বাংলাদেশের নির্বাচন এবং পশ্চিমা বিশ্ব by আরাফাতুল ইসলাম
গেল
৩০শে ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয় পেয়েছে
ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। টানা তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন শেখ
হাসিনা। নির্বাচনে মোট ৩০০টি আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোট ২৮৮
আসনে জয়ী হয়েছে। আর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) নেতৃত্বধীন জোট জয়ী
হয়েছে কেবল আট আসনে।
ভোটের দিন ঘটেছে প্রাণঘাতী সহিংসতার ঘটনা। ভোটে ব্যপক কারচুপি ও ভোটারদের ভয় দেখানোর উদাহরণের বরাত দিয়ে বিরোধী দলগুলো নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করেছে। কিন্তু ভোট জালিয়াতির ব্যাপক অভিযোগ ওঠা সত্ত্বেও, ভারত, চীন ও রাশিয়াসহ অনেক দেশই কোন বিলম্ব না করেই শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানায়।
পশ্চিমা দেশগুলোর ফাঁপা সমালোচনা?
পশ্চিমা দেশগুলো অবশ্য বাংলাদেশের নির্বাচনে সহিংসতা ও অন্যান্য নানাবিধ অনিয়মের সমালোচনা করেছে। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব সমালোচনার পর কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ দেখা যাবে না।
নির্বাচনের পরে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন (ইইউ) অনিয়মের অভিযোগগুলোর সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানিয়ে এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘নির্বাচনের দিন ব্যাপক সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। পুরো নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় সমতল মাঠ নিশ্চিতের ক্ষেত্রে অনেক প্রতিবন্ধকতা ছিল, যা নির্বাচনী প্রচারণা ও ভোটদানকে কলঙ্কিত করেছে।’ ইইউ এসব অনিয়মের যথাযথ তদন্তেরও আহ্বান জানিয়েছে।
বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ বিনিয়োগকারী দেশ যুক্তরাষ্ট্র ‘নির্বাচন পূর্ববর্তী হয়রানি, ভয়ভীতি প্রদর্শন ও সহিংসতা’ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। দেশটি বলেছে, এসব কারণে বিরোধীদলীয় প্রার্থী ও তাদের সমর্থকদের জন্য মুক্তভাবে সমাবেশ, বৈঠক ও প্রচারণা চালানো কঠিন হয়ে পড়ে।
কিন্তু পশ্চিমা দেশগুলোর এসব বিবৃতি বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন দল ও নির্বাচন কমিশনের ওপর দৃশ্যত তেমন কোন প্রভাব ফেলেনি। ভোট কারচুপির অভিযোগ নিয়ে তদন্ত করতে অনাগ্রহ দেখিয়েছে কমিশন। সংস্থাটি বলেছে, বিশ্বের কোন দেশ এই নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করেনি। উপরন্তু, নির্বাচনী ফলাফলের ভিত্তিতে ইতিমধ্যেই একটি নতুন সরকার গঠিত হয়ে গেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি বিজ্ঞানের ডিসটিংগুইশড অধ্যাপক আলি রিয়াজ বলেন, ‘পশ্চিমা দেশগুলোর এমন নীরব প্রতিক্রিয়া বিস্ময়কর। ‘গ্রহণযোগ্য নির্বাচন’ নিয়ে জোর আরোপের পর, এই দেশগুলো নির্বাচনের পর যেই প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে তা আমার কাছে কিছুটা হতবুদ্ধিকর মনে হয়েছে। তবে এখানে এটি উল্লেখ করা উচিৎ যে, ভারত, চীন ও রাশিয়ার মতো অভিনন্দনসূচক বার্তা পাঠানো থেকে বিরত থেকেছে এই দেশগুলো।’
গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার উর্ধ্বে স্থিতিশীলতা?
