আরব বসন্ত ব্যাকফায়ার করেছে এখন দরকার নতুন এক মধ্যপ্রাচ্য
আমাদের রাজনীতিক তো বটেই, লেখক-বুদ্ধিজীবীদেরও কেউ কেউ একদম ঘোর গ্রামের অশীতিপর বৃদ্ধাটির চেয়েও অনাধুনিক, রক্ষণশীল। এরা রটেন পটেটোর চেয়ে অধিক কিছু নন, তবু কেন জানি থাকছেন সব তরকারিতেই। যেমন ধরুন, সেই কবে চন্দ্রগুপ্তের আমলে মার্কসীয় দর্শনের দীক্ষা নিয়েছিলেন (তখন তো মার্কসের জন্মই হয়নি বলে কেউ আবার ব্যাকরণগত ভুল ধরবেন না যেন), এর মাঝখানে কত কিছু ঘটল- সোভিয়েত ইউনিয়ন ভাঙল, পূর্ব ইউরোপ তছনছ হয়ে গেল, চীনের লোকজন লু শ্যুন বাদ দিয়ে শেক্সপিয়র ধরল, পশ্চিমবঙ্গবাসীও মার্কসীর দর্শনের মোহ ত্যাগ করল, আরও কত কী! কিন্তু এদের ওই এক কথা, মার্কসবাদই আলটিমেট নলেজ। এদেরকে যদি বলি, ফসিল তো থাকবে জাদুঘরে, রাস্তার মাঝখানে দাঁড় করিয়ে রেখেছেন কেন, এরা উত্তর দেন- দু’চারটি বেলুন ওড়া দেখে কি বলা যায় মাধ্যাকর্ষণ তত্ত্ব ভুল? এদের একজনকে বলেছি, বেলুন তো সবই উড়ে গেল, বাকি থেকেছে ক্যাস্ট্রোর বেলুনটি, ওটাও তো দ্রুতবেগে উপরে উড়ে চলেছে। এরা শেষ কথা বলেন- যা-ই বলেন, রিসাইক্লিংয়ে আবার ফিরে আসবে মার্কসবাদ। এরপর তো বলতেই হয়, ইতিহাস তার পুনরাবৃত্তি ঘটায় বটে, তবে প্রথমবার যা ট্রাজেডি, দ্বিতীয়বার সেটা প্রহসন হয়ে পড়ে।
আপত্তি ছিল না, যদি এসব কথিত মার্কসবাদী মতবাদটিকে যুগোপযোগী করার প্রয়াস নিতেন। টমাস পিকেটি যা করে চলেছেন। ৪৭ বছর বয়সী এই ফরাসি অর্থনীতিবিদকে দুনিয়াজুড়ে এখন বলা হচ্ছে একবিংশ শতাব্দীর কার্ল মার্কস। বিশেষত ইউরোপের সম্পদ বৈষম্যকে তিনি নতুন দৃষ্টিতে দেখছেন। আমাদের বামপন্থীরা হয়তো পিকেটির নামও শোনেননি। ব্রিটিশ মিউজিয়াম লাইব্রেরিতে মার্কস যে চেয়ারটায় বসে পড়াশোনা করতেন, সেটাতে বসে দেখেছি কেমন লাগে; গা শিউরে উঠেছিল। কিন্তু এই আমিই লন্ডনে তার কবরের সামনে হাঁটু গেড়ে বসে দুই হাত জোড় করে বলেছিলাম- তোমার কল্পিত সমাজে আমি নিজস্ব নিয়মে বিকশিত হতে পারব না বলে তোমাকে ত্যাগ করেছি মার্কস। দুঃখিত, তুমি কিছু মনে করো না। আমাদের বামপন্থীরা সেই যে মার্কস-লেনিন-মাও জে দংকে পীর ধরেছেন, এখনও আচ্ছন্ন হয়ে আছেন সেই পীরতন্ত্রে।
আমাদের কথিত ডেমোক্রেট অথবা লিবারেল ডেমোক্রেটরাও কি কম অনাধুনিক! আওয়ামী লীগের কথাই ধরি। পৃথিবী অথবা এই দেশ যে কোথায় চলে গেছে, তাদের হুঁশ নেই। তাই কথায় কথায় গত শতাব্দীর পঞ্চাশ ও ষাটের দশকের উদাহরণ টেনে আনেন তারা। অতীতের কোন্ ঘটনাকে শুধুই ইতিহাস হিসেবে দেখতে হবে আর কোনটাকে মেলাতে হবে বর্তমানের সঙ্গে, এই জ্ঞান তাদের নেই। তারা তাই বঙ্গবন্ধুর অসাম্প্রদায়িক চেতনার কথা তুলে সেই ইতিহাসকে গ্লোরিফাই করে ক্রেডিট নিতে চান, কিন্তু জানেন না বর্তমান বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির যে দৃশ্য দেখি আমরা, মোটামুটি সহনীয় হলেও তার ভিত্তিটা দিনদিন দুর্বল হচ্ছে। কবে যে উপরি কাঠামোটা ধুপ করে পড়ে যায়! হ্যাঁ এই বাংলাদেশেই বাবা-মা এখন সন্তানের নাম এমন বাংলায় রাখতে চান না, যাতে গন্ধ শুঁকে হিন্দুত্ব খুঁজে পাওয়া যেতে পারে। হ্যাঁ এখানেই, বঙ্গবন্ধুর অসাম্প্রদায়িক স্বপ্নালোকিত এই বাংলাদেশেই এমন অনেক পরিবার আছে, যেখানে সন্তানের প্রতি নির্দেশ থাকে স্কুলে তার পানির বোতলটি যেন কোনো হিন্দু সহপাঠী না ছোঁয়। এই বাংলাদেশকে ’৫৪-র যুক্তফ্রন্ট আর ছয় দফা দিয়ে সামলানো যাবে? অথবা আওয়ামী মুসলিম লীগ থেকে ‘মুসলিম’ শব্দটি ছেঁটে যে মহা কাণ্ডটি ঘটানো হয়েছিল এককালে, তার কি কোনোই উপযোগিতা আছে বর্তমানকালে?
