‘কলুষিত রাজনীতি সত্ত্বেও বাংলাদেশের রূপান্তর’ by টম ফেলিক্স জোয়েনক ও ফরেস্ট কুকসন
বাংলাদেশের
সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অগ্রগতি বিগত ২৫ বছরের মধ্যে অন্যতম
উল্লেখযোগ্য সফলতার গল্প। কিন্তু বাংলাদেশের রাজনৈতিকভাবে অকার্যকর
‘ব্যাটলিং বেগমস’ আজ দেশকে পেছনে টেনে ধরে রেখেছেন। তারা হলেন ক্ষমতাসীন
আওয়ামী লীগের শেখ হাসিনা ও বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল, বিএনপির
খালেদা জিয়া। সামরিক শাসন থেকে বের হয়ে এসে বাংলাদেশ অনুন্নত গণতন্ত্রের
একটি দেশ হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান গঠন করেছে।
শিশুদের বিদ্যালয়ে পাঠানো, নারী-পুরুষের সাম্য বৃদ্ধি, মাতৃ ও শিশু
স্বাস্থ্য উন্নতি আর দারিদ্র্য ঘুচাতে দেশটি ব্যাপক অগ্রগতি করেছে।
রাজনৈতিকভাবে চারবার সফল নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১ ও ২০০৮
সালে। প্রতিবারই নির্বাচনে জিতেছে বিরোধী দল। এটা এশিয়ায় অনন্য এক রেকর্ড।
এসব অর্জন আরও অনেক বেশি অসামান্য যে কারণে তা হলো- সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলনের পর ১৯৯১ সালে প্রথম অর্থবহ নির্বাচনের সময় থেকেই নির্বাচনে পরাজিত দল কখনই ফল মেনে নেয়নি। আজ অবধি বাংলাদেশে নির্বাচনের মান অসন্তোসজনকই রয়ে গেছে। এর কারণ, উভয় রাজনৈতিক দলের সততার অভাব এবং নির্বাচনের ফল প্রভাবিত করার অধিকার দাবি করা।
২০০৯ সাল থেকে দু’দলের মধ্যে ঐতিহ্যগত ৫ বছর অন্তর রাজনৈতিক ক্ষমতার পালাবদলের জায়গায় এসেছে সীমানা-বিহীন আধিপত্যপাদ। হাসিনার সরকার বিচারবিভাগে ব্যাপক প্রভাব অর্জন করেছে। গণমাধ্যম সমালোচকদের কণ্ঠরোধ করেছে। আর সংবিধান সংশোধন করে বাতিল করেছে নির্বাচনের জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা। এসব ঘটনাপ্রবাহের ধারা উদ্বেগজনক। ২০১৬ সালে এখন প্রশ্ন হলো কার্যকর বিরোধী দল ছাড়া রাজনীতির চেহারা কেমন হবে। সম্ভবত এ প্রশ্ন চলতি দশক শেষ হওয়া পর্যন্ত থাকবে।
২০০১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত শাসন করা বিএনপি-জায়ামাত জোটের মতো আওয়ামী লীগ সরকার বিরোধী নেতাদের মামলা দিয়ে ঘায়েল করেছে। তাদের অনেকে কারাগারে। কেউ আত্মগোপনে বা পলাতক। সরকার বিএনপির নির্বাচনী মিত্র জামায়াতে ইসলামীর ওপরও চড়াও হয়েছে।