ওয়াশিংটন-ভিত্তিক উইড্রো উইলসন সেন্টার ফর স্কলারস-এর মাইকেল কুগেলম্যান মনে করেন, বাংলাদেশের প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনী ফলাফল নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নীরবতা বেশ লক্ষণীয়।
তিনি বলেন, ‘আন্তর্জাতিক মহলের বেশিরভাগই, বিশেষ করে পশ্চিমা দেশগুলো শেখ হাসিনাকে এমন একজন দায়িত্বশীল নেতা দেখেন। যিনি কিনা স্থিতিশীলতা আনতে তার যতটুকু করার করেছেন। তিনি দেশের অর্থনৈতিক উন্নতি অব্যাহত রেখেছেন। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছেন। রোহিঙ্গা শরণার্থীদেরকে স্বাগত জানিয়েছেন।’ কুগেলম্যান বলেন, এসব কারণে বিশ্বের বেশিরভাগ দেশ নির্বাচনের মতো একটি দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে মনোযোগ দেওয়ার প্রয়োজন বোধ করছে না।
লন্ডন স্কুল অফ ইকোনমিকস-এর সোশ্যাল পলিসি বিষয়ক অধ্যাপক ডেভিড লুইস একইরকম মনোভাব প্রকাশ করে বলেন, অনেক পশ্চিমা দেশ হাসিনাকে এমন নেতা হিসেবে দেখে যিনি কিনা ‘তুলনামূলক স্থিতিশীলতা’ দিতে পারছেন। নির্বাচনি ফলাফল নিয়ে প্রশ্ন তুললে অস্থিতিশীলতার ঝুঁকি তৈরি হবে বলে।
অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বনাম একদলীয় রাষ্ট্র
বাংলাদেশের বিতর্কিত নির্বাচনি ফলাফল নিয়ে পশ্চিমা দেশগুলোর অগ্রাহ্যতার আরেকটি কারণ হতে পারে দেশটির অর্থনৈতিক সম্ভাবনা। এই নির্বাচনের কারণে বাংলাদেশ একটি একদলীয় রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। দেশটির বিভিন্ন খাতে পশ্চিমা দেশগুলোর ব্যাপক বিনিয়োগ রয়েছে, বিশেষ করে জ্বালানি ও টেলিযোগাযোগ খাতে।
এছাড়াও ২০১৭ সালে মিয়ানমারে সামরিক বাহিনীর নির্যাতন থেকে পালিয়ে আসা প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছে বাংলাদেশ। পশ্চিমা শক্তিধর রাষ্ট্রগুলো রোহিঙ্গাদের প্রতি শেখ হাসিনার অনুকূল মনোভাবের প্রশংসা করেছে।
আলি রিয়াজ বলেন, ‘শেখ হাসিনা সরকার কেবল রোহিঙ্গাদের আশ্রয়ই দেয়নি। এ বিষয়ে এমন একটা মনোভাবও অনেকের রয়েছে যে, এই সরকার শরণার্থীরা যাতে মৌলবাদের প্রতি ঝুঁকে না যায়, তা-ও সামলিয়েছে।’
ইউরোপকে আরও করতে হবে
জার্মান পার্লামেন্টের পররাষ্ট্র বিষয়ক কমিশনের প্রধান ড. নরবার্ট রটগেন অবশ্য মনে করেন, ইউরোপীয় দেশগুলো বাংলাদেশের নির্বাচনে অনিয়ম নিয়ে পর্যাপ্ত আকারে উদ্বেগ দেখায়নি। তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি জার্মান সরকার ও বিরোধী দলসমূহ- উভয়ের এই বিষয়টি নিশ্চিত করা দরকার যে তাদের উদ্বেগের বিষয়টি ক্ষমতাসীন দল ও বাংলাদেশের মানুষ আমলে নিচ্ছে। গণতন্ত্রপন্থী হিসেবে, মানুষের ভোটদানের অধিকারের প্রতি সমর্থন দেখানো আমাদের করণীয়।’ তিনি আরও যোগ করেন, নির্বাচনী অনিয়মের অভিযোগের প্রতি ইউরোপের নীরবতা প্রমাণ করে যে, গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল হিসেবে এশিয়ার প্রতি পর্যাপ্ত মনোযোগ দিচ্ছে না ইউরোপ। তার মতে, এটি একটি গুরুতর কৌশলগত সীমাবদ্ধতা, যেটি ঠিক করা প্রয়োজন ইউরোপের। আর তা করতে হলে এই অঞ্চলে মানবাধিকার ও গণতন্ত্রের পক্ষে আরও সরব কণ্ঠে কথা বলতে হবে।
আলি রিয়াজের মতেও, ভোট জালিয়াতির ইস্যুতে অবস্থান নেওয়া পশ্চিমা দেশগুলোর কর্তব্য। এই জালিয়াতির কারণেই শাসক দল এমন জয় পেয়েছে।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের নাগরিকদের গণতান্ত্রিক আকাঙ্খা যেন পদদলিত না হয়, তা নিশ্চিত করা আন্তর্জাতিক মহলের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। তারা এটা ভুলে যেতে পারে না যে, সার্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণাপত্রে’র ২১ অনুচ্ছেদের চেতনা সমুন্নত রাখতে তারা দায়বদ্ধ।’
উল্লেখ্য, শেখ হাসিনার পিতা ছিলেন বাংলাদেশের জনক। বহুবছর ধরে তিনি বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করে আসছেন। কিন্তু গত বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে, দুর্নীতির মামলায় সাজা পেয়ে খালেদা জিয়া বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন।
(জার্মান সংবাদ মাধ্যম ডয়েচে ভেলেতে প্রকাশিত আরাফাতুল ইসলামের বিশ্লেষণী প্রতিবেদনের অনুবাদ।)
ভোটের দিন ঘটেছে প্রাণঘাতী সহিংসতার ঘটনা। ভোটে ব্যপক কারচুপি ও ভোটারদের ভয় দেখানোর উদাহরণের বরাত দিয়ে বিরোধী দলগুলো নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করেছে। কিন্তু ভোট জালিয়াতির ব্যাপক অভিযোগ ওঠা সত্ত্বেও, ভারত, চীন ও রাশিয়াসহ অনেক দেশই কোন বিলম্ব না করেই শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানায়।
পশ্চিমা দেশগুলোর ফাঁপা সমালোচনা?
