শিক্ষক-ব্যাংকারদের আলটিমেটাম
অষ্টম
জাতীয় বেতন কাঠামোতে বৈষম্য নিরসনের দাবিতে আলটিমেটাম দিয়েছেন
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও ব্যাংকাররা। গতকাল পৃথক কর্মসূচি থেকে তারা এ
আলটিমেটাম দেন। আগামী শনিবারের মধ্যে দাবি না মানা হলে লাগাতার কর্মসূচির
ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন। পূর্ব-ঘোষিত
কর্মসূচির অংশ হিসেবে গতকাল সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা দুই ঘণ্টার
কর্মবিরতি পালন করেন। এদিকে গতকাল এক ঘণ্টার কর্মসূচি পালন করেছেন
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। বেতন-বৈষম্য দূর না করলে সামনে
গণছুটিতে যাওয়ার মতো কঠোর কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছেন তারা।
গতকাল বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের আহ্বানে সকাল ১১টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত দেশের ৩৭টি বিশ্ববিদ্যালয়ে একযোগে কর্মবিরতি কর্মসূচি পালন করা হয়। তিন ঘণ্টার কর্মবিরতি ও অবস্থান ধর্মঘট আগামীকাল পর্যন্ত চলবে। শিক্ষকদের কালোব্যাজ ধারণ কর্মসূচি চলছে। বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে ১০ই জানুয়ারি কোনো কর্মসূচি রাখা হয়নি। এর মধ্যে দাবি মানা না হলে ১১ই জানুয়ারি থেকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালন করা হবে। এদিকে কেন্দ্রীয়ভাবে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলাস্থ বটতলায় কর্মসূচি পালন করে। অবস্থান কর্মসূচিতে শিক্ষকরা তাদের আন্দোলন চলাকালে কতিপয় আমলা মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্তকে পাশ কাটিয়ে ভুয়া পরিপত্র দিয়ে শিক্ষকদের অপমান করেছে অভিযোগ করে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। একই সঙ্গে ১১ই জানুয়ারি থেকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে লাগাতার ধর্মঘট শুরু হলে এর দায়ভার সরকারকে নিতে হবে বলেও মন্তব্য করেন তারা। ফেডারেশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক ড. ইমদাদুল হকের সভাপতিত্বে অবস্থান কর্মসূচিতে বক্তৃতা করেন মহাসচিব অধ্যাপক ড. এএসএম মাকসুদ কামাল, অধ্যাপক ড. নাজমা শাহীন, অধ্যাপক ড. আ ব ম ফারুক, অধ্যাপক ড. শফিক-উজ-জামান, কলা অনুষদের ডীন অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান, টেলিভিশন ও ফিল্ম অধ্যয়ন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এজেএম শফিউল আলম ভূঁইয়া, অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক জিয়াউর রহমান, অধ্যাপক মো. নিজামুল হক ভূঁইয়া, অধ্যাপক ড. একেএম গোলাম রব্বানী, অধ্যাপক ড. মো. রহমত উল্লাহ প্রমুখ। তিন দফা দাবিতে শিক্ষকরা দুই মাস ধরে আন্দোলন করে আসছেন। দাবিগুলো হলো- অষ্টম জাতীয় বেতন কাঠামোতে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের জন্য সপ্তম জাতীয় বেতন কাঠামোর সম্পূর্ণ অনুরূপ সিলেকশন গ্রেড ও টাইম-স্কেল বহালসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা অব্যাহত রাখতে হবে; অষ্টম জাতীয় বেতন কাঠামোতে সিনিয়র সচিবের যে স্থান রাখা হয়েছে, সেই স্থানে গ্রেড-১ প্রাপ্ত অধ্যাপকদের মধ্য থেকে একটি অংশকে শতকরা হারে উন্নীত করার বিধান রাখতে হবে; সরকারি কর্মকর্তাদের অনুরূপ গাড়ি ও অন্যান্য সুবিধা শিক্ষকদের ক্ষেত্রেও নিশ্চিত করতে হবে।
অবস্থান কর্মসূচিতে অধ্যাপক ড. এএসএম মাকসুদ কামাল বলেন, আমরা অনেক সময় দিয়েছি সরকারকে। শিক্ষার্থীদের জন্য ক্ষতির কারণ হয় এমন কোন কর্মসূচি দেইনি। কিন্তু এখন আর উপায় নেই। আমাদের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। কতিপয় আমলাদের কারণে আজ শিক্ষকরা অপমানিত হচ্ছেন। এসব আমলারা দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দেয়ার পাঁয়তারা করছে। লাগাতার কর্মসূচির কারণে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে লেখাপড়ায় ব্যাঘাত ঘটলে এর দায়ভার শিক্ষকরা নেবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, শিক্ষকরা গত দুই মাস থেকে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি দিয়ে দাবী আদায়ের চেষ্টা করছেন। অর্থমন্ত্রী দাবি পূরণ হবে বলেও আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু অষ্টম জাতীয় বেতন কাঠামোতে অর্থমন্ত্রী শিক্ষকদের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। ঘোষিত বেতন কাঠামোতে শিক্ষকদের কোন দাবিই পূরণ হয়নি। তাই যে কোন কঠোর আন্দোলনের জন্য সরকারই দায়ী থাকবে। অধ্যাপক ড. মাকসুদ কামাল বলেন, অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের স্বাক্ষরিত একটি ভুয়া পরিপত্র শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। সেই পরিপত্রে মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্তকে পাল্টিয়ে দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, এ অপরাধ যারা করেছে তাদেরকে আমরা চিনি। শিক্ষকরা সবসময় সত্য প্রতিষ্ঠা করে থাকেন। আমরা সত্যের পক্ষে, ওই আমলারা অসত্যের পক্ষে। আমরা যদি আরো আন্দোলন করতে চাই তবে ওই আমলাদের বিপক্ষেই করব। এ সময় তিনি তদন্তের মাধ্যমে শিক্ষকদেরকে অসম্মানের সঙ্গে জড়িত আমলাদের বিচার দাবি করেন। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সমালোচনা করে তিনি বলেন, এখন অর্থমন্ত্রী বিবৃতি দিয়ে নানান ধরনের কথা বলছেন। তার মতো একজন সিনিয়র মন্ত্রীর ওপর যদি শিক্ষকেরা আস্থা রাখতে না পারে, তাহলে কার ওপরে রাখবে?
সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক ড. ইমদাদুল হক বলেন, শিক্ষকদের দাবি খুবই সীমিত এবং সুনির্দিষ্ট। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা তাদের মর্যাদা রক্ষার আন্দোলনে কোনভাবেই শিক্ষার্থীদেরকে জিম্মি করতে চান না। পেট্রলবোমা সন্ত্রাসের সময়ও জীবনবাজি রেখে তারা ক্লাস নিয়েছে। শুক্রবার নির্ধারিত ছুটির দিনেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যারয়ে শিক্ষকরা ক্লাস নিয়েছেন। তাদের অক্লান্ত পরিশ্রমে বিশ্ববিদ্যালয়ে কোন সেশনজট নেই। তিনি বলেন, সরকারের ওপর মহলের ব্যর্থতায় যদি শিক্ষকদের কর্মবিরতিতে যেতে হয় তবে সে দায় তাদের। যারা ষড়যন্ত্র করছে তাদের ওপর সেই দায় বর্তাবে। শিক্ষকদের আন্দোলন মর্যাদা রক্ষার। মর্যাদাহানি করে, এমন কোন কিছু আমরা চাই না। অধ্যাপক নাজমা শাহীন বলেন, শিক্ষকদেরকে নিয়ে সব সময় ষড়যন্ত্র হয়েছে এখনো হচ্ছে। শিক্ষক সমাজকে হেয় করার অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে। এটা কোন রাজনৈতিক আন্দোলন নয়। এটা মর্যাদা রক্ষার আন্দোলন। অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামান বলেন, এমন একটা সরকারের সময় এটা হচ্ছে যে সরকার আমাদের কাম্য। তাদের বক্তব্য আজ আমাদেরকে ব্যথিত করে। সরকারের যে অংশটি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদেরকে নিয়ে এমন কাজে ব্যস্ত তারা কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্থক্য বোঝে না। তিনি বলেন, এটা আমাদের ব্যর্থতা। কারণ আমরা ওই শিক্ষার্থীদের কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে পার্থক্য বোঝাতে পারিনি। অধ্যাপক ড. এজেএম শফিউল আলম ভূঁইয়া বলেন, অষ্টম বেতন কাঠামোতে গ্রেড-২ থেকে গ্রেড-১ এ যাওয়ার যে পদ্ধতির কথা বলা হয়েছে তা ‘৭৩ সালের অধ্যাদেশ পরিপন্থি। অধ্যাদেশ অনুসারে গ্রেড-২ থেকে গ্রেড-১ উন্নীত হওয়া ঠিক করবে বিশ্ববিদ্যালয়। তবে বেতন কাঠামোতে তা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে একটি কমিটি ঠিক করবে বলে বলা হয়। তিনি বলেন, আমলা আমাদের বলেন আপনাদের আন্দোলনে শিক্ষার্থীরা সম্পৃক্ত আছে কিনা। আমাদের কাছে অনেক শিক্ষার্থী এসে আন্দোলনে শরিক হতে চেয়েছেন। কিন্তু আমরা তাদের নিষেধ করেছি। প্রয়োজন হলে তারাও কর্মসূচি দিয়ে তাদের শিক্ষকদের মর্যাদার লড়াইয়ে ঝাঁপিয়ে পড়বে। এটাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ধর্ম। অধ্যাপক ড. নিজামুল হক ভূঁইয়া বলেন, অর্থমন্ত্রী আত্মীয়করণ, স্বজনপ্রীতি ও দুর্নীতিগ্রস্ত। তিনি তার আত্মীয়দের সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বসিয়েছেন। সুতরাং ভূতের মুখে রাম রাম মানায় না। এদিকে দেশের ৩৭টি বিশ্ববিদ্যালয়ে এ কর্মসূচি পালন করা হয়।
ইবি প্রতিনিধি জানান, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত অনুষদ ভবনের করিডরে কর্মসূচি পালন করেন। কর্মসূচিতে বক্তারা তাদের দাবি মেনে নেয়ার জন্য সরকারের কাছে জোর দাবি জানান। তা না হলে আগামী ১১ তারিখ থেকে সর্বাত্মক কর্মবিরতিসহ টানা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন শিক্ষকরা। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির আয়োজনে অবস্থান কর্মসূচি ও কর্মবিরতি অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ইবিশিস এর সভাপতি প্রফেসর ড. এমতাজ হোসেন, সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর ড. মো. অলী উল্ল্যাহ, বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সাবেক মহাসচিব প্রফেসর ড. হারুন-উর-রশিদ আশকারী, ফেডারেশনের যুগ্ম মহাসচিব প্রফেসর ড. আক্তারুল ইসলাম জিল্লুসহ অন্যান্য শিক্ষক নেতৃবৃন্দ ও শতাধিক শিক্ষক উপস্থিত ছিলেন। সভায় বক্তারা বলেন, ‘দেশের যত বড় বড় অবদান আছে জ্ঞানীদের, শিক্ষকদের। মুক্তিযুদ্ধের সময় শিক্ষক তথা বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করা হয়েছিল। কারণ তারা দেশের চালিকাশক্তি। দেশে লবণাক্ত এলাকায় ফসল চাষ করা আবিষ্কার করেছেন শিক্ষকরা, সচিবরা নন। এছাড়াও আরও অনেক অবদান রয়েছে শিক্ষকদের। সচিব তৈরি করা শিক্ষকদের কাজ। এতদসত্ত্বেও কেন শিক্ষকদের যথাযোগ্য মর্যাদা দেয়া হবে না।’