একটি যুদ্ধাপরাধ আদালত কয়েকজন জামায়াত ও বিএনপি নেতাকে ’৭১-এর স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় সংঘটিত অপরাধের জন্য মৃত্যুদণ্ডের রায় দিয়েছে ও কার্যকর করেছে। আইনি বিদ্বজনেরা ও জাতিসংঘ আবিষ্কার করেছে ওই বিচারপ্রক্রিয়াগুলো ত্রুটিপূর্ণ ছিল। বাংলাদেশ সরকার অবশ্য এগুলো প্রত্যাখ্যান করেছে। আরও কয়েকজনের মৃত্যুদণ্ড ২০১৬-তে কার্যকর করা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এর মধ্যে জামায়াত প্রধান মতিউর রহমান নিজামী একজন।
বিএনপির অবস্থা পুরো জগাখিচুড়ি। ২০০৬ সাল থেকে দলটি বিরোধী দলে রয়েছে। আর নিজেদের পৃষ্ঠপোষকতার ক্ষমতা হারিয়েছে দীর্ঘদিন। দলটির নেতা খালেদা জিয়া দুর্বল হয়ে পড়েছেন। আর তিনি দুর্নীতির নানা অভিযোগের মুখোমুখি। দলটির দিকনির্দেশনা-বিহীন আর বিভক্ত নেতৃত্ব বাজে সিদ্ধান্ত নিয়ে যাচ্ছে। ২০১৪ সালে তারা নির্বাচন বর্জন করেছিল কেননা তাদের শঙ্কা ছিল সরকার নির্বাচনে জালিয়াতি করবে। আর বিশ্বাস করেছিল পশ্চিমা সরকারগুলো আরেকটি নির্বাচনের জন্য চাপ দেবে। কিন্তু এটা আওয়ামী লীগকে একটি জনপ্রিয় ম্যান্ডেট ছাড়াই নজিরবিহীন পুনর্নির্বাচন জয়ের সুযোগ করে দিয়েছে। ২০১৫ সালের প্রথম দিকে, সরকারকে উৎখাত করার জন্য অবিবেচনাপ্রসূত প্রচারণায় বিএনপি বেসামরিক মানুষ হত্যা বেছে নিয়েছে। এটা গণতান্ত্রিক শক্তি হিসেবে দলটির সুনামহানি করেছে।
সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে খালেদা জিয়ার সাম্রাজ্য নিজেদের ডেকে আনা পরস্পর সম্পর্কযুক্ত ত্রিমুখী সমস্যার মুখোমুখি। প্রথমত, জিয়ার ছেলে ও তার আপাত উত্তরসূরি তারেক রহমান লন্ডনে নির্বাসনে রয়েছেন। বাংলাদেশে তার বিরুদ্ধে অপরাধ মামলা রয়েছে। এটা বিএনপির কেন্দ্রীয় মুখ্য স্লোগানে জটিলতা দেখা দিয়েছে। যেটা হলো: ‘জিয়াউর রহমান আমাদের অতীত। খালেদা জিয়া আমাদের বর্তমান। তারেক রহমান আমাদের ভবিষ্যত।’ দ্বিতীয়ত, ভারতকে আশ্বস্ত করতে বিএনপিকে বেগ পেতে হচ্ছে যে দেশের ধর্মনিরপেক্ষ ঐতিহ্য তাদের শাসনের অধীনে নিরাপদ থাকবে। তৃতীয়ত, জিয়া ও তার ঘনিষ্ঠ মহল জামায়াতের সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদ করতে আগ্রহী নয়, যে দলটি বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছিল। আর, তারা নামমাত্র ধর্মনিরপেক্ষ আর সুফি একটি দেশে সৌদি আরবীয় ঘরানার রক্ষণশীল ইসলামের প্রচারণা করে।
