গণতন্ত্রে ভিন্নমত সহ্য করাই গুরুত্বপূর্ণ -বিশেষ সাক্ষাৎকারে : টমাস প্রিনজ by কামাল আহমেদ
হাইডেলবার্গ ইউনিভার্সিটি থেকে পিএইচডি ডিগ্রিধারী টমাস প্রিনজ গত বছরের এপ্রিল থেকে বাংলাদেশে জার্মানির রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এর আগে তিনি টোকিও, ক্যানবেরা, সাংহাই, জাকার্তাসহ বিভিন্ন স্থানে কূটনৈতিক দায়িত্ব পালন করেন। বাংলাদেশে দায়িত্ব গ্রহণের পর গত ৩০ নভেম্বর তিনি প্রথম আলোর কার্যালয়ে আসেন, যেটি ছিল তাঁর এ দেশে প্রথম কোনো পত্রিকা অফিস পরিদর্শন। সে সময়ে প্রথম আলোর সঙ্গে আলাপচারিতায় দ্বিপক্ষীয় বিষয় ছাড়াও গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও সাম্প্রতিক জঙ্গিবাদের উত্থানের বিষয়টি গুরুত্ব পায়
প্রথম আলো : বাংলাদেশকে কীভাবে দেখছেন? কী ধারণা হলো আপনার?
টমাস প্রিনজ : আমি ৩২ বছর ধরে এই দেশকে জানি; বলতে গেলে এক প্রজন্ম সময়। আমি প্রথম যখন এখানে এসেছিলাম, তার তুলনায় রীতিমতো মুগ্ধ। এখানে অর্থনৈতিক উন্নয়ন, সাংস্কৃতিক উন্নয়ন ঘটেছে। তবে সবকিছু যে আধুনিকায়নের সঙ্গে সংগতি রেখে হয়েছে তা নয়। এ ছাড়া নতুন সমস্যা হিসেবে যুক্ত হয়েছে যানজট।
প্রথম আলো : রাজনৈতিক অধিকারের জন্য গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠা, মানবাধিকার ও ট্রেড ইউনিয়ন গঠনের অধিকারের মতো ক্ষেত্রগুলোয় বাংলাদেশে আপনার আগের অভিজ্ঞতার আলোকে বড় কোনো পরিবর্তন কি দেখতে পান?
প্রিনজ : হ্যাঁ, আমি ১৯৮৩ সালে এখানে এসেছিলাম। তখন রাষ্ট্রপতি এরশাদ ছিলেন। সেটি ছিল সামরিক শাসনকাল। এখন এখানে একটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা চালু হয়েছে।
প্রথম আলো : এরপরও আমরা নিরাপত্তা ও মানবাধিকার নিয়ে উদ্বেগের কথা প্রায়ই শুনতে পাই কেন?
প্রিনজ : কেবল আমিই নয়, আমার বেশির ভাগ সহকর্মীই উদ্বিগ্ন। আমরা একটি পরিবর্তিত পরিবেশে বাস করছি। নিরাপত্তার মতো ইস্যুগুলো সবাইকেই উদ্বিগ্ন করে। অবশ্যই আমাদের মাঠের বাস্তবতাকে শ্রদ্ধা করতে হবে। যদিও উন্নয়নের বিষয়গুলোই আমাদের সম্পর্কে সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য পায়।
প্রথম আলো : বাক্স্বাধীনতা ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতার অবস্থা নিয়ে সময়ে-সময়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হচ্ছে। কেন এই উদ্বেগ এবং এই পরিস্থিতির উন্নয়নে আপনি কীভাবে সাহায্য করতে পারেন?
