সুদেই পুঁজি শেষ তাঁতির
পুরোনো সোয়েটার থেকে উল বের করা হচ্ছে। পাশেই সেই উল দিয়ে বোনা হচ্ছে কম্বল। সম্প্রতি ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার কিসামত কেশুরবাড়ি গ্রাম থেকে তোলা ছবি -প্রথম আলো |
ঠাকুরগাঁও
সদরের কিসামত কেশুরবাড়ি গ্রামে কান পাতলেই শোনা যায় তাঁতের খটখট শব্দ।
বিভিন্ন বাড়িতে উঁকি দিলে দেখা যায়, আঙিনায় কারিগরেরা নিপুণ হাতে বুনে
চলেছেন কম্বল। এই তাঁতশিল্প এখানকার মানুষকে আর্থিক সচ্ছলতা দিয়েছিল। এখন
সেই দিন অতীত।
পুঁজির অভাবে তাঁতিরা এ ব্যবসায় আগের মতো আর বিনিয়োগ করতে পারছেন না। বেশির ভাগ তাঁতিই পুঁজি জোগাতে মহাজন ও দাদন ব্যবসায়ীদের সুদের জালে জড়িয়ে পড়েছেন। ফলে সুদ পরিশোধেই চলে যাচ্ছে তাঁতির পুঁজির বড় অংশ।
কিসামত কেশুরবাড়ি গ্রামের তাঁতিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে এখানে শুরু হয় তাঁতযন্ত্রের মাধ্যমে কম্বল তৈরির কাজ। গ্রামে প্রায় ৫০০ পরিবারের বসবাস। তাদের অধিকাংশই কম্বল বুননের কাজে জড়িত। তারা বলসুতা, পুরোনো সোয়েটারের উল দিয়ে কম্বল, গায়ের চাদর, মাফলারসহ আরও অনেক কিছু তৈরি করেন।
গ্রামের তাঁতি অনিল রায় বলেন, ‘মহাজন থেকে ৫০ হাজার টাকা করে ঋণ নিয়ে কম্বল তৈরিতে খাটাচ্ছি। মাসিক সুদ দিতে হচ্ছে প্রতি হাজারে ৩০০ টাকারও বেশি। অর্থাৎ বার্ষিক সুদের হার ৩৬০ শতাংশ। ফলে যে লাভ হবে, তার বেশির ভাগই চলে যাবে মহাজনের সুদের টাকা শোধ করতে।’
তাঁতি নিতাই দেবনাথ বলেন, ৮ থেকে ১০ জনের একটি দল বগুড়ার শান্তাহারের শাওয়ালহাট গিয়ে কম্বলের সুতা কিনে আনে। দুই বছর আগে যে সুতা তারা প্রতি মণ দেড় হাজার টাকায় কিনেছিল, এবার তা তিন হাজার টাকায় কিনতে হচ্ছে। এক মণ ভালো মানের উলের দাম পাঁচ হাজার টাকা। এ কারণে তাঁতিরা এখন আর এ শিল্পে পুঁজি বিনিয়োগ করতে পারছেন না।
তাঁতি জয়ন্ত দেবনাথ বলেন, ‘হাতে টাকা নেই। মহাজনদের কাছ থেকে টাকা ধার নিয়ে আমরা তাঁত চালু রেখেছি। কিন্তু তাঁতিদের এখন খুবই দুঃসময় চলছে। এ কারণে অনেক তাঁতি মহাজনের টাকা শোধ করতে পারছেন না। তাঁদের অনেকে মহাজনের ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। আবার অনেকেই পুঁজি হারিয়ে চলে গেছেন অন্য পেশায়।’
পুঁজির অভাবে তাঁত বন্ধ করে মজুরের কাজ করছেন গ্রামের তাঁতি বিজয় রায়। তিনি বলেন, পুঁজি না থাকায় গত বছর মহাজনের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে তাঁতের কাজে লাগিয়েছিলেন। কিন্তু লাভের বেশির ভাগই সুদ শোধ করতে চলে গেছে। এ কারণে তিনি পুঁজি-সংকটে পড়েন। তাই এ বছর তাঁত বন্ধ করে দিয়েছেন তিনি। তাঁর পাড়ার রবিন রায়, রামপ্রসাদ, ডোকরোসহ অনেকেই একই কারণে তাঁত বন্ধ করে দিয়েছেন। বিজয় রায় বলেন, ‘এখন ব্যবসায় লাভ একদমই নাই। তাই তাঁত বন্ধ রেখে মজুরের কাজ করছি। তবে সহজ শর্তে ঋণ পেলে আবার তাঁত সচল করব।’
তাঁতের মালিক প্রভু দেবনাথ বলেন, কেশুরবাড়ির কম্বলের চাহিদা থাকলেও সুতা ও অন্যান্য কাঁচামালের দাম বেড়ে যাওয়ায় এলাকার শতাধিক তাঁত বন্ধ হয়ে গেছে। তাঁতিদের অনেকেই এখন মহাজনের সঙ্গে চুক্তি করে কম্বল বুনে দেন। এ ক্ষেত্রে তাঁতি শুধু শ্রমের মজুরি পান। একটি কম্বল বুনে তাঁতিরা মজুরি পান মাত্র ৪০-৫০ টাকা। তবে তাঁতি নিজের পুঁজি খাঁটিয়ে বুনতে পারলে প্রতিটি কম্বলে কমপক্ষে ১০০ টাকা বেশি লাভ হবে।