আর বিএনপি? পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে তাকিয়ে তারা শুধু বঙ্গবন্ধুকেই দেখতে পান বলে অনেক কষ্টে ভাসানীকে বিকল্প দাঁড় করিয়ে নিরর্থক অতীত চর্চা করেন। কখনও কখনও ভাসানীতে না কুলোলে তারা সিরাজউদ্দৌলা পার হয়ে ইখতিয়ার উদ্দিন মোহাম্মদ বিন বখতিয়ার খিলজি পর্যন্ত ছুটে যান। তাদের দরকার মুসলমান বীর, তিনি যত দূর ইতিহাসেরই হোন। বাংলাদেশ এখন যেভাবে দ্রুতই পাল্টে যাচ্ছে, এ ধরনের ইতিহাস চর্চা দিয়ে তার সঙ্গে খাপ খাওয়ানো যাবে?
২. বৈশ্বিক জঙ্গিবাদ নিয়ে লিখতে গিয়ে এত কথা বললাম এজন্য যে, বাংলাদেশের রাজনীতিকদের মতো বিশ্বনেতৃত্বকেও এখন অনাধুনিক বলা যায়। তারা বুঝতেই পারছেন না একটি নতুন ধরনের world order বা বিশ্ব-শৃংখলাই কেবল পারে বৈশ্বিক জঙ্গিবাদ দমন করতে। বিশেষত যুক্তরাষ্ট্র কেন নতুন world order-এর ব্যাপারে আগ্রহী নয়, তা যে আমরা বুঝি না, তা নয়। আমাদের বুঝটা নিখাদ যে, আপাতদৃষ্টিতে জঙ্গিবাদ যুক্তরাষ্ট্রের একটি বড় এজেন্ডা মনে হলেও প্রকৃতপক্ষে তারা এমন কোনো সমীকরণে যাবেন না, যা তাদের অস্ত্র ব্যবসাসহ নানাবিধ সম্প্রসারণবাদী স্বার্থের প্রতিকূলে থাকে। বরং জঙ্গিবাদ প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিটা অনেকটা জামায়াতকে নিয়ে আওয়ামী লীগের রাজনীতির মতোই। নিষিদ্ধ করো না, জিইয়ে রাখো। মারোয়ারি ব্যবসা-বুদ্ধি আর কাকে বলে! দরিদ্র দেশগুলোর প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের দৃষ্টিভঙ্গিটাও অনাধুনিক। ওরা আমাদের ডাকে ‘তৃতীয় বিশ্ব’। অনুন্নত বা উন্নয়নশীল কিংবা স্বল্পোন্নত অভিধা আমরা মেনে নিয়েছি; কারণ বাস্তবতা অস্বীকার করবে কে? কিন্তু তৃতীয় বিশ্ব কেন? মূল বিশ্ব বলে কিছু আছে নাকি? গ্রামের একজন গতরখাটা মানুষকে আমরা দরিদ্র বলি, কিন্তু তাকে কি কোনোভাবেই সাব-হিউম্যান বলা যায়? নাকি ধনী-দরিদ্র, সাদা-কালো মিলিয়েই তৈরি করেছি আমরা মানবজাতি? আসলে এই সভ্যতা ধ্বংস হয়ে যাক, তাতে পশ্চিমা সরকারগুলোর কিছু যায়-আসে না, তারা পুরনো ধারণা থেকে সরে আসবেন না। মলমূত্র ছাড়া তারা কিছুই ত্যাগ করতে জানেন না।
আজকের যে জঙ্গিবাদ, তা পরাশক্তিদের অতীত ভুল রাজনৈতিক সিদ্ধান্তেরই খেসারত। অবশ্য ভুল না বলে স্বার্থবাদী সিদ্ধান্ত বলাই ভালো। বলা বাহুল্য, পরবর্তীকালে ওইসব সিদ্ধান্তের যে প্রতিক্রিয়া হয়েছে, সেগুলোর মীমাংসা না করে সিরিয়ায় এয়ার স্ট্রাইক বা অন্য কোনো উপায়ে জঙ্গিবাদ নির্মূল করা যাবে না। প্রথমত, প্রথম মহাযুদ্ধের পর ভার্সাই চুক্তির ভেতর যেমন লুকিয়েছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শর্ত, তেমনি প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীনই তখনকার দুই পরাশক্তি (যুক্তরাষ্ট্র তখনও পরাশক্তি হয়ে ওঠেনি) ব্রিটেন ও ফ্রান্সের মধ্যকার সাইকস-পিকট চুক্তি (এই চুক্তিতে ব্রিটেনের