আতঙ্কে শিয়া সম্প্রদায় নিরাপত্তা জোরদার by রোকনুজ্জামান পিয়াস ও আবদুল আলীম
এখনও
স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরেনি ইমামবাড়া। শিয়া সম্প্রদায়ের ওপর ঘটে যাওয়া তিনটি
হামলার ঘটনায় আতঙ্কে রয়েছেন ইমামবাড়া এলাকার মানুষ। লোকসমাগম কমে গেছে।
নিরাপত্তা বাড়াতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। সার্বক্ষণিক
পাহারায় রয়েছেন পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা। সিসি ক্যামেরার সংখ্যাও বাড়ানো
হয়েছে। তবে উদ্বেগ-আতঙ্ক কমছে না। সংশ্লিষ্টদের ধারণা, দেশের সাম্প্রদায়িক
সম্প্রীতি নষ্ট করতে একটি মহল দেশে ভীতিকর এ কর্মকাণ্ড করছে। তারা বলেন,
বাংলাদেশে শিয়া-সুন্নি বিভেদ নেই। এসব ধর্মীয় উৎসবে সবাই আসেন। প্রার্থনা
করেন। উভয় সম্প্রদায়ের মধ্যে বিয়ে-শাদিও হয়।
গতকাল হোসনি দালানে গিয়ে দেখা যায়, ভেতরে ঢুকতেই পুলিশ বেষ্টনী। অপরিচিতদের দেখলে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন তারা। গোয়েন্দা বাহিনীর সদস্যরাও ভেতরে ও বাইরে নজরদারি করছেন। এখানে কথা হয় হোসনি দালানের ইমামবাড়ার মুখপাত্র সৈয়দ বাকের রেজা মজলুমের সঙ্গে। তিনি জানান, এখানে যারা আসেন তারা বেশির ভাগই সুন্নি মতাবলম্বী। শিয়াদের জন্য নির্ধারিত হলেও এখানে সবাই আসেন। তিনি এসব ঘটনায় প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন, শিয়া-সুন্নি বড় কথা নয়, মানুষ তো মারা যাচ্ছে। বিগত চার শত বছরের ইতিহাসে এমন ঘটনা ঘটেনি উল্লেখ করে তিনি বলেন, এখানে ঘটনাস্থলে যে ছেলেটি মারা গেছে সেও একজন সুন্নি। শিয়াদের কর্মকাণ্ড তুলে ধরে তিনি বলেন, বর্তমান পরিসরে যতটুকু সম্ভব আমরা চ্যারিটি কার্যক্রম করে যাচ্ছি। হোসনি দালানের ভেতরে একটি ক্লিনিকে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা দেয়া হচ্ছে। যেখানে সব শ্রেণীর লোকজনই সেবা নিতে আসছে। তিনি বলেন, আমরা কোনদিন ভীতিকর পরিস্থিতিতে ছিলাম না, এখনও নেই। তবে আশেপাশের মানুষের মধ্যে আতঙ্ক আছে। এ জন্য ইমামবাড়ায় এখন লোক সমাগম কম হয়। তিনি বলেন, বাংলাদেশে কখনও সাম্প্রদায়িক বিরোধ ছিল না। এমনকি একই পরিবারে উভয় সম্প্রদায়ের মানুষও আছে। একটি মহল এই সম্প্রীতি নষ্ট করার চেষ্টা করছে। বুধবার রাতে এই ঘটনায় সন্দেহভাজন এক ব্যক্তি ক্রসফায়ারে নিহত হওয়ার ঘটনা উল্লেখ করে তিনি বলেন, তাকে মেরে না ফেললে হয়তো জড়িতদের খুঁজে বের করা যেত। হোসনি দালানের আশেপাশের ব্যবসায়ীরা বলেন, বিভিন্ন জায়গায় শিয়া সম্প্রদায়ের ওপর হামলা উদ্বেগজনক। আগে কখনও এমনটা শুনিনি।
মোহাম্মদপুর শিয়া মসজিদেও দেখা যায় কড়া পুলিশি নিরাপত্তা। সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করছেন পুলিশ সদস্যরা। গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরাও ঘোরাঘুরি করছে এলাকায়। মোহাম্মদপুর শিয়া মসজিদ ও হুসাইনী ট্রাস্টে এরকম নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা থাকার পরও আতঙ্কে রয়েছে এই এলাকার শিয়া সম্প্রদায়ের লোকেরা। সেখানে কথা হয় এলাকাবাসী ও হুসাইনী ট্রাস্টের চেয়ারম্যান, ট্রাস্টের ভেতরে ও বাইরে