আমরা কি ওদের বুঝি? by উর্মি লোহানী
ঐশীর
মা-বাবার ঘটনাটা যখন ঘটে, তখনই বিষয়টা আমাকে ভীষণ নাড়া দিয়েছিল। বারবার
মনে হচ্ছিল, একজন সন্তান কখন মা-বাবার মতো আপনজনকে খুন করতে পারে, তা কি
আমরা গভীরভাবে ভেবেছি? একজন ১৮-১৯ বছরের মেয়ে কোন পরিস্থিতিতে এ রকম একটা
ঘটনা ঘটাতে পারে, তা বিশ্লেষণের সময় কি এখনো আসেনি? মেয়েটি কেন মাদকাসক্ত
হয়ে পড়ল, সেটাও তো ভাবার বিষয়। তার পেছনে কী কী কারণ ছিল, তা খুঁজে বের
করাও দরকার।
আমারও এই বয়সের মেয়ে আছে, ছেলে এই বয়সটা পার হয়ে গেছে আরও পাঁচ-ছয় বছর আগে। আমার অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, এই বয়সটা তাদের জন্য একটা কঠিন সময়। পড়াশোনার চাপ, পরিবারের চাওয়া, সামাজিক অবস্থা—সবকিছু মিলিয়ে এই বয়সের ছেলেমেয়েরা অস্থির একটা জীবন যাপন করে। নিজেদের বুঝতে তাদের কষ্ট হয়, পরিবারকে তার চাওয়াটা বোঝাতে ব্যর্থ হয়, সামাজিক অবস্থার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারে না। তখনই নিজেকে ছোট মনে করতে থাকে আর তা থেকেই আসে হতাশা। এই হতাশা সমাজে-পরিবারে, সবার সামনে নিজেকে সঠিকভাবে উপস্থাপন না করতে পারার। এই হতাশা সমাজের চাহিদা অনুযায়ী নিজেকে তৈরি করতে না পারার। এই হতাশাই তাদের মাদকের কাছে নিয়ে যায়, আত্মহত্যায় প্ররোচিত করে।
এই সময়ে আমরা পরিবারের আপনজনেরা কতটুকু তাদের বুঝছি বা বোঝার চেষ্টা করছি? কতটুকু তাদের পাশে থাকছি? আমরা শুধু আমাদের মানদণ্ড তৈরি করে তাদের সামনে দিয়ে দিই আর তা পূরণের জন্য চাপ দিতে থাকি। আমরা কি কখনো ভেবে দেখি, সব মানুষ এক রকম হয় কি না? প্রত্যেক মানুষের একটা নিজস্ব সত্তা থাকে, তা কি বিবেচনায় আনি? সবাই যে পড়াশোনায় একই রকমভাবে ভালো করতে পারে না, তা কি ভাবি? আমার মনে হয়, আমরা বেশির ভাগ মা-বাবাই তা ভাবি না, বিবেচনা করি না। আমরা শুধু তাদের ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার-ব্যাংকার ইত্যাদি হওয়ার জন্য মানসিকভাবে চাপ দিতে থাকি, বোঝানোর চেষ্টা করি জীবনে বড় অঙ্কের বেতনের চাকরিটাই আসল লক্ষ্য হতে হবে। জীবনে ভালো থাকা মানে বাড়ি-গাড়ি আর ব্যাংক-ব্যালেন্স থাকা। এই রকম একটা পরিস্থিতিতে ছেলেমেয়েরা হতাশ হয়ে পড়বেই তো। যখন সে দেখবে তার মা-বাবার এই চাওয়াটা সে মন থেকে মেনে নিতে পারছে না, সে এ রকমভাবে তার জীবনটা গড়তে চায় না, তার বাবা-মাকে সে খুশি করতে পারছে না।
আমাদের সন্তানদের এই ধরনের অপরাধের জন্য আমাদের মতো অবিবেচক, কঠোর মানসিকতার মা-বাবারাই বেশি দায়ী কজন মা-বাবার ছেলেমেয়ের সঙ্গে বন্ধুর মতো সম্পর্ক আছে? আমাদের কিশোরবেলায়ও হয়তো ছিল না, কিন্তু তখন সমাজের অস্থিরতা এতটা ছিল না। আমরা আমাদের ছেলেমেয়েকে কতটুকু সময় দিই, কতক্ষণ তাদের সঙ্গে বসে তাদের পছন্দের বিষয় নিয়ে কথা বলি? সামাজিক-সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ তৈরি করতে আমরা কীভাবে কাজ করি? সেখানে কি ঘাটতি আছে? আমার মনে হয়, এই বিষয়গুলো নিয়ে আমাদের-মা-বাবাদের এখন কাজ করার সময় এসেছে। দরকার হলে বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে পরামর্শ নেওয়া উচিত বলেও আমি মনে করি।
অনেকে বলবেন, আমাদের সময় তো বাবা-মা আমাদের সময় দেননি, সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিয়েছেন, তাই বলে আমরা কি বখে গেছি? আমরা হয়তো বখিনি, কেউ কেউ হয়তো বখেছে। তবে তখনকার সামাজিক প্রেক্ষাপটটা অনেকটাই আমাদের অনুকূলে ছিল বলে আমার মনে হয়। তখন দুর্নীতি এতটা প্রকট ছিল না, মাদক এতটা সহজলভ্য ছিল না, সর্বোপরি মূল্যবোধের অবক্ষয় এতটা ছিল না।
মূল্যবোধ তৈরি পরিবার থেকেই শুরু হয়। সন্তানকে শাসন করতে হবে আদরের মধ্য থেকে।
আমার মতে, আমাদের সন্তানদের এই ধরনের অপরাধের জন্য আমাদের মতো অবিবেচক, কঠোর মানসিকতার মা-বাবারাই বেশি দায়ী।
