অস্থিরতা ও নিরাপত্তার হুমকি বাড়ছে?
সন্ত্রাসবাদ নাকি জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব—কোনটি বিশ্ববাসীর জন্য বড়
হুমকি? কোনো কোনো রাষ্ট্র এখন এই দুই সমস্যার মধ্যে যোগসূত্র খুঁজে
পাচ্ছে। তবে এই দুই হুমকি বা ঝুঁকি মোকাবিলায় বিশ্বনেতারা যে এখনো একমত
হতে পারেননি, তা স্পষ্ট। এই পরিস্থিতিতে আগামীকাল ৩০ নভেম্বর ফ্রান্সের
প্যারিস শহরে বসছে জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলন বা কপ-২১। এই শহরেই গত ১৩
নভেম্বর ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলায় ১৩০ জন নিহত হন। প্যারিস সম্মেলনে ১৬৬টি
দেশের নেতারা অংশ নিতে পারেন। ইতিমধ্যে জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুনের
বক্তব্যে এই সম্মেলন নিয়ে উঠে এসেছে আশাবাদ ও হতাশার কথা। গত সপ্তাহে
মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরে পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর জোট আসিয়ানের
সম্মেলনে বান কি মুন বলেন, কার্বন নিঃসরণ কমাতে বিশ্বনেতাদের অঙ্গীকার
পুরোপুরি বাস্তবায়িত হলেও চলতি শতাব্দী শেষে বিশ্বের গড় তাপমাত্রা ৩ ডিগ্রি
সেলসিয়াস বাড়বে। কিন্তু বিশ্বকে সহনীয় রাখতে হলে তাপমাত্রা ২ ডিগ্রি
সেলসিয়াসের বেশি বাড়তে দেওয়া যাবে না। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব নিয়ে এমন শঙ্কার পাশাপাশি আলোচনায় এসেছে সন্ত্রাসবাদ ও রাজনৈতিক সংকটের প্রসঙ্গও। ১০
নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের ওল্ড ডমিনিওন বিশ্ববিদ্যালয়ে দেওয়া এক বক্তৃতায়
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি বলেছেন, ২০১১ সালে সিরিয়ায় ভয়াবহ খরার
কারণে প্রায় ১৫ লাখ বাসিন্দা গ্রাম ছেড়ে শহরে চলে যায়। এর প্রভাব শহরে
রাজনৈতিক অস্থিরতা বাড়তে থাকে এবং পরে তা গোটা অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে। অবশ্য
জন কেরি জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবকে সিরিয়া সংকটের প্রাথমিক কারণ হিসেবে
মানতে নারাজ। তাঁর মতে, প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ নিজ দেশের জনগণের ওপর
হামলা, নির্যাতন, বোমাবর্ষণ করে। এতে তৈরি হয় অস্থিতিশীলতা। তবে এই
পরিস্থিতি তৈরিতে খরার একটা ভূমিকা ছিল। রাজনৈতিক সংকট এবং জলবায়ু
পরিবর্তনের প্রভাবের যোগসূত্রের প্রসঙ্গ এসেছে ঝুঁকি বিশ্লেষণ-বিষয়ক
ব্রিটিশ প্রতিষ্ঠান ম্যাপলক্রফটের প্রতিবেদনেও। এ বছর প্রকাশিত ওই
প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্বজুড়ে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের সঙ্গে সামাজিক
অস্থিরতা ও খাদ্যনিরাপত্তার ঘাটতির সম্পর্ক রয়েছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ
সেন্টার ফর অ্যাডভান্সড স্টাডিজের (বিসিএএস) নির্বাহী পরিচালক ও জাতিসংঘের
জলবায়ু পরিবর্তন-সংক্রান্ত প্যানেলের (আইপিসিসি) সদস্য আতিক রহমান প্রথম
আলোকে বলেন, বিশ্বের যে কটি দেশে সাম্প্রতিক সময়ে বড় ধরনের রাজনৈতিক সংকট
দেখা দিয়েছে, সেসব দেশে এর আগে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত দুর্যোগ হয়েছে। ফলে
জলবায়ু পরিবর্তনকে সন্ত্রাসবাদ ও সংকটের অন্যতম কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। প্যারিস
জলবায়ু সম্মেলনে বাংলাদেশের সমঝোতাকারী দলের প্রধান কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ
প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশ ২০০৯ সালের কোপেনহেগেন জলবায়ু সম্মেলন থেকেই
এই শতাব্দীর মধ্যে বিশ্বের মোট গড় তাপমাত্রা যাতে দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াসের
বেশি না বাড়ে, সেই দাবি করে আসছে। তাপমাত্রা এর চেয়ে বেশি বাড়লে বাংলাদেশসহ
উপকূলীয় এবং দ্বীপরাষ্ট্রগুলোর বড় অংশ ডুবে যাবে। ফলে বাংলাদেশেও
উদ্বাস্তু সমস্যা বেড়ে বড় ধরনের সংকট দেখা দেবে।
No comments