বসবাসরত কয়েকজনের সঙ্গে। তারা জানান, পুরান ঢাকায় ইমামবাড়াতে বোমা হামলার পর থেকে তাদের এখানে পুলিশি নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। রাস্তার দুই প্রান্তে, মসজিদের গেট ও চারপাশে পুলিশ ২৪ ঘণ্টা পাহারা দিচ্ছে। একই সঙ্গে শিয়া সম্প্রদায়ের লোকেরা যেসব এলাকায় বিচ্ছিন্নভাবে বসবাস করছে এমন সম্ভাব্য এলাকায়ও টহল বাড়ানো হয়েছে। তারপরও যেন একটা অজানা আতঙ্ক রয়ে গেছে। শিয়া মসজিদের অদূরে মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা মো. নূরুল মনির জানান, আগে কখনও এতটা অনিরাপদবোধ করিনি। হঠাৎ করে বাংলাদেশে যেটা শুরু হয়েছে এটা অনাকাঙ্ক্ষিত। আগে এমন অবস্থা ছিল না। মোহাম্মদপুর কেন্দ্রীয় কলেজের ইন্টারমিডিয়েটের ছাত্র মো. জিসান হোসাইন বলেন, চলাফেরা করতে কোন সমস্যা হয় না। তবে অজানা আতঙ্ক রয়েছে। আগে কোন ভয় করতো না কিন্তু এখন অনেক ভয় লাগে। কখন কি হয় তা তো বলা যায় না। বন্ধুদের মধ্যে যারা শিয়া আছে তাদের অবস্থাও একই রকম। জিসানের দাদা শিয়া মসজিদের খাদেম থাকায় তাদের পরিবারের বসবাস শিয়া মসজিদের ভেতরে হুসাইনী ট্রাস্টের আবাসিক ভবনে। জানতে চাইলে বলেন, মহররম মাস থেকে শুরু করে দুই মাস রাতে এশার নামাজের পর ইমামবাড়িতে জলসা বসে। জলসায় নারী-পুরুষসহ অনেক মানুষ হয়। কিন্তু এবার অন্যান্য বছরের চেয়ে অনেক কম লোক হচ্ছে। মানুষ কম হওয়ার কারণ পুরান ঢাকার হোসনি দালানে বোমা হামলা। এই হামলার পর থেকে মানুষের মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক বিরাজ করছে। তারপরও জলসায় অনেক লোকের সমাগম হয়। হুসাইনী ট্রাস্টের সাবেক চেয়ারম্যান শামীম হায়দার বলেন, আতঙ্ক তো আছেই। জানের মায়া কার না আছে? তবে আমাদের পক্ষ থেকে আমরা যথেষ্ট সতর্ক রয়েছি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও যথেষ্ট সহযোগিতা করছে। গত ২ মাস ধরে গোটা এলাকায় ২৪ ঘণ্টাই পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। ট্রাস্টের চেয়ারম্যান রাশেদ হায়দার বলেন, মোহাম্মদপুর এলাকার শিয়ারা কোন ধরনের নিরাপত্তার অভাবে রয়েছে এমন কোন মেসেজ আমার কাছে আসেনি। পুরান ঢাকার ঘটনার পর সরকার সরকারের মতো কাজ করছে। আমরা আমাদের মতো কাজ করছি। কোন ধরনের সমস্যা নেই। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিরাপত্তা জোরদারে আমরা সন্তুষ্ট। তবে আমরাও নিজেদের পক্ষ থেকে যথেষ্ট ব্যবস্থা নিয়েছি। আগে আমাদের সিসি ক্যামেরা ছিল ৮টি। এখন ক্যামেরা বাড়িয়ে ১৫টি করা হয়েছে। সবগুলোর মান অনেক ভালো। মসজিদের প্রবেশ পথে স্ক্যানার বসানো হচ্ছে। পূর্বে দুই শিফটে ২ জন সিকিউরিটি গার্ড ছিল। সেটা বাড়িয়ে ৪ জন করা হয়েছে। তারা ১২ ঘণ্টা করে দায়িত্ব পালন করে। এছাড়া, খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এতসব নিরাপত্তার পাশাপাশি একেবারে নিজেদের মতো করে মোহাম্মদপুরের শিয়া সম্প্রদায়ের যুবকদের মধ্য থেকে ভলেন্টিয়াররা দায়িত্ব পালন করছেন। নিজেদের নিরাপত্তার জন্য তারা তিনটি শিফটে ৭/৮ জন করে মোট ৩০ জন যুবক ভলেন্টিয়ারের দায়িত্ব পালন করছে। মোহাম্মদপুর শিয়া মসজিদের সামনে দায়িত্বরত এসআই মোফাজ্জল হোসেন বলেন, পুরান ঢাকার ইমামবাড়ার ঘটনার পর থেকে আমরা সার্বক্ষণিক পাহারা দিচ্ছি। রাস্তার দুই পাশে ৬ জন করে ১২ জন এবং মসজিদের চার পাশে ২০ জন। মোট ৩২ জন পুলিশ সার্বক্ষণিক শিয়া মসজিদ এলাকা পাহারার দায়িত্বে রয়েছে। তিনি জানান, শুধু এখানেই না। মোহাম্মদপুর থানার পক্ষ থেকে সম্ভাব্য শিয়া সম্প্রদায়ের বসবাসরত এলাকায় পুলিশি টহল বাড়ানো হয়েছে।
