যেভাবে চলছে হাসপাতালে সমাজসেবা কার্যক্রম by পিয়াস সরকার
সরকারি
হাসপাতালে সমাজসেবা কার্যক্রমের সেবাও দালালদের কব্জায়। দুস্থ রোগীদের
জন্য এই সেবা পেতে টাকা গুনতে হয় রোগী ও তাদের স্বজনদের। ঘুষ না দিলে সেবা
মিলে না। ঘুষ দিলেই কেবল দ্রুত সেবা পাওয়ার নিশ্চয়তা দেয় দালালরা। না দিলে
ভোগান্তি।
৭ই জানুয়ারি সকাল ১০টায় ঢাকা মেডিকেল কলেজের সমাজসেবা কার্যালয়ের চিত্র। দরজার সামনে ৮ থেকে ১০ জনের লাইন। হাতে ডাক্তারের দেয়া আবেদনপত্র।
সুশৃঙ্খলভাবে দাঁড়িয়ে আছেন সকলে। সকলেই সেবাপ্রত্যাশী-দরিদ্র-অসহায় রোগীর স্বজন। গত রোববার ফিরোজ মিয়া ক্যানসারে আক্রান্ত ভগ্নিপতির জন্য করেছিলেন বেশ কয়েকটি ইনজেকশন প্রাপ্তির আবেদন। তিনি একদিন পর গতকাল সোমবারেই হাতে পেয়ে যান আবেদনে উল্লেখ Platinex, Trexonate, Cyclotox, Xorubin ইনজেকশন। এই ইনজেকশন চারটির বাজারমূল্য প্রায় ২ হাজার টাকা। ইনজেকশন প্রাপ্তির জন্য হতদরিদ্র পরিবারটিকে প্রথমে ডাক্তারের স্বাক্ষরিত আবেদনপত্র সমাজসেবা কার্যালয়ে জমা দিতে হয়। তারপর করতে হয় একটি ফরম পূরণ। এই ফরম পূরণ করার পর নিতে হয় ডিউটিরত ডাক্তার ও বিভাগীয় প্রধানের স্বাক্ষর।
আরেকজন ক্যানসারে আক্রান্ত রোগী মোসা. সুরতন। তার ছেলে গতকাল দুটি ইনজেকশন পান সমাজসেবা কার্যালয় থেকে। Erubin I Platinex| Erubin ইনজেকশনটির বাজারমূল্য ৩৭০০ টাকা। দুটি ইনজেকশনের বাজারমূল্য প্রায় ৪ হাজার টাকা। আরো একজন ক্যানসার আক্রান্ত রোগী আইয়ুব আলী ইনজেকশনের পাশাপাশি পেয়েছেন বেশকিছু ওষুধ। ক্যানসার আক্রান্ত রোগীদের সেবা নিতে প্রতি ২১ দিন পর পর আসতে হয় হাসপাতালে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে অস্ত্রোপচার হয়েছে সাবের আলীর। অস্ত্রোপচারের সময় পেয়েছেন ওষুধসহ বিভিন্ন সহযোগিতা। এবার প্রয়োজন বাড়ি ফেরা। বাড়ি ফেরার জন্য চাই গাড়ি ভাড়া। পরশুদিন দেন আবেদন। সেই আবদনে সাড়া দিয়ে গতকাল এম্বুলেন্সযোগে বাড়ি ফেরার ব্যবস্থাও করে দেয় সমাজসেবা হাসপাতাল অফিস। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজসেবা কার্যালয়ের পাশাপাশি রয়েছে দুটি বুথ। এসব বুথে রোগীদের বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দেয়া হয়। প্রতিটি বুথে রয়েছেন দুজন করে ব্যক্তি। তারা প্রত্যেকে প্রার্থীদের তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেন। এই মেডিকেলে কর্মরত সমাজসেবা কার্যালয়ের দায়িত্বরত অফিসার রুবিনা ইয়াসমিন। তিনি বলেন, আমরা এখানে সাধ্যমতো সকলের সেবা নিশ্চিত করার চেষ্টা করি। আমাদের নিজস্ব কোনো বাজেট নেই।
