পরিবহন খাতে প্রযুক্তি, কিছুটা স্বস্তি
প্রযুক্তির
উত্থানের দিক দিয়ে এ বছরকে বলা যায় অ্যাপভিত্তিক পরিবহনের বছর। একের পর এক
অ্যাপের ঘোষণা আসছেই। শুরুটা ২০১৫ সালে দেশীয় উদ্যোক্তারা করলেও তেমন সাড়া
মেলেনি। কিন্তু গত বছরের নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাপভিত্তিক পরিবহনসেবা
উবার এসেই বেশ হইচই ফেলে দেয়। এরপর থেকে এই ধরনের পরিবহনসেবা বেড়েই চলেছে।
বাংলাদেশের উবার চালুর পর ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) পক্ষ থেকে এর
চলাচল অবৈধও ঘোষণা করা হয়। কিন্তু অল্প দিনেই জনপ্রিয়তার কারণে সরকারও
নড়েচড়ে বসে। ‘রাইড শেয়ারিং’ নীতিমালার উদ্যোগ নেওয়া হয়। আর দেশীয়
উদ্যোক্তারাও একে একে ঝাঁপিয়ে পড়েন অ্যাপভিত্তিক পরিবহন ব্যবসায়। সরকারও
আছে সেই তালিকায়। বাস বাদে যাঁরা কিছুটা স্বস্তিতে চলতে চান, সিএনজিচালিত
অটোরিকশা বা ট্যাক্সিই ছিল তাঁদের ভরসা। পরিবহনসেবায় প্রযুক্তি এসে
নগরবাসীকে বেশ কিছুটা স্বস্তি এনে দিয়েছে। মোটরসাইকেল, ব্যক্তিগত গাড়ি,
এমনকি সরকারি পরিবহন বিআরটিসির বাসও এখন অ্যাপের মাধ্যমে সেবা চালু করেছে।
২০১৭ সালে অনেকগুলো অ্যাপভিত্তিক পরিবহনসেবা চালুর খবর এসেছে। চলো, শেয়ার আ
মোটরসাইকেল (স্যাম), পাঠাও, আমার বাইক, আমার রাইড, ইজিয়ার, লেটস গো, মুভ,
ডাকো, কত দূরসহ বেশ কয়েকটি অ্যাপভিত্তিক পরিবহনসেবা চালু হয়েছে। নারী
যাত্রীদের জন্য আছে পিংক স্যাম, লিলি এবং পাঠাওয়েরও নারী বাইকার। হাতের
স্মার্টফোন থেকেই নগরবাসী দেখে নিতে পারছেন তাঁর গন্তব্যের কোনো বাহন
আশপাশে আছে কি না। ঘরের দোর থেকে নিয়ে যাবে। যাঁরা দ্রুত চলতে চান, তাঁদের
জন্য অ্যাপের মোটরবাইকসেবা যেন আশীর্বাদস্বরূপ। সিএনজিচালিত অটোরিকশার মতো
ভাড়া নিয়ে বচসা নেই। ‘মামা, ২০ টাকা বাড়ায়া দিয়েন’ ধরনের আবদারও নেই।
গন্তব্যে পৌঁছে ফোনের স্ক্রিনে ভেসে ওঠা দাম পরিশোধ করলেই হলো। আর অনেক
অ্যাপভিত্তিক পরিবহন প্রায়ই নানা রকম অফার দেয়।
যাত্রীরা বলছেন, নিয়মিত
চলাচলকারীদের ভাড়াও কম অনেক সময় আসে। হাতের মুঠোয় পরিবহন পছন্দের এত সুযোগ
থাকায় সিএনজিচালিত অটোরিকশার চাহিদা স্বভাবতই কমেছে। গত নভেম্বর মাসে ঢাকা ও
চট্টগ্রাম জেলা সিএনজিচালিত অটোরিকশা শ্রমিক ঐক্য পরিষদ আট দফা দাবির ছয়
দফা কর্মসূচি ঘোষণা করে। এর মধ্যে অন্যতম ছিল ‘বিআরটিএ কর্তৃক অনুমোদনহীন
উবার, পাঠাওসহ যেকোনো অবৈধ অ্যাপসনির্ভর যান চলাচল বন্ধ করা।’ তারা ৪৮
ঘণ্টার ধর্মঘটের ঘোষণা দেয়। এরপরেই সমালোচনার মুখে পড়ে। অটোরিকশা নিয়ে
মানুষের ক্ষোভের প্রকাশ দেখা যায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। যাত্রীরাই তাদের
বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলতে থাকেন। বেশি ভাড়া আদায়, নির্দিষ্ট গন্তব্যে যেতে না
চাওয়া এবং মিটারে না চলা নিয়ে অভিযোগ ওঠে। তাদের ধর্মঘটকে স্বাগত জানিয়ে
উল্টো অটোরিকশা বয়কট করার জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারণাও চলে।
পরিস্থিতি বুঝে সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালকদের সংগঠনটি নিজেদের দাবির সুর
পাল্টে দেয়। তারা অ্যাপসে চলা যান বন্ধের দাবি থেকে সরে নীতিমালার কথা বলে।
এমনকি নিজেরাই অ্যাপসেবায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার কথা বলে। একটি প্রতিষ্ঠানের
সঙ্গে আলোচনা করছে জানিয়ে জানুয়ারিতেই এই সেবা চালুর ঘোষণা দেয়। ট্যাক্সির
অবস্থাও একই। তারাও অ্যাপে আসতে চায়; তবে বিআরটিএ রাজি নয়। পরিবহন খাতে
প্রযুক্তির ব্যবহার বেড়েছে। তবে প্রতিষ্ঠানগুলো এখন নিজ নীতি অনুযায়ী চলে।
নিজেরাই বিভিন্ন গন্তব্যের ভাড়া নির্ধারণ করে। যাত্রীরা চাইছেন, এসব
প্রতিষ্ঠান যথাযথ কর্তৃপক্ষের নজরদারির আওতায় আসুক, যাতে অটোরিকশার মতো এই
খাতেও স্বেচ্ছাচারিতা ঢুকে না পড়ে। সরকারের ‘রাইড শেয়ারিং নীতিমালা’র খসড়া
হয়ে গেছে। খসড়াটি মন্ত্রিসভায় আছে অনুমোদনের অপেক্ষায়।
No comments