উদ্যোগ আছে, শৃঙ্খলা নেই
বিএনপি একটি বড় রাজনৈতিক দল। দলটিকে নিয়ে আলাপ-আলোচনার যেন শেষ নেই। ২০১৯ সালের প্রথমদিকেই নির্বাচনটি হবে, এটা মোটামুটি নিশ্চিত করেছেন সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা। ইতিমধ্যে খালেদা জিয়া একটি ভিশন-২০৩০ উপস্থাপন করেছেন। সেটা নিয়েও কম বিতর্ক হচ্ছে না। টকশোগুলোতে দেখেছি সেখানে সমালোচনার ঝড়। আর আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা তো হরহামেশাই ভিশন-২০৩০-এর সমালোচনা করে আসছেন। এসব সমালোচনার মধ্য দিয়ে অন্তত একটা জিনিস আমার কাছে স্পষ্ট হয়েছে, আর তা হচ্ছে ক্ষমতাসীন দল এই ভিশন-২০৩০-কে বেশ গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে। বিশেষ করে তোফায়েল আহমেদ, সৈয়দ আশরাফ কিংবা ওবায়দুল কাদের যখন ভিশন-২০৩০-এর কঠোর সমালোচনা করেন, তখন বুঝতে হবে আওয়ামী লীগের ভেতরে এক ধরনের ভয় ও আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। বিএনপি তার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা উপস্থাপন করেছে। একটি দল তা করতেই পারে। আওয়ামী লীগও করেছিল রূপকল্প-২০২১। এখন জাতীয় পার্টিও বলছে তারাও একটা রূপকল্প উপস্থাপন করবে। এগুলো ভালো দিক। কেননা একটি দল, যারা রাষ্ট্র ক্ষমতায় আছে বা আগামীতে যেতে চায় তাদের দেশ পরিচালনার ব্যাপারে একটি চিন্তা-ভাবনা বা পরিকল্পনা থাকা উচিত। তবে এ পরিকল্পনা হওয়া উচিত বাংলাদেশের আর্থসামাজিক অবস্থাকে বিবেচনায় নিয়ে। বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার ব্যাপারে কতগুলো বিষয় থাকা উচিত। যেমন জনসংখ্যা।
একটি বিশাল জনগোষ্ঠী রয়েছে আমাদের। এ জনগোষ্ঠীর মাঝে আবার তরুণ প্রজন্মের রয়েছে আধিক্য। পরিকল্পনা হওয়া উচিত এ তরুণ প্রজন্মকে আমরা কীভাবে কাজে লাগাতে পারব। তাদের তথাকথিত একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি ধরিয়ে দিয়ে তাদের যে শক্তি, তা কি আমরা ব্যবহার করতে পারব? স্বাধীনতার ৫০ বছর আমরা পালন করব ২০২১ সালে। খুব বেশি দিন আমাদের বাকি নেই। প্রবৃদ্ধি সরকারি হিসাবে ৭-এর ওপরে হলেও আন্তর্জাতিকভাবে তা ৬ দশমিক ৫-এর মতো। এটাও বড় অর্জন। এ অর্জন ধরে রাখতে হলে অর্থনীতিতে কী কী পরিবর্তন আনতে হবে? দলগুলোর এ ব্যাপারে স্পষ্ট বক্তব্য থাকা উচিত। দেশরক্ষা ও পররাষ্ট্রনীতি আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আগামীতে আমাদের পররাষ্ট্রনীতি কী হবে? জোটবদ্ধতা (সৌদি সামরিক জোট), ঝুঁকে পড়ার প্রবণতা (ভারতকেন্দ্রিক নীতি), চীনের অর্থনৈতিক আধিপত্যের শরিক হওয়া (ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড)? বিষয়গুলোর ব্যাপারে স্পষ্ট ধারণা থাকা বাঞ্ছনীয়। একটি রাজনৈতিক দল তাদের দলীয় দৃষ্টিকোণ থেকে বিষয়গুলো