সরকারের উচ্চপর্যায়ের তাগিদ প্রয়োজন
অস্বাভাবিক মাত্রায় জনঘনত্বের এই দেশে যখন প্রাকৃতিক পরিবেশ ক্রমেই বিপর্যয়ের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, তখন যদি দেখা যায় যে বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান পরিবেশ সংরক্ষণের আইন ও নিয়মকানুনগুলো মেনে চলছে না, তখন বেশ উদ্বিগ্ন হতে হয়। কারণ, পরিবেশ সংরক্ষণের প্রতি সরকারের অঙ্গীকার কতটা আন্তরিক, তা ফুটে ওঠে বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান ও কর্তৃপক্ষের আচরণে। তাদের আচরণে যদি পরিবেশের প্রতি অসংবেদনশীলতাই স্পষ্ট হয়ে ওঠে, তাহলে নাগরিক পর্যায়ে পরিবেশ সুরক্ষার আইন ও নিয়মকানুন মেনে চলার তাগিদ থাকে না। শনিবারের প্রথম আলোর প্রথম পাতায় প্রকাশিত এক সচিত্র প্রতিবেদনে বর্ণিত হয়েছে শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীন কয়েকটি শিল্পকারখানা কীভাবে ও কী মাত্রায় পরিবেশের দূষণ ঘটাচ্ছে। বিসিআইসির ১৪টি শিল্পকারখানার ১০টিতেই পরিবেশদূষণ নিয়ন্ত্রণ করার কোনো ব্যবস্থা নেই। পাঁচটি প্রতিষ্ঠান পরিবেশ ছাড়পত্র ছাড়াই কাজ করে চলেছে। অথচ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ও বিধিমালা অনুযায়ী পরিবেশ ছাড়পত্র ছাড়া কোনো শিল্পকারখানা চালু করারই কোনো সুযোগ নেই।
সাতটি কারখানায় বর্জ্য শোধনাগার (ইটিপি) নেই। অথচ আইন অনুযায়ী, ইটিপি স্থাপন নিশ্চিত করার পরেই কেবল কারখানা স্থাপনের অনুমোদন পাওয়ার কথা। পরিবেশ সংরক্ষণ আইন লঙ্ঘনের দায়ে সংশ্লিষ্ট কারখানার মালিককে গ্রেপ্তার করা, কারাদণ্ড দেওয়া ও জরিমানা করার বিধান রয়েছে। কিন্তু সরকারি শিল্পপ্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে এসব বিধান কখনো প্রয়োগ করার দৃষ্টান্ত নেই বললেই চলে। তবে পরিবেশ অধিদপ্তরকে হঠাৎ হঠাৎ তৎপর হয়ে উঠতে দেখা যায় বেসরকারি শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে। গত বছর তারা পরিবেশদূষণের অপরাধে ৩০০ বেসরকারি শিল্পকারখানাকে জরিমানা করেছিল। কিন্তু পরিবেশ সুরক্ষার ব্যাপারে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকেই প্রথমে এগিয়ে আসতে হবে, তাদের দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে। এ জন্য সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে তাগিদ দেওয়া প্রয়োজন। পরিষ্কারভাবে এই বার্তা পৌঁছানো প্রয়োজন যে সরকার পরিবেশ সুরক্ষার বিষয়টাকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করে।
No comments