পক্ষে মার্ক সাইকস ও ফ্রান্সের পক্ষে ফ্রাঁসোয়া জর্জেজ পিকট স্বাক্ষর করেছিলেন) সূত্রপাত ঘটিয়েছিল আজকের জঙ্গিবাদের। এই চুক্তির মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যের ভূমধ্যসাগরের তীরবর্তী অঞ্চলগুলোকে ব্রিটিশ, সিরিয়া ও লেবাননকে ফরাসি এবং ইস্তান্বুলকে জারের রুশ শাসনে নিয়ে আসা হয়। এই বিভাজন মধ্যপ্রাচ্যের সাধারণ মানুষের মধ্যে পশ্চিমা শাসকগোষ্ঠীবিরোধী মনোভাবেরই জন্ম দেয় না শুধু, তাদের আশা-আকাক্সক্ষাও মারাত্মকভাবে আহত করে। দ্বিতীয় ভুলটি সংঘটিত হয় ইরাককে কেন্দ্র করে। ইরাক আক্রমণের আগেই পশ্চিমা মিডিয়া ভবিষ্যদ্বাণী করেছিল, সাদ্দামকে পরাস্ত করে সেখানে মার্কিন উপস্থিতি ঘটালে ইরাক শিয়া, সুন্নি ও কুর্দিপ্রধান তিন ভূখণ্ডে বিভাজিত হয়ে পড়বে। বাস্তবে অনানুষ্ঠানিকভাবে তা ঘটেছেও। ইরাক আক্রমণ করে যুক্তরাষ্ট্র যত বড় ভুল করেছে, সাদ্দামকে পরাস্ত করার পর তার সেনাবাহিনীকে বিলুপ্ত করার ভুলটি তার চেয়ে কম কিছু নয়। এত বড় এক বাহিনী, যাদের রয়েছে সামরিক প্রশিক্ষণ ও দৈহিক সামর্থ্য, বিপরীতে নেই কোনো কাজ- তারা তাহলে কী করবে? বলা যায়, আইএসের ভিত্তিই রচনা করেছে সাদ্দামের বিলুপ্ত সেনাবাহিনীর সদস্যদের একাংশ। এক কথায় বললে, ঔপনিবেশিক শাসনেরও কিছু পজিটিভ সিস্টেম থাকতে হয়; কিন্তু ইরাকে ইঙ্গ-মার্কিন জোট কোনো সিস্টেমেরই ধার ধারেনি। মালেকীকে তারাই বসিয়েছে, আবার শিয়া-ডমিনেটেড এই সরকারের সঙ্গে শিয়াপ্রধান ইরানের ন্যাচারাল সখ্য যাতে গড়ে উঠতে না পারে, সেজন্য এই সরকারকে সাইজে রাখতে সুন্নিদের উসকেও দেয়া হয়েছে। সোজা কথা, মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে শিয়া-সুন্নির যে প্রকট দ্বন্দ্ব, যুক্তরাষ্ট্র ভিন্ন ভিন্ন স্বার্থে সেটার বিশ্রী ব্যবহার করেছে।
বস্তুত আরব বসন্ত ব্যাকফায়ার করার পর থেকেই এটা স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল যে, সাইকস-পিকট চুক্তির পর দীর্ঘ সময় ধরে মধ্যপ্রাচ্যবাসীর মধ্যে যে ক্ষোভ ঘনীভূত হচ্ছিল, তার অন্যরকম প্রকাশ ঘটবে। তিউনিসিয়ায় শুরু হওয়া বসন্তের যে বাতাস ছড়িয়ে দেয়া হল লিবিয়া, মিসর ও সিরিয়া পর্যন্ত, সেই বাতাসে যদি মধ্যপ্রাচ্যবাসীর হৃদয় জুড়াতো, তাহলেও আইএসের জন্ম হতো না। কিন্তু কী হল? লিবিয়ায় গাদ্দাফিকে সরানো হল বটে, প্রতিস্থাপিত দুর্বল সরকার কি রাজনৈতিক শূন্যতা পূরণ করতে পারল? মিসরে এলো চরমপন্থার ব্রাদারহুড, সেটাকে সরিয়ে আবার সামরিক শাসক। অর্থাৎ সেখানেও রাজনৈতিক অস্থিরতা। সিরিয়ায় আসাদ টিকে গেলেন বটে; কিন্তু অস্থিরতা গেল কি? সমগ্র মধ্যপ্রাচ্যবাসীর আকাঙ্ক্ষা, তারা পশ্চিমা প্রভাবমুক্ত একটি স্থিতিশীল সমাজে বাস করবে, বঞ্চনাবোধ থেকে মুক্ত হবে। সেটা হল না। আরব বসন্তের আগ পর্যন্ত মধ্যপ্রাচ্য যে স্থিতিশীল ছিল, তার একটি বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা