পা দিয়েই এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে অদম্য রুবেল
অদম্য
ইচ্ছা শক্তি নিয়ে সাটুরিয়ার রুবেল মিয়া পা দিয়ে লিখে এসএসসি পরীক্ষা
দিচ্ছে। শারীরিক প্রতিবন্ধকতা অদম্য রুবেলকে দমাতে পারেনি। লক্ষ্যপানে সে
এগিয়েই চলেছে। জন্মের পর থেকেই রুবেল মিয়ার দুই হাত নেই। নিজ থেকে বিদ্যালয়
গিয়ে পড়ালেখার আগ্রহ দেখে দরিদ্র ঘরের সন্তান রুবেল পড়ালেখা চালিয়ে
যাচ্ছে। মানিকগঞ্জ জেলার সাটুরিয়া উপজেলার তিল্লি ঘোষ পাড়ার হবি মিয়ার ছেলে
রুবেল মিয়া তিল্লি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে চলতি ২০১৮ সনের অনুষ্ঠিত এসএসসি
পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছে। সাটুরিয়া পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় এসএসসি পরীক্ষার
কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, রুবেল মিয়া তার দু পা দিয়ে নিজের খাতা ভাঁজ,
মার্জিন করে সুন্দর করে বাম পা দিয়ে লিখছে। রুবেল শুধু লেখাপড়া নয়, হাত
ছাড়াই নিজের প্রায় সব কাজ করতে পারে। পরীক্ষার পর তার ভাড়া বাড়িতে গিয়ে
দেখা যায়, নিজে নিজেই কল চাপিয়ে পানি উঠিয়ে গোসল করছে। তোয়ালে দিয়ে
গা-মোছাসহ জামা কাপর পরার কাজ একই করছে। পা দিয়ে ভাত খাচ্ছে। নিজের
আসবাবপত্র, বই খাতা নিজেই গোছাতেই তার স্বাচ্ছন্দ্য। রুবেলের মা সখিনা বেগম
জানান, তার ৩ সন্তানের মধ্যে রুবেল ২য়। বড় মেয়ে বিয়ে দিয়েছেন। রুবেল জন্ম
থেকেই দুই হাত নেই। বড় হওয়ার পর ও একাই স্কুলে যেত। পড়াশোনা করাচ্ছি অনেক
কষ্ট করে। নিজে অন্যের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করে ও বাবা রিক্সা ভ্যান চালিয়ে যা
আয় হয় তাই দিয়েই লেখা পড়া করাচ্ছি। তিল্লি উচ্চ বিদ্যালয়ে এ বিদ্যালয়ের
প্রধান শিক্ষক আবুল হাসান ভুইয়া জানান, ভ্যানচালক হবি মিয়া ও সখিনা বেগমের
ঘরে ২০০২ সালে জন্ম নেয় রুবেল। রুবেল বড় হবার পর তিল্লি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে
ভর্তি হয়, সে সময় থেকেই তার দু পা দিয়ে তার শিক্ষা জীবন শুরু হয়। পরে
তিল্লি প্রাথমিক পরীক্ষায় পিএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে জিপিএ ৪.৩৩ পেয়ে
উত্তীর্ণ হয়ে আমার বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে ২০১৫ সালের জেএসসি পরীক্ষায় অংশ
নিয়ে জিপিএ ২.৯০ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়। ২০১৮ সালে রুবেল এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে।
যার রোল হচ্ছে ৩৪৩০৯৬, রেজি নং : ১৫১০৫০২৭৬৪। এ ব্যাপারে রুবেলের বাবা হবি
মিয়া জানান, আমি পেশায় একজন রিক্সাচালক, দুই মেয়ে এক পুত্র সন্তান রুবেলকে
নিয়ে আমার সংসার।
আমার এক মেয়ে বিয়ে দিয়েছি, মেঝ ছেলে সুমন ও আরেক মেয়ে
প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ালেখা করছে। রুবেল তার ইচ্ছা শক্তি নিয়ে পা দিয়ে লিখে
এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে। ঠিকমত বই কিনে দিতে পারিনি অভাবের সংসার থাকায়।
রুবেল প্রচন্ড ইচ্ছাশক্তি দিয়ে আজ এ পর্যন্ত পৌছেতে পেরেছে। এর আগে জেএসসি
পরীক্ষার সময় ওকে নিয়ে পত্র-পত্রিকায় লেখা লেখি হলে অনেকেই সাহায্য করছে।
তবে এখন ওর ভবিষ্যত নিয়ে চিন্তায় আছি। এসএসসি পাস করার পর ক্যামনে পড়ামু। এ
ব্যাপারে রুবেল বলে, আমার হাত নেই সেটা মনেই করি না। আমি নিজেকে
প্রতিবন্ধী মনে করি না, মানুষ মনে করি। আমার বন্ধু ও শিক্ষকরা সব সময় আমাকে
উৎসাহ জুগিয়েছে। বিশেষ করে মানিকগঞ্জের তৎকালীন জেলা প্রশাসক রাশেদা
ফেরদৌস মহোদয় আমার বাড়িতে গিয়ে আমাকে উৎসাহ জুগিয়েছেন। আমি পড়াশুনা শেষ করে
মানুষের মানুষ ও সরকারি চাকরি করে দেশ ও মা- বাবার সেবা করতে চাই। এ
ব্যাপারে রুবেলের এসএসসি পরীক্ষার কেন্দ্র সচিব ও সাটুরিয়া পাইল উচ্চ
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. জসিম উদ্দিন জানান, রুবেল মিয়ার পা দিয়ে
পরীক্ষা দিচ্ছে সেটা দেখে আমি বিস্মিত। প্রচণ্ড মনোবল থাকলে হাজারও বাধার
পরও সফল হওয়া সম্ভব। রুবেল খুব শান্ত সবার সাথে বসে সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে
পরীক্ষা দিচ্ছে। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মহিউদ্দিন জানান,
রুবেল শারিরীক প্রতিবন্ধী হয়েও সে অন্যসব পরীক্ষার্থীদের সাথে
স্বাভাবিকভাবে পরীক্ষা দিচ্ছে । প্রতিবন্দিদের জন্য অতিরিক্ত ২০ মিনিট
বরাদ্দও সে পাচ্ছে। সাটুরিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাহিদ ফারাজানা
সিদ্দিকী জানান, রুবেল পা দিয়ে লেখাপড়া করছেন এমন সংবাদ দেখে এর আগে ওই
সময়ের জেলা প্রশাসক রাশেদা ফেরদৌস নিজে ওর বাড়িতে গিয়ে অর্থ প্রদান করেন।
অপ্রতিরোধ্য রুবেলকে নিয়মিত প্রতিবন্ধী ভাতা দেয়া হচ্ছে এবং তাকে উচ্চ
শিক্ষা গ্রহণে সকল সুযোগ সুবিধা দেবার আশ্বাস দিলেন প্রশাসনের এই
কর্মকর্তা।
No comments