সংসদীয় ব্যবস্থা অর্থবহ কোনো বিরোধী দল ছাড়া চলছে। সম্ভবত ২০১৯ সালের পরবর্তী নির্বাচন পর্যন্ত এভাবেই চলবে। বিএনপি বা জামায়াত কারোই সংসদে কোনো সদস্য নেই। ২০১৪ সালের নির্বাচনে অংশগ্রহণে আদালত জামায়াতকে নিষিদ্ধ করেছিল। এতো কিছু সত্ত্বেও সামাজিক অগ্রগতির ধারা অব্যাহত থেকেছে। স্বাস্থ্যগত উন্নতিতে বেড়েছে আয়ু। আর কমেছে দারিদ্র্য। খাদ্য উৎপাদনে বাংলাদেশ আত্মনির্ভরশীল। নারী অধিকার প্রশ্নে অগ্রগতি ধীর হলেও, শ্রমশক্তিতে আরও নারীরা আসছেন আর শিক্ষা গ্রহণ করছেন।
জরিপের তথ্যে দেখা যায়, বেশিরভাগ মানুষ বিশ্বাস করেন তাদের সন্তানেরা তাদের চেয়ে ভালো করবে। আর তারা অনুভব করেন যে নিজেদের আর্থিক অবস্থার উন্নতি হচ্ছে। গড়পড়তা পরিবারগুলো নিজেদের সমস্যা সমাধানে সরকার বা বিদেশী দাতাদের মুখাপেক্ষী থাকে না। দুর্নীতি নিয়ে উদ্বেগ সবখানে। কিন্তু সব থেকে বেশি রিপোর্ট হওয়া সামাজিক সমস্যা হলো যৌতুক। জরিপে আরও উঠে এসেছে যে বেশির ভাগ বাংলাদেশি ‘মডারেট ইসলামে’ শক্তভাবে বিশ্বাস করেন। তারা প্রত্যাখ্যান করেন সহিংসতা।
অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৬-এর আশপাশে রয়েছে অব্যাহতভাবে। মূল্যস্ফীতি কমেছে, বেকারত্বের হার কম, আর চলতি হিসাবগুলো ভারসাম্যের কাছাকাছি। বহির্বিশ্বের ৭০ লক্ষাধিক বাংলাদেশী কর্মীর কাছ থেকে আসা রেমিটেন্স টেকসই দ্রব্য কিনতে দ্রুত ব্যয় বৃদ্ধিতে সহায়তা করেছে।
বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষের বেশির ভাগ বাস করে গ্রাম্য এলাকায়। এসব গ্রামাঞ্চল দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে। খাদ্য, বিদ্যুত ও স্বাস্থ্যসেবার সহজলভ্যতা বাড়ছে। শহরগুলোতে ক্রমবর্ধমান আয়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কৃষিখাত যান্ত্রিকশিল্পে রূপান্তরিত হচ্ছে, পরিব্যপ্ত হচ্ছে।
কিন্তু দিগন্তে এখন মেঘের ঘনঘটা। অর্থনীতির গতি ধীর হচ্ছে: দীর্ঘ মেয়াদি ধারার নিচে চলে গেছে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি। আর বিংশ শতকের শেষের দিকের মতো এখন আর অনেক কর্মী উপসাগরীয় দেশে চাকরি নিচ্ছে না। ওই সময়ের তুলনায় এখন উপসাগরীয় দেশগুলোতে চাকরি নেয়া কর্মীর সংখ্যা কমেছে। প্রতি বছর শ্রম শক্তিতে যোগ হচ্ছে ২০ লাখ মানুষ। এদের উত্তম কর্মসংস্থানের জন্য দ্রুততর প্রবৃদ্ধি প্রয়োজন। কিন্তু এসব অভ্যন্তরীণ চ্যালেঞ্জের বাইরে অর্থনীতির জন্য সব থেকে বড় ঝুঁকি হলো ধীর হতে থাকা বৈশ্বিক অর্থনীতি।