বাকৃবি প্রতিনিধি জানান, অষ্টম জাতীয় বেতন কাঠামোতে অর্থমন্ত্রীর দেয়া প্রতিশ্রুতি পূরণ ও সব অসঙ্গতি দূরীকরণের দাবিতে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) কর্মবিরতি ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। বৃহস্পতিবার কৃষি অনুষদীয় করিডরে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের ব্যানারে শিক্ষকরা এ কর্মসূচি পালন করেন। সকাল ১১টা থেকে ক্লাস বর্জন করে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. খন্দকার শরীফুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মো. রফিকুল ইসলাম সরদারের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন অধ্যাপক ড. মনোরঞ্জন দাস, অধ্যাপক ড. নজরুল ইসলাম, অধ্যাপক ড. খন্দকার মো. মোস্তাফিজুর রহমান, অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মহির উদ্দীন, অধ্যাপক ড. মো. হারুন-অর-রশিদ, অধ্যাপক ড. আবদুল্লাহ ইকবাল, অধ্যাপক মো. সাইদুর রহমান প্রমুখ।
হাবিপ্রবি প্রতিনিধি জানান, অষ্টম জাতীয় বেতন স্কেল-সংক্রান্ত গেজেটে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের দাবিসমূহের প্রতিফলন না হওয়ায় বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের কর্মসূচি হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে কর্মবিরতি ও অবস্থান ধর্মঘট পালন করেছে হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি। বৃহস্পতিবার েেবলা ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত এ কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষকরা। অবস্থান কর্মসূচি চলাকালে বক্তব্য দেন হাবিপ্রবির শিক্ষক সমিতির সভাপতি প্রফেসর মো. মিজানুর রহমান, সদস্য প্রফেসর ড. বলরাম রায়, প্রফেসর ড. মো. আবদুল হামিদ, প্রফেসর ড. সাইফুল হুদা, ড. মো. মামুনুর রশীদ প্রমুখ। বক্তারা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের যৌক্তিক দাবি মেনে না নেয়া পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। ১১ই জানুয়ারি থেকে লাগাতার কর্মবিরতি পালন করা হবে। অনতিবিলম্বে অষ্টম বেতন কাঠামোয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের দাবিগুলো অন্তর্ভুক্ত করে শিক্ষকদের প্রাপ্য মর্যাদা দেয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান বক্তারা।
জাবি প্রতিনিধি জানান, অষ্টম জাতীয় বেতন কাঠামোতে অর্থমন্ত্রী প্রদত্ত প্রতিশ্রুতি পূরণ ও অন্যান্য অসঙ্গতি দূরীকরণের দাবিতে কর্মবিরতি ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। গতকাল বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত নতুন কলা ও মানবিক অনুষদ ভবনের সামনে এ কর্মসূচি পালন করেন তারা। কর্মসূচিতে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মাফরুহী সাত্তার বলেন, আমরা শুধু বেতন-ভাতার জন্য আন্দোলন করছি না, আমরা আমাদের মর্যাদার লড়াইয়ের জন্য এ আন্দোলন করছি। শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে আন্দোলন করা আমাদের উদ্দেশ্য নয়। আমাদের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। তাই আমরা এ ধরনের কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামতে বাধ্য হয়েছি। অবস্থান কর্মসূচিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকরা তাদের দাবির যৌক্তিকতা তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন। এ সময় নির্ধারিত সময়ের মধ্যে দাবি আদায় না হলে ১১ই জানুয়ারি থেকে সর্বাত্মক কর্মবিরতিতে যাওয়ার ঘোষণা দেন তারা। শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক খবির উদ্দিনের সভাপতিত্বে কর্মসূচিতে আরও বক্তব্য রাখেন অধ্যাপক শরীফ উদ্দিন, অধ্যাপক সামসুল আলম সেলিম, অধ্যাপক এ টি এম আতিকুর রহমান, অধ্যাপক হানিফ আলী, অধ্যাপক মানস চৌধুরী, অধ্যাপক এ কে এম শাহনেওয়াজ, অধ্যাপক আবু দায়েন প্রমুখ।
শাবি প্রতিনিধি জানান, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের জন্যে অষ্টম জাতীয় বেতন কাঠামোতে অর্থমন্ত্রীর দেয়া প্রতিশ্রুতি পূরণ এবং অসঙ্গতি দূরীকরণের দাবি জানিয়ে অবস্থান ধর্মঘট ও সমাবেশ করেছে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। গতকাল সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তিযুদ্ধের ভাস্কর্য ‘চেতনা-৭১’ চত্বরে প্যান্ডেল স্থাপন করে ব্যানার টানিয়ে এ অবস্থান কর্মসূচি ও সমাবেশ করেন শিক্ষকরা। বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি এ অবস্থান ধর্মঘট ও সমাবেশের আয়োজন করে। শিক্ষক সমিতির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মুহিবুল আলমের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. আবদুল