ট্রাম্পের দলে হাঙ্গামা
আসন্ন মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ঘিরে রিপাবলিকান দলে বিভক্তি চরম আকার ধারণ করেছে। দলের আলোচিত প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পকে নিয়ে হতাশা বাড়ছে সিনিয়র নেতাদের। নির্বাচনের মাত্র তিন মাস বাকি থাকতেই ট্রাম্পের ওপর থেকে সমর্থন তুলে নিচ্ছেন গুরুত্বপূর্ণ নেতারা। রিপাবলিকান দাতা এবং তহবিল সংগ্রাহক মেগ হুইটম্যান জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি ডেমোক্রেটিক প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনকে ভোট দেবেন। এ ছাড়া রিপাবলিকান দলের প্রথম কোনো কংগ্রেসম্যান হিসেবে রিচার্ড হান্না প্রকাশ্যে বলেছেন, তিনি হিলারিকে সমর্থন করছেন। দলের আরেক সিনিয়র নেতা জন হালপার হায়েস বিবিসিকে বলেছেন, ট্রাম্প ‘মানসিক ভারসাম্যহীন’। সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের ঔদ্ধত্য আচরণ ও বেফাঁস মন্তব্যে দিশেহারা রিপাবলিকান পার্টি। হাল ছেড়ে দিচ্ছে রিপাবলিকান ন্যাশনাল কমিটিও। কমিটির প্রধান রিন্স প্রাইবাস ডোনাল্ডের দিকে যে সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছিলেন, তিনিও হাত গুটিতে দূরত্ব বজায় রেখে চলছেন। সর্বশেষ ট্রাম্প নিজ দলের প্রভাবশালী দুই নেতা স্পিকার পল রায়ান ও সাবেক প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী জন ম্যাককেইনের পুনর্নির্বাচনে কোনো সহযোগিতা করবেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন।
হাউস স্পিকার পল রায়ান আর সিনেটর জন ম্যাককেইন নভেম্বরে পুনর্নির্বাচনে দাঁড়াবেন। রিপাবলিকান দলের ক্যাম্পেইন ম্যানেজার পল মানাফোর্ট বলেছেন, তিনি এখন রীতিমতো হতাশ। ফিলিপাইনের ইমেলদা মার্কোস, অ্যাঙ্গোলার জোনাস সাভিম্বি, ইউক্রেনের ভিক্টর ইনাকোভিচের মতো বাঘা বাঘা ডিক্টেটরদের সামলে অভ্যস্ত এই ম্যানাফোর্ট। অথচ তিনিই বন্ধুদের কাছে বলেছেন, ট্রাম্পকে কোনো পথেই সামলাতে পারছেন না। ম্যানাফোর্টের বন্ধু ও মিত্র বলে পরিচিত এমন অনেকেই তাকে উদ্ধৃত করে বলছেন, তিনি ‘হতাশ’। এর প্রধান কারণ ট্রাম্প আসলে কারও কোনো পরামর্শের ধার ধরছেন না। এমনকি শুনতেও চান না। বরং নিজের মতো করে টুইটার আর ফেসবুকে এটা সেটা লিখে সমালোচনার ঝড়ের মুখে পড়ছেন। গোপন সূত্রে সিএনএন জানিয়েছে, ম্যানাফোর্ট বলেছেন, ‘আমরা শুধু শুধু সময় অপচয় করছি।’ সব মিলিয়ে রিপাবলিকানের গুরুত্বপূর্ণ নেতারা এখন প্রকাশ্যে ট্রাম্পের পক্ষে নেই। তবে দলে প্রতিষ্ঠিত নেতাদের জোট বেঁধে বিরোধিতাও দেখা যাচ্ছে না। এদিকে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ট্রাম্পকে প্রেসিডেন্ট পদের জন্য অযোগ্য উল্লেখ করে রিপাবলিকান নেতাদের তার ওপর থেকে সমর্থন প্রত্যাহার করতে আহ্বান জানিয়েছেন।
তার এ আহ্বানকে ঐতিহাসিক ও নজিরবিহীন বলে উল্লেখ করছেন মার্কিন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। ইতিহাসবিদ ডাগলস ব্রিংকলি নিউইয়র্ক টাইমসকে বলেছেন, আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নিয়ে নিকট অতীতে এমন ঘটনা একবারই ঘটেছিল। সম্প্রতি ট্রাম্প এক নির্বাচনী সভায় বলেছেন, ‘নির্বাচন-পদ্ধতিটা এমনিতেই গোলমেলে। আগামী নির্বাচনে কারচুপি করে তাকে হারানো হতে পারে।’ এ ব্যাপারে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে রিপাবলিকান ন্যাশনাল কমিটির নারী মুখপাত্র লিন্ডসে ওয়াল্টার বলে দিয়েছেন, এর ব্যাখ্যা ট্রাম্পের ক্যাম্পেইনই ভালো দিতে পারবে। তবে ট্রাম্পের অভিযোগ আমলে নিচ্ছেন না মার্কিন নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা। পিউ চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নির্বাচন বিশেষজ্ঞ ডেভিড বেকার বলেছেন, গত দু’দশকের নির্বাচন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, নির্বাচন পরিচালনা কাজে নিয়োজিত লোকজন সর্বোচ্চ সততা ও পেশাদারি নিয়ে কাজ করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রয়াত মুসলিম সেনাসদস্য ক্যাপ্টেন হুমায়ুন খানের আত্মত্যাগকে উপহাস করে রিপাবলিকান-ডেমোক্রেটিক উভয় শিবির থেকে তোপের মুখে আছেন ট্রাম্প। ট্রাম্পের নানা বিতর্কিত বক্তব্য এবং গণমাধ্যমে তাকে নিয়ে আলোচনার প্রভাব জাতীয় জনমত জরিপে পড়েছে। সিএনএন পরিচালিত সবশেষ জরিপে দেখা গেছে, ট্রাম্পের চেয়ে ৯ শতাংশ বেশি জনসমর্থনে এগিয়ে আছেন হিলারি।
No comments