বিগত ২৫ বছর সামাজিক ও অর্থনৈতিক কল্যাণে অসাধারণ আর অপ্রত্যাশিত রূপান্তর প্রত্যক্ষ করেছে। নজিরবিহীন কিছু না ঘটলে, বাংলাদেশ মনে হচ্ছে একটি রাজনৈতিক রূপান্তরের দিকে ধাবিত হচ্ছে যেখানে রয়েছে অন্তত একটি রাজনৈতিক বংশের পতন। বিএনপি এখনও দারুণভাবে ফিরে আসার স্বপ্ন দেখছে। তবে, খুব অল্পসংখ্যক বাংলাদেশি ভাবতে পারেন যে, ২০২১ সালে বাংলাদেশের ৫০তম জন্মদিন উদযাপন হবে বিপর্যস্ত বিরোধী দলের অধীনে।
লেখক পরিচিতি:
টম ফেলিক্স জোয়েনক বৃটেনের প্রভাবশালী ম্যাগাজিন ‘দ্য ইকোনোমিস্ট’-এ লিখে থাকেন
ফরেস্ট কুকসন একজন অর্থনীতিবিদ
এ নিবন্ধটি ইস্ট এশিয়া ফোরামের ‘২০১৫ ইন রিভিউ অ্যান্ড দ্য ইয়ার অ্যাহেড’ বিষয়ক বিশেষ ফিচার সিরিজের অংশ
এসব অর্জন আরও অনেক বেশি অসামান্য যে কারণে তা হলো- সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলনের পর ১৯৯১ সালে প্রথম অর্থবহ নির্বাচনের সময় থেকেই নির্বাচনে পরাজিত দল কখনই ফল মেনে নেয়নি। আজ অবধি বাংলাদেশে নির্বাচনের মান অসন্তোসজনকই রয়ে গেছে। এর কারণ, উভয় রাজনৈতিক দলের সততার অভাব এবং নির্বাচনের ফল প্রভাবিত করার অধিকার দাবি করা।
২০০৯ সাল থেকে দু’দলের মধ্যে ঐতিহ্যগত ৫ বছর অন্তর রাজনৈতিক ক্ষমতার পালাবদলের জায়গায় এসেছে সীমানা-বিহীন আধিপত্যপাদ। হাসিনার সরকার বিচারবিভাগে ব্যাপক প্রভাব অর্জন করেছে। গণমাধ্যম সমালোচকদের কণ্ঠরোধ করেছে। আর সংবিধান সংশোধন করে বাতিল করেছে নির্বাচনের জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা। এসব ঘটনাপ্রবাহের ধারা উদ্বেগজনক। ২০১৬ সালে এখন প্রশ্ন হলো কার্যকর বিরোধী দল ছাড়া রাজনীতির চেহারা কেমন হবে। সম্ভবত এ প্রশ্ন চলতি দশক শেষ হওয়া পর্যন্ত থাকবে।
২০০১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত শাসন করা বিএনপি-জায়ামাত জোটের মতো আওয়ামী লীগ সরকার বিরোধী নেতাদের মামলা দিয়ে ঘায়েল করেছে। তাদের অনেকে কারাগারে। কেউ আত্মগোপনে বা পলাতক। সরকার বিএনপির নির্বাচনী মিত্র জামায়াতে ইসলামীর ওপরও চড়াও হয়েছে।
একটি যুদ্ধাপরাধ আদালত কয়েকজন জামায়াত ও বিএনপি নেতাকে ’৭১-এর স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় সংঘটিত অপরাধের জন্য মৃত্যুদণ্ডের রায় দিয়েছে ও কার্যকর করেছে। আইনি বিদ্বজনেরা ও জাতিসংঘ আবিষ্কার করেছে ওই বিচারপ্রক্রিয়াগুলো ত্রুটিপূর্ণ ছিল। বাংলাদেশ সরকার অবশ্য এগুলো প্রত্যাখ্যান করেছে। আরও কয়েকজনের মৃত্যুদণ্ড ২০১৬-তে কার্যকর করা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এর মধ্যে জামায়াত প্রধান মতিউর রহমান নিজামী একজন।