দেখবে। এতে করে পার্থক্য থাকবে এটাই স্বাভাবিক; কিন্তু খুব নগ্নভাবে যখন সমালোচনা করা হয়, তখন প্রশ্ন ওঠে বৈকি। ভিশন-২০৩০ উপস্থাপিত হয়েছে। এটি বিএনপির একটি পরিকল্পনা, একটি রূপকল্প, যে রূপকল্প বিএনপি যদি ক্ষমতায় যেতে পারে, তাহলে বাস্তবায়ন করবে বলে কথা দিয়েছে। একটি বড় দলের কাছ থেকে এ ধরনের একটি পরিকল্পনা আশা করাই যায়। ভিশন-২০৩০-এর অর্থ হচ্ছে বিএনপি ২০৩০ সালকে টার্গেট করেছে। অর্থাৎ বিএনপি আমার বিবেচনায় ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনকে টার্গেট করছে। একাদশ জাতীয় সংসদ নিবাচন সামনে রেখে বিএনপি এই ভিশন দিল। এটা নির্বাচনী ইশতেহার নয়। এটা বিএনপির একটি মহাপরিকল্পনা।
বাংলাদেশকে বিএনপি কীভাবে দেখতে চায়, এই ভিশন-২০৩০-এ তা প্রতিফলিত হয়েছে। আওয়ামী লীগও এ ধরনের একটি মহাপরিকল্পনা দিয়েছিল। রূপকল্প-২০২১। সেই রূপকল্পেও আওয়ামী লীগ বাংলাদেশকে ২০২১ সালে কীভাবে দেখতে চায়, তা জাতির সামনে উপস্থাপন করেছিল। এ ধরনের যে কোনো ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা যে কোনো বিবেচনায় প্রশংসার দাবি রাখে। সুতরাং বিএনপি যখন ভিশন-২০৩০ উপস্থাপন করল, আমরা তাকে স্বাগত না জানিয়ে পারি না। বিএনপি বড় দল। ভবিষ্যতে রাষ্ট্রক্ষমতা পরিচালনার দাবিদার। সুতরাং ভিশন-২০৩০ নিয়ে আলোচনা হতেই পারে। আমার বিবেচনায় ভিশন-২০৩০-এ অনেক ইতিবাচক দিক আছে। তবে কিছু কিছু নেতিবাচক দিক যে নেই, তা বলা যাবে না। আছে। দ্বিকক্ষবিশিষ্ট একটি সংসদের কথা বিবেচনায় নেয়ার প্রস্তাব করেছে বিএনপি। সরাসরি প্রস্তাব করেননি খালেদা জিয়া। বলেছেন বিষয়টি নিয়ে আরও আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। এটি কোনো ভালো সিদ্ধান্ত নয়। এতে করে নানা জটিলতা তৈরি হবে। সংসদীয় এলাকায় কে প্রতিনিধিত্ব করবেন, তা নানা প্রশ্ন তৈরি হবে এবং দু’জন সংসদ সদস্যকে নিয়েও বিতর্ক তৈরি হবে। এটা নিয়ে সুস্পষ্ট আইন তৈরি করলেও ক্ষমতা প্রয়োগের ক্ষেত্রে জটিলতা তৈরি হতে বাধ্য। অন্য যেসব দেশে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ রয়েছে, (ভারত, পাকিস্তান, যুক্তরাজ্য, জার্মানি) তার সঙ্গে বাংলাদেশের ঐতিহ্যকে মেলানো যাবে না। বাংলাদেশ একটি ছোট দেশ। হতে পারে জনসংখ্যা বেশি; কিন্তু এই ছোট দেশে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ কাম্য নয়। খালেদা জিয়া যে যুক্তি দেখিয়েছেন, অর্থাৎ পেশাজীবীদের উচ্চকক্ষে স্থান দেয়া, এটা তত্ত্বগতভাবে ভালো; কিন্তু এককক্ষবিশিষ্ট সংসদীয় রাজনীতিতেও পেশাজীবীদের অন্তর্ভুক্ত করা যায়। বিএনপি পেশাজীবীদের স্থানীয় পর্যায়ের রাজনীতিতে অন্তর্ভুক্ত করতে পারে। এতে করে সংসদীয় রাজনীতির মান আরও বাড়বে। বাংলাদেশে কোনো প্রদেশ নেই।
