৪ চাঁদাবাজ পুলিশের খাঁচায় by তৌহিদ চৌধুরী প্রদীপ
হাওর
অঞ্চলের নদী পথে চাঁদাবাজির সময় শীর্ষ চাঁদাবাজ জামালগঞ্জের শুক্কুর আলীসহ
তার ৩ সহযোগী এখন পুলিশের খাঁচায় বন্দি। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সরাইল
উপজেলার আ. খালেকের পুত্র অশরাফ উদ্দীন বাদী হয়ে লালপুর গ্রামের আঞ্জব আলীর
পুত্র শুক্কুর আলী (৩৮), বেহেলী ইউপির আলীপুর গ্রামের মৃত শুক্কুর আহমেদের
পুত্র আশিক মিয়া (২৮), শফুর আলীর পুত্র এরশাদ মিয়া (২৮) ও গণি মিয়ার পুত্র
জামাল মিয়া (৩৫)কে আসামি করে গত ৬ই জানুয়ারি জামালগঞ্জ থানায় একটি
চাঁদাবাজির মামলা করেন, যার নং-২। মামলার এক দিন পরই গোপন সংবাদের ভিত্তিতে
গতকাল সকালে উপজেলার বেহেলী নদীর তীর থেকে ৪ চাঁদাবাজকে আটক করে পুলিশ। এ
নৌ-পথে যারা চাঁদাবাজি করে তারা খুবই ভয়ঙ্কর। একাধিক সূত্র জানায়, বাংলাদেশ
কার্গো ট্রলার বাল্কহেড শ্রমিক ইউনিয়ন ফতুল্লা নারায়ণগঞ্জের সভাপতি মা.
জাহাঙ্গীর আলম ও সেক্রেটারি শাহজাহান হাওলাদার স্বাক্ষরিত নৌ-পরিবহন
মন্ত্রী শাহজাহান খান এমপির সুপারিশ কৃত লিখিত আবেদন সুনামগঞ্জ জেলা পুলিশ
সুপার বরাবর প্রদান করা হয়েছে। তাদের আবেদন থেকে জানা যায়, সুনামগঞ্জের
জামালগঞ্জ, তাহিরপুর, মধ্যনগর এবং ধর্মপাশা থানার বিভিন্ন নদীতে নৌ
শ্রমিকদের নিকট থেকে শুক্কুর আলী গংদের, ধরমপাশার আইনুল ও ইসহাক মিয়ার
বাহিনীর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে পুলিশ সুপার সুনামগঞ্জকে সুপারিশ
করেন নৌ-পরিবহন মন্ত্রী। তারা দীর্ঘদিন যাবৎ নদীতে সীমাহীন চাঁদাবাজি করে
আসছে। চাঁদাবাজি বন্ধের অভিযোগের অনুলিপি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে উপজেলা
পর্যন্ত বিশটি প্রশাসনিক দপ্তরে প্রেরণ করেন। চাঁদাবাজি বন্ধের দাবিতে
সুনামগঞ্জ মালবাহী নৌ-পরিবহন শ্রমিক সমবায় সমিতির সেক্রেটারি সুনামগঞ্জ
জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের নিকট পৃথক-পৃথক আরও দুইটি আবেদন করেছেন।
জামালগঞ্জের বেহেলী নদী, গজারিয়া, শ্রীমন্তপুর নদী, মিলনপুর থেকে মাহমুদ
নগর, দুর্লভপুর, ফাসুয়ার মুখ স্লুইস গেইট, আহসানপুর, সুন্দরপুর, মাহমুদপুর,
পণ্ডুব, বেহেলী, ফতেহপুর, এলাকায় সকল নৌযান থেকে অযৌক্তিক অন্যায় ও
বেআইনিভাবে ৫০০ থেকে ১ হাজার টাকা পর্যন্ত প্রতি নৌকা থেকে চাঁদা আদায় করে
আসছে তারা। লিখিত আবেদন থেকে জানা যায়, তাহিরপুর উপজেলার বড়ছড়া, টেকেরঘাট,
ছাড়াগাঁও শুক্ল স্টেশন থেকে কয়লা, ফাজিলপুর, আনোয়ার পুর থেকে বালু ও নুরী
পাথর ক্রয় করে সারা দেশে যোগান দেয় ব্যবসায়ীরা। এসব আমদানিকৃত পণ্য বহনের
একমাত্র মাধ্যম জামালগঞ্জ, তাহিরপুর ও ধর্মপাশার নদীপথ। ওই নদীপথে বলগেট,