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. তৈমুর রহমান বলেন, তাঁতিদের প্রশিক্ষণ, সহজ শর্তে ঋণসুবিধা ও উৎপাদিত পণ্য বাজারজাত করা গেলে তাঁত মালিক-শ্রমিকেরা আবার কর্মসংস্থান ফিরে পাবেন। উপজেলা পরিষদ থেকে তাঁতিদের জন্য নতুন কোনো উদ্যোগ নেওয়া যায় কি না, তা বিবেচনা করা হবে।
পুঁজির অভাবে তাঁতিরা এ ব্যবসায় আগের মতো আর বিনিয়োগ করতে পারছেন না। বেশির ভাগ তাঁতিই পুঁজি জোগাতে মহাজন ও দাদন ব্যবসায়ীদের সুদের জালে জড়িয়ে পড়েছেন। ফলে সুদ পরিশোধেই চলে যাচ্ছে তাঁতির পুঁজির বড় অংশ।
কিসামত কেশুরবাড়ি গ্রামের তাঁতিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে এখানে শুরু হয় তাঁতযন্ত্রের মাধ্যমে কম্বল তৈরির কাজ। গ্রামে প্রায় ৫০০ পরিবারের বসবাস। তাদের অধিকাংশই কম্বল বুননের কাজে জড়িত। তারা বলসুতা, পুরোনো সোয়েটারের উল দিয়ে কম্বল, গায়ের চাদর, মাফলারসহ আরও অনেক কিছু তৈরি করেন।
গ্রামের তাঁতি অনিল রায় বলেন, ‘মহাজন থেকে ৫০ হাজার টাকা করে ঋণ নিয়ে কম্বল তৈরিতে খাটাচ্ছি। মাসিক সুদ দিতে হচ্ছে প্রতি হাজারে ৩০০ টাকারও বেশি। অর্থাৎ বার্ষিক সুদের হার ৩৬০ শতাংশ। ফলে যে লাভ হবে, তার বেশির ভাগই চলে যাবে মহাজনের সুদের টাকা শোধ করতে।’
তাঁতি নিতাই দেবনাথ বলেন, ৮ থেকে ১০ জনের একটি দল বগুড়ার শান্তাহারের শাওয়ালহাট গিয়ে কম্বলের সুতা কিনে আনে। দুই বছর আগে যে সুতা তারা প্রতি মণ দেড় হাজার টাকায় কিনেছিল, এবার তা তিন হাজার টাকায় কিনতে হচ্ছে। এক মণ ভালো মানের উলের দাম পাঁচ হাজার টাকা। এ কারণে তাঁতিরা এখন আর এ শিল্পে পুঁজি বিনিয়োগ করতে পারছেন না।
তাঁতি জয়ন্ত দেবনাথ বলেন, ‘হাতে টাকা নেই। মহাজনদের কাছ থেকে টাকা ধার নিয়ে আমরা তাঁত চালু রেখেছি। কিন্তু তাঁতিদের এখন খুবই দুঃসময় চলছে। এ কারণে অনেক তাঁতি মহাজনের টাকা শোধ করতে পারছেন না। তাঁদের অনেকে মহাজনের ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। আবার অনেকেই পুঁজি হারিয়ে চলে গেছেন অন্য পেশায়।’
পুঁজির অভাবে তাঁত বন্ধ করে মজুরের কাজ করছেন গ্রামের তাঁতি বিজয় রায়। তিনি বলেন, পুঁজি না থাকায় গত বছর মহাজনের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে তাঁতের কাজে লাগিয়েছিলেন। কিন্তু লাভের বেশির ভাগই সুদ শোধ করতে চলে গেছে। এ কারণে তিনি পুঁজি-সংকটে পড়েন। তাই এ বছর তাঁত বন্ধ করে দিয়েছেন তিনি। তাঁর পাড়ার রবিন রায়, রামপ্রসাদ, ডোকরোসহ অনেকেই একই কারণে তাঁত বন্ধ করে দিয়েছেন। বিজয় রায় বলেন, ‘এখন ব্যবসায় লাভ একদমই নাই। তাই তাঁত বন্ধ রেখে মজুরের কাজ করছি। তবে সহজ শর্তে ঋণ পেলে আবার তাঁত সচল করব।’
তাঁতের মালিক প্রভু দেবনাথ বলেন, কেশুরবাড়ির কম্বলের চাহিদা থাকলেও সুতা ও অন্যান্য কাঁচামালের দাম বেড়ে যাওয়ায় এলাকার শতাধিক তাঁত বন্ধ হয়ে গেছে। তাঁতিদের অনেকেই এখন মহাজনের সঙ্গে চুক্তি করে কম্বল বুনে দেন। এ ক্ষেত্রে তাঁতি শুধু শ্রমের মজুরি পান। একটি কম্বল বুনে তাঁতিরা মজুরি পান মাত্র ৪০-৫০ টাকা। তবে তাঁতি নিজের পুঁজি খাঁটিয়ে বুনতে পারলে প্রতিটি কম্বলে কমপক্ষে ১০০ টাকা বেশি লাভ হবে।
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. তৈমুর রহমান বলেন, তাঁতিদের প্রশিক্ষণ, সহজ শর্তে ঋণসুবিধা ও উৎপাদিত পণ্য বাজারজাত করা গেলে তাঁত মালিক-শ্রমিকেরা আবার কর্মসংস্থান ফিরে পাবেন। উপজেলা পরিষদ থেকে তাঁতিদের জন্য নতুন কোনো উদ্যোগ নেওয়া যায় কি না, তা বিবেচনা করা হবে।
No comments