জাতিগতভাবেও তেমন কোনো পার্থক্য নেই। ফলে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীকে উচ্চকক্ষে প্রতিনিধিত্ব করারও কোনো প্রয়োজন নেই। ফলে উচ্চকক্ষ সৃষ্টি করা একটি অপ্রয়োজনীয় পদক্ষেপ। এতে করে সরকারি খাতের অর্থের অপচয় ছাড়া আর কিছু হবে না। প্রধানমন্ত্রীর নির্বাহী ক্ষমতায় ভারসাম্য আনতে চায় বিএনপি। ভিশন-২০৩০-এ আছে সে কথা। কিন্তু এ ভারসাম্য কীভাবে আনা যাবে, তা তিনি স্পষ্ট করেননি। এটা অস্বীকার করা যাবে না, বর্তমান সংবিধান প্রধানমন্ত্রীকে যথেষ্ট ক্ষমতা দিয়েছে। সংবিধান প্রদত্ত ক্ষমতাবলে প্রধানমন্ত্রীর একক কর্তৃত্ব নিশ্চিত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী অতি ক্ষমতাবান ব্যক্তিতে পরিণত হয়েছেন। এটা কীভাবে কমানো যায়, কীভাবে রাষ্ট্রপতিকে কিছু ক্ষমতা দিয়ে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে এক ধরনের ভারসাম্য আনা যায়, তা যদি খালেদা জিয়া নিশ্চিত করতেন, তাতে করে সাধারণ মানুষ একটা স্পষ্ট ধারণা পেত। ভিশন-২০৩০-এ বলা হয়েছে, ‘অন্য কোনো রাষ্ট্র বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ এবং রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা হুমকি সৃষ্টি করলে শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে। বৈদেশিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে জাতীয় স্বার্থকে প্রাধান্য দেয়া হবে। মুসলিম উম্মাহ ও প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে বিশেষ সম্পর্ক গড়ে তুলবে বিএনপি।’ এ বক্তব্য অনেকটা সাদামাটা। বর্তমান সরকারও অনেকটা একই সুরে তার পররাষ্ট্রনীতি পরিচালনা করে। এ ক্ষেত্রে খুব একটা পার্থক্য নেই। খালেদা জিয়া বলেছেন, চীনের প্রস্তাবিত ‘ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড’ উদ্যোগের সঙ্গে সংযুক্তির ব্যাপারে উদ্যোগ নেয়া হবে। প্রশ্ন হচ্ছে এ উদ্যোগ তো ইতিমধ্যে চীন নিয়েছে। এ নিয়ে মে মাসের মাঝামঝি চীনে একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনও অনুষ্ঠিত হয়ে গেছে। তাতে বাংলাদেশের শিল্পমন্ত্রীসহ একটি প্রতিনিধিদল যোগ দিয়েছিল। চীনের সঙ্গে কিংবা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের ব্যাপারে ভিশন-২০৩০-এ বিশেষ কিছু বলা নেই। ভিশন-২০৩০-এর এটা একটা দুর্বল দিক।
পররাষ্ট্র ও দেশরক্ষা নীতি এখানে বিস্তারিত আলোচিত হয়নি। উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতার যে ভিত্তি রচিত হয়েছে, সে ব্যাপারেও তেমন কোনো কথা নেই। তবে ভিশন-২০৩০-এ অনেক ভালো ভালো কথা আছে। খালেদা জিয়া থ্রিজি, অর্থাৎ সুশাসন, দুর্নীতিমুক্ত সমাজ ও সুসরকারের কথা বলেছেন। বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে থ্রিজির গুরুত্ব