আছে। পানি ১০০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় বাষ্প হয়। কিন্তু ৯৯ ডিগ্রি পর্যন্ত বোঝা যায় না যে, পানিটা কিছুক্ষণের মধ্যেই বাষ্প হওয়া শুরু করবে। আসলে পানি তাপ কনজিউম করতে থাকে এবং নির্দিষ্ট তাপ পাওয়ার পরই হঠাৎ বাষ্পীয়ভবন শুরু হয়। পৃথিবীর প্রায় সব বিপ্লবী অথবা গণআন্দোলনের ক্ষেত্রে এমনটাই ঘটেছে। ইরানে রেজা শাহ পাহলভীর বিরুদ্ধে খোমেনির বিপ্লবও তাই। আমাদের মুক্তিযুদ্ধও ঘটেছে ২৪ বছরের শোষণজনিত বঞ্চনার কারণে, বঙ্গবন্ধু না থাকলে হয়তো সময়টা আরও দীর্ঘায়িত হতো। পশ্চিমা আধিপত্য ও স্ব স্ব দেশের স্বৈরতন্ত্র থেকে ক্ষোভ জমা হচ্ছিল। সেই ক্ষোভ সামাজিক বিজ্ঞান দ্বারা নির্দিষ্ট পরিমাণ লাভ করা মাত্রই মধ্যপ্রাচ্যে শুরু হয়েছিল দক্ষিণা হাওয়া। কিন্তু এই হাওয়ায় প্রাণ জুড়াল না, কারণ এতে মিশে গেল পশ্চিমা ঘূর্ণি বাতাস।
আরব বসন্ত ব্যাকফায়ার করার পর বিকল্প শক্তি দিয়ে মুসলমানদের স্বার্থ রক্ষা করার চিন্তা আসতেই পারে এবং তা এসেছে। আবার গোটা অঞ্চলটাই যেহেতু মুসলমানপ্রধান, তাই সেই শক্তি অর্জনের চেষ্টা করা হয়েছে ইসলাম ধর্ম থেকেই। এবার আর আল কায়দার মতো শরিয়াভিত্তিক রাষ্ট্র নয়, সমগ্র আরব ভুবনকেই খেলাফত শাসনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে, অতঃপর সম্ভব হলে গোটা বিশ্বকে। জন্ম হল আইএসের। প্রশ্ন উঠতেই পারে, আইএস যাদের হত্যা করছে, তারা তো সাম্রাজ্যবাদের এজেন্ট কিংবা তাদের আদর্শের চিহ্নিত শত্রু নয়। তাদের হত্যাকাণ্ড তো নির্বিচার। উত্তর হল, তারা একটা যুদ্ধ ঘোষণা করেছে এবং প্রাথমিক পর্যায়ে শক্তি প্রদর্শনই তাদের উদ্দেশ্য। ডিফিকাল্ট অথবা বলা যায় আলটিমেট টার্গেটকে আক্রমণ করার শক্তি এখনও অর্জন করতে পারেনি বলে তাদের যেন কেউ দুর্বল ভাবতে না পারে, সেজন্য তারা ইজি টার্গেটেই আঘাত করে বলতে চাইছে- রিহার্সালের শক্তিটা বুঝে নাও, আসল শক্তি পরে দেখতে পাবে। এটা এক অদ্ভুত ব্যাপার, আটলান্টিকের ওপাড়ে রয়েছে বলে যুক্তরাষ্ট্রকে অন্য কোনো রাষ্ট্র সহজে দখলে নিতে পারবে না, অথচ রাষ্ট্রটি দুনিয়াজুড়ে বিছিয়ে রেখেছে সামরিক চাদর। নাবিকদের নাকি বন্দরে বন্দরে বউ থাকে, যুক্তরাষ্ট্রেরও যেখানে পানি, সেখানেই ফ্লিট। মার্কিন প্রেসিডেন্টদের একটা প্রশ্ন করাই যেতে পারে, তাদের কাছে কোনটা বড়- সভ্যতার স্বাভাবিক বিকাশ, নাকি সভ্যতা কোথায় যাবে যাক, আমার মাতব্বরিটা ঠিক থাকতে হবে? ঠিক আছে, মাতব্বরি করতে দেয়া হলই না হয়, বিচারসভায় চোখ টেপাটেপি কেন? খ্রিস্টধর্মের সঙ্গে ইসলামের ততো বিরোধ নেই, যতটা আছে ইহুদি ধর্মের সঙ্গে। তো মুসলমান ফিলিস্তিনিকে উপেক্ষার চোখে দেখে ইহুদি ইসরাইলির দিকে রোমান্টিক দৃষ্টি দেয়ার অর্থ কী? তার মানে যৌনাকাঙ্ক্ষার কাছে কখনও কখনও যেমন হার মানে ধর্মীয় চেতনা, নীতিবোধ; ব্যাপারটা তেমন কিছু?