গণির সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. তোফায়েল আহমেদ, অধ্যাপক সৈয়দ ড. সামসুল আলম, অধ্যাপক ড. আখতারুল ইসলাম, অধ্যাপক ড. সাজেদুল করিম, অধ্যাপক ড. সাবিনা ইসলাম, অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ইউনুছ, অধ্যাপক ড. আবদুল আউয়াল বিশ্বাস, অধ্যাপক ড. দ্বীপেন দেবনাথ প্রমুখ। সমাবেশে বক্তারা বলেন, শিক্ষকরা হচ্ছেন জাতির মেরুদণ্ড। একটি জাতি আলোকিত হয় এ শিক্ষক সমাজের ওপর ভিত্তি করে। তাই শিক্ষককে যথাযত মর্য়াদা দিতে হবে। তা না হলে জাতি অন্ধকারে নিমজ্জিত হবে। বক্তারা আরও বলেন, বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের ওপর আমাদের যথেষ্ট আস্থা আছে। আমাদের দাবি নৈতিক। দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আমরা ঘরে ফিরব না। এ সময় বক্তারা অবিলম্বে সরকারের পক্ষ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করার আহ্বান জানান। অন্যথায় বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের এ আন্দোলন আরও কঠোর থেকে কঠোরতর করা হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন।
আন্দোলনে সাড়ে চার হাজার ব্যাংকার
এদিকে গতকাল সকাল ১০টা থেকে ব্যাংকের সাড়ে চার হাজার কর্মকর্তা একযোগে নিচে নেমে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। সবার হাতে নানা ধরনের স্লোগান লেখা প্ল্যাকার্ড, ফেস্টুন, ব্যানার ছিল। নতুন বেতন কাঠামোয় পদবৈষম্য দূর করাসহ তিন দফা দাবিতে কর্মবিরতি পালন করেছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা। বাংলাদেশ ব্যাংক অফিসার্স ওয়েলফেয়ার কাউন্সিলের পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী বৃহস্পতিবার সকালে সব স্তরের কর্মকর্তারা কাজ বন্ধ রেখে ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় চত্বরে ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত এক ঘণ্টা অবস্থান করেন। এ সময় বাইরে থেকে কাউকে ব্যাংকচত্বরে ঢুকতে দেয়া হয়নি।
দাবি আদায়ে আগামী ১০ ও ১১ই জানুয়ারি সকাল ১০টা থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত এবং ১২-১৪ই জানুয়ারি সকাল ১০ থেকে ১২টা পর্যন্ত কর্মবিরতি পালন করা হবে বলে সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক শাহরিয়ার সিদ্দিকী জানিয়েছেন। এর মধ্যে সরকার দাবি মেনে না নিলে ১৫ই জানুয়ারি থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা গণছুটিতে যাবেন বলে কাউন্সিলের সভাপতি ছিদ্দিকুর রহমান মোল্লা জানিয়েছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের অভিযোগ- অষ্টম জাতীয় বেতন স্কেলে তাদের মর্যাদাহানি করা হয়েছে। এর আগে সব বেতন স্কেলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী পরিচালক, বিসিএস ক্যাডার ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকরা একই স্কেল বা গ্রেডভুক্ত থাকলেও নতুন বেতন কাঠামোয় সহকারী পরিচালক পদ এক ধাপ নামিয়ে নবম গ্রেড করা হয়েছে। আর বিসিএস ক্যাডার ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অষ্টম গ্রেডে রাখা হয়েছে। এ ছাড়া বেতন স্কেলের গেজেটে বাংলাদেশ ব্যাংককে রাষ্ট্রীয় অন্যান্য ব্যাংকের সঙ্গে দেখানো হয়েছে বলে তাদের অভিযোগ। গেজেট প্রকাশের পর গত ২২ই ডিসেম্বর এক সংবাদ সম্মেলনে সহকারী পরিচালক পদ অষ্টম গ্রেডে উন্নীত করা, গেজেটে বাংলাদেশ ব্যাংককে আলাদাভাবে উল্লেখ করা এবং নির্বাহী পরিচালক পদ গ্রেড-১-এ উন্নীত করার দাবি তোলা হয়। দাবি আদায়ে এরপর কালোব্যাজ ধারণ, প্রতিবাদ সমাবেশ, মানববন্ধনও করেছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। বৃহস্পতিবার কর্মবিরতিতে ছিদ্দিকুর রহমান মোল্লা বলেন, গভর্নর বলেছেন, আমাদের দাবি পূরণের দায়িত্ব তিনি নিচ্ছেন। কিন্তু আমরা এতে সন্তুষ্ট না। আমরা আর কথায় বিশ্বাস করতে চাই না। বাস্তবায়ন চাই। ১৪ই জানুয়ারির মধ্যে দাবি আদায় না হলে গণছুটি কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হবে। একটি সূত্র দাবি করেছে, বৃহস্পতিবার আন্দোলন চলাকালীন অর্থ মন্ত্রণালয়ের সচিব গভর্নর ড. আতিউর রহমানের কাছে টেলিফোন করেছেন। তাতে আন্দোলন থামানোর চেষ্টার কথা বলা হয়।