অনেক। এখন এই থ্রিজিকে যে নামেই ডাকা হোক না কেন, বাংলাদেশে এ তিনটি সমস্যাই মূল- অর্থাৎ সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা, দুর্নীতিরোধ করা আর সুসরকার প্রতিষ্ঠা করা। এ ক্ষেত্রেও যে প্রশ্নটি করা যায়, তা হচ্ছে বিএনপি ক্ষমতায় গেলে কীভাবে এটি করবে, তার সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা নেই। বিএনপির প্রস্তাবে সংবিধানে গণভোট ব্যবস্থা প্রবর্তন, সংসদে পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটি ও পাবলিক আন্ডারটেকিংস কমিটির সভাপতি পদ বিরোধী দলকে দেয়ার কথা বলা হয়েছে। পৃথিবীর অনেক দেশের পার্লামেন্টে এমনটি আছে। ডেপুটি স্পিকার বিরোধী দল থেকে নেয়া হবে এমন কথাও বলা হয়েছে। এমন নজিরও অনত্র আছে। আর্থিক ও ব্যাংকিং খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বন্ধ, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো পরিচালনার ভার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হাতে ন্যস্ত করা, ৩৫ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা, চট্টগ্রাম উপকূলীয় এলাকায় বঙ্গোপসাগরে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ করা, দেশকে উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করা, মাথাপিছু আয় ৫ হাজার ডলারে উন্নীত করাসহ জিডিপির প্রবৃদ্ধি ডাবল ডিজিটে উন্নীত করা, খালখনন কর্মসূচি আবারও চালু করা, স্বাস্থ্যবীমা চালুসহ রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের বিষয়টি পুনঃপরীক্ষা ইত্যাদিসহ আরও বেশকিছু প্রস্তাব রয়েছে ভিশন-২০৩০-এ। খালেদা জিয়া গ্রিন এনার্জির কথা বলতে পারতেন। তা বলেননি। এমনকি সুন্দরবনের পাশে রামপাল কয়লাচালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ নিয়ে যে বিতর্ক, সে ব্যাপারেও খালেদা জিয়া কোনো মন্তব্য করেননি। আসলে ভিশন-২০৩০ নিয়ে মূল বিতর্ক কেন্দ্রীভূত এক জায়গায়- আর তা হচ্ছে এটি এক ধরনের নির্বাচনী ইশতেহার। আমি ভিশন-২০৩০ পড়ে দেখেছি। আরও অনেক বিষয় অন্তর্ভুক্ত হওয়া উচিত ছিল। অনেক ক্ষেত্রেই ভাসা ভাসা মন্তব্য রয়েছে।
তথ্য ও উপাত্তের বড় অভাব। অর্থনীতি সেক্টরটা উপেক্ষিত থেকেছে। বিএনপির একটি বড় সমস্যা হচ্ছে দলটির কোনো থিঙ্ক ট্যাংক নেই। যাদের থিঙ্ক ট্যাংকের সঙ্গে জড়িত বলা হয় (যেমন- ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী), তাদের আমি জিজ্ঞেস করে দেখেছি, তারা এটা অস্বীকার করেছেন। অনেকেই বলেছেন কোনো ধরনের রিসার্চ ছাড়াই এটি উপস্থাপন করা হয়েছে। একজন অর্থনীতিবিদ, যাকে থিঙ্ক ট্যাংকের সদস্য বলে ধরা হয়, খালেদা জিয়ার সঙ্গে এক টেবিলে বসেনও, তিনি থাকতে অর্থনীতি সেক্টরটা উপেক্ষিত থাকল কেন? পররাষ্ট্র সচিব আর