একঘরে কাতার
উপসাগরীয়
অঞ্চলে গত জুন মাসে হঠাৎ করেই সংকট দেখা দেয়। সন্ত্রাসে মদদ দেওয়ার
অভিযোগে সৌদি আরবসহ প্রতিবেশী কয়েকটি দেশ তেল ও গ্যাসসমৃদ্ধ কাতারের সঙ্গে
সম্পর্ক ছিন্ন করে বসে। এই সংকট কাটাতে ১৩টি শর্ত দেয় অবরোধকারী দেশগুলো।
কিন্তু কাতার সরকারের এক কথা, সার্বভৌমত্ব হরণকারী কোনো শর্তই তারা মানবে
না। দুটি কারণে অবরোধকারী রাষ্ট্রগুলো ক্ষিপ্ত হয়েছে বলে জানা গেছে। এর
একটি ইসলামি সংগঠনগুলোকে সহায়তার অভিযোগ। কাতার সরকার স্বীকার করেছে, তারা
মুসলিম ব্রাদারহুডকে সহযোগিতা করেছিল। তবে ইসলামিক স্টেট (আইএস) বা
আল-কায়েদার মতো সন্ত্রাসী সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ততার কথা অস্বীকার করেছে।
আর দ্বিতীয় বিষয়টি হলো ইরানের সঙ্গে সম্পর্ক। ওই দুই অভিযোগে গত ৫ জুন সৌদি
আরব ছাড়াও সংযুক্ত আরব আমিরাত কাতারের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে। একই সঙ্গে
এই তিন দেশের সরকার তাদের ভূখণ্ড থেকে কাতারের নাগরিকদের চলে যেতে ১৪
দিনের সময় বেঁধে দেয়। নিজেদের নাগরিকদের জন্যও কাতার ভ্রমণ বা সে দেশে
বসবাস নিষিদ্ধ করে। এরপর কাতারের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে মিসর, ইয়েমেন,
মালদ্বীপ ও লিবিয়ার পূর্বাঞ্চলভিত্তিক সরকার। এ ছাড়া সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব
আমিরাত, বাহরাইন ও মিসর কাতারের এয়ারলাইনকে নিষিদ্ধ করে। ওই বয়কটের পরপরই
কাতারের আমদানি-রপ্তানিতে বিরূপ প্রভাব পড়ে। অবরোধের প্রথম চার সপ্তাহে
কাতার স্টকমার্কেটে দেড় হাজার কোটি মার্কিন ডলারের লোকসান হয়। আকাশপথের
পাশাপাশি সাগরপথেও যাত্রী ও পণ্য পরিবহনে দিক পরিবর্তন করতে হয় দেশটিকে।
২০২২ বিশ্বকাপ ফুটবলের জন্য দেশটিতে অবকাঠামো নির্মাণের কাজ চলছে। এ কাজে
প্রয়োজনীয় সামগ্রীর জন্য খুঁজতে হয় নতুন উৎস। এই সংকট কাটিয়ে উঠতে
অবরোধকারী দেশগুলো গত ১৩টি শর্ত দিয়েছিল। এর মধ্যে ইরানের সঙ্গে কূটনৈতিক
সম্পর্ক ছিন্ন করা এবং সন্ত্রাসী সংগঠন বা সংগঠনগুলোর সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে
অর্থায়ন বন্ধ করার শর্ত অন্যতম। এ ছাড়া আল-জাজিরাসহ কাতারের অর্থায়নে
পরিচালিত অন্য সংবাদমাধ্যমগুলো বন্ধ করা, তুরস্কের সামরিক ঘাঁটি বন্ধ করে
দেওয়ার শর্তও দেওয়া হয়। পররাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আবদুল রহমান আল
থানি অবরোধ আরোপের পরপরই বলেছিলেন, তাঁর দেশ কিছুতেই সার্বভৌমত্ব সমর্পণ
করবে না। তবে আলোচনার মাধ্যমে সংকট নিরসনে তাঁরা আগ্রহী। এরপর ছয় মাস
অতিবাহিত হয়েছে। অবরোধ এখনো চলছে। চলতি মাসের মাঝামাঝি সময়ে কাতারের সঙ্গে
সীমান্ত পুরোপুরি বন্ধ করে দেয় সৌদি আরব। তবে কাতার চলছে নিজের পথেই। চলতি
মাসে দেশটিতে তুরস্কের সামরিক ঘাঁটিতে আরও একদল তুর্কি সেনাসদস্য যোগ
দিয়েছে। এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা দপ্তর জানায়, ৩৫টি এফ-১৫
যুদ্ধবিমান কিনতে বোয়িংয়ের সঙ্গে চুক্তি করেছে কাতার।
No comments