গতকাল বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের আহ্বানে সকাল ১১টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত দেশের ৩৭টি বিশ্ববিদ্যালয়ে একযোগে কর্মবিরতি কর্মসূচি পালন করা হয়। তিন ঘণ্টার কর্মবিরতি ও অবস্থান ধর্মঘট আগামীকাল পর্যন্ত চলবে। শিক্ষকদের কালোব্যাজ ধারণ কর্মসূচি চলছে। বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে ১০ই জানুয়ারি কোনো কর্মসূচি রাখা হয়নি। এর মধ্যে দাবি মানা না হলে ১১ই জানুয়ারি থেকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালন করা হবে। এদিকে কেন্দ্রীয়ভাবে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলাস্থ বটতলায় কর্মসূচি পালন করে। অবস্থান কর্মসূচিতে শিক্ষকরা তাদের আন্দোলন চলাকালে কতিপয় আমলা মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্তকে পাশ কাটিয়ে ভুয়া পরিপত্র দিয়ে শিক্ষকদের অপমান করেছে অভিযোগ করে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। একই সঙ্গে ১১ই জানুয়ারি থেকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে লাগাতার ধর্মঘট শুরু হলে এর দায়ভার সরকারকে নিতে হবে বলেও মন্তব্য করেন তারা। ফেডারেশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক ড. ইমদাদুল হকের সভাপতিত্বে অবস্থান কর্মসূচিতে বক্তৃতা করেন মহাসচিব অধ্যাপক ড. এএসএম মাকসুদ কামাল, অধ্যাপক ড. নাজমা শাহীন, অধ্যাপক ড. আ ব ম ফারুক, অধ্যাপক ড. শফিক-উজ-জামান, কলা অনুষদের ডীন অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান, টেলিভিশন ও ফিল্ম অধ্যয়ন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এজেএম শফিউল আলম ভূঁইয়া, অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক জিয়াউর রহমান, অধ্যাপক মো. নিজামুল হক ভূঁইয়া, অধ্যাপক ড. একেএম গোলাম রব্বানী, অধ্যাপক ড. মো. রহমত উল্লাহ প্রমুখ। তিন দফা দাবিতে শিক্ষকরা দুই মাস ধরে আন্দোলন করে আসছেন। দাবিগুলো হলো- অষ্টম জাতীয় বেতন কাঠামোতে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের জন্য সপ্তম জাতীয় বেতন কাঠামোর সম্পূর্ণ অনুরূপ সিলেকশন গ্রেড ও টাইম-স্কেল বহালসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা অব্যাহত রাখতে হবে; অষ্টম জাতীয় বেতন কাঠামোতে সিনিয়র সচিবের যে স্থান রাখা হয়েছে, সেই স্থানে গ্রেড-১ প্রাপ্ত অধ্যাপকদের মধ্য থেকে একটি অংশকে শতকরা হারে উন্নীত করার বিধান রাখতে হবে; সরকারি কর্মকর্তাদের অনুরূপ গাড়ি ও অন্যান্য সুবিধা শিক্ষকদের ক্ষেত্রেও নিশ্চিত করতে হবে।
অবস্থান কর্মসূচিতে অধ্যাপক ড. এএসএম মাকসুদ কামাল বলেন, আমরা অনেক সময় দিয়েছি সরকারকে। শিক্ষার্থীদের জন্য ক্ষতির কারণ হয় এমন কোন কর্মসূচি দেইনি। কিন্তু এখন আর উপায় নেই। আমাদের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। কতিপয় আমলাদের কারণে আজ শিক্ষকরা অপমানিত হচ্ছেন। এসব আমলারা দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দেয়ার পাঁয়তারা করছে। লাগাতার কর্মসূচির কারণে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে লেখাপড়ায় ব্যাঘাত ঘটলে এর দায়ভার শিক্ষকরা নেবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, শিক্ষকরা গত দুই মাস থেকে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি দিয়ে দাবী আদায়ের চেষ্টা করছেন। অর্থমন্ত্রী দাবি পূরণ হবে বলেও আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু অষ্টম জাতীয় বেতন কাঠামোতে অর্থমন্ত্রী শিক্ষকদের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। ঘোষিত বেতন কাঠামোতে শিক্ষকদের কোন দাবিই পূরণ হয়নি। তাই যে কোন কঠোর আন্দোলনের জন্য সরকারই দায়ী থাকবে। অধ্যাপক ড. মাকসুদ কামাল বলেন, অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের স্বাক্ষরিত একটি ভুয়া পরিপত্র শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। সেই পরিপত্রে মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্তকে পাল্টিয়ে দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, এ অপরাধ যারা করেছে তাদেরকে আমরা চিনি। শিক্ষকরা সবসময় সত্য প্রতিষ্ঠা করে থাকেন। আমরা সত্যের পক্ষে, ওই আমলারা অসত্যের পক্ষে। আমরা যদি আরো আন্দোলন করতে চাই তবে ওই আমলাদের বিপক্ষেই করব। এ সময় তিনি তদন্তের মাধ্যমে শিক্ষকদেরকে অসম্মানের সঙ্গে জড়িত আমলাদের বিচার দাবি করেন। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সমালোচনা করে তিনি বলেন, এখন অর্থমন্ত্রী বিবৃতি দিয়ে নানান ধরনের কথা বলছেন। তার মতো একজন সিনিয়র মন্ত্রীর ওপর যদি শিক্ষকেরা আস্থা রাখতে না পারে, তাহলে কার ওপরে রাখবে?
সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক ড. ইমদাদুল হক বলেন, শিক্ষকদের দাবি খুবই সীমিত এবং সুনির্দিষ্ট। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা তাদের মর্যাদা রক্ষার আন্দোলনে কোনভাবেই শিক্ষার্থীদেরকে জিম্মি করতে চান না। পেট্রলবোমা সন্ত্রাসের সময়ও জীবনবাজি রেখে তারা ক্লাস নিয়েছে। শুক্রবার নির্ধারিত ছুটির দিনেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যারয়ে শিক্ষকরা ক্লাস নিয়েছেন। তাদের অক্লান্ত পরিশ্রমে বিশ্ববিদ্যালয়ে কোন সেশনজট নেই। তিনি বলেন, সরকারের ওপর মহলের ব্যর্থতায় যদি শিক্ষকদের কর্মবিরতিতে যেতে হয় তবে সে দায় তাদের। যারা ষড়যন্ত্র করছে তাদের ওপর সেই দায় বর্তাবে। শিক্ষকদের আন্দোলন মর্যাদা রক্ষার। মর্যাদাহানি করে, এমন কোন কিছু আমরা চাই না। অধ্যাপক নাজমা শাহীন বলেন, শিক্ষকদেরকে নিয়ে সব সময় ষড়যন্ত্র হয়েছে এখনো হচ্ছে। শিক্ষক সমাজকে হেয় করার অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে। এটা কোন রাজনৈতিক আন্দোলন নয়। এটা মর্যাদা রক্ষার আন্দোলন। অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামান বলেন, এমন একটা সরকারের সময় এটা হচ্ছে যে সরকার আমাদের কাম্য। তাদের বক্তব্য আজ আমাদেরকে ব্যথিত করে। সরকারের যে অংশটি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদেরকে নিয়ে এমন কাজে ব্যস্ত তারা কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্থক্য বোঝে না। তিনি বলেন, এটা আমাদের ব্যর্থতা। কারণ আমরা ওই শিক্ষার্থীদের কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে পার্থক্য বোঝাতে পারিনি। অধ্যাপক ড. এজেএম শফিউল আলম ভূঁইয়া বলেন, অষ্টম বেতন কাঠামোতে গ্রেড-২ থেকে গ্রেড-১ এ যাওয়ার যে পদ্ধতির কথা বলা হয়েছে তা ‘৭৩ সালের অধ্যাদেশ পরিপন্থি। অধ্যাদেশ অনুসারে গ্রেড-২ থেকে গ্রেড-১ উন্নীত হওয়া ঠিক করবে বিশ্ববিদ্যালয়। তবে বেতন কাঠামোতে তা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে একটি কমিটি ঠিক করবে বলে বলা হয়। তিনি বলেন, আমলা আমাদের বলেন আপনাদের আন্দোলনে শিক্ষার্থীরা সম্পৃক্ত আছে কিনা। আমাদের কাছে অনেক শিক্ষার্থী এসে আন্দোলনে শরিক হতে চেয়েছেন। কিন্তু আমরা তাদের নিষেধ করেছি। প্রয়োজন হলে তারাও কর্মসূচি দিয়ে তাদের শিক্ষকদের মর্যাদার লড়াইয়ে ঝাঁপিয়ে পড়বে। এটাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ধর্ম। অধ্যাপক ড. নিজামুল হক ভূঁইয়া বলেন, অর্থমন্ত্রী আত্মীয়করণ, স্বজনপ্রীতি ও দুর্নীতিগ্রস্ত। তিনি তার আত্মীয়দের সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বসিয়েছেন। সুতরাং ভূতের মুখে রাম রাম মানায় না। এদিকে দেশের ৩৭টি বিশ্ববিদ্যালয়ে এ কর্মসূচি পালন করা হয়।
ইবি প্রতিনিধি জানান, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত অনুষদ ভবনের করিডরে কর্মসূচি পালন করেন। কর্মসূচিতে বক্তারা তাদের দাবি মেনে নেয়ার জন্য সরকারের কাছে জোর দাবি জানান। তা না হলে আগামী ১১ তারিখ থেকে সর্বাত্মক কর্মবিরতিসহ টানা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন শিক্ষকরা। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির আয়োজনে অবস্থান কর্মসূচি ও কর্মবিরতি অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ইবিশিস এর সভাপতি প্রফেসর ড. এমতাজ হোসেন, সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর ড. মো. অলী উল্ল্যাহ, বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সাবেক মহাসচিব প্রফেসর ড. হারুন-উর-রশিদ আশকারী, ফেডারেশনের যুগ্ম মহাসচিব প্রফেসর ড. আক্তারুল ইসলাম জিল্লুসহ অন্যান্য শিক্ষক নেতৃবৃন্দ ও শতাধিক শিক্ষক উপস্থিত ছিলেন। সভায় বক্তারা বলেন, ‘দেশের যত বড় বড় অবদান আছে জ্ঞানীদের, শিক্ষকদের। মুক্তিযুদ্ধের সময় শিক্ষক তথা বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করা হয়েছিল। কারণ তারা দেশের চালিকাশক্তি। দেশে লবণাক্ত এলাকায় ফসল চাষ করা আবিষ্কার করেছেন শিক্ষকরা, সচিবরা নন। এছাড়াও আরও অনেক অবদান রয়েছে শিক্ষকদের। সচিব তৈরি করা শিক্ষকদের কাজ। এতদসত্ত্বেও কেন শিক্ষকদের যথাযোগ্য মর্যাদা দেয়া হবে না।’
