লন্ডনে তারেক রহমানকে যেমনটি দেখেছি ... by মাহবুবা জেবিন
বাংলাদেশী
জাতীয়তাবাদের প্রাণপুরুষ শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ও আপসহীন
দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জ্যেষ্ঠপুত্র তারেক রহমান। উচ্চ শিক্ষার্থে
লন্ডন আসার পর ২০১২ সালের পহেলা বৈশাখে হঠাৎই দেখা হয় তারেক রহমানের সাথে।
লাঠিতে ভর দিয়ে আস্তে আস্তে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটেন। এক-এগারোর নির্যাতনের
ক্ষত তখন সারেনি। পুরোপুরি সুস্থ হননি। পরিচয় করিয়ে দিতেই স্মিত হেসে
সালামের উত্তর দিয়ে কুশল জিজ্ঞাসা করলেন। আমার চোখ চলে যাচ্ছিল সোফায় বসা
পাশের কিশোরীর দিকে। তারেক রহমান বললেন, ও আমার মেয়ে জাইমা। এবার আমার অবাক
হওয়ার পালা। এই কি সেই! দাদু বেগম খালেদা জিয়ার হাত ধরে থাকা ছোট্ট জাইমা।
বিস্ময় লুকাতে পারলাম না। কিন্তু সময় বহমান। এরই মাঝে কেটে গেছে অনেক বছর।
যুক্তরাজ্যে চিকিৎসাধীন তারেক রহমানের সার্বক্ষণিক সঙ্গী হয়ে আছেন তার সহধর্মিণী ব্যক্তিত্বসম্পন্ন ও সদালাপী ডা: জুবাইদা রহমান। নিয়ম করে ফিজিওথেরাপি দেয়া, খাওয়া, ব্যায়াম, সঠিক চিকিৎসা সম্পর্কে রয়েছে তীক্ষèদৃষ্টি। নিঃসন্দেহে স্ত্রীর সেবা তার দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠতে বিশেষ ভূমিকা রাখছে।
লন্ডনে কষ্টকর এই সুদীর্ঘ প্রবাস জীবনে তারেক রহমান শারীরিক চিকিৎসা নেয়ার পাশাপাশি গণতন্ত্রের সূতিকাগার যুক্তরাজ্যের গণতন্ত্র, নির্বাচন প্রক্রিয়া, রাজনৈতিক দলের কাঠামো ইত্যাদি খুব কাছ থেকে পর্যবেক্ষণ করার পাশপাশি উন্নত বিশ্বের শিক্ষানীতি, যোগাযোগ ব্যবস্থা, সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা, আইনের কাঠামো সম্পর্কে সম্যক ধারণা নিয়েছেন। এ বিষয়গুলো নিয়ে প্রচুর পড়াশোনাও করছেন। এমনকি খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে জানতে চেয়েছেন ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস বা (NHS) এর সেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের অভিজ্ঞতার কথা।
সব শুনে বললেন, এরকম আমাদের দেশেও রয়েছে যেমন- হেলথ ভিজিটর বা স্বাস্থ্যকর্মী। তারা এখানকারদের (মিড ওয়াইফ) মতোই কাজ করে কিন্তু তাদের সেবার পরিধি অনেক কম আর সুযোগ সুবিধাও অপ্রতুল। উন্নত প্রশিক্ষণ আর আধুনিক প্রযুক্তি সহায়তা দিতে পারলে আমাদের এই হেলথ ভিজিটর বা স্বাস্থ্যকর্মীরাও পৃথিবীর বুকে মডেল হিসেবে বিবেচিত হবে।
