‘সরকারের জনপ্রিয়তা বেড়েছে, নির্বাচনের প্রশ্নই ওঠে না’
প্রধানমন্ত্রীর
রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম বলেছেন, ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান
ইনস্টিটিউটের (আইআরআই) জরিপে এসেছে বর্তমান সরকারের জনপ্রিয়তা বেড়েছে। তাই
এখন নির্বাচন দিয়ে সরকারের জনপ্রিয়তা যাচাইয়ের প্রশ্নই ওঠে না। একই সঙ্গে
তিনি জানান, এ জরিপের ফলাফলের ভিত্তিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা নিয়ে
সরকার কোনো সিদ্ধান্ত নেবে না। শনিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর কারওয়ান বাজারে
টিসিবি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত বিবিসি বাংলাদেশ সংলাপে এসব কথা বলেন এইচ টি
ইমাম। অনুষ্ঠানে প্যানেল আলোচক হিসেবে আরো ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির
সদস্য আ স ম হান্নান শাহ, ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টসের অধ্যাপক
সলিমুল্লাহ খান এবং বাংলাদেশ অ্যালায়েন্স ফর উইমেন লিডারশিপের নির্বাহী
পরিচালক নাসিম ফিরদেৌস। অনুষ্ঠানে হাসিনা আক্তার নামের এক দর্শকের প্রশ্ন
ছিল- আন্তর্জাতিক একটি প্রতিষ্ঠানের সাম্প্রতিক এক জরিপে সরকারের জনপ্রিয়তা
বেড়েছে বলে যে ফলাফল পাওয়া গেছে, সেই ফলাফল কি একটি মধ্যবর্তী জাতীয়
নির্বাচনের সম্ভাবনাকে উজ্জ্বল করে তুলছে? উত্তরে সলিমুল্লাহ খান বলেন,
“সরকার যদি সংকট মনে করে তাহলে নির্বাচন দিতে পারে। কিন্তু জরিপের ফলের ওপর
ভিত্তি করে নির্বাচন দিয়ে জনপ্রিয়তা যাচাই করা পরিপক্ব চিন্তা মনে করি
না।” তবে আইআরআই নামের সংগঠনটি কোন পদ্ধতিতে জরিপ করেছে তাও পরিষ্কার করা
দরকার বলে মন্তব্য করেন তিনি। নাসিম ফিরদেৌস বলেন, “সরকার এখন
মধ্যবর্তী নির্বাচন দিলে তাতে দুই পক্ষকেই থাকতে হবে। এখন নির্বাচন দিলে
বিএনপি যে তাতে অংশ নেবে তা নিশ্চিত নয়। কারণ নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে
নির্বাচন দেয়াসহ বেশ কিছু শর্ত আছে দলটির।” এক তরুণ দর্শক আশঙ্কা প্রকাশ
করে বলেন, “এ জরিপের ফল সরকারকে আরো স্বৈরাচারী হতে উৎসাহিত করবে।” একজন
বয়স্ক জরিপের ফল নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে দর্শক বলেন, “জালিয়াতির মাধ্যমে ৫
জানুয়ারির জাতীয় নির্বাচন হলো। এরপর একইভাবে সিটি করপোরেশন নির্বাচনও
হলো।তারপরও কীভাবে এ সরকারের জনপ্রিয়তা বাড়ে?” আরেক তরুণী বলেন, “গ্যাস,
বিদ্যুৎসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের এত বেশি দাম বাড়ানোর পরও কীভাবে সরকারের
জনপ্রিয়তা বাড়ে, তা আমার বোধগম্য নয়।” হান্নান শাহ বলেন, “আমরা মনে করি,
বাংলাদেশের মানুষ একটি নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচন চায়। তাই নির্বাচন
প্রয়োজন।” জরিপে সরকারের জনপ্রিয়তা বাড়ার বিষয়টির সঙ্গে দ্বিমত প্রকাশ করে
তিনি তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা নিয়ে যে ফলাফল এসেছে, তা সমর্থন করেন বলে
জানান। এইচ টি ইমাম বলেন, “সরকারের জনপ্রিয়তা বেড়েছে। তার মানে সরকারের
প্রতি জনসমর্থন আছে। তাহলে সরকার নির্বাচন দেবে কেন? এখন মধ্যবর্তী জাতীয়
নির্বাচন দেয়ার প্রশ্নই ওঠে না।” জরিপে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পক্ষে যে মত
এসেছে এ বিষয়ে এইচ টি ইমাম বলেন, “এ জরিপের ভিত্তিতে সরকার কোনো সিদ্ধান্ত
নেবে না।” তার বক্তব্যের পর এক তরুণ দর্শক জানতে চান- অনৈতিকভাবে এ সরকার