বিএনপির অবস্থা পুরো জগাখিচুড়ি। ২০০৬ সাল থেকে দলটি বিরোধী দলে রয়েছে। আর নিজেদের পৃষ্ঠপোষকতার ক্ষমতা হারিয়েছে দীর্ঘদিন। দলটির নেতা খালেদা জিয়া দুর্বল হয়ে পড়েছেন। আর তিনি দুর্নীতির নানা অভিযোগের মুখোমুখি। দলটির দিকনির্দেশনা-বিহীন আর বিভক্ত নেতৃত্ব বাজে সিদ্ধান্ত নিয়ে যাচ্ছে। ২০১৪ সালে তারা নির্বাচন বর্জন করেছিল কেননা তাদের শঙ্কা ছিল সরকার নির্বাচনে জালিয়াতি করবে। আর বিশ্বাস করেছিল পশ্চিমা সরকারগুলো আরেকটি নির্বাচনের জন্য চাপ দেবে। কিন্তু এটা আওয়ামী লীগকে একটি জনপ্রিয় ম্যান্ডেট ছাড়াই নজিরবিহীন পুনর্নির্বাচন জয়ের সুযোগ করে দিয়েছে। ২০১৫ সালের প্রথম দিকে, সরকারকে উৎখাত করার জন্য অবিবেচনাপ্রসূত প্রচারণায় বিএনপি বেসামরিক মানুষ হত্যা বেছে নিয়েছে। এটা গণতান্ত্রিক শক্তি হিসেবে দলটির সুনামহানি করেছে।
সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে খালেদা জিয়ার সাম্রাজ্য নিজেদের ডেকে আনা পরস্পর সম্পর্কযুক্ত ত্রিমুখী সমস্যার মুখোমুখি। প্রথমত, জিয়ার ছেলে ও তার আপাত উত্তরসূরি তারেক রহমান লন্ডনে নির্বাসনে রয়েছেন। বাংলাদেশে তার বিরুদ্ধে অপরাধ মামলা রয়েছে। এটা বিএনপির কেন্দ্রীয় মুখ্য স্লোগানে জটিলতা দেখা দিয়েছে। যেটা হলো: ‘জিয়াউর রহমান আমাদের অতীত। খালেদা জিয়া আমাদের বর্তমান। তারেক রহমান আমাদের ভবিষ্যত।’ দ্বিতীয়ত, ভারতকে আশ্বস্ত করতে বিএনপিকে বেগ পেতে হচ্ছে যে দেশের ধর্মনিরপেক্ষ ঐতিহ্য তাদের শাসনের অধীনে নিরাপদ থাকবে। তৃতীয়ত, জিয়া ও তার ঘনিষ্ঠ মহল জামায়াতের সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদ করতে আগ্রহী নয়, যে দলটি বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছিল। আর, তারা নামমাত্র ধর্মনিরপেক্ষ আর সুফি একটি দেশে সৌদি আরবীয় ঘরানার রক্ষণশীল ইসলামের প্রচারণা করে।
সংসদীয় ব্যবস্থা অর্থবহ কোনো বিরোধী দল ছাড়া চলছে। সম্ভবত ২০১৯ সালের পরবর্তী নির্বাচন পর্যন্ত এভাবেই চলবে। বিএনপি বা জামায়াত কারোই সংসদে কোনো সদস্য নেই। ২০১৪ সালের নির্বাচনে অংশগ্রহণে আদালত জামায়াতকে নিষিদ্ধ করেছিল। এতো কিছু সত্ত্বেও সামাজিক অগ্রগতির ধারা অব্যাহত থেকেছে। স্বাস্থ্যগত উন্নতিতে বেড়েছে আয়ু। আর কমেছে দারিদ্র্য। খাদ্য উৎপাদনে বাংলাদেশ আত্মনির্ভরশীল। নারী অধিকার প্রশ্নে অগ্রগতি ধীর হলেও, শ্রমশক্তিতে আরও নারীরা আসছেন আর শিক্ষা গ্রহণ করছেন।