বিভিন্ন সংস্থা-ব্যক্তির অনুদান, যাকাত, ওষুধ কোম্পানির সহযোগিতায় আমরা দুস্থদের সেবা প্রদানের চেষ্টা করে থাকি। আনুমানিক কতজনকে সেবা দিতে সক্ষম আপনারা? এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, গত মাসে (ডিসেম্বরে) আমরা ২৫২ জনকে ওষুধসহ বিভিন্ন সেবা দিয়েছি। এ ছাড়াও রোগীসহ স্বজনদের তথ্য-উপাত্ত দিয়ে সহযোগিতা করেছি হাজারখানেক ব্যক্তিকে। এই সেবা সঠিক ব্যক্তি পাচ্ছেন কিনা এই প্রশ্নের জবাবে আরেকজন অফিসার কামরুন নাহার ফেরদৌসি বলেন, আমরা নিজে থেকে কোনো ব্যক্তিকে সহযোগিতা প্রদান করি না সাধারণত। দরিদ্র কে? তা ডাক্তার সব থেকে ভালো জানেন। আমরা ডাক্তারের স্বাক্ষরিত আবেদনপত্র প্রথমে গ্রহণ করি। এরপর আমাদের বিবেচনায় দেয়ার মতো মনে হলে একটি ফরম পূরণ করতে দেই। ফরমটি পূরণের পর কর্তব্যরত চিকিৎসক এবং বিভাগীয় প্রধান স্বাক্ষর করেন। এরপর আমরা সহযোগিতা প্রদানের ব্যবস্থা করি। তার সঙ্গে কথা বলার সময় ইনসেপ্টা গ্রুপের সৌজন্যে এক কার্টন ওষুধ আসে কার্যালয়ে।
কিন্তু মহৎ কাজেও রয়েছে দালালদের প্রচ্ছন্ন ছায়া। ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসকরা আবেদনপত্র লিখে স্বাক্ষর করার পর স্বজনদের বলে দেন এর প্রক্রিয়া। কিন্তু সাহায্য নিতে আসা অধিকাংশ ব্যক্তি নিরক্ষর ও নিম্নআয়ের মানুষ হওয়ার কারণে এই অফিসিয়াল কাজগুলো করতে ভীত হন। সমাজসেবা কার্যালয়ের আশেপাশে থাকে বেশ কয়েকজন দালাল। সাহায্যপ্রার্থীরা কার্যালয় কোথায় প্রশ্ন করলেই ধরে ফেলেন তাদের। মোজ্জামেল হোসেন নিচ তলায় কাগজ দেখিয়ে জানতে চেয়েছিলেন কার্যালয়টি কোথায়? এরপর দালাল রুবেল কাগজ হাতে নিয়ে নানা কথার মাধ্যমে ভীত করতে থাকেন। যেমন, আপনি গেলে ওষুধ দেবে না। দাঁড়ায় থাকতে হবে সারাদিন। আমার চেনা লোক আছে ৫০০ টাকা দিলে করে দেবে। এরপর ২০০ টাকায় সে দফায় রাজি হন কাজ করতে। এরপর লাইনে দাঁড়ায় সেই দালাল।
কক্ষে ঢুকার সময় নিয়ে যান মোজাম্মেলকে। দালাল পরিচয় দিলেন তার ভাই। এরপর কার্যালয়ে ফরম পূরণ করে দেয় সেই দালাল। এবার তাকেই পাঠান ডাক্তারের কাছে স্বাক্ষর নেয়ার জন্য। আর দালাল দাঁড়িয়ে থাকে সমাজসেবা কার্যালয়ের পাশেই। প্রায় ঘণ্টাখানেক পর ফিরে এলেন তিনি। সেখানে জমা দেন কাগজ। বলেন, কাল সকালে আসলে ওষুধ পেয়ে যাবেন। তার কাছ থেকে বাগিয়ে নেন ২০০ টাকা। হাসপাতালের দেয়ালের বিভিন্ন স্থানে লেখা দালাল ধরিয়ে দিন, তার নিচে দেয়া নম্বর। সেই নম্বরে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও ফোন ধরেন নি কেউ। দালালদের দৌরাত্ম্যের বিষয়ে সমাজসেবা কার্যালয়ের দায়িত্বরত অফিসার অলিভিয়া পারভীন কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকরণ ও অসহায় রোগীদের পাশে দাঁড়ানোর লক্ষ্যে ৯০টি সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে এই কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। এ ছাড়াও ৩৪২টি উপজেলায় এই কার্যক্রম চলছে। বিনামূল্যে ওষুধ, সহায়ক যন্ত্রপাতি, কৃত্রিম অঙ্গ, বিভিন্ন চিকিৎসা সামগ্রী প্রদান বা এর জন্য নগদ আর্থিক সহায়তা। নামপরিচয়বিহীন মৃত ব্যক্তির সৎকার করার ব্যবস্থাসহ ১৪টি সেবা প্রদান করে থাকেন তারা।