হ্যাঁ জঙ্গিবাদ রুখতে হলে এক নতুন মধ্যপ্রাচ্য শুধু নয়, এক অন্যরকম পৃথিবীর খোঁজ করতে হবে। সেই বিশ্বব্যবস্থা গড়তে নেতৃত্ব নিতে হবে যুক্তরাষ্ট্রকেই। এই প্রক্রিয়ায় থাকা চলবে না ডাবল-ডিলিং, কনটেইন করতে হবে সমগ্র পৃথিবীকে। গরিবের বউকে সত্যি সত্যিই ‘ভাবী’ ডাকতে হবে, কোনো কু-মতলবে নয়। আর তা না পারলে জঙ্গিরা একসময় এই সভ্যতা জ্বালিয়ে দিয়েই ক্ষান্ত হবে না, সেই আগুনে পুড়ে খাবে আলু। কীভাবে তেমন একটি পৃথিবী গড়ে তোলা যায়, তা নিয়ে কিছু কথা আমারও আছে। সেটা আরেকদিন হবে।
মাহবুব কামাল : সাংবাদিক
mahbubkamal08@yahoo.com
আপত্তি ছিল না, যদি এসব কথিত মার্কসবাদী মতবাদটিকে যুগোপযোগী করার প্রয়াস নিতেন। টমাস পিকেটি যা করে চলেছেন। ৪৭ বছর বয়সী এই ফরাসি অর্থনীতিবিদকে দুনিয়াজুড়ে এখন বলা হচ্ছে একবিংশ শতাব্দীর কার্ল মার্কস। বিশেষত ইউরোপের সম্পদ বৈষম্যকে তিনি নতুন দৃষ্টিতে দেখছেন। আমাদের বামপন্থীরা হয়তো পিকেটির নামও শোনেননি। ব্রিটিশ মিউজিয়াম লাইব্রেরিতে মার্কস যে চেয়ারটায় বসে পড়াশোনা করতেন, সেটাতে বসে দেখেছি কেমন লাগে; গা শিউরে উঠেছিল। কিন্তু এই আমিই লন্ডনে তার কবরের সামনে হাঁটু গেড়ে বসে দুই হাত জোড় করে বলেছিলাম- তোমার কল্পিত সমাজে আমি নিজস্ব নিয়মে বিকশিত হতে পারব না বলে তোমাকে ত্যাগ করেছি মার্কস। দুঃখিত, তুমি কিছু মনে করো না। আমাদের বামপন্থীরা সেই যে মার্কস-লেনিন-মাও জে দংকে পীর ধরেছেন, এখনও আচ্ছন্ন হয়ে আছেন সেই পীরতন্ত্রে।
আমাদের কথিত ডেমোক্রেট অথবা লিবারেল ডেমোক্রেটরাও কি কম অনাধুনিক! আওয়ামী লীগের কথাই ধরি। পৃথিবী অথবা এই দেশ যে কোথায় চলে গেছে, তাদের হুঁশ নেই। তাই কথায় কথায় গত শতাব্দীর পঞ্চাশ ও ষাটের দশকের উদাহরণ টেনে আনেন তারা। অতীতের কোন্ ঘটনাকে শুধুই ইতিহাস হিসেবে দেখতে হবে আর কোনটাকে মেলাতে হবে বর্তমানের সঙ্গে, এই জ্ঞান তাদের নেই। তারা তাই বঙ্গবন্ধুর অসাম্প্রদায়িক চেতনার কথা তুলে সেই ইতিহাসকে গ্লোরিফাই করে ক্রেডিট নিতে চান, কিন্তু জানেন না বর্তমান বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির যে দৃশ্য দেখি আমরা, মোটামুটি সহনীয় হলেও তার ভিত্তিটা দিনদিন দুর্বল হচ্ছে। কবে যে উপরি কাঠামোটা ধুপ করে পড়ে যায়! হ্যাঁ এই বাংলাদেশেই বাবা-মা এখন সন্তানের নাম এমন বাংলায় রাখতে চান না, যাতে গন্ধ শুঁকে হিন্দুত্ব খুঁজে পাওয়া যেতে পারে। হ্যাঁ এখানেই, বঙ্গবন্ধুর অসাম্প্রদায়িক স্বপ্নালোকিত এই বাংলাদেশেই এমন অনেক পরিবার আছে, যেখানে সন্তানের প্রতি নির্দেশ থাকে স্কুলে তার পানির বোতলটি যেন কোনো হিন্দু সহপাঠী না ছোঁয়। এই বাংলাদেশকে ’৫৪-র যুক্তফ্রন্ট আর ছয় দফা দিয়ে সামলানো যাবে? অথবা আওয়ামী মুসলিম লীগ থেকে ‘মুসলিম’ শব্দটি ছেঁটে যে মহা কাণ্ডটি ঘটানো হয়েছিল এককালে, তার কি কোনোই উপযোগিতা আছে বর্তমানকালে?