বিদেশে থাকলেও মনটা পরে থাকে মাতৃভূমি বাংলাদেশে। সব ভাবনা চিন্তা জুড়ে থাকে বাংলাদেশ ও বাংলাদেশের মানুষ। আলাপে জানালেন তার পরিকল্পনা রয়েছে বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানোর। বর্তমান অন্তসার শূন্য ঘুণে ধরা শিক্ষাব্যবস্থা তাকে আহত করে। তিনি বলেন, ছোট ছোট শিশুরা নিজেদের ওজনের চেয়ে বেশি ওজনের বইয়ের ভারে ভারাক্রান্ত। দেশের ভবিষ্যৎ এসব কোমলমতি শিশুদের মেরুদণ্ড সোজা রাখতে হবে। পুঁথিগত শিক্ষার পরিবর্তে বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চা ও কারিগরি শিক্ষার ওপর প্রাধান্য দিতে হবে। আর জ্ঞানার্জনের পাশাপাশি শিশুদের দিতে হবে দায়িত্বশীলতা, সততা ও নৈতিকতার শিক্ষা। শিশুদের শুদ্ধ বাংলা ভাষা চর্চার পাশাপাশি ইংরেজি শিক্ষার ওপরও গুরুত্ব দেন তিনি। শিশুরা যেন স্কুুলে যেতে ভয় না পায় তাদের কাছে স্কুলের পরিবেশ এবং পাঠদান যেন আকর্ষণীয় হয়। শিশুদের নিয়ে তারেক রহমানের নিজস্ব ভাবনার জগত রয়েছে। আলোচনায় ফিরে যান শৈশব ও কৈশরের দিনগুলোতে। বলেন, কোকো ছোটবেলায় শুধু বিছানা থেকে পরে যেত আর মাথায় ব্যথা পেত। মাথায় লেগে লেগে মাথাটাও হয়ে গিয়েছিল নারিকেলের মতো শক্ত। একবার আমার শিশুর চুল আমি নিজে কেটে দিয়েছিলাম। তিনি দেখে বললেন, ছোটবেলায় আম্মাও এভাবে কোকোর চুল কেটে দিতেন সবসময়। খুব মিস করেন আদরের ছোট ভাইকে।
আরাফাত রহমান কোকো আর তারেক রহমান দুজনই ছিলেন ভাই অন্তপ্রাণ। ছোটভাই মারা যাওয়ার পর খুব ভেঙে পড়েন তিনি। কিন্তু খুব সহসাই নিজেকে সামলে নিয়ে পারিবারিক কর্তব্য পালনে বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দেন। বুকের ভেতর একমাত্র ছোট ভাইয়ের জন্য হাহাকার চেপে রেখে গায়েবানা জানাজায় যাওয়ার সময়ও তিনি তার অসুস্থ বৃদ্ধা প্রতিবেশীর খোঁজ নিতে ভোলেননি। তার শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর নিয়েছেন। সুস্বাস্থ্য কামনা করেছেন।
আমার দেখা প্রায় চার বছরের মধ্যে তারেক রহমানকে সবচেয়ে খোশমেজাজে দেখেছি মা বেগম খালেদা জিয়া লন্ডনে আসার পর। প্রাণখোলা হাসি দিয়ে বারবারই আসছিলেন মায়ের কাছে। পাশে বসে কথা বলছিলেন আর মোবাইলে প্রিয় মুহূর্তগুলোকে ক্যামেরাবন্দি করে রাখছিলেন। দীর্ঘ দিন পর পুরো পরিবারকে তিনি একসাথে কাছে পেয়েছেন। পুরো বাড়িতে তখন উৎসবের আমেজ। বাবা মারা যাওয়ার পর থেকেই মা তাদের দুই ভাইকে স্নেহ ভালোবাসা দিয়ে আগলে রেখেছেন। তাই মায়ের সাথে আত্মার বন্ধনটাও অনেক দৃঢ়।
দেশে থাকতে মা বেগম খালেদা জিয়া তখন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী, প্রতিদিনই কোনো না কোনো কাজে দেশের একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে সফর করতে হয়েছে কিন্তু সারা দিন শেষে মা-ছেলের কথা বলা চাই-ই চাই। একসাথে রাতের খাবার শেষে মায়ের বিছানার পাশে বসে তারেক রহমান সব পত্রিকা মাকে পড়ে শোনাতেন। মা-ছেলে রাজ্যের গল্প করতেন। দেশ নিয়ে দেশের মানুষকে নিয়ে তার পরিকল্পনার কথা মাকে বলতেন।