আর কত দিন ক্ষমতায় থাকবে? উত্তরে এইচ টি ইমাম বলেন, “এই সরকার অত্যন্ত
নৈতিকভাবে ক্ষমতায় এসেছে।” ছাত্রলীগকে নিয়ন্ত্রণ প্রসঙ্গ অনুষ্ঠানে একটি
প্রশ্ন ছিল- ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ-সমর্থিত ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগকে
নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্যে সরকারের যথেষ্ট পদক্ষেপ কি দেখা যাচ্ছে? উত্তরে
হান্নান শাহ বলেন, “না। ক্রসফায়ারে কিছু ছাত্রলীগ কর্মী নিহত হয়েছে যা
অনৈতিক। আর এর মাধ্যমে সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে এমন কোনো কথা নেই।”
ছাত্রলীগ থেকে আগাছা নির্মূল করার বক্তৃতা প্রধানমন্ত্রীর শুধু ‘রাজনৈতিক
ভাষ্য’ বলে মন্তব্য করেন তিনি। সলিমুল্লাহ খান বলেন, “কোনো দলকেই তার
যেকোনো অঙ্গসংগঠনের অন্যায়কে প্রশ্রয় দেয়ার সুযোগ নেই। সরকার ও বিরোধী দল
দুটোই শাষক শ্রেণীর দল। তাই কেউ ব্যতিক্রম নয়। ক্ষমতায় থাকতে অস্ত্র হিসেবে
দলের অঙ্গসংগঠনকে ব্যবহার করে।” এইচ টি ইমাম বলেন, “ছাত্রলীগকে নিয়ে
যথেষ্ট অপপ্রচার করা হচ্ছে। ছাত্রলীগ অনেক ভালো কাজও করে। এ দেশে
ছাত্রলীগের অনেক অবদানও আছে। কিছু বিষয়ে ছাত্রলীগকে নিয়ে সরকার বিব্রত হলে
তাদের ডাকা হয়। তাদের বুঝানোর মাধ্যমে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা
হয়।” নাসিম ফেরদৌস বলেন, “শিক্ষাঙ্গনে ধ্বংসাত্মক রাজনীতি বন্ধ করতে হবে।
ছাত্রদের রাজনীতি কেমন হবে তার একটি নীতিমালা তৈরি করাও দরকার।” হান্নান
শাহ বলেন, “ছাত্রলীগ এবং ছাত্রদলের মধ্যে আকাশ পাতাল তফাত। এ জন্য
ছাত্রলীগের মতো কোনো সিদ্ধান্ত ছাত্রদলের বিরুদ্ধে নিতে হয়নি।” বিভিন্ন
দেশে অভিবাসী সংকট প্রসঙ্গ অনুষ্ঠানে আরেকটি প্রশ্ন ছিল- ইউরোপের
দেশগুলোসহ বিভিন্ন দেশে অভিবাসী সংকট যে করুণ পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে, তা
মোকাবেলায় কী ধরনের পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে? সলিমুল্লাহ খান বলেন,
“ইউরোপের অভিবাসী সংকট অপ্রত্যাশিত ছিল না। সিরিয়া, লিবিয়া বা আমাদের
দেশের মতো দেশের সংকটের জন্য ইউরোপ কি কিছু মাত্র দায়ী নয়? ইউরোপকে এ দায়
স্বীকার করতে হবে। তারা অর্থনৈতিক শরণার্থীদের প্রত্যাখ্যান করতে চায়।
অন্যদিকে রাজনৈতিক শরণার্থীদের আহ্বান জানায়।” নাসিম ফিরদৌস বলেন,
“অভিবাসন ঠেকাতে ইউরোপ তাদের দরজা বন্ধ করে দিলে হবে না। অন্যদিকে
মিয়ানমারের রোহিঙ্গা ইস্যুটি ভিন্ন। বাংলাদেশের যে অর্থনৈতিক অবস্থা তাতে
রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ গ্রহণ করতে পারে না। দুই দেশেরই কৌশলী হতে হবে,
নির্দিষ্ট নিয়ম করে তা অনুসরণ করতে হবে।” এইচ টি ইমাম বলেন, “এগুলো যারা
সৃষ্টি করেছে তাদেরকেই এর সমাধান করতে হবে। আর রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে
মিয়ানমারের সঙ্গে আমাদের অবস্থান দেখতে হবে। রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের নাগরিক।
সে দেশের সরকারকেই আন্তর্জাতিকভাবে চাপ দিতে হবে তাদের নাগরিকদের স্বীকৃতি
দেয়ার জন্য।” হান্নান শাহ বলেন, “পশ্চিমা দেশগুলোর কারসাজিতেই
মধ্যপ্রাচ্য অশান্ত হয়েছে। আর রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারকে চাপ দিতে হবে।”
বাংলাদেশে গরু পাঠানো বন্ধ করা ইতিবাচক অনুষ্ঠানে এক দর্শক জানতে চান,
ভারত থেকে বাংলাদেশে গরু পাঠানো প্রায় বন্ধ হওয়ার বিষয়টি কি প্রকারান্তরে
স্থানীয়ভাবে গবাদী পশু উন্নয়নের একটি সুযোগ সৃষ্টি করেছে? নাসিম ফিরদেৌস