রাষ্ট্রদূত, সাবেক সচিবদের দিয়ে যদি ভিশন-২০৩০ তৈরি করা হয়, তার পরিণতি এমনই হবে। অনেক বিষয় অনুপস্থিত থেকে যাবে। বিএনপির মতো বড় দলের কাছ থেকে তা কাম্য নয়। তড়িঘড়ি করে উপস্থাপনের প্রয়োজন ছিল না। খালেদা জিয়া বিএনপির কাউন্সিলে একটা ধারণা দিয়েছিলেন। তারপর আদৌ বিশেষজ্ঞ মতামত নেয়া হয়েছিল বলে আমার মনে হয়নি। প্রয়োজন ছিল বিষয়ভিত্তিক গ্রুপ করা। সেখানে থাকা উচিত ছিল বিষয়ভিত্তিক বিশেষজ্ঞদের। দলীয় কর্মীদের দিয়ে ‘বিশেষজ্ঞ কমিটি’ হলে, তাতে ভালো কিছু আশা করা যায় না। বিএনপি ১৩ মে একটি জাতীয় সেমিনার করেছে। বিষয় বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থা। ধারণা করছি, ভিশন-২০৩০-কে সমৃদ্ধ করার জন্যই এ ধরনের আরও সেমিনারের আয়োজন করবে বিএনপি। এটা ভালো দিক। এতে করে একটা দিকনির্দেশনা পাওয়া যাবে; কিন্তু সেমিনারে উপস্থাপিত বক্তব্য কি একুশ শতক উপযোগী? যারা বক্তব্য দিলেন, লেখা পাঠ করলেন, তারা কি তথ্য-উপাত্ত দিয়ে দেখাতে পেরেছেন ২০৩০ কিংবা তারপর কোন ধরনের শিক্ষাব্যবস্থা আমাদের দরকার? শিক্ষাব্যবস্থা দেশে সার্টিফিকেটসর্বস্ব জনগোষ্ঠী তৈরি করবে না বরং কর্মক্ষম একটি জনগোষ্ঠী তৈরি করবে, সে ব্যাপারে উপস্থিত শিক্ষাবিদরা কিংবা প্রবন্ধ পাঠকারীরা কি কোনো প্রস্তাব দিয়েছিলেন? কোনো রূপরেখা দিয়েছিলেন? বিএনপির বুদ্ধিজীবীদের নিয়ে সমস্যা এখানেই। এরা সবাই সব বিষয়ে বিশেষজ্ঞ। বিএনপির এটাই বড় সমস্যা। আর একটা কথা। এ ধরনের সেমিনার হওয়া উচিত শুধু নীতিনির্ধারকদের জন্য। তাদের জন্যই এ সেমিনার। খালেদা জিয়াসহ স্থায়ী কমিটির সদস্যরা থাকবেন। এর বাইরে সিনিয়র নেতারা থাকতে পারেন। তারা প্রশ্ন করবেন, বিষয় সম্পর্কে বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে অবহিত হবেন এবং পরবর্তী সময়ে বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেবেন। প্রয়োজনে ভিশন-২০৩০-এ সংশোধনী আনবেন। শত শত নেতাকর্মীর উপস্থিতিতে কোনো সেমিনার হয় বলে আমার জানা নেই। খালেদা জিয়ার সঙ্গে একই টেবিলে যাদের দেখলাম, তাদের কাউকে কাউকে আমি জেনারেল মঈনের বই-এর প্রকাশনা উৎসবে দেখেছি। ছবিও আছে। এরা সব জায়গাতেই থাকেন। তবুও ভালো। শিক্ষা নিয়ে কিছু বক্তব্য এসেছে। আরও সেমিনার হোক এবং তা যেন হয় বিষয়ভিত্তিক। বিএনপি সক্রিয় হয়েছে। এটা ভালো দিক। স্থায়ী কমিটির সদস্যরা যদি আরও সক্রিয় হয়, যদি খালেদা জিয়া বিভাগীয় শহরগুলোতে যান, আমার ধারণা বিএনপি ঘুরে দাঁড়াবে।
ড. তারেক শামসুর রেহমান : প্রফেসর ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক
tsrahmanbd@yahoo.com
ড. তারেক শামসুর রেহমান : প্রফেসর ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক
tsrahmanbd@yahoo.com
No comments