আর বিএনপি? পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে তাকিয়ে তারা শুধু বঙ্গবন্ধুকেই দেখতে পান বলে অনেক কষ্টে ভাসানীকে বিকল্প দাঁড় করিয়ে নিরর্থক অতীত চর্চা করেন। কখনও কখনও ভাসানীতে না কুলোলে তারা সিরাজউদ্দৌলা পার হয়ে ইখতিয়ার উদ্দিন মোহাম্মদ বিন বখতিয়ার খিলজি পর্যন্ত ছুটে যান। তাদের দরকার মুসলমান বীর, তিনি যত দূর ইতিহাসেরই হোন। বাংলাদেশ এখন যেভাবে দ্রুতই পাল্টে যাচ্ছে, এ ধরনের ইতিহাস চর্চা দিয়ে তার সঙ্গে খাপ খাওয়ানো যাবে?
২. বৈশ্বিক জঙ্গিবাদ নিয়ে লিখতে গিয়ে এত কথা বললাম এজন্য যে, বাংলাদেশের রাজনীতিকদের মতো বিশ্বনেতৃত্বকেও এখন অনাধুনিক বলা যায়। তারা বুঝতেই পারছেন না একটি নতুন ধরনের world order বা বিশ্ব-শৃংখলাই কেবল পারে বৈশ্বিক জঙ্গিবাদ দমন করতে। বিশেষত যুক্তরাষ্ট্র কেন নতুন world order-এর ব্যাপারে আগ্রহী নয়, তা যে আমরা বুঝি না, তা নয়। আমাদের বুঝটা নিখাদ যে, আপাতদৃষ্টিতে জঙ্গিবাদ যুক্তরাষ্ট্রের একটি বড় এজেন্ডা মনে হলেও প্রকৃতপক্ষে তারা এমন কোনো সমীকরণে যাবেন না, যা তাদের অস্ত্র ব্যবসাসহ নানাবিধ সম্প্রসারণবাদী স্বার্থের প্রতিকূলে থাকে। বরং জঙ্গিবাদ প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিটা অনেকটা জামায়াতকে নিয়ে আওয়ামী লীগের রাজনীতির মতোই। নিষিদ্ধ করো না, জিইয়ে রাখো। মারোয়ারি ব্যবসা-বুদ্ধি আর কাকে বলে! দরিদ্র দেশগুলোর প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের দৃষ্টিভঙ্গিটাও অনাধুনিক। ওরা আমাদের ডাকে ‘তৃতীয় বিশ্ব’। অনুন্নত বা উন্নয়নশীল কিংবা স্বল্পোন্নত অভিধা আমরা মেনে নিয়েছি; কারণ বাস্তবতা অস্বীকার করবে কে? কিন্তু তৃতীয় বিশ্ব কেন? মূল বিশ্ব বলে কিছু আছে নাকি? গ্রামের একজন গতরখাটা মানুষকে আমরা দরিদ্র বলি, কিন্তু তাকে কি কোনোভাবেই সাব-হিউম্যান বলা যায়? নাকি ধনী-দরিদ্র, সাদা-কালো মিলিয়েই তৈরি করেছি আমরা মানবজাতি? আসলে এই সভ্যতা ধ্বংস হয়ে যাক, তাতে পশ্চিমা সরকারগুলোর কিছু যায়-আসে না, তারা পুরনো ধারণা থেকে সরে আসবেন না। মলমূত্র ছাড়া তারা কিছুই ত্যাগ করতে জানেন না।
আজকের যে জঙ্গিবাদ, তা পরাশক্তিদের অতীত ভুল রাজনৈতিক সিদ্ধান্তেরই খেসারত। অবশ্য ভুল না বলে স্বার্থবাদী সিদ্ধান্ত বলাই ভালো। বলা বাহুল্য, পরবর্তীকালে ওইসব সিদ্ধান্তের যে প্রতিক্রিয়া হয়েছে, সেগুলোর মীমাংসা না করে সিরিয়ায় এয়ার স্ট্রাইক বা অন্য কোনো উপায়ে জঙ্গিবাদ নির্মূল করা যাবে না। প্রথমত, প্রথম মহাযুদ্ধের পর ভার্সাই চুক্তির ভেতর যেমন লুকিয়েছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শর্ত, তেমনি প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীনই তখনকার দুই পরাশক্তি (যুক্তরাষ্ট্র তখনও পরাশক্তি হয়ে ওঠেনি) ব্রিটেন ও ফ্রান্সের মধ্যকার সাইকস-পিকট চুক্তি (এই চুক্তিতে ব্রিটেনের পক্ষে মার্ক সাইকস ও ফ্রান্সের পক্ষে ফ্রাঁসোয়া জর্জেজ পিকট স্বাক্ষর করেছিলেন) সূত্রপাত ঘটিয়েছিল আজকের জঙ্গিবাদের। এই চুক্তির মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যের