পশ্চিমা দেশগুলো অবশ্য বাংলাদেশের নির্বাচনে সহিংসতা ও অন্যান্য নানাবিধ অনিয়মের সমালোচনা করেছে। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব সমালোচনার পর কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ দেখা যাবে না।
নির্বাচনের পরে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন (ইইউ) অনিয়মের অভিযোগগুলোর সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানিয়ে এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘নির্বাচনের দিন ব্যাপক সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। পুরো নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় সমতল মাঠ নিশ্চিতের ক্ষেত্রে অনেক প্রতিবন্ধকতা ছিল, যা নির্বাচনী প্রচারণা ও ভোটদানকে কলঙ্কিত করেছে।’ ইইউ এসব অনিয়মের যথাযথ তদন্তেরও আহ্বান জানিয়েছে।
বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ বিনিয়োগকারী দেশ যুক্তরাষ্ট্র ‘নির্বাচন পূর্ববর্তী হয়রানি, ভয়ভীতি প্রদর্শন ও সহিংসতা’ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। দেশটি বলেছে, এসব কারণে বিরোধীদলীয় প্রার্থী ও তাদের সমর্থকদের জন্য মুক্তভাবে সমাবেশ, বৈঠক ও প্রচারণা চালানো কঠিন হয়ে পড়ে।
কিন্তু পশ্চিমা দেশগুলোর এসব বিবৃতি বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন দল ও নির্বাচন কমিশনের ওপর দৃশ্যত তেমন কোন প্রভাব ফেলেনি। ভোট কারচুপির অভিযোগ নিয়ে তদন্ত করতে অনাগ্রহ দেখিয়েছে কমিশন। সংস্থাটি বলেছে, বিশ্বের কোন দেশ এই নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করেনি। উপরন্তু, নির্বাচনী ফলাফলের ভিত্তিতে ইতিমধ্যেই একটি নতুন সরকার গঠিত হয়ে গেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি বিজ্ঞানের ডিসটিংগুইশড অধ্যাপক আলি রিয়াজ বলেন, ‘পশ্চিমা দেশগুলোর এমন নীরব প্রতিক্রিয়া বিস্ময়কর। ‘গ্রহণযোগ্য নির্বাচন’ নিয়ে জোর আরোপের পর, এই দেশগুলো নির্বাচনের পর যেই প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে তা আমার কাছে কিছুটা হতবুদ্ধিকর মনে হয়েছে। তবে এখানে এটি উল্লেখ করা উচিৎ যে, ভারত, চীন ও রাশিয়ার মতো অভিনন্দনসূচক বার্তা পাঠানো থেকে বিরত থেকেছে এই দেশগুলো।’
গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার উর্ধ্বে স্থিতিশীলতা?