৭ই জানুয়ারি সকাল ১০টায় ঢাকা মেডিকেল কলেজের সমাজসেবা কার্যালয়ের চিত্র। দরজার সামনে ৮ থেকে ১০ জনের লাইন। হাতে ডাক্তারের দেয়া আবেদনপত্র।
সুশৃঙ্খলভাবে দাঁড়িয়ে আছেন সকলে। সকলেই সেবাপ্রত্যাশী-দরিদ্র-অসহায় রোগীর স্বজন। গত রোববার ফিরোজ মিয়া ক্যানসারে আক্রান্ত ভগ্নিপতির জন্য করেছিলেন বেশ কয়েকটি ইনজেকশন প্রাপ্তির আবেদন। তিনি একদিন পর গতকাল সোমবারেই হাতে পেয়ে যান আবেদনে উল্লেখ Platinex, Trexonate, Cyclotox, Xorubin ইনজেকশন। এই ইনজেকশন চারটির বাজারমূল্য প্রায় ২ হাজার টাকা। ইনজেকশন প্রাপ্তির জন্য হতদরিদ্র পরিবারটিকে প্রথমে ডাক্তারের স্বাক্ষরিত আবেদনপত্র সমাজসেবা কার্যালয়ে জমা দিতে হয়। তারপর করতে হয় একটি ফরম পূরণ। এই ফরম পূরণ করার পর নিতে হয় ডিউটিরত ডাক্তার ও বিভাগীয় প্রধানের স্বাক্ষর।
আরেকজন ক্যানসারে আক্রান্ত রোগী মোসা. সুরতন। তার ছেলে গতকাল দুটি ইনজেকশন পান সমাজসেবা কার্যালয় থেকে। Erubin I Platinex| Erubin ইনজেকশনটির বাজারমূল্য ৩৭০০ টাকা। দুটি ইনজেকশনের বাজারমূল্য প্রায় ৪ হাজার টাকা। আরো একজন ক্যানসার আক্রান্ত রোগী আইয়ুব আলী ইনজেকশনের পাশাপাশি পেয়েছেন বেশকিছু ওষুধ। ক্যানসার আক্রান্ত রোগীদের সেবা নিতে প্রতি ২১ দিন পর পর আসতে হয় হাসপাতালে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে অস্ত্রোপচার হয়েছে সাবের আলীর। অস্ত্রোপচারের সময় পেয়েছেন ওষুধসহ বিভিন্ন সহযোগিতা। এবার প্রয়োজন বাড়ি ফেরা। বাড়ি ফেরার জন্য চাই গাড়ি ভাড়া। পরশুদিন দেন আবেদন। সেই আবদনে সাড়া দিয়ে গতকাল এম্বুলেন্সযোগে বাড়ি ফেরার ব্যবস্থাও করে দেয় সমাজসেবা হাসপাতাল অফিস। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজসেবা কার্যালয়ের পাশাপাশি রয়েছে দুটি বুথ। এসব বুথে রোগীদের বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দেয়া হয়। প্রতিটি বুথে রয়েছেন দুজন করে ব্যক্তি। তারা প্রত্যেকে প্রার্থীদের তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেন। এই মেডিকেলে কর্মরত সমাজসেবা কার্যালয়ের দায়িত্বরত অফিসার রুবিনা ইয়াসমিন। তিনি বলেন, আমরা এখানে সাধ্যমতো সকলের সেবা নিশ্চিত করার চেষ্টা করি। আমাদের নিজস্ব কোনো বাজেট নেই।