ভূমধ্যসাগরের তীরবর্তী অঞ্চলগুলোকে ব্রিটিশ, সিরিয়া ও লেবাননকে ফরাসি এবং ইস্তান্বুলকে জারের রুশ শাসনে নিয়ে আসা হয়। এই বিভাজন মধ্যপ্রাচ্যের সাধারণ মানুষের মধ্যে পশ্চিমা শাসকগোষ্ঠীবিরোধী মনোভাবেরই জন্ম দেয় না শুধু, তাদের আশা-আকাক্সক্ষাও মারাত্মকভাবে আহত করে। দ্বিতীয় ভুলটি সংঘটিত হয় ইরাককে কেন্দ্র করে। ইরাক আক্রমণের আগেই পশ্চিমা মিডিয়া ভবিষ্যদ্বাণী করেছিল, সাদ্দামকে পরাস্ত করে সেখানে মার্কিন উপস্থিতি ঘটালে ইরাক শিয়া, সুন্নি ও কুর্দিপ্রধান তিন ভূখণ্ডে বিভাজিত হয়ে পড়বে। বাস্তবে অনানুষ্ঠানিকভাবে তা ঘটেছেও। ইরাক আক্রমণ করে যুক্তরাষ্ট্র যত বড় ভুল করেছে, সাদ্দামকে পরাস্ত করার পর তার সেনাবাহিনীকে বিলুপ্ত করার ভুলটি তার চেয়ে কম কিছু নয়। এত বড় এক বাহিনী, যাদের রয়েছে সামরিক প্রশিক্ষণ ও দৈহিক সামর্থ্য, বিপরীতে নেই কোনো কাজ- তারা তাহলে কী করবে? বলা যায়, আইএসের ভিত্তিই রচনা করেছে সাদ্দামের বিলুপ্ত সেনাবাহিনীর সদস্যদের একাংশ। এক কথায় বললে, ঔপনিবেশিক শাসনেরও কিছু পজিটিভ সিস্টেম থাকতে হয়; কিন্তু ইরাকে ইঙ্গ-মার্কিন জোট কোনো সিস্টেমেরই ধার ধারেনি। মালেকীকে তারাই বসিয়েছে, আবার শিয়া-ডমিনেটেড এই সরকারের সঙ্গে শিয়াপ্রধান ইরানের ন্যাচারাল সখ্য যাতে গড়ে উঠতে না পারে, সেজন্য এই সরকারকে সাইজে রাখতে সুন্নিদের উসকেও দেয়া হয়েছে। সোজা কথা, মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে শিয়া-সুন্নির যে প্রকট দ্বন্দ্ব, যুক্তরাষ্ট্র ভিন্ন ভিন্ন স্বার্থে সেটার বিশ্রী ব্যবহার করেছে।
বস্তুত আরব বসন্ত ব্যাকফায়ার করার পর থেকেই এটা স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল যে, সাইকস-পিকট চুক্তির পর দীর্ঘ সময় ধরে মধ্যপ্রাচ্যবাসীর মধ্যে যে ক্ষোভ ঘনীভূত হচ্ছিল, তার অন্যরকম প্রকাশ ঘটবে। তিউনিসিয়ায় শুরু হওয়া বসন্তের যে বাতাস ছড়িয়ে দেয়া হল লিবিয়া, মিসর ও সিরিয়া পর্যন্ত, সেই বাতাসে যদি মধ্যপ্রাচ্যবাসীর হৃদয় জুড়াতো, তাহলেও আইএসের জন্ম হতো না। কিন্তু কী হল? লিবিয়ায় গাদ্দাফিকে সরানো হল বটে, প্রতিস্থাপিত দুর্বল সরকার কি রাজনৈতিক শূন্যতা পূরণ করতে পারল? মিসরে এলো চরমপন্থার ব্রাদারহুড, সেটাকে সরিয়ে আবার সামরিক শাসক। অর্থাৎ সেখানেও রাজনৈতিক অস্থিরতা। সিরিয়ায় আসাদ টিকে গেলেন বটে; কিন্তু অস্থিরতা গেল কি? সমগ্র মধ্যপ্রাচ্যবাসীর আকাঙ্ক্ষা, তারা পশ্চিমা প্রভাবমুক্ত একটি স্থিতিশীল সমাজে বাস করবে, বঞ্চনাবোধ থেকে মুক্ত হবে। সেটা হল না। আরব বসন্তের আগ পর্যন্ত মধ্যপ্রাচ্য যে স্থিতিশীল ছিল, তার একটি বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা আছে। পানি ১০০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় বাষ্প হয়। কিন্তু ৯৯ ডিগ্রি পর্যন্ত বোঝা যায় না যে, পানিটা কিছুক্ষণের মধ্যেই বাষ্প হওয়া শুরু করবে। আসলে পানি তাপ কনজিউম করতে থাকে এবং নির্দিষ্ট তাপ পাওয়ার পরই হঠাৎ বাষ্পীয়ভবন শুরু হয়। পৃথিবীর প্রায় সব বিপ্লবী অথবা গণআন্দোলনের ক্ষেত্রে এমনটাই ঘটেছে। ইরানে