তুরস্কের ওপর রাশিয়ার অবরোধ আরোপ
সিরিয়ায় রাশিয়ার যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করার জের ধরে তুরস্কের ওপর অর্থনৈতিক
অবরোধ আরোপের ঘোষণা দিয়েছে মস্কো। বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার চার দিনের
মাথায় গতকাল শনিবার রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন অবরোধ আরোপের
সিদ্ধান্তে স্বাক্ষর করেন। এ ছাড়া ভূমধ্যসাগর দিয়ে সিরিয়ার উপকূল
অভিমুখে একটি যুদ্ধজাহাজ পাঠানোর পাশাপাশি দেশটিতে অত্যাধুনিক
ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করেছে রাশিয়া। এদিকে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ
তাইয়েপ এরদোয়ান গতকাল বলেছেন, রুশ যুদ্ধবিমান ভূপাতিত হওয়ার ঘটনায় তিনি
‘ব্যথিত’। পশ্চিমাঞ্চলীয় বালিকশেহির শহরে এক ভাষণে তিনি বলেন, ‘এটি না
ঘটলেই ভালো হতো। তবে এটা ঘটে গেছে। আমি আশা করি, ভবিষ্যতে আর এমনটি ঘটবে
না।’ এর আগে এরদোয়ান এ ঘটনার জন্য ক্ষমা চাওয়ার বিষয়টি নাকচ করে
দিয়েছিলেন। খবর বিবিসির। খবরে বলা হয়, ‘মস্কোভা’ যুদ্ধজাহাজের
দূরপাল্লার বিমান প্রতিরক্ষাব্যবস্থা জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটসহ (আইএস)
প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের বিরোধীদের বিরুদ্ধে রুশ বিমান হামলায়
অংশগ্রহণকারী যুদ্ধবিমানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে। এ ছাড়া যুদ্ধবিমানের
নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গত বৃহস্পতিবার সিরিয়ায় অত্যাধুনিক এস-৪০০
ক্ষেপণাস্ত্র পাঠায় রাশিয়া। ক্ষেপণাস্ত্রগুলো মোতায়েন করা হয় সেখানকার
হেইমিম বিমানঘাঁটিতে। তুরস্ক সীমান্ত থেকে মাত্র ৫০ কিলোমিটার দূরে এই
ঘাঁটির অবস্থান। বাশারবিরোধীদের ওপর হামলা চালাতে গত ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে
রাশিয়ার যুদ্ধবিমান এই বিমানঘাঁটি ব্যবহার করছে। গত মঙ্গলবার তুরস্কের
ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে সিরিয়ার ভেতর রুশ যুদ্ধবিমান ভূপাতিত হওয়ার ঘটনায়
তুরস্ক ও রাশিয়ার মধ্যে প্রবল উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। দুই পক্ষের মধ্যে চরম
বাগ্যুদ্ধ চলছে। এর আগে গত শুক্রবার টেলিভিশন ভাষণে তুরস্কের
প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান ‘আগুন নিয়ে না খেলার জন্য’ রাশিয়াকে
সতর্ক করে দেন। সিরিয়ায় চলা রুশ অভিযানকে কেন্দ্র করে এ কথা বলেন তিনি। একই
দিন তুর্কি নাগরিকদের জন্য ভিসামুক্ত সুবিধা আগামী ১ জানুয়ারি থেকে
স্থগিতের ঘোষণা দেন রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ। তিনি বলেন,
তুরস্ক কোনো কোনো বিষয়ে গ্রহণযোগ্যতার সীমা ছাড়িয়ে গেছে। রুশ বিমান
ভূপাতিত করার ঘটনা তুরস্কের জাতীয় ও আঞ্চলিক স্বার্থ ভীষণভাবে ক্ষুণ্ন করতে
পারে বলে তিনি সতর্ক করে দেন। ভিসামুক্ত ভ্রমণসুবিধা স্থগিত রাখার ওই
ঘোষণার আগে পুতিন নিরাপত্তা ঝুঁকির কথা বলে তাঁর দেশের নাগরিকদের তুরস্ক
ভ্রমণের ব্যাপারে সতর্ক করে দিয়েছিলেন। তুরস্কে যাওয়া বিদেশি পর্যটকদের
এককভাবে সবচেয়ে বড় অংশ রাশিয়ার। গত বছর তুরস্ক ভ্রমণ করেন ৩০ লাখেরও বেশি
রুশ পর্যটক। সে কারণে রাশিয়ার এই মনোভাব দেশটির পর্যটনশিল্পকে
মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। দুই দেশের সম্পর্কে এমন তীব্র
টানাপোড়েন চলার মধ্যে প্রেসিডেন্ট পুতিন তুর্কি প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের
সঙ্গে কোনো কথা বলার আগে তাঁর যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করার ঘটনায় তুরস্কের
ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন। কিন্তু এরদোয়ান তা প্রত্যাখ্যান করেন।
তবে তিনি প্যারিসে শুরু হতে যাওয়া বিশ্ব জলবায়ু শীর্ষ সম্মেলনের অধিবেশনের
পাশাপাশি প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে মুখোমুখি আলোচনার আগ্রহ প্রকাশ করেন।
আর এ জন্য ক্রেমলিনের কাছে সময় চেয়ে ইতিমধ্যেই চিঠি পাঠিয়েছে আঙ্কারা।
No comments