প্রিনজ : সর্বপ্রথম আমি বলব, এ দেশে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও স্বাধীনভাবে মত প্রকাশের বিষয়ে দায়িত্ব বাংলাদেশ সরকারের। আমরা কেবল তাতে অবদান রাখতে পারি। আমরা যেটা করি তা হলো মুক্তমনা ব্যক্তিদের সমর্থন দেওয়া, যারা উদার এবং নিজেদের মত প্রকাশের অধিকারের জন্য সোচ্চার। এমনকি যারা কিছু ব্লগার ও প্রকাশক, যাদের মতের সঙ্গে ভিন্নমত থাকতে পারে, তাদের প্রতিও। এটা খুবই মৌলিক বিষয়। এটাই একটি গণতন্ত্রের ভিত্তি। আপনি যা চান, তা প্রকাশ করা ও বলতে পারার বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
প্রথম আলো : সরকার বলে থাকে, দেশে বেসরকারি খাতে ডজন ডজন টেলিভিশন চ্যানেল রয়েছে। শত শত সংবাদপত্র প্রতিদিন প্রকাশিত হচ্ছে। সুতরাং, গণমাধ্যমের বা মত প্রকাশের স্বাধীনতায় ঘাটতি কোথায়?
প্রিনজ : গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে সেই একটি বা একাধিক কণ্ঠস্বর, যা আপনি শুনতে চান না। একটি গণতন্ত্রে সেই ভিন্নমতের ও সমালোচনামূলক কণ্ঠস্বরকে সহ্য করার বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আপনার প্রশংসাকারী অথবা ধরুন যা আপনি শুনতে চান, তাই-ই বলছে এমন শত শত মানুষের সঙ্গে আপনি কেমন আচরণ করেন, সেটি ধর্তব্যের বিষয় নয় বা তা গণতন্ত্রকে গতিশীল বা শক্তিশালী করে না।
প্রথম আলো : সম্প্রতি ইউরোপীয় পার্লামেন্টে অনুষ্ঠিত বিতর্ক এবং পাস হওয়া এক প্রস্তাবে এ দেশে গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা ও আইনের শাসনের আহ্বান জানানো হয়েছে। বাংলাদেশকে সেই পথ অনুসরণ করাতে আপনার সরকার কী ভূমিকা রাখতে পারে?
প্রিনজ : সরকার হিসেবে জার্মানি বাংলাদেশের সরকার ও জনগণকে সমর্থন ও সহায়তা দেয়। আমরা গণমাধ্যম পুরস্কার দিই এবং লোকজনকে প্রশিক্ষণ গ্রহণের জন্য আমন্ত্রণ জানাই।
প্রথম আলো : ইউরোপ থেকে প্রায়ই বাংলাদেশের শ্রমিকদের অধিকারের কথা বলা হয়। গত এক বছর বা তার কাছাকাছি সময়ে বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ ও তা বাস্তবায়ন করা হয়েছে। এখন আপনাদের মূল্যায়ন কী? পরিস্থিতির কী উন্নতি হয়েছে?
প্রিনজ : এটাকে এগিয়ে যেতে হবে। পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে আমরা এ ক্ষেত্রে অসাধারণ ভালো করতে পারি।
প্রথম আলো : এসব সংস্কারের জন্য আর্থিক প্রতিশ্রুতিগুলো উল্লেখ করার মতো। কিন্তু আমাদের পোশাকের জন্য ক্রেতারা যে দর প্রস্তাব করে থাকে, তা অন্যান্য দেশের তুলনায় খুবই কম। যেহেতু বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের জন্য জার্মানি একটি বড় বাজার, সেহেতু আপনাদের ক্রেতাদের দাম বাড়াতে উৎসাহিত করতে আপনার সরকার কী করতে পারে?
প্রিনজ : আমরা বিষয়টি স্বীকার করি। কিন্তু একটি মুক্তবাজারে আমরা দরদাম ঠিক করে দিতে পারি না। অবশ্য আমাদের কোম্পানিগুলোর জন্য একটি ক্রেডিট লাইন তৈরির জন্য আমরা ফরাসি সরকারের সঙ্গে আলোচনা করছি। তারা যাতে পরিস্থিতির উন্নয়নে বিনিয়োগ করে এবং বেশি বেশি কিনতে এবং ন্যায্য দাম দিতে উৎসাহিত হয়, তার জন্যই এই পদক্ষেপ।
প্রথম আলো : জঙ্গিবাদ এবং ইসলামিক স্টেট বা আইএসের সৃষ্ট হুমকির বিষয়টি নিয়ে যদি কথা বলি, তাহলে মনে হয় যে এই জঙ্গিদের লক্ষ্যবস্তুগুলো তো বৃহত্তরভাবে ইউরোপ। তাহলে আমাদের মতো দেশে তাদের বিস্তার নিয়ে পাশ্চাত্য এতটা উদ্বিগ্ন কেন?