রেজা শাহ পাহলভীর বিরুদ্ধে খোমেনির বিপ্লবও তাই। আমাদের মুক্তিযুদ্ধও ঘটেছে ২৪ বছরের শোষণজনিত বঞ্চনার কারণে, বঙ্গবন্ধু না থাকলে হয়তো সময়টা আরও দীর্ঘায়িত হতো। পশ্চিমা আধিপত্য ও স্ব স্ব দেশের স্বৈরতন্ত্র থেকে ক্ষোভ জমা হচ্ছিল। সেই ক্ষোভ সামাজিক বিজ্ঞান দ্বারা নির্দিষ্ট পরিমাণ লাভ করা মাত্রই মধ্যপ্রাচ্যে শুরু হয়েছিল দক্ষিণা হাওয়া। কিন্তু এই হাওয়ায় প্রাণ জুড়াল না, কারণ এতে মিশে গেল পশ্চিমা ঘূর্ণি বাতাস।
আরব বসন্ত ব্যাকফায়ার করার পর বিকল্প শক্তি দিয়ে মুসলমানদের স্বার্থ রক্ষা করার চিন্তা আসতেই পারে এবং তা এসেছে। আবার গোটা অঞ্চলটাই যেহেতু মুসলমানপ্রধান, তাই সেই শক্তি অর্জনের চেষ্টা করা হয়েছে ইসলাম ধর্ম থেকেই। এবার আর আল কায়দার মতো শরিয়াভিত্তিক রাষ্ট্র নয়, সমগ্র আরব ভুবনকেই খেলাফত শাসনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে, অতঃপর সম্ভব হলে গোটা বিশ্বকে। জন্ম হল আইএসের। প্রশ্ন উঠতেই পারে, আইএস যাদের হত্যা করছে, তারা তো সাম্রাজ্যবাদের এজেন্ট কিংবা তাদের আদর্শের চিহ্নিত শত্রু নয়। তাদের হত্যাকাণ্ড তো নির্বিচার। উত্তর হল, তারা একটা যুদ্ধ ঘোষণা করেছে এবং প্রাথমিক পর্যায়ে শক্তি প্রদর্শনই তাদের উদ্দেশ্য। ডিফিকাল্ট অথবা বলা যায় আলটিমেট টার্গেটকে আক্রমণ করার শক্তি এখনও অর্জন করতে পারেনি বলে তাদের যেন কেউ দুর্বল ভাবতে না পারে, সেজন্য তারা ইজি টার্গেটেই আঘাত করে বলতে চাইছে- রিহার্সালের শক্তিটা বুঝে নাও, আসল শক্তি পরে দেখতে পাবে। এটা এক অদ্ভুত ব্যাপার, আটলান্টিকের ওপাড়ে রয়েছে বলে যুক্তরাষ্ট্রকে অন্য কোনো রাষ্ট্র সহজে দখলে নিতে পারবে না, অথচ রাষ্ট্রটি দুনিয়াজুড়ে বিছিয়ে রেখেছে সামরিক চাদর। নাবিকদের নাকি বন্দরে বন্দরে বউ থাকে, যুক্তরাষ্ট্রেরও যেখানে পানি, সেখানেই ফ্লিট। মার্কিন প্রেসিডেন্টদের একটা প্রশ্ন করাই যেতে পারে, তাদের কাছে কোনটা বড়- সভ্যতার স্বাভাবিক বিকাশ, নাকি সভ্যতা কোথায় যাবে যাক, আমার মাতব্বরিটা ঠিক থাকতে হবে? ঠিক আছে, মাতব্বরি করতে দেয়া হলই না হয়, বিচারসভায় চোখ টেপাটেপি কেন? খ্রিস্টধর্মের সঙ্গে ইসলামের ততো বিরোধ নেই, যতটা আছে ইহুদি ধর্মের সঙ্গে। তো মুসলমান ফিলিস্তিনিকে উপেক্ষার চোখে দেখে ইহুদি ইসরাইলির দিকে রোমান্টিক দৃষ্টি দেয়ার অর্থ কী? তার মানে যৌনাকাঙ্ক্ষার কাছে কখনও কখনও যেমন হার মানে ধর্মীয় চেতনা, নীতিবোধ; ব্যাপারটা তেমন কিছু?
হ্যাঁ জঙ্গিবাদ রুখতে হলে এক নতুন মধ্যপ্রাচ্য শুধু নয়, এক অন্যরকম পৃথিবীর খোঁজ করতে হবে। সেই বিশ্বব্যবস্থা গড়তে নেতৃত্ব নিতে হবে যুক্তরাষ্ট্রকেই। এই প্রক্রিয়ায় থাকা চলবে না ডাবল-ডিলিং, কনটেইন করতে হবে সমগ্র পৃথিবীকে। গরিবের বউকে সত্যি সত্যিই ‘ভাবী’ ডাকতে হবে, কোনো কু-মতলবে নয়। আর তা না পারলে জঙ্গিরা একসময় এই সভ্যতা জ্বালিয়ে দিয়েই ক্ষান্ত হবে না, সেই আগুনে পুড়ে খাবে আলু। কীভাবে তেমন একটি পৃথিবী গড়ে তোলা যায়, তা নিয়ে কিছু কথা আমারও আছে। সেটা আরেকদিন হবে।
মাহবুব কামাল : সাংবাদিক
mahbubkamal08@yahoo.com
No comments