আমরা এমন এক জায়গায় এসে পৌঁছেছি, আমাদেরই ঘুরে দাঁড়াতে হবে।
উর্মি লোহানী: প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, গুণীজন ট্রাস্ট।
আমারও এই বয়সের মেয়ে আছে, ছেলে এই বয়সটা পার হয়ে গেছে আরও পাঁচ-ছয় বছর আগে। আমার অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, এই বয়সটা তাদের জন্য একটা কঠিন সময়। পড়াশোনার চাপ, পরিবারের চাওয়া, সামাজিক অবস্থা—সবকিছু মিলিয়ে এই বয়সের ছেলেমেয়েরা অস্থির একটা জীবন যাপন করে। নিজেদের বুঝতে তাদের কষ্ট হয়, পরিবারকে তার চাওয়াটা বোঝাতে ব্যর্থ হয়, সামাজিক অবস্থার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারে না। তখনই নিজেকে ছোট মনে করতে থাকে আর তা থেকেই আসে হতাশা। এই হতাশা সমাজে-পরিবারে, সবার সামনে নিজেকে সঠিকভাবে উপস্থাপন না করতে পারার। এই হতাশা সমাজের চাহিদা অনুযায়ী নিজেকে তৈরি করতে না পারার। এই হতাশাই তাদের মাদকের কাছে নিয়ে যায়, আত্মহত্যায় প্ররোচিত করে।
এই সময়ে আমরা পরিবারের আপনজনেরা কতটুকু তাদের বুঝছি বা বোঝার চেষ্টা করছি? কতটুকু তাদের পাশে থাকছি? আমরা শুধু আমাদের মানদণ্ড তৈরি করে তাদের সামনে দিয়ে দিই আর তা পূরণের জন্য চাপ দিতে থাকি। আমরা কি কখনো ভেবে দেখি, সব মানুষ এক রকম হয় কি না? প্রত্যেক মানুষের একটা নিজস্ব সত্তা থাকে, তা কি বিবেচনায় আনি? সবাই যে পড়াশোনায় একই রকমভাবে ভালো করতে পারে না, তা কি ভাবি? আমার মনে হয়, আমরা বেশির ভাগ মা-বাবাই তা ভাবি না, বিবেচনা করি না। আমরা শুধু তাদের ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার-ব্যাংকার ইত্যাদি হওয়ার জন্য মানসিকভাবে চাপ দিতে থাকি, বোঝানোর চেষ্টা করি জীবনে বড় অঙ্কের বেতনের চাকরিটাই আসল লক্ষ্য হতে হবে। জীবনে ভালো থাকা মানে বাড়ি-গাড়ি আর ব্যাংক-ব্যালেন্স থাকা। এই রকম একটা পরিস্থিতিতে ছেলেমেয়েরা হতাশ হয়ে পড়বেই তো। যখন সে দেখবে তার মা-বাবার এই চাওয়াটা সে মন থেকে মেনে নিতে পারছে না, সে এ রকমভাবে তার জীবনটা গড়তে চায় না, তার বাবা-মাকে সে খুশি করতে পারছে না।
আমাদের সন্তানদের এই ধরনের অপরাধের জন্য আমাদের মতো অবিবেচক, কঠোর মানসিকতার মা-বাবারাই বেশি দায়ী কজন মা-বাবার ছেলেমেয়ের সঙ্গে বন্ধুর মতো সম্পর্ক আছে? আমাদের কিশোরবেলায়ও হয়তো ছিল না, কিন্তু তখন সমাজের অস্থিরতা এতটা ছিল না। আমরা আমাদের ছেলেমেয়েকে কতটুকু সময় দিই, কতক্ষণ তাদের সঙ্গে বসে তাদের পছন্দের বিষয় নিয়ে কথা বলি? সামাজিক-সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ তৈরি করতে আমরা কীভাবে কাজ করি? সেখানে কি ঘাটতি আছে? আমার মনে হয়, এই বিষয়গুলো নিয়ে আমাদের-মা-বাবাদের এখন কাজ করার সময় এসেছে। দরকার হলে বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে পরামর্শ নেওয়া উচিত বলেও আমি মনে করি।
অনেকে বলবেন, আমাদের সময় তো বাবা-মা আমাদের সময় দেননি, সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিয়েছেন, তাই বলে আমরা কি বখে গেছি? আমরা হয়তো বখিনি, কেউ কেউ হয়তো বখেছে। তবে তখনকার সামাজিক প্রেক্ষাপটটা অনেকটাই আমাদের অনুকূলে ছিল বলে আমার মনে হয়। তখন দুর্নীতি এতটা প্রকট ছিল না, মাদক এতটা সহজলভ্য ছিল না, সর্বোপরি মূল্যবোধের অবক্ষয় এতটা ছিল না।
মূল্যবোধ তৈরি পরিবার থেকেই শুরু হয়। সন্তানকে শাসন করতে হবে আদরের মধ্য থেকে।
আমার মতে, আমাদের সন্তানদের এই ধরনের অপরাধের জন্য আমাদের মতো অবিবেচক, কঠোর মানসিকতার মা-বাবারাই বেশি দায়ী।
আমরা এমন এক জায়গায় এসে পৌঁছেছি, আমাদেরই ঘুরে দাঁড়াতে হবে।
উর্মি লোহানী: প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, গুণীজন ট্রাস্ট।
No comments