তার চিন্তা শুধু বর্তমানকে ঘিরে নয়। তার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সুদূরপ্রসারী। নদীমাতৃক বাংলাদেশের নদ-নদীগুলো একেকটা শিরা-উপশিরা ধমনী। কিন্তু বৃহৎ প্রতিবেশীর একতরফা পানি প্রত্যাহারে এক দিকে বাংলাদেশের প্রাণ বহমান নদীগুলো নাব্যতা হারাচ্ছে, আরেক দিকে সমুদ্রের লবণাক্ত পানি ঢুকে বিস্তীর্ণ উপকূল অঞ্চলের পরিবেশ বদলে দিচ্ছে। ধ্বংস হচ্ছে ফসলি জমি, বিপন্ন হচ্ছে বন ও বন্যপ্রাণীর জীবনচক্র। এই ভয়াবহ সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য সঠিক মডেল ও টেকসই প্রযুক্তি উদ্ভাবনের জন্য তারেক রহমান যুক্তরাজ্যের নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাদেশী গবেষকদের আহ্বান জানান।
তারেক রহমানের ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা যেমন সুচিন্তিত, তেমনি সুবিন্যস্ত। সব কাজ গুছিয়ে করতে পছন্দ করেন তিনি। নিয়মানুবর্তিতা আর সময়ানুবর্তিতা বজায় রেখে তিনি নিজেকে আরো বেশি কর্মক্ষম ও প্রস্তুত করছেন।। আর যত কাজই থাকুক না কেন, নিয়মিত নামাজ আদায় করেন তিনি। কিছু দিন তার সাথে কেউ থাকলে তিনিও নিয়মিত নামাজে অভ্যস্ত হয়ে যান।
বর্তমান বাংলাদেশের ভূলুণ্ঠিত গণতন্ত্র আর মানবাধিকার পরিস্থিতি তাকে বিচলিত করে। ভাবনার অনেকটা জুড়ে থাকে দেশে আন্দোলনরত নির্যাতিত নেতাকর্মীরা। নিয়মিত তিনি এসব ত্যাগী নেতাদের খোঁজখবর রাখেন, যারা সরকারি বাহিনী দ্বারা হত্যা, গুম, খুন, মিথ্যা মামলা হামলার শিকার হচ্ছেন। তার মতে, তৃণমূল কর্মীরাই বিএনপির প্রাণ। বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের আদর্শে বিশ্বাসী কোটি মানুষের ভালোবাসাই তার রাজনীতির প্রেরণা।
অহঙ্কার করার মতো তারেক রহমানের অনেক কিছুই রয়েছে। যার পিতা ছিলেন বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষক, রাষ্ট্রপতি, সেনাবাহিনী প্রধান আর মা তিনবারের প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু তারেক রহমানকে দেখেছি নিরহঙ্কার অতি সাধারণ। সহজ সরল জীবনযাপনে অভ্যস্ত তারেক রহমানের নেই কোনো বিলাসী জীবন, খাওয়া দাওয়ায় নেই কোনো বাহুল্য, পোশাক পরিচ্ছদে নেই কোনো চাকচিক্য।
ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত থাকায় সবসময় তারেক রহমানকে দেখেছি দলীয় দৃষ্টিভঙ্গি থেকে একজন ক্রিটিকের দৃষ্টিতে। কিন্তু দূরবীণের অপর প্রান্তের মানুষটিকে কাছ থেকে দেখার পর আমার সব ভ্রান্তি দূর হয়ে যায়। অনুধাবন করতে পারি কী মিথ্যাচারই না হয়েছে তাকে নিয়ে। অপপ্রচার আর মিথ্যা মামলা দিয়ে সুনাম বিনষ্ট করার চেষ্টা হয়েছে।
