দেশজুড়ে তাপপ্রবাহ
আবারো তাপপ্রবাহের কবলে দেশ। ঢাকা, খুলনা ও বরিশাল বিভাগসহ রাজশাহী, পাবনা, নোয়াখালী ও চাঁদপুর অঞ্চলের ওপর দিয়ে মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এর বাইরে অন্যান্য অঞ্চলে তাপপ্রবাহ না থাকলেও অসহনীয় গরমে কাতর মানুষ। তপ্ত রোদের মধ্যেও মানুষ কাজ চালিয়ে যাওয়ায় অনেকেই হিটস্ট্রোকে রাস্তায় অথবা কর্মক্ষেত্রেই অজ্ঞান হয়ে পড়ে থাকার খবর পাওয়া যাচ্ছে। গরমে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতাল অথবা ডাক্তারের চেম্বারে রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। চিকিৎসকেরা বলছেন, এ সময় ডায়রিয়ার জন্য দায়ী জীবাণুুগুলো নতুন করে সক্রিয় হয়ে থাকে। পানির স্বল্পতাও থাকে। ফলে অনেকেই দূষিত পানি পান করে ডায়রিয়াসহ জন্ডিস, আমাশয়ের মতো রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। গতকাল মহাখালীর আইসিডিডিআরবি হাসপাতালে শতাধিক ডায়রিয়া আক্রান্ত মানুষ ভর্তি হয়েছে। এদের প্রায় সবাই নি¤œবিত্ত পরিবারের দিন এনে দিন খাওয়া মানুষ। এদের সবার পরিবারেই বিশুদ্ধ পানির সঙ্কট রয়েছে। পানি ফুটিয়ে পান করার সামর্থ এদের কারো নেই। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, আজ সোমবার সার্বিক তাপমাত্রা আরো কিছুটা বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। রংপুর ও সিলেট বিভাগের বিভিন্ন অঞ্চলে গত ২৪ ঘণ্টায় প্রচুর বৃষ্টিপাত হওয়ায় সেখানকার তাপমাত্রা একটু সহনীয় রয়েছে। তবে বৃষ্টি হ্রাস পেলেই এসব অঞ্চলের তাপমাত্রা বেড়ে যাবে। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগের অঞ্চলগুলো ছাড়া দেশের অন্যান্য অঞ্চলে বৃষ্টি নেই দীঘর্ দিন থেকে। আশির দশকের চেয়ে বর্তমানে বৃষ্টির ধরনে বেশ পরিবর্তন এসেছে। মে মাসে সারা দেশের স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত প্রায় দুই মিটার হলেও আবহাওয়া অফিস এরই মধ্যে পূর্বাভাস দিয়ে রেখেছে যে চলতি মাসে স্বাভাবিক বৃষ্টি হতে পারে। তবে গত এপ্রিলের চেয়ে চলতি মাসে বৃষ্টির গত ২০ দিনে বেশ কম বৃষ্টিপাত হয়েছে। দেশের উত্তর, পশ্চিম ও দক্ষিণাঞ্চলের অঞ্চলগুলোতে বৃষ্টি হচ্ছে।
চলতি মাসে দেশের বিভিন্ন স্থানে কালবৈশাখী ও বৃষ্টি হলেও তাপ কমেনি। খুলনা, রাজশাহী অঞ্চল আবারো তপ্ত হতে শুরু করেছে। আবহাওয়ার মাসব্যাপী পূর্বাভাস অনুযায়ী এ মাসে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠতে পারে। গতকাল দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল খুলনা ও যশোরে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, এ মাসেই একটি নি¤œচাপ থেকে ঝড় হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ঝড় অথবা নিচাপ হওয়ার আগে অনেক সময় বেশ গরম হাওয়া বইতে থাকে। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও এর আশপাশের এলাকায় একটি লঘুচাপ বিরাজ করছে। এ লঘুচাপটির কারণে দেশে কিছুটা বৃষ্টি হচ্ছে। হঠাৎ তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার কারণ কি জানতে চাইলে আবহাওয়া অফিস জানায়, মাঝে মধ্যে বৃষ্টি হওয়ায় দেশের নিচু অঞ্চল, নদী-বিল ছোট ছোট ডোবা-গর্তে পানি জমেছে। এমনকি ভাঙা রাস্তার গর্তেও পানি জমে আছে। এসব পানি রোদের তাপে বাষ্প হয়ে যাচ্ছে। এ বাষ্প মেঘ হতে না পেরে বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে। এ কারণে বেড়ে যাচ্ছে আর্দ্রতা। পানি অনেক বেশি তাপ ধারণ করে রাখতে পারে। ফলে সার্বিকভাবে বেড়ে যাচ্ছে তাপমাত্রা। তবে আগামী সপ্তাহে দেশের উচ্চ তাপমাত্রার অবসান হতে পারে বর্ষণে। আগামী সপ্তাহে সারা দেশেই আবার শুরু হয়ে যেতে পারে বৃষ্টিপাত। রংপুর বিভাগের সর্বত্রই গত ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাত হয়েছে বলে এ বিভাগেই ছিল গতকাল সর্বনি¤œ তাপমাত্রা। গতকাল রংপুর শহরে দেশের সর্বনি¤œ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ২১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আবার রংপুর বিভাগেই সবচেয়ে ৯৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। এর বাইরে সিলেট ও ময়মনসিংহ বিভাগের বিভিন্ন অঞ্চলে বৃষ্টি হয়েছে।
No comments