ইরাক-সিরিয়ায় আইএসের ‘জঙ্গি উৎপাদন প্রকল্প’!
মধ্যপ্রাচ্যে ইরাক-সিরিয়ার একটা বড় অংশসহ লিবিয়ার বেশ কয়েকটি অঞ্চলে ঘাঁটি গেড়ে আছে বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর জঙ্গি গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট (আইএস)। শুধু মধ্যপ্রাচ্যই নয় সারা বিশ্বেই নিজেদের শাখা বিস্তার করছে এ জঙ্গি গোষ্ঠীটি। এখানেই শেষ নয়, বিশ্বব্যাপী নিজেদের তথাকথিত ‘খেলাফত’ কায়েমে এবং প্রজন্মের পর প্রজন্ম সেই ‘শাসনব্যবস্থা’ টিকিয়ে রাখতে এবার ‘নতুন প্রজন্ম উৎপাদনের প্রকল্প’ হাতে নিয়েছে দুর্ধর্ষ এ জঙ্গি গোষ্ঠীটি। অভিনব এ প্রকল্পের বাস্তবায়নে তাদের হাতে রয়েছে ৩১ হাজার গর্ভবতী নারী। তাদের গর্ভেই জন্ম নেবে আইএসের নতুন প্রজন্মের ‘জঙ্গি’। বেশ অনেকদিন যাবত গণমাধ্যমে আইএসদের জিহাদি কার্যক্রমে শিশুদের ব্যবহার নিয়ে লেখালেখি এবং প্রতিবেদন প্রকাশিত হচ্ছে। কিন্তু কীভাবে তারা শিশুদের এখানে যুক্ত করছে, তার ওপর করা একটি বহুমাত্রিক তদন্ত প্রতিবেদনে বেরিয়ে এসেছে এ চমকপ্রদ তথ্য। চিলড্রেন অব ইসলামিক স্টেট নামের এ প্রতিবেদনে লন্ডনের সন্ত্রাসবিরোধী থিংক-ট্যাংক ‘কুইলিয়াম’ তাদের এ তদন্তের ফলাফল প্রকাশ করেছে। আইএস কীভাবে শিশুদের নিয়োগ দেয় এবং জিহাদের প্রশিক্ষণ দেয় তার ওপরেই মূলত এ তদন্ত করা হয়েছিল। মঙ্গলবার দ্য সান, দ্য ইন্ডিপেন্টেট, দ্য মিরর সারা বিশ্বের প্রভাবশালী গণমাধ্যমগুলোতে এ খবর চাউর হয়েছে।জাতিসংঘ সমর্থিত এ তদন্তের ফলাফলে বলা হয়,
আইএস বয়স্কদের চেয়ে শিশুদের বেশি কার্যকরী যোদ্ধা হিসেবে তৈরি করা সম্ভব বলে মনে করে। যেহেতু সদ্যজাত শিশুদের মন শূন্য ব্লাকবোর্ডের মতো, কাজেই তারা সেই বোর্ডে যা লিখবে তাই নিয়ে গড়ে উঠবে শিশু। জন্ম থেকেই এ ধরনের কার্যক্রমের মধ্যে রাখলে এ শিশুরাই এক সময় হবে আইএসের ভবিষ্যৎ যোদ্ধা বাহিনী। শিশুদের ব্যতিক্রম উপায়ে বড় করার জন্য আইএস অনেক পদ্ধতি ব্যবহার করে। তার মধ্যে একটি পদ্ধতি হচ্ছে, শত্র“র ছিন্ন মস্তক দিয়ে তাদের ফুটবল খেলার ব্যবস্থা করা। গবেষকরা বলেছেন, ছেলে শিশুদের কোরানের আয়াত মুখস্থ করতে হয় এবং জিহাদের প্রশিক্ষণ নিতে হয়। সেখানে গোলাগুলি, কারাতে এবং অস্ত্র নিয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। মেয়ে শিশুদের বলা হয় ‘খেলাফতের মুক্তা’। তাদের অবশ্যই ইসলামী আইন অনুসারে অন্দর মহলে থাকতে হবে। একজন জ্যেষ্ঠ গবেষক নিকিতা মালিক বলেন, ‘আইএস খুব ধৈর্য, চতুরতা এবং কৌশলের সঙ্গে পরবর্তী প্রজন্মের জিহাদি তৈরি করছে। তাদের ৩১ হাজার নারী এখন গর্ভবতী। এরা যে সন্তান প্রসব করবেন তাদের দিয়েই তৈরি করা হবে আগামী বাহিনী।’ একজন বয়স্ক মানুষকে খেলাফতের আদর্শে দীক্ষিত করা আইএসের জন্য কঠিন কাজ। অনেক ক্ষেত্রেই ঠিকমতো কাজ হয় না। তাছাড়া বয়স্কদের ভেতরে সংশয় কাজ করে। তারা ন্যায়-অন্যায়ের তফাৎ জানে। কিন্তু সদ্যজাত শিশুদের ক্ষেত্রে এ সমস্যা থাকবে না। তাদের ছোটবেলা থেকে যেভাবে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে, যা শেখানো হবে, তারা ঠিক তাই শিখবে। তারা হবে আইএসের আদর্শ যোদ্ধা।
No comments