এদিকে ঢাকার বাইরেও খোঁজ নিয়ে একই চিত্র পাওয়া গেছে। নীলফামারী এলাকার সৈয়দপুরে শিয়া সম্প্রদায়ের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। সেখানে জলসায় লোকজনের উপস্থিতি খুবই কম। এলাকার হাদিখানা, ভোলাহাট, বাঁশবাড়ি, মিস্ত্রিপাড়া, খালাসী মহল্লা, ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় আড়াই হাজারের মতো শিয়া মতাবলম্বী মানুষ বাস করেন। তবে একই পরিবারে উভয় সম্প্রদায়ের লোকজনও আছে। স্থানীয় সূত্র জানায়, হোসনি দালানের ঘটনার পর খুব একটা প্রভাব না পড়লেও সৈয়দপুরে কারবালার খাদেমকে গলা কেটে হত্যার চেষ্টা এবং বগুড়ায় এক মুয়াজ্জিনকে গুলি করে হত্যার পর এখন আতঙ্কিত তারা।
উল্লেখ্য, গত ২৩শে অক্টোবর গভীররাতে শিয়া সম্প্রদায়ের তাজিয়া মিছিলের প্রস্তুতিকালে গ্রেনেড হামলায় ঘটনাস্থলে সানজু নামে এক কিশোর মারা যায়। পরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় আরও একজন। ১১ই অক্টোবর নীলফামারীর সৈয়দপুরে তাজিয়া কারবালার খাদেম মো. হাসনাইন (৬০)-এর ওপর হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। ওইদিন মাগরিবের নামাজে সেজদারত অবস্থায় তাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যার চেষ্টা করে। গুরুতর আহত ওই খাদেমকে প্রথমে সৈয়দপুর ১০০ শয্যা হাসপাতালে এবং পরে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। এছাড়া, বগুড়ার শিবগঞ্জের একটি গ্রামে শিয়া সম্প্রদায়ের একটি মসজিদে দুর্বৃত্তরা গুলি করে মোয়াজ্জেম নামে এক ব্যক্তিকে হত্যা করে।
গতকাল হোসনি দালানে গিয়ে দেখা যায়, ভেতরে ঢুকতেই পুলিশ বেষ্টনী। অপরিচিতদের দেখলে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন তারা। গোয়েন্দা বাহিনীর সদস্যরাও ভেতরে ও বাইরে নজরদারি করছেন। এখানে কথা হয় হোসনি দালানের ইমামবাড়ার মুখপাত্র সৈয়দ বাকের রেজা মজলুমের সঙ্গে। তিনি জানান, এখানে যারা আসেন তারা বেশির ভাগই সুন্নি মতাবলম্বী। শিয়াদের জন্য নির্ধারিত হলেও এখানে সবাই আসেন। তিনি এসব ঘটনায় প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন, শিয়া-সুন্নি বড় কথা নয়, মানুষ তো মারা যাচ্ছে। বিগত চার শত বছরের ইতিহাসে এমন ঘটনা ঘটেনি উল্লেখ করে তিনি বলেন, এখানে ঘটনাস্থলে যে ছেলেটি মারা গেছে সেও একজন সুন্নি। শিয়াদের কর্মকাণ্ড তুলে ধরে তিনি বলেন, বর্তমান পরিসরে যতটুকু সম্ভব আমরা চ্যারিটি কার্যক্রম করে যাচ্ছি। হোসনি দালানের ভেতরে একটি ক্লিনিকে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা দেয়া হচ্ছে। যেখানে সব শ্রেণীর লোকজনই সেবা নিতে আসছে। তিনি বলেন, আমরা কোনদিন ভীতিকর পরিস্থিতিতে ছিলাম না, এখনও নেই। তবে আশেপাশের মানুষের