১-১১ এর কুশীলবেরা তারেক রহমানের নেতৃত্বকে ভয় পেয়ে তাকে গ্রেফতার করে কারাগারে নিক্ষেপ করে। একের পর এক মিথ্যা মামলা দিয়ে জর্জরিত করে। রিমান্ডের নামে অমানুষিক নির্যাতন করে আজীবনের জন্য পঙ্গু করে দেয়ার চেষ্টা করে।
তারেক রহমানকে নিয়ে বিরোধীদের মিথ্যা প্রচারণা দেখে আজ বেঁচে থাকলে গোয়েবলসও লজ্জা পেতেন।
যুক্তরাজ্যে চিকিৎসাধীন তারেক রহমানের সার্বক্ষণিক সঙ্গী হয়ে আছেন তার সহধর্মিণী ব্যক্তিত্বসম্পন্ন ও সদালাপী ডা: জুবাইদা রহমান। নিয়ম করে ফিজিওথেরাপি দেয়া, খাওয়া, ব্যায়াম, সঠিক চিকিৎসা সম্পর্কে রয়েছে তীক্ষèদৃষ্টি। নিঃসন্দেহে স্ত্রীর সেবা তার দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠতে বিশেষ ভূমিকা রাখছে।
লন্ডনে কষ্টকর এই সুদীর্ঘ প্রবাস জীবনে তারেক রহমান শারীরিক চিকিৎসা নেয়ার পাশাপাশি গণতন্ত্রের সূতিকাগার যুক্তরাজ্যের গণতন্ত্র, নির্বাচন প্রক্রিয়া, রাজনৈতিক দলের কাঠামো ইত্যাদি খুব কাছ থেকে পর্যবেক্ষণ করার পাশপাশি উন্নত বিশ্বের শিক্ষানীতি, যোগাযোগ ব্যবস্থা, সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা, আইনের কাঠামো সম্পর্কে সম্যক ধারণা নিয়েছেন। এ বিষয়গুলো নিয়ে প্রচুর পড়াশোনাও করছেন। এমনকি খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে জানতে চেয়েছেন ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস বা (NHS) এর সেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের অভিজ্ঞতার কথা।
সব শুনে বললেন, এরকম আমাদের দেশেও রয়েছে যেমন- হেলথ ভিজিটর বা স্বাস্থ্যকর্মী। তারা এখানকারদের (মিড ওয়াইফ) মতোই কাজ করে কিন্তু তাদের সেবার পরিধি অনেক কম আর সুযোগ সুবিধাও অপ্রতুল। উন্নত প্রশিক্ষণ আর আধুনিক প্রযুক্তি সহায়তা দিতে পারলে আমাদের এই হেলথ ভিজিটর বা স্বাস্থ্যকর্মীরাও পৃথিবীর বুকে মডেল হিসেবে বিবেচিত হবে।
বিদেশে থাকলেও মনটা পরে থাকে মাতৃভূমি বাংলাদেশে। সব ভাবনা চিন্তা জুড়ে থাকে বাংলাদেশ ও বাংলাদেশের মানুষ। আলাপে জানালেন তার পরিকল্পনা রয়েছে বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানোর। বর্তমান অন্তসার শূন্য ঘুণে ধরা শিক্ষাব্যবস্থা তাকে আহত করে। তিনি বলেন, ছোট ছোট শিশুরা নিজেদের ওজনের চেয়ে বেশি ওজনের বইয়ের ভারে ভারাক্রান্ত। দেশের ভবিষ্যৎ এসব কোমলমতি শিশুদের মেরুদণ্ড সোজা রাখতে হবে। পুঁথিগত শিক্ষার পরিবর্তে বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চা ও কারিগরি শিক্ষার ওপর প্রাধান্য দিতে হবে। আর জ্ঞানার্জনের পাশাপাশি