প্রিনজ : মধ্যপ্রাচ্যের ইসলামপন্থী গোষ্ঠীগুলো বিশ্বের অন্য সব দেশের জন্যই একটা হুমকি।
ধর্মীয় চরমপন্থা বৈশ্বিক শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি। ইসলামিক স্টেটসহ অন্য চরমপন্থী গোষ্ঠীগুলো কেবল আরব বিশ্বেই নয়, অন্য সব মুসলিম দেশেও তাদের প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছে। বিষয়টিই সবাইকে উদ্বিগ্ন করছে।
প্রথম আলো : ১১ সেপ্টেম্বর-পরবর্তী সময়ে বিশ্ব বদলে গেছে। নিরাপত্তার বিষয়ে সহযোগিতার বিষয়টি বেশির ভাগ পশ্চিমা দেশের কাছেই অগ্রাধিকার পেয়েছে। অন্তত গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদানের ক্ষেত্রে সেটা সত্য। বাংলাদেশেও আমরা এ ধরনের সহযোগিতা দেখেছি। কিন্তু দুজন বিদেশি নাগরিকের ওপর সাম্প্রতিক হামলার পর আমরা বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে শুনেছি, তাদের গোয়েন্দা তথ্য দেওয়া হয়নি। এর অর্থ কি এই যে সেই সহযোগিতায় ছেদ ঘটেছে?
প্রিনজ : আমি তেমনটি মনে করি না। গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদান ও নিরাপত্তাসংক্রান্ত ইস্যুগুলোয় সহযোগিতার বিষয়গুলো একটি অব্যাহত প্রক্রিয়া। আমরা একটি সুনির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠান বা স্থানের বিরুদ্ধে আসন্ন হুমকির বিষয়ে গোয়েন্দা তথ্য প্রদান করতে পারি। এরপর সে বিষয়ে বাংলাদেশের নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর কাছ থেকে ফলোআপ দরকার হয়। আমাদের কাছে যেটা নেই, সেটা হলো কখন, কোথায় একটি হামলা সংঘটিত হতে পারে, সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য।
প্রথম আলো : ক্ষমতাসীনদের পক্ষ থেকে বিদেশিদের ওপর এসব সাম্প্রতিক হামলাকে ষড়যন্ত্র হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তাঁদের মতে, এগুলো বিরোধী রাজনৈতিক পক্ষগুলোর কাজ। বিএনপির কিছু সদস্যকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে।
প্রিনজ : কাউকে দোষারোপ করা খুবই সহজ। কিন্তু উপযুক্ত প্রমাণ ও পূর্ণাঙ্গ তদন্ত ছাড়াই এমন দোষারোপের ঘটনা প্রকৃত অপরাধীদের বিচারের মুখোমুখি করার কাজটা আরও কঠিন করে তোলে।
প্রথম আলো : চলমান শরণার্থী সংকট নিয়ে আপনার সরকার সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, তারা অর্থনৈতিক অভিবাসীদের নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠাবে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, ওই অর্থনৈতিক অভিবাসীদেরও কেউ কেউ যুদ্ধের শিকার। তারা আরব দেশগুলো থেকে পালাতে বাধ্য হয়েছে।
প্রিনজ : জার্মানি যুদ্ধবিগ্রহ ও নিপীড়নের কারণে পালিয়ে আসা আশ্রয়প্রার্থীদের স্বাগত জানিয়েছে, জানাবে। কিন্তু দেশটি অবৈধ অভিবাসীদের গ্রহণ করবে না। অর্থনৈতিক অভিবাসীদের জন্য একটি পদ্ধতিগত প্রক্রিয়া রয়েছে। আপনার দক্ষতার শর্তগুলো পূরণকারী জার্মান ব্লু-কার্ড থাকলেই আপনি জার্মানিতে যেতে পারবেন। তাঁরা তখন অভিবাসনের জন্য বৈধভাবে আবেদন করতে পারবেন। কিন্তু যারা এই পদ্ধতি এবং যুদ্ধবিগ্রহ ও নিপীড়নের কারণে পালিয়ে আসা ব্যক্তিদের স্বাগত জানানোর নীতির অপব্যবহার করতে চায়, তাদের অবশ্যই নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হবে।
প্রথম আলো : আপনাকে ধন্যবাদ।
প্রিনজ : ধন্যবাদ।
প্রথম আলো : বাংলাদেশকে কীভাবে দেখছেন? কী ধারণা হলো আপনার?