বাকৃবি প্রতিনিধি জানান, অষ্টম জাতীয় বেতন কাঠামোতে অর্থমন্ত্রীর দেয়া প্রতিশ্রুতি পূরণ ও সব অসঙ্গতি দূরীকরণের দাবিতে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) কর্মবিরতি ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। বৃহস্পতিবার কৃষি অনুষদীয় করিডরে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের ব্যানারে শিক্ষকরা এ কর্মসূচি পালন করেন। সকাল ১১টা থেকে ক্লাস বর্জন করে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. খন্দকার শরীফুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মো. রফিকুল ইসলাম সরদারের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন অধ্যাপক ড. মনোরঞ্জন দাস, অধ্যাপক ড. নজরুল ইসলাম, অধ্যাপক ড. খন্দকার মো. মোস্তাফিজুর রহমান, অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মহির উদ্দীন, অধ্যাপক ড. মো. হারুন-অর-রশিদ, অধ্যাপক ড. আবদুল্লাহ ইকবাল, অধ্যাপক মো. সাইদুর রহমান প্রমুখ।
হাবিপ্রবি প্রতিনিধি জানান, অষ্টম জাতীয় বেতন স্কেল-সংক্রান্ত গেজেটে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের দাবিসমূহের প্রতিফলন না হওয়ায় বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের কর্মসূচি হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে কর্মবিরতি ও অবস্থান ধর্মঘট পালন করেছে হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি। বৃহস্পতিবার েেবলা ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত এ কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষকরা। অবস্থান কর্মসূচি চলাকালে বক্তব্য দেন হাবিপ্রবির শিক্ষক সমিতির সভাপতি প্রফেসর মো. মিজানুর রহমান, সদস্য প্রফেসর ড. বলরাম রায়, প্রফেসর ড. মো. আবদুল হামিদ, প্রফেসর ড. সাইফুল হুদা, ড. মো. মামুনুর রশীদ প্রমুখ। বক্তারা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের যৌক্তিক দাবি মেনে না নেয়া পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। ১১ই জানুয়ারি থেকে লাগাতার কর্মবিরতি পালন করা হবে। অনতিবিলম্বে অষ্টম বেতন কাঠামোয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের দাবিগুলো অন্তর্ভুক্ত করে শিক্ষকদের প্রাপ্য মর্যাদা দেয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান বক্তারা।
জাবি প্রতিনিধি জানান, অষ্টম জাতীয় বেতন কাঠামোতে অর্থমন্ত্রী প্রদত্ত প্রতিশ্রুতি পূরণ ও অন্যান্য অসঙ্গতি দূরীকরণের দাবিতে কর্মবিরতি ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। গতকাল বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত নতুন কলা ও মানবিক অনুষদ ভবনের সামনে এ কর্মসূচি পালন করেন তারা। কর্মসূচিতে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মাফরুহী সাত্তার বলেন, আমরা শুধু বেতন-ভাতার জন্য আন্দোলন করছি না, আমরা আমাদের মর্যাদার লড়াইয়ের জন্য এ আন্দোলন করছি। শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে আন্দোলন করা আমাদের উদ্দেশ্য নয়। আমাদের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। তাই আমরা এ ধরনের কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামতে বাধ্য হয়েছি। অবস্থান কর্মসূচিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকরা তাদের দাবির যৌক্তিকতা তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন। এ সময় নির্ধারিত সময়ের মধ্যে দাবি আদায় না হলে ১১ই জানুয়ারি থেকে সর্বাত্মক কর্মবিরতিতে যাওয়ার ঘোষণা দেন তারা। শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক খবির উদ্দিনের সভাপতিত্বে কর্মসূচিতে আরও বক্তব্য রাখেন অধ্যাপক শরীফ উদ্দিন, অধ্যাপক সামসুল আলম সেলিম, অধ্যাপক এ টি এম আতিকুর রহমান, অধ্যাপক হানিফ আলী, অধ্যাপক মানস চৌধুরী, অধ্যাপক এ কে এম শাহনেওয়াজ, অধ্যাপক আবু দায়েন প্রমুখ।