কার্গো, নৌকাগুলো চলাচলের সময় ৮-৯টি স্থানে ইঞ্জিন চালিত ছোট নৌকা দিয়ে
চাঁদা আদায় করেই চলছে চক্রটি। প্রতিদিন প্রায় শতাধিক নৌকা ও কার্গো থেকে
হাজার হাজার টাকা চাঁদা আদায় করা হয় বলে জানা গেছে। চাঁদাবাজদের কথামতো
চাঁদা না দিলে মারপিট করে। কখনও নৌ শ্রমিকদের মালামাল লুট করাসহ প্রাণনাশের
হুমকি দেয়। এ সব চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে জামালগঞ্জ, তাহিরপুর, ধর্মপাশা ও
মধ্যনগর থানায় একাধিক চাঁদাবাজির মামলায় জেল থেকে জামিনে এসে বেপরোয়া হয়ে
উঠেছে পেশাদার এই চক্রটি। এ ছাড়া সুলেমানপুর বাজার সংলগ্ন নদীতে সেন্ট্রি
নামে ৭ থেকে ১ হাজার ও মার্কার নামে ৫০০ টাকা, ফতেহপুর নদীতে ৫ থেকে ৭শ’,
সানবাড়ি নদীতে আড়াই থেকে ৩ হাজার, মুক্তারপুর কালাপানি নদীতে ৫শ’ টাকা করে
আদায় করছে সংঘবদ্ধ চাঁদাবাজ চক্রটি। তাদের নিষ্ঠুরতা আর মারমুখী হুমকিতে
বলগেট নৌকার মাঝিরা আতঙ্কিত অবস্থায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নদীপথে চলাচল করছেন
প্রতিনিয়তই। চাঁদাবাজির শিকার অসহায় নৌ শ্রমিকরা বলেন, ‘পেট বাঁচাতে অনেকেই
পিঠ পেতে দেই। অনেক সময় টাকা দিয়েও জীবন বাঁচানো কঠিন হয়ে পড়ে। তবুও পেটের
টানে এই পথে আসতে হয়’। বলগেড কার্গো নৌকা সমিতির কেন্দ্রীয় সভাপতি মো.
জাহাঙ্গীর আলম জানান, নৌপথে চাঁদাবাজদের নিষ্ঠুর অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে
গতবছর সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারসহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের বরাবর
তাদের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়েছিল। অভিযোগের পর প্রশাসনের
হস্তক্ষেপে কয়েক মাস নদীতে কোনো চাঁদাবাজ ছিল না। পরবর্তীতে চাঁদাবাজি
ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাওয়ায় নদীপথে যে কোনো সময় বলগেড কার্গো নৌকা চলাচল
বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এতে সরকারের কোটি কোটি টাকা রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হবে।
এব্যাপারে জামালগঞ্জ উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা মুক্তিযোদ্ধা
কমান্ডের ভারপ্রাপ্ত কমান্ডার ইউসুফ আর আজাদ বলেন, সুনামগঞ্জের হাওরের
বিভিন্ন নৌ-পথে চাঁদাবাজির বিষয়টি বেশ কয়েকবার জেলা আইনশৃঙ্খলা মিটিংয়ে
উত্থাপিত করেছি। এমন জঘন্য কাজ নতুন বিষয় নয়, আমাদের জন্য অভিশাপ।
জামালগঞ্জ থানায় অফিসার ইনচার্জ মো. আতিকুর রহমান বলেন, আমার থানা এলাকায়
কোনো চাঁদাবাজি হতে দেবো না। ইতিমধ্যে চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে,
বাকিদের খোঁজা হচ্ছে কোনো চাঁদাবাজকেই ছাড় দেবো না। আমার থানা এলাকায়
বিশেষভাবে নজরদারি করছি।
No comments