জরিপের তথ্যে দেখা যায়, বেশিরভাগ মানুষ বিশ্বাস করেন তাদের সন্তানেরা তাদের চেয়ে ভালো করবে। আর তারা অনুভব করেন যে নিজেদের আর্থিক অবস্থার উন্নতি হচ্ছে। গড়পড়তা পরিবারগুলো নিজেদের সমস্যা সমাধানে সরকার বা বিদেশী দাতাদের মুখাপেক্ষী থাকে না। দুর্নীতি নিয়ে উদ্বেগ সবখানে। কিন্তু সব থেকে বেশি রিপোর্ট হওয়া সামাজিক সমস্যা হলো যৌতুক। জরিপে আরও উঠে এসেছে যে বেশির ভাগ বাংলাদেশি ‘মডারেট ইসলামে’ শক্তভাবে বিশ্বাস করেন। তারা প্রত্যাখ্যান করেন সহিংসতা।
অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৬-এর আশপাশে রয়েছে অব্যাহতভাবে। মূল্যস্ফীতি কমেছে, বেকারত্বের হার কম, আর চলতি হিসাবগুলো ভারসাম্যের কাছাকাছি। বহির্বিশ্বের ৭০ লক্ষাধিক বাংলাদেশী কর্মীর কাছ থেকে আসা রেমিটেন্স টেকসই দ্রব্য কিনতে দ্রুত ব্যয় বৃদ্ধিতে সহায়তা করেছে।
বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষের বেশির ভাগ বাস করে গ্রাম্য এলাকায়। এসব গ্রামাঞ্চল দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে। খাদ্য, বিদ্যুত ও স্বাস্থ্যসেবার সহজলভ্যতা বাড়ছে। শহরগুলোতে ক্রমবর্ধমান আয়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কৃষিখাত যান্ত্রিকশিল্পে রূপান্তরিত হচ্ছে, পরিব্যপ্ত হচ্ছে।
কিন্তু দিগন্তে এখন মেঘের ঘনঘটা। অর্থনীতির গতি ধীর হচ্ছে: দীর্ঘ মেয়াদি ধারার নিচে চলে গেছে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি। আর বিংশ শতকের শেষের দিকের মতো এখন আর অনেক কর্মী উপসাগরীয় দেশে চাকরি নিচ্ছে না। ওই সময়ের তুলনায় এখন উপসাগরীয় দেশগুলোতে চাকরি নেয়া কর্মীর সংখ্যা কমেছে। প্রতি বছর শ্রম শক্তিতে যোগ হচ্ছে ২০ লাখ মানুষ। এদের উত্তম কর্মসংস্থানের জন্য দ্রুততর প্রবৃদ্ধি প্রয়োজন। কিন্তু এসব অভ্যন্তরীণ চ্যালেঞ্জের বাইরে অর্থনীতির জন্য সব থেকে বড় ঝুঁকি হলো ধীর হতে থাকা বৈশ্বিক অর্থনীতি।
বিগত ২৫ বছর সামাজিক ও অর্থনৈতিক কল্যাণে অসাধারণ আর অপ্রত্যাশিত রূপান্তর প্রত্যক্ষ করেছে। নজিরবিহীন কিছু না ঘটলে, বাংলাদেশ মনে হচ্ছে একটি রাজনৈতিক রূপান্তরের দিকে ধাবিত হচ্ছে যেখানে রয়েছে অন্তত একটি রাজনৈতিক বংশের পতন। বিএনপি এখনও দারুণভাবে ফিরে আসার স্বপ্ন দেখছে। তবে, খুব অল্পসংখ্যক বাংলাদেশি ভাবতে পারেন যে, ২০২১ সালে বাংলাদেশের ৫০তম জন্মদিন উদযাপন হবে বিপর্যস্ত বিরোধী দলের অধীনে।
লেখক পরিচিতি:
টম ফেলিক্স জোয়েনক বৃটেনের প্রভাবশালী ম্যাগাজিন ‘দ্য ইকোনোমিস্ট’-এ লিখে থাকেন
ফরেস্ট কুকসন একজন অর্থনীতিবিদ
এ নিবন্ধটি ইস্ট এশিয়া ফোরামের ‘২০১৫ ইন রিভিউ অ্যান্ড দ্য ইয়ার অ্যাহেড’ বিষয়ক বিশেষ ফিচার সিরিজের অংশ
No comments