ওয়াশিংটন-ভিত্তিক উইড্রো উইলসন সেন্টার ফর স্কলারস-এর মাইকেল কুগেলম্যান মনে করেন, বাংলাদেশের প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনী ফলাফল নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নীরবতা বেশ লক্ষণীয়।
তিনি বলেন, ‘আন্তর্জাতিক মহলের বেশিরভাগই, বিশেষ করে পশ্চিমা দেশগুলো শেখ হাসিনাকে এমন একজন দায়িত্বশীল নেতা দেখেন। যিনি কিনা স্থিতিশীলতা আনতে তার যতটুকু করার করেছেন। তিনি দেশের অর্থনৈতিক উন্নতি অব্যাহত রেখেছেন। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছেন। রোহিঙ্গা শরণার্থীদেরকে স্বাগত জানিয়েছেন।’ কুগেলম্যান বলেন, এসব কারণে বিশ্বের বেশিরভাগ দেশ নির্বাচনের মতো একটি দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে মনোযোগ দেওয়ার প্রয়োজন বোধ করছে না।
লন্ডন স্কুল অফ ইকোনমিকস-এর সোশ্যাল পলিসি বিষয়ক অধ্যাপক ডেভিড লুইস একইরকম মনোভাব প্রকাশ করে বলেন, অনেক পশ্চিমা দেশ হাসিনাকে এমন নেতা হিসেবে দেখে যিনি কিনা ‘তুলনামূলক স্থিতিশীলতা’ দিতে পারছেন। নির্বাচনি ফলাফল নিয়ে প্রশ্ন তুললে অস্থিতিশীলতার ঝুঁকি তৈরি হবে বলে।
অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বনাম একদলীয় রাষ্ট্র
বাংলাদেশের বিতর্কিত নির্বাচনি ফলাফল নিয়ে পশ্চিমা দেশগুলোর অগ্রাহ্যতার আরেকটি কারণ হতে পারে দেশটির অর্থনৈতিক সম্ভাবনা। এই নির্বাচনের কারণে বাংলাদেশ একটি একদলীয় রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। দেশটির বিভিন্ন খাতে পশ্চিমা দেশগুলোর ব্যাপক বিনিয়োগ রয়েছে, বিশেষ করে জ্বালানি ও টেলিযোগাযোগ খাতে।
এছাড়াও ২০১৭ সালে মিয়ানমারে সামরিক বাহিনীর নির্যাতন থেকে পালিয়ে আসা প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছে বাংলাদেশ। পশ্চিমা শক্তিধর রাষ্ট্রগুলো রোহিঙ্গাদের প্রতি শেখ হাসিনার অনুকূল মনোভাবের প্রশংসা করেছে।
আলি রিয়াজ বলেন, ‘শেখ হাসিনা সরকার কেবল রোহিঙ্গাদের আশ্রয়ই দেয়নি। এ বিষয়ে এমন একটা মনোভাবও অনেকের রয়েছে যে, এই সরকার শরণার্থীরা যাতে মৌলবাদের প্রতি ঝুঁকে না যায়, তা-ও সামলিয়েছে।’
ইউরোপকে আরও করতে হবে
জার্মান পার্লামেন্টের পররাষ্ট্র বিষয়ক কমিশনের প্রধান ড. নরবার্ট রটগেন অবশ্য মনে করেন, ইউরোপীয় দেশগুলো বাংলাদেশের নির্বাচনে অনিয়ম নিয়ে পর্যাপ্ত আকারে উদ্বেগ দেখায়নি। তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি জার্মান সরকার ও বিরোধী দলসমূহ- উভয়ের এই বিষয়টি নিশ্চিত করা দরকার যে তাদের উদ্বেগের বিষয়টি ক্ষমতাসীন দল ও বাংলাদেশের মানুষ আমলে নিচ্ছে। গণতন্ত্রপন্থী হিসেবে, মানুষের ভোটদানের অধিকারের প্রতি সমর্থন দেখানো আমাদের করণীয়।’ তিনি আরও যোগ করেন, নির্বাচনী অনিয়মের অভিযোগের প্রতি ইউরোপের নীরবতা প্রমাণ করে যে, গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল হিসেবে এশিয়ার প্রতি পর্যাপ্ত মনোযোগ দিচ্ছে না ইউরোপ। তার মতে, এটি একটি গুরুতর কৌশলগত সীমাবদ্ধতা, যেটি ঠিক করা প্রয়োজন ইউরোপের। আর তা করতে হলে এই অঞ্চলে মানবাধিকার ও গণতন্ত্রের পক্ষে আরও সরব কণ্ঠে কথা বলতে হবে।
আলি রিয়াজের মতেও, ভোট জালিয়াতির ইস্যুতে অবস্থান নেওয়া পশ্চিমা দেশগুলোর কর্তব্য। এই জালিয়াতির কারণেই শাসক দল এমন জয় পেয়েছে।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের নাগরিকদের গণতান্ত্রিক আকাঙ্খা যেন পদদলিত না হয়, তা নিশ্চিত করা আন্তর্জাতিক মহলের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। তারা এটা ভুলে যেতে পারে না যে, সার্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণাপত্রে’র ২১ অনুচ্ছেদের চেতনা সমুন্নত রাখতে তারা দায়বদ্ধ।’
উল্লেখ্য, শেখ হাসিনার পিতা ছিলেন বাংলাদেশের জনক। বহুবছর ধরে তিনি বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করে আসছেন। কিন্তু গত বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে, দুর্নীতির মামলায় সাজা পেয়ে খালেদা জিয়া বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন।
(জার্মান সংবাদ মাধ্যম ডয়েচে ভেলেতে প্রকাশিত আরাফাতুল ইসলামের বিশ্লেষণী প্রতিবেদনের অনুবাদ।)
No comments