দক্ষিণে প্রায় ১৩০ কিলোমিটার দূরত্বের সরকারনিয়ন্ত্রিত খোখা এলাকার শরণার্থীশিবিরে এএফপির সঙ্গে কথা হয় আকবরের। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি এএফপিকে বলেন, ‘এক বছর ধরে আমরা এখানে আছি। পুরো এক বছর, এখনো আমরা বাড়িছাড়া। এরপরও আমরা ধৈর্য ধরে আছি। বাকিটা আল্লাহর ইচ্ছা।’
হোদেইদায় অস্ত্রবিরতির বিষয়ে যুদ্ধে জড়িত পক্ষগুলো গত বছরের ডিসেম্বরে সুইডেনে সম্মত হলে লোকজনের মনে তা আশার সঞ্চার করেছিল। কিন্তু যুদ্ধ অব্যাহত থাকলে সে আশা দ্রুত ফিকে হতে থাকে। বন্দুকযুদ্ধে পড়ে যাওয়ার আশঙ্কায় বেশির ভাগ লোক বাড়ি ফিরতে ভয় পান। আকবরেরও কোনো উপায় নেই। নিজের বাড়ি ছেড়ে আসার সময় তিনি শুধু জামাকাপড় আনতে পেরেছিলেন। আর সঙ্গে ক্রাচ। কারণ, শারীরিক প্রতিবন্ধী আকবর ক্রাচ ছাড়া চলতে পারেন না। আকবরের স্ত্রী ও তিন সন্তান রয়েছে। তিন সন্তানই প্রতিবন্ধী। বালুর ওপর টাঙানো তাঁবুতে তাঁরা অনেক কষ্টে দিনাতিপাত করেন। এ অবস্থায় তীব্র তাপমাত্রায় ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত রোজা রাখাও সহজ নয়।
আকবর বলেন, ‘বাড়িতে পবিত্র রমজানের সময় সব ধরনের খাবার থাকত আমাদের, যেমন: স্যুপ, দই। কিন্তু এবার আমরা গৃহহীন। আমি প্রতিবন্ধী, আমার সন্তানেরা প্রতিবন্ধী। এ কারণে আমরা কোনো কাজ করতে পারি না।’
এরপরও মাসে খাবার সহায়তা পান বলে কৃতজ্ঞ আকবর। তিনি বলেন, বিশ্বের জন্য তাঁর একটি কথাই বলার আছে, ‘আমাদের দিকে তাকান। আমার এবং আমার পরিবারের দিকে তাকান।’
২০১৪ সাল থেকে সরকারি বাহিনীর সঙ্গে লড়াই করছে হুতি বিদ্রোহীরা। তবে পরের বছর থেকে যুদ্ধ ভয়াবহ আকার ধারণ করে যখন সৌদি জোট এতে হস্তক্ষেপ করে। ত্রাণদাতা সংস্থাগুলোর মতে, যুদ্ধে হাজার হাজার মানুষ মারা গেছে। ৩৩ লাখ মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েছে। দেশটির জনসংখ্যার দুই-তৃতীয়াংশ ২ কোটি ৪১ লাখ লোকের জরুরি ভিত্তিতে সহায়তা প্রয়োজন। ইয়েমেনের জনগণের জীবনযাত্রায় হোদেইদা বন্দর মূল ভূমিকা পালন করে। সেখানে গত বছরের ১৮ ডিসেম্বর থেকে যুদ্ধবিরতি চললেও থেমে থেমে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছেই। দুই পক্ষের বিরুদ্ধেই যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের অভিযোগ রয়েছে। এই সংঘাত পবিত্র রমজান মাসেও বন্ধ হওয়ার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।
সরকারি বাহিনীর একজন দাবি করেন, হুতি বিদ্রোহীরা হোদেইদা বন্দর ও বিমানবন্দরের নিচে অনেক টানেল খুঁড়েছে।
সেখানের হোদা ইব্রাহিম (৩৯) নামের একজনের প্রত্যাশা, পবিত্র রমজান মাসে অন্তত দুই পক্ষই যেন যুদ্ধবিরতি মেনে চলে। চার সন্তানের এই মা বলেন, ‘আমাদের এখন সব সময় গ্যাস ও জ্বালানির খোঁজে থাকতে হয়। এই মাসের আধ্যাত্মিকতার অভিজ্ঞতা লাভেরও সময় নেই আমাদের। এবারের রমজান মর্টার শেলে ভর্তি। আমাদের আশা, পরিস্থিতি এর চেয়ে বেশি খারাপ হবে না।’
যুদ্ধে অনেক মানুষ চাকরি হারিয়েছেন। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সানা থেকে সরকারের অস্থায়ী রাজধানী আদেনে স্থানান্তরিত হওয়ার পর ২০১৬ সালের আগস্ট থেকে বেশির ভাগ সরকারি কর্মচারী বেতন পাচ্ছেন না।
মুহাম্মদ হোসেন নামের একজন আক্ষেপ করে বলেন, ‘আগে যেভাবে রমজান পালন করতাম, এখন আর তা পারব না। আমাদের কেনাকাটার সামর্থ্যও নেই। আমরা অবরুদ্ধ। বেতনও নেই।’
সৌদি আরবের সঙ্গে জোটের আরেক সদস্য সংযুক্ত আরব আমিরাত গত মাসে, বিশেষ করে রমজান মাস উপলক্ষে ইয়েমেনকে ২০ কোটি মার্কিন ডলার সহায়তা দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের আন্তর্জাতিক সহায়তাবিষয়ক মন্ত্রী রিম আল-হাশিমি গত সপ্তাহে অভিযোগ করেন, সানাসহ বিদ্রোহী–নিয়ন্ত্রিত এলাকায় সাহায্য পৌঁছাতে বাধা দিচ্ছে হুতি বিদ্রোহীরা।
No comments