শিশুদের দিতে হবে দায়িত্বশীলতা, সততা ও নৈতিকতার শিক্ষা। শিশুদের শুদ্ধ বাংলা ভাষা চর্চার পাশাপাশি ইংরেজি শিক্ষার ওপরও গুরুত্ব দেন তিনি। শিশুরা যেন স্কুুলে যেতে ভয় না পায় তাদের কাছে স্কুলের পরিবেশ এবং পাঠদান যেন আকর্ষণীয় হয়। শিশুদের নিয়ে তারেক রহমানের নিজস্ব ভাবনার জগত রয়েছে। আলোচনায় ফিরে যান শৈশব ও কৈশরের দিনগুলোতে। বলেন, কোকো ছোটবেলায় শুধু বিছানা থেকে পরে যেত আর মাথায় ব্যথা পেত। মাথায় লেগে লেগে মাথাটাও হয়ে গিয়েছিল নারিকেলের মতো শক্ত। একবার আমার শিশুর চুল আমি নিজে কেটে দিয়েছিলাম। তিনি দেখে বললেন, ছোটবেলায় আম্মাও এভাবে কোকোর চুল কেটে দিতেন সবসময়। খুব মিস করেন আদরের ছোট ভাইকে।
আরাফাত রহমান কোকো আর তারেক রহমান দুজনই ছিলেন ভাই অন্তপ্রাণ। ছোটভাই মারা যাওয়ার পর খুব ভেঙে পড়েন তিনি। কিন্তু খুব সহসাই নিজেকে সামলে নিয়ে পারিবারিক কর্তব্য পালনে বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দেন। বুকের ভেতর একমাত্র ছোট ভাইয়ের জন্য হাহাকার চেপে রেখে গায়েবানা জানাজায় যাওয়ার সময়ও তিনি তার অসুস্থ বৃদ্ধা প্রতিবেশীর খোঁজ নিতে ভোলেননি। তার শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর নিয়েছেন। সুস্বাস্থ্য কামনা করেছেন।
আমার দেখা প্রায় চার বছরের মধ্যে তারেক রহমানকে সবচেয়ে খোশমেজাজে দেখেছি মা বেগম খালেদা জিয়া লন্ডনে আসার পর। প্রাণখোলা হাসি দিয়ে বারবারই আসছিলেন মায়ের কাছে। পাশে বসে কথা বলছিলেন আর মোবাইলে প্রিয় মুহূর্তগুলোকে ক্যামেরাবন্দি করে রাখছিলেন। দীর্ঘ দিন পর পুরো পরিবারকে তিনি একসাথে কাছে পেয়েছেন। পুরো বাড়িতে তখন উৎসবের আমেজ। বাবা মারা যাওয়ার পর থেকেই মা তাদের দুই ভাইকে স্নেহ ভালোবাসা দিয়ে আগলে রেখেছেন। তাই মায়ের সাথে আত্মার বন্ধনটাও অনেক দৃঢ়।
দেশে থাকতে মা বেগম খালেদা জিয়া তখন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী, প্রতিদিনই কোনো না কোনো কাজে দেশের একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে সফর করতে হয়েছে কিন্তু সারা দিন শেষে মা-ছেলের কথা বলা চাই-ই চাই। একসাথে রাতের খাবার শেষে মায়ের বিছানার পাশে বসে তারেক রহমান সব পত্রিকা মাকে পড়ে শোনাতেন। মা-ছেলে রাজ্যের গল্প করতেন। দেশ নিয়ে দেশের মানুষকে নিয়ে তার পরিকল্পনার কথা মাকে বলতেন।