টমাস প্রিনজ : আমি ৩২ বছর ধরে এই দেশকে জানি; বলতে গেলে এক প্রজন্ম সময়। আমি প্রথম যখন এখানে এসেছিলাম, তার তুলনায় রীতিমতো মুগ্ধ। এখানে অর্থনৈতিক উন্নয়ন, সাংস্কৃতিক উন্নয়ন ঘটেছে। তবে সবকিছু যে আধুনিকায়নের সঙ্গে সংগতি রেখে হয়েছে তা নয়। এ ছাড়া নতুন সমস্যা হিসেবে যুক্ত হয়েছে যানজট।
প্রথম আলো : রাজনৈতিক অধিকারের জন্য গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠা, মানবাধিকার ও ট্রেড ইউনিয়ন গঠনের অধিকারের মতো ক্ষেত্রগুলোয় বাংলাদেশে আপনার আগের অভিজ্ঞতার আলোকে বড় কোনো পরিবর্তন কি দেখতে পান?
প্রিনজ : হ্যাঁ, আমি ১৯৮৩ সালে এখানে এসেছিলাম। তখন রাষ্ট্রপতি এরশাদ ছিলেন। সেটি ছিল সামরিক শাসনকাল। এখন এখানে একটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা চালু হয়েছে।
প্রথম আলো : এরপরও আমরা নিরাপত্তা ও মানবাধিকার নিয়ে উদ্বেগের কথা প্রায়ই শুনতে পাই কেন?
প্রিনজ : কেবল আমিই নয়, আমার বেশির ভাগ সহকর্মীই উদ্বিগ্ন। আমরা একটি পরিবর্তিত পরিবেশে বাস করছি। নিরাপত্তার মতো ইস্যুগুলো সবাইকেই উদ্বিগ্ন করে। অবশ্যই আমাদের মাঠের বাস্তবতাকে শ্রদ্ধা করতে হবে। যদিও উন্নয়নের বিষয়গুলোই আমাদের সম্পর্কে সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য পায়।
প্রথম আলো : বাক্স্বাধীনতা ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতার অবস্থা নিয়ে সময়ে-সময়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হচ্ছে। কেন এই উদ্বেগ এবং এই পরিস্থিতির উন্নয়নে আপনি কীভাবে সাহায্য করতে পারেন?
প্রিনজ : সর্বপ্রথম আমি বলব, এ দেশে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও স্বাধীনভাবে মত প্রকাশের বিষয়ে দায়িত্ব বাংলাদেশ সরকারের। আমরা কেবল তাতে অবদান রাখতে পারি। আমরা যেটা করি তা হলো মুক্তমনা ব্যক্তিদের সমর্থন দেওয়া, যারা উদার এবং নিজেদের মত প্রকাশের অধিকারের জন্য সোচ্চার। এমনকি যারা কিছু ব্লগার ও প্রকাশক, যাদের মতের সঙ্গে ভিন্নমত থাকতে পারে, তাদের প্রতিও। এটা খুবই মৌলিক বিষয়। এটাই একটি গণতন্ত্রের ভিত্তি। আপনি যা চান, তা প্রকাশ করা ও বলতে পারার বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
প্রথম আলো : সরকার বলে থাকে, দেশে বেসরকারি খাতে ডজন ডজন টেলিভিশন চ্যানেল রয়েছে। শত শত সংবাদপত্র প্রতিদিন প্রকাশিত হচ্ছে। সুতরাং, গণমাধ্যমের বা মত প্রকাশের স্বাধীনতায় ঘাটতি কোথায়?