বিভিন্ন সংস্থা-ব্যক্তির অনুদান, যাকাত, ওষুধ কোম্পানির সহযোগিতায় আমরা দুস্থদের সেবা প্রদানের চেষ্টা করে থাকি। আনুমানিক কতজনকে সেবা দিতে সক্ষম আপনারা? এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, গত মাসে (ডিসেম্বরে) আমরা ২৫২ জনকে ওষুধসহ বিভিন্ন সেবা দিয়েছি। এ ছাড়াও রোগীসহ স্বজনদের তথ্য-উপাত্ত দিয়ে সহযোগিতা করেছি হাজারখানেক ব্যক্তিকে। এই সেবা সঠিক ব্যক্তি পাচ্ছেন কিনা এই প্রশ্নের জবাবে আরেকজন অফিসার কামরুন নাহার ফেরদৌসি বলেন, আমরা নিজে থেকে কোনো ব্যক্তিকে সহযোগিতা প্রদান করি না সাধারণত। দরিদ্র কে? তা ডাক্তার সব থেকে ভালো জানেন। আমরা ডাক্তারের স্বাক্ষরিত আবেদনপত্র প্রথমে গ্রহণ করি। এরপর আমাদের বিবেচনায় দেয়ার মতো মনে হলে একটি ফরম পূরণ করতে দেই। ফরমটি পূরণের পর কর্তব্যরত চিকিৎসক এবং বিভাগীয় প্রধান স্বাক্ষর করেন। এরপর আমরা সহযোগিতা প্রদানের ব্যবস্থা করি। তার সঙ্গে কথা বলার সময় ইনসেপ্টা গ্রুপের সৌজন্যে এক কার্টন ওষুধ আসে কার্যালয়ে।
কিন্তু মহৎ কাজেও রয়েছে দালালদের প্রচ্ছন্ন ছায়া। ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসকরা আবেদনপত্র লিখে স্বাক্ষর করার পর স্বজনদের বলে দেন এর প্রক্রিয়া। কিন্তু সাহায্য নিতে আসা অধিকাংশ ব্যক্তি নিরক্ষর ও নিম্নআয়ের মানুষ হওয়ার কারণে এই অফিসিয়াল কাজগুলো করতে ভীত হন। সমাজসেবা কার্যালয়ের আশেপাশে থাকে বেশ কয়েকজন দালাল। সাহায্যপ্রার্থীরা কার্যালয় কোথায় প্রশ্ন করলেই ধরে ফেলেন তাদের। মোজ্জামেল হোসেন নিচ তলায় কাগজ দেখিয়ে জানতে চেয়েছিলেন কার্যালয়টি কোথায়? এরপর দালাল রুবেল কাগজ হাতে নিয়ে নানা কথার মাধ্যমে ভীত করতে থাকেন। যেমন, আপনি গেলে ওষুধ দেবে না। দাঁড়ায় থাকতে হবে সারাদিন। আমার চেনা লোক আছে ৫০০ টাকা দিলে করে দেবে। এরপর ২০০ টাকায় সে দফায় রাজি হন কাজ করতে। এরপর লাইনে দাঁড়ায় সেই দালাল।
কক্ষে ঢুকার সময় নিয়ে যান মোজাম্মেলকে। দালাল পরিচয় দিলেন তার ভাই। এরপর কার্যালয়ে ফরম পূরণ করে দেয় সেই দালাল। এবার তাকেই পাঠান ডাক্তারের কাছে স্বাক্ষর নেয়ার জন্য। আর দালাল দাঁড়িয়ে থাকে সমাজসেবা কার্যালয়ের পাশেই। প্রায় ঘণ্টাখানেক পর ফিরে এলেন তিনি। সেখানে জমা দেন কাগজ। বলেন, কাল সকালে আসলে ওষুধ পেয়ে যাবেন। তার কাছ থেকে বাগিয়ে নেন ২০০ টাকা। হাসপাতালের দেয়ালের বিভিন্ন স্থানে লেখা দালাল ধরিয়ে দিন, তার নিচে দেয়া নম্বর। সেই নম্বরে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও ফোন ধরেন নি কেউ। দালালদের দৌরাত্ম্যের বিষয়ে সমাজসেবা কার্যালয়ের দায়িত্বরত অফিসার অলিভিয়া পারভীন কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকরণ ও অসহায় রোগীদের পাশে দাঁড়ানোর লক্ষ্যে ৯০টি সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে এই কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। এ ছাড়াও ৩৪২টি উপজেলায় এই কার্যক্রম চলছে। বিনামূল্যে ওষুধ, সহায়ক যন্ত্রপাতি, কৃত্রিম অঙ্গ, বিভিন্ন চিকিৎসা সামগ্রী প্রদান বা এর জন্য নগদ আর্থিক সহায়তা। নামপরিচয়বিহীন মৃত ব্যক্তির সৎকার করার ব্যবস্থাসহ ১৪টি সেবা প্রদান করে থাকেন তারা।
No comments