তার চিন্তা শুধু বর্তমানকে ঘিরে নয়। তার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সুদূরপ্রসারী। নদীমাতৃক বাংলাদেশের নদ-নদীগুলো একেকটা শিরা-উপশিরা ধমনী। কিন্তু বৃহৎ প্রতিবেশীর একতরফা পানি প্রত্যাহারে এক দিকে বাংলাদেশের প্রাণ বহমান নদীগুলো নাব্যতা হারাচ্ছে, আরেক দিকে সমুদ্রের লবণাক্ত পানি ঢুকে বিস্তীর্ণ উপকূল অঞ্চলের পরিবেশ বদলে দিচ্ছে। ধ্বংস হচ্ছে ফসলি জমি, বিপন্ন হচ্ছে বন ও বন্যপ্রাণীর জীবনচক্র। এই ভয়াবহ সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য সঠিক মডেল ও টেকসই প্রযুক্তি উদ্ভাবনের জন্য তারেক রহমান যুক্তরাজ্যের নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাদেশী গবেষকদের আহ্বান জানান।
তারেক রহমানের ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা যেমন সুচিন্তিত, তেমনি সুবিন্যস্ত। সব কাজ গুছিয়ে করতে পছন্দ করেন তিনি। নিয়মানুবর্তিতা আর সময়ানুবর্তিতা বজায় রেখে তিনি নিজেকে আরো বেশি কর্মক্ষম ও প্রস্তুত করছেন।। আর যত কাজই থাকুক না কেন, নিয়মিত নামাজ আদায় করেন তিনি। কিছু দিন তার সাথে কেউ থাকলে তিনিও নিয়মিত নামাজে অভ্যস্ত হয়ে যান।
বর্তমান বাংলাদেশের ভূলুণ্ঠিত গণতন্ত্র আর মানবাধিকার পরিস্থিতি তাকে বিচলিত করে। ভাবনার অনেকটা জুড়ে থাকে দেশে আন্দোলনরত নির্যাতিত নেতাকর্মীরা। নিয়মিত তিনি এসব ত্যাগী নেতাদের খোঁজখবর রাখেন, যারা সরকারি বাহিনী দ্বারা হত্যা, গুম, খুন, মিথ্যা মামলা হামলার শিকার হচ্ছেন। তার মতে, তৃণমূল কর্মীরাই বিএনপির প্রাণ। বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের আদর্শে বিশ্বাসী কোটি মানুষের ভালোবাসাই তার রাজনীতির প্রেরণা।
অহঙ্কার করার মতো তারেক রহমানের অনেক কিছুই রয়েছে। যার পিতা ছিলেন বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষক, রাষ্ট্রপতি, সেনাবাহিনী প্রধান আর মা তিনবারের প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু তারেক রহমানকে দেখেছি নিরহঙ্কার অতি সাধারণ। সহজ সরল জীবনযাপনে অভ্যস্ত তারেক রহমানের নেই কোনো বিলাসী জীবন, খাওয়া দাওয়ায় নেই কোনো বাহুল্য, পোশাক পরিচ্ছদে নেই কোনো চাকচিক্য।
ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত থাকায় সবসময় তারেক রহমানকে দেখেছি দলীয় দৃষ্টিভঙ্গি থেকে একজন ক্রিটিকের দৃষ্টিতে। কিন্তু দূরবীণের অপর প্রান্তের মানুষটিকে কাছ থেকে দেখার পর আমার সব ভ্রান্তি দূর হয়ে যায়। অনুধাবন করতে পারি কী মিথ্যাচারই না হয়েছে তাকে নিয়ে। অপপ্রচার আর মিথ্যা মামলা দিয়ে সুনাম বিনষ্ট করার চেষ্টা হয়েছে।
১-১১ এর কুশীলবেরা তারেক রহমানের নেতৃত্বকে ভয় পেয়ে তাকে গ্রেফতার করে কারাগারে নিক্ষেপ করে। একের পর এক মিথ্যা মামলা দিয়ে জর্জরিত করে। রিমান্ডের নামে অমানুষিক নির্যাতন করে আজীবনের জন্য পঙ্গু করে দেয়ার চেষ্টা করে।
তারেক রহমানকে নিয়ে বিরোধীদের মিথ্যা প্রচারণা দেখে আজ বেঁচে থাকলে গোয়েবলসও লজ্জা পেতেন।
No comments