প্রিনজ : গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে সেই একটি বা একাধিক কণ্ঠস্বর, যা আপনি শুনতে চান না। একটি গণতন্ত্রে সেই ভিন্নমতের ও সমালোচনামূলক কণ্ঠস্বরকে সহ্য করার বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আপনার প্রশংসাকারী অথবা ধরুন যা আপনি শুনতে চান, তাই-ই বলছে এমন শত শত মানুষের সঙ্গে আপনি কেমন আচরণ করেন, সেটি ধর্তব্যের বিষয় নয় বা তা গণতন্ত্রকে গতিশীল বা শক্তিশালী করে না।
প্রথম আলো : সম্প্রতি ইউরোপীয় পার্লামেন্টে অনুষ্ঠিত বিতর্ক এবং পাস হওয়া এক প্রস্তাবে এ দেশে গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা ও আইনের শাসনের আহ্বান জানানো হয়েছে। বাংলাদেশকে সেই পথ অনুসরণ করাতে আপনার সরকার কী ভূমিকা রাখতে পারে?
প্রিনজ : সরকার হিসেবে জার্মানি বাংলাদেশের সরকার ও জনগণকে সমর্থন ও সহায়তা দেয়। আমরা গণমাধ্যম পুরস্কার দিই এবং লোকজনকে প্রশিক্ষণ গ্রহণের জন্য আমন্ত্রণ জানাই।
প্রথম আলো : ইউরোপ থেকে প্রায়ই বাংলাদেশের শ্রমিকদের অধিকারের কথা বলা হয়। গত এক বছর বা তার কাছাকাছি সময়ে বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ ও তা বাস্তবায়ন করা হয়েছে। এখন আপনাদের মূল্যায়ন কী? পরিস্থিতির কী উন্নতি হয়েছে?
প্রিনজ : এটাকে এগিয়ে যেতে হবে। পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে আমরা এ ক্ষেত্রে অসাধারণ ভালো করতে পারি।
প্রথম আলো : এসব সংস্কারের জন্য আর্থিক প্রতিশ্রুতিগুলো উল্লেখ করার মতো। কিন্তু আমাদের পোশাকের জন্য ক্রেতারা যে দর প্রস্তাব করে থাকে, তা অন্যান্য দেশের তুলনায় খুবই কম। যেহেতু বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের জন্য জার্মানি একটি বড় বাজার, সেহেতু আপনাদের ক্রেতাদের দাম বাড়াতে উৎসাহিত করতে আপনার সরকার কী করতে পারে?
প্রিনজ : আমরা বিষয়টি স্বীকার করি। কিন্তু একটি মুক্তবাজারে আমরা দরদাম ঠিক করে দিতে পারি না। অবশ্য আমাদের কোম্পানিগুলোর জন্য একটি ক্রেডিট লাইন তৈরির জন্য আমরা ফরাসি সরকারের সঙ্গে আলোচনা করছি। তারা যাতে পরিস্থিতির উন্নয়নে বিনিয়োগ করে এবং বেশি বেশি কিনতে এবং ন্যায্য দাম দিতে উৎসাহিত হয়, তার জন্যই এই পদক্ষেপ।
প্রথম আলো : জঙ্গিবাদ এবং ইসলামিক স্টেট বা আইএসের সৃষ্ট হুমকির বিষয়টি নিয়ে যদি কথা বলি, তাহলে মনে হয় যে এই জঙ্গিদের লক্ষ্যবস্তুগুলো তো বৃহত্তরভাবে ইউরোপ। তাহলে আমাদের মতো দেশে তাদের বিস্তার নিয়ে পাশ্চাত্য এতটা উদ্বিগ্ন কেন?