শাবি প্রতিনিধি জানান, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের জন্যে অষ্টম জাতীয় বেতন কাঠামোতে অর্থমন্ত্রীর দেয়া প্রতিশ্রুতি পূরণ এবং অসঙ্গতি দূরীকরণের দাবি জানিয়ে অবস্থান ধর্মঘট ও সমাবেশ করেছে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। গতকাল সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তিযুদ্ধের ভাস্কর্য ‘চেতনা-৭১’ চত্বরে প্যান্ডেল স্থাপন করে ব্যানার টানিয়ে এ অবস্থান কর্মসূচি ও সমাবেশ করেন শিক্ষকরা। বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি এ অবস্থান ধর্মঘট ও সমাবেশের আয়োজন করে। শিক্ষক সমিতির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মুহিবুল আলমের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. আবদুল গণির সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. তোফায়েল আহমেদ, অধ্যাপক সৈয়দ ড. সামসুল আলম, অধ্যাপক ড. আখতারুল ইসলাম, অধ্যাপক ড. সাজেদুল করিম, অধ্যাপক ড. সাবিনা ইসলাম, অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ইউনুছ, অধ্যাপক ড. আবদুল আউয়াল বিশ্বাস, অধ্যাপক ড. দ্বীপেন দেবনাথ প্রমুখ। সমাবেশে বক্তারা বলেন, শিক্ষকরা হচ্ছেন জাতির মেরুদণ্ড। একটি জাতি আলোকিত হয় এ শিক্ষক সমাজের ওপর ভিত্তি করে। তাই শিক্ষককে যথাযত মর্য়াদা দিতে হবে। তা না হলে জাতি অন্ধকারে নিমজ্জিত হবে। বক্তারা আরও বলেন, বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের ওপর আমাদের যথেষ্ট আস্থা আছে। আমাদের দাবি নৈতিক। দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আমরা ঘরে ফিরব না। এ সময় বক্তারা অবিলম্বে সরকারের পক্ষ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করার আহ্বান জানান। অন্যথায় বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের এ আন্দোলন আরও কঠোর থেকে কঠোরতর করা হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন।
আন্দোলনে সাড়ে চার হাজার ব্যাংকার
এদিকে গতকাল সকাল ১০টা থেকে ব্যাংকের সাড়ে চার হাজার কর্মকর্তা একযোগে নিচে নেমে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। সবার হাতে নানা ধরনের স্লোগান লেখা প্ল্যাকার্ড, ফেস্টুন, ব্যানার ছিল। নতুন বেতন কাঠামোয় পদবৈষম্য দূর করাসহ তিন দফা দাবিতে কর্মবিরতি পালন করেছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা। বাংলাদেশ ব্যাংক অফিসার্স ওয়েলফেয়ার কাউন্সিলের পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী বৃহস্পতিবার সকালে সব স্তরের কর্মকর্তারা কাজ বন্ধ রেখে ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় চত্বরে ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত এক ঘণ্টা অবস্থান করেন। এ সময় বাইরে থেকে কাউকে ব্যাংকচত্বরে ঢুকতে দেয়া হয়নি।
দাবি আদায়ে আগামী ১০ ও ১১ই জানুয়ারি সকাল ১০টা থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত এবং ১২-১৪ই জানুয়ারি সকাল ১০ থেকে ১২টা পর্যন্ত কর্মবিরতি পালন করা হবে বলে সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক শাহরিয়ার সিদ্দিকী জানিয়েছেন। এর মধ্যে সরকার দাবি মেনে না নিলে ১৫ই জানুয়ারি থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা গণছুটিতে যাবেন বলে কাউন্সিলের সভাপতি ছিদ্দিকুর রহমান মোল্লা জানিয়েছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের অভিযোগ- অষ্টম জাতীয় বেতন স্কেলে তাদের মর্যাদাহানি করা হয়েছে। এর আগে সব বেতন স্কেলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী পরিচালক, বিসিএস ক্যাডার ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকরা একই স্কেল বা গ্রেডভুক্ত থাকলেও নতুন বেতন কাঠামোয় সহকারী পরিচালক পদ এক ধাপ নামিয়ে নবম গ্রেড করা হয়েছে। আর বিসিএস ক্যাডার ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অষ্টম গ্রেডে রাখা হয়েছে। এ ছাড়া বেতন স্কেলের গেজেটে বাংলাদেশ ব্যাংককে রাষ্ট্রীয় অন্যান্য ব্যাংকের সঙ্গে দেখানো হয়েছে বলে তাদের অভিযোগ। গেজেট প্রকাশের পর গত ২২ই ডিসেম্বর এক সংবাদ সম্মেলনে সহকারী পরিচালক পদ অষ্টম গ্রেডে উন্নীত করা, গেজেটে বাংলাদেশ ব্যাংককে আলাদাভাবে উল্লেখ করা এবং নির্বাহী পরিচালক পদ গ্রেড-১-এ উন্নীত করার দাবি তোলা হয়। দাবি আদায়ে এরপর কালোব্যাজ ধারণ, প্রতিবাদ সমাবেশ, মানববন্ধনও করেছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। বৃহস্পতিবার কর্মবিরতিতে ছিদ্দিকুর রহমান মোল্লা বলেন, গভর্নর বলেছেন, আমাদের দাবি পূরণের দায়িত্ব তিনি নিচ্ছেন। কিন্তু আমরা এতে সন্তুষ্ট না। আমরা আর কথায় বিশ্বাস করতে চাই না। বাস্তবায়ন চাই। ১৪ই জানুয়ারির মধ্যে দাবি আদায় না হলে গণছুটি কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হবে। একটি সূত্র দাবি করেছে, বৃহস্পতিবার আন্দোলন চলাকালীন অর্থ মন্ত্রণালয়ের সচিব গভর্নর ড. আতিউর রহমানের কাছে টেলিফোন করেছেন। তাতে আন্দোলন থামানোর চেষ্টার কথা বলা হয়।
No comments