মধ্যে আতঙ্ক আছে। এ জন্য ইমামবাড়ায় এখন লোক সমাগম কম হয়। তিনি বলেন, বাংলাদেশে কখনও সাম্প্রদায়িক বিরোধ ছিল না। এমনকি একই পরিবারে উভয় সম্প্রদায়ের মানুষও আছে। একটি মহল এই সম্প্রীতি নষ্ট করার চেষ্টা করছে। বুধবার রাতে এই ঘটনায় সন্দেহভাজন এক ব্যক্তি ক্রসফায়ারে নিহত হওয়ার ঘটনা উল্লেখ করে তিনি বলেন, তাকে মেরে না ফেললে হয়তো জড়িতদের খুঁজে বের করা যেত। হোসনি দালানের আশেপাশের ব্যবসায়ীরা বলেন, বিভিন্ন জায়গায় শিয়া সম্প্রদায়ের ওপর হামলা উদ্বেগজনক। আগে কখনও এমনটা শুনিনি।
মোহাম্মদপুর শিয়া মসজিদেও দেখা যায় কড়া পুলিশি নিরাপত্তা। সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করছেন পুলিশ সদস্যরা। গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরাও ঘোরাঘুরি করছে এলাকায়। মোহাম্মদপুর শিয়া মসজিদ ও হুসাইনী ট্রাস্টে এরকম নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা থাকার পরও আতঙ্কে রয়েছে এই এলাকার শিয়া সম্প্রদায়ের লোকেরা। সেখানে কথা হয় এলাকাবাসী ও হুসাইনী ট্রাস্টের চেয়ারম্যান, ট্রাস্টের ভেতরে ও বাইরে বসবাসরত কয়েকজনের সঙ্গে। তারা জানান, পুরান ঢাকায় ইমামবাড়াতে বোমা হামলার পর থেকে তাদের এখানে পুলিশি নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। রাস্তার দুই প্রান্তে, মসজিদের গেট ও চারপাশে পুলিশ ২৪ ঘণ্টা পাহারা দিচ্ছে। একই সঙ্গে শিয়া সম্প্রদায়ের লোকেরা যেসব এলাকায় বিচ্ছিন্নভাবে বসবাস করছে এমন সম্ভাব্য এলাকায়ও টহল বাড়ানো হয়েছে। তারপরও যেন একটা অজানা আতঙ্ক রয়ে গেছে। শিয়া মসজিদের অদূরে মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা মো. নূরুল মনির জানান, আগে কখনও এতটা অনিরাপদবোধ করিনি। হঠাৎ করে বাংলাদেশে যেটা শুরু হয়েছে এটা অনাকাঙ্ক্ষিত। আগে এমন অবস্থা ছিল না। মোহাম্মদপুর কেন্দ্রীয় কলেজের ইন্টারমিডিয়েটের ছাত্র মো. জিসান হোসাইন বলেন, চলাফেরা করতে কোন সমস্যা হয় না। তবে অজানা আতঙ্ক রয়েছে। আগে কোন ভয় করতো না কিন্তু এখন অনেক ভয় লাগে। কখন কি হয় তা তো বলা যায় না। বন্ধুদের মধ্যে যারা শিয়া আছে তাদের অবস্থাও একই রকম। জিসানের দাদা শিয়া মসজিদের খাদেম থাকায় তাদের পরিবারের বসবাস শিয়া মসজিদের ভেতরে হুসাইনী ট্রাস্টের আবাসিক ভবনে। জানতে চাইলে বলেন, মহররম মাস থেকে শুরু করে দুই মাস রাতে এশার নামাজের পর ইমামবাড়িতে জলসা বসে। জলসায় নারী-পুরুষসহ অনেক মানুষ হয়। কিন্তু এবার অন্যান্য বছরের চেয়ে অনেক কম লোক হচ্ছে। মানুষ কম হওয়ার কারণ পুরান ঢাকার হোসনি দালানে বোমা হামলা। এই হামলার পর থেকে মানুষের মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক বিরাজ করছে। তারপরও জলসায় অনেক লোকের সমাগম হয়। হুসাইনী ট্রাস্টের সাবেক চেয়ারম্যান শামীম হায়দার বলেন, আতঙ্ক তো আছেই। জানের মায়া কার না আছে? তবে আমাদের পক্ষ থেকে আমরা যথেষ্ট সতর্ক রয়েছি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও যথেষ্ট সহযোগিতা করছে। গত ২ মাস ধরে গোটা এলাকায় ২৪ ঘণ্টাই পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। ট্রাস্টের চেয়ারম্যান রাশেদ হায়দার বলেন, মোহাম্মদপুর এলাকার শিয়ারা কোন ধরনের নিরাপত্তার অভাবে রয়েছে এমন কোন মেসেজ আমার কাছে আসেনি। পুরান ঢাকার ঘটনার পর সরকার সরকারের মতো কাজ করছে। আমরা আমাদের মতো কাজ করছি। কোন ধরনের সমস্যা নেই। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিরাপত্তা জোরদারে আমরা সন্তুষ্ট। তবে আমরাও নিজেদের পক্ষ থেকে যথেষ্ট ব্যবস্থা নিয়েছি। আগে আমাদের সিসি ক্যামেরা ছিল ৮টি। এখন ক্যামেরা বাড়িয়ে ১৫টি করা হয়েছে। সবগুলোর মান অনেক ভালো। মসজিদের প্রবেশ পথে স্ক্যানার বসানো হচ্ছে। পূর্বে দুই শিফটে ২ জন সিকিউরিটি গার্ড ছিল। সেটা বাড়িয়ে ৪ জন করা হয়েছে। তারা ১২ ঘণ্টা করে দায়িত্ব পালন করে। এছাড়া, খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এতসব নিরাপত্তার পাশাপাশি একেবারে নিজেদের মতো করে মোহাম্মদপুরের শিয়া সম্প্রদায়ের যুবকদের মধ্য থেকে ভলেন্টিয়াররা দায়িত্ব পালন করছেন। নিজেদের নিরাপত্তার জন্য তারা তিনটি শিফটে ৭/৮ জন করে মোট ৩০ জন যুবক ভলেন্টিয়ারের দায়িত্ব পালন করছে। মোহাম্মদপুর শিয়া মসজিদের সামনে দায়িত্বরত এসআই মোফাজ্জল হোসেন বলেন, পুরান ঢাকার ইমামবাড়ার ঘটনার পর থেকে আমরা সার্বক্ষণিক পাহারা দিচ্ছি। রাস্তার দুই পাশে ৬ জন করে ১২ জন এবং মসজিদের চার পাশে ২০ জন। মোট ৩২ জন পুলিশ সার্বক্ষণিক শিয়া মসজিদ এলাকা পাহারার দায়িত্বে রয়েছে। তিনি জানান, শুধু এখানেই না। মোহাম্মদপুর থানার পক্ষ থেকে সম্ভাব্য শিয়া সম্প্রদায়ের বসবাসরত এলাকায় পুলিশি টহল বাড়ানো হয়েছে।
এদিকে ঢাকার বাইরেও খোঁজ নিয়ে একই চিত্র পাওয়া গেছে। নীলফামারী এলাকার সৈয়দপুরে শিয়া সম্প্রদায়ের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। সেখানে জলসায় লোকজনের উপস্থিতি খুবই কম। এলাকার হাদিখানা, ভোলাহাট, বাঁশবাড়ি, মিস্ত্রিপাড়া, খালাসী মহল্লা, ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় আড়াই হাজারের মতো শিয়া মতাবলম্বী মানুষ বাস করেন। তবে একই পরিবারে উভয় সম্প্রদায়ের লোকজনও আছে। স্থানীয় সূত্র জানায়, হোসনি দালানের ঘটনার পর খুব একটা প্রভাব না পড়লেও সৈয়দপুরে কারবালার খাদেমকে গলা কেটে হত্যার চেষ্টা এবং বগুড়ায় এক মুয়াজ্জিনকে গুলি করে হত্যার পর এখন আতঙ্কিত তারা।
উল্লেখ্য, গত ২৩শে অক্টোবর গভীররাতে শিয়া সম্প্রদায়ের তাজিয়া মিছিলের প্রস্তুতিকালে গ্রেনেড হামলায় ঘটনাস্থলে সানজু নামে এক কিশোর মারা যায়। পরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় আরও একজন। ১১ই অক্টোবর নীলফামারীর সৈয়দপুরে তাজিয়া কারবালার খাদেম মো. হাসনাইন (৬০)-এর ওপর হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। ওইদিন মাগরিবের নামাজে সেজদারত অবস্থায় তাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যার চেষ্টা করে। গুরুতর আহত ওই খাদেমকে প্রথমে সৈয়দপুর ১০০ শয্যা হাসপাতালে এবং পরে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। এছাড়া, বগুড়ার শিবগঞ্জের একটি গ্রামে শিয়া সম্প্রদায়ের একটি মসজিদে দুর্বৃত্তরা গুলি করে মোয়াজ্জেম নামে এক ব্যক্তিকে হত্যা করে।
No comments