প্রিনজ : মধ্যপ্রাচ্যের ইসলামপন্থী গোষ্ঠীগুলো বিশ্বের অন্য সব দেশের জন্যই একটা হুমকি।
ধর্মীয় চরমপন্থা বৈশ্বিক শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি। ইসলামিক স্টেটসহ অন্য চরমপন্থী গোষ্ঠীগুলো কেবল আরব বিশ্বেই নয়, অন্য সব মুসলিম দেশেও তাদের প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছে। বিষয়টিই সবাইকে উদ্বিগ্ন করছে।
প্রথম আলো : ১১ সেপ্টেম্বর-পরবর্তী সময়ে বিশ্ব বদলে গেছে। নিরাপত্তার বিষয়ে সহযোগিতার বিষয়টি বেশির ভাগ পশ্চিমা দেশের কাছেই অগ্রাধিকার পেয়েছে। অন্তত গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদানের ক্ষেত্রে সেটা সত্য। বাংলাদেশেও আমরা এ ধরনের সহযোগিতা দেখেছি। কিন্তু দুজন বিদেশি নাগরিকের ওপর সাম্প্রতিক হামলার পর আমরা বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে শুনেছি, তাদের গোয়েন্দা তথ্য দেওয়া হয়নি। এর অর্থ কি এই যে সেই সহযোগিতায় ছেদ ঘটেছে?
প্রিনজ : আমি তেমনটি মনে করি না। গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদান ও নিরাপত্তাসংক্রান্ত ইস্যুগুলোয় সহযোগিতার বিষয়গুলো একটি অব্যাহত প্রক্রিয়া। আমরা একটি সুনির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠান বা স্থানের বিরুদ্ধে আসন্ন হুমকির বিষয়ে গোয়েন্দা তথ্য প্রদান করতে পারি। এরপর সে বিষয়ে বাংলাদেশের নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর কাছ থেকে ফলোআপ দরকার হয়। আমাদের কাছে যেটা নেই, সেটা হলো কখন, কোথায় একটি হামলা সংঘটিত হতে পারে, সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য।
প্রথম আলো : ক্ষমতাসীনদের পক্ষ থেকে বিদেশিদের ওপর এসব সাম্প্রতিক হামলাকে ষড়যন্ত্র হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তাঁদের মতে, এগুলো বিরোধী রাজনৈতিক পক্ষগুলোর কাজ। বিএনপির কিছু সদস্যকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে।
প্রিনজ : কাউকে দোষারোপ করা খুবই সহজ। কিন্তু উপযুক্ত প্রমাণ ও পূর্ণাঙ্গ তদন্ত ছাড়াই এমন দোষারোপের ঘটনা প্রকৃত অপরাধীদের বিচারের মুখোমুখি করার কাজটা আরও কঠিন করে তোলে।
প্রথম আলো : চলমান শরণার্থী সংকট নিয়ে আপনার সরকার সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, তারা অর্থনৈতিক অভিবাসীদের নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠাবে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, ওই অর্থনৈতিক অভিবাসীদেরও কেউ কেউ যুদ্ধের শিকার। তারা আরব দেশগুলো থেকে পালাতে বাধ্য হয়েছে।
প্রিনজ : জার্মানি যুদ্ধবিগ্রহ ও নিপীড়নের কারণে পালিয়ে আসা আশ্রয়প্রার্থীদের স্বাগত জানিয়েছে, জানাবে। কিন্তু দেশটি অবৈধ অভিবাসীদের গ্রহণ করবে না। অর্থনৈতিক অভিবাসীদের জন্য একটি পদ্ধতিগত প্রক্রিয়া রয়েছে। আপনার দক্ষতার শর্তগুলো পূরণকারী জার্মান ব্লু-কার্ড থাকলেই আপনি জার্মানিতে যেতে পারবেন। তাঁরা তখন অভিবাসনের জন্য বৈধভাবে আবেদন করতে পারবেন। কিন্তু যারা এই পদ্ধতি এবং যুদ্ধবিগ্রহ ও নিপীড়নের কারণে পালিয়ে আসা ব্যক্তিদের স্বাগত জানানোর নীতির অপব্যবহার করতে চায়, তাদের অবশ্যই নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হবে।
প্রথম আলো : আপনাকে ধন্যবাদ।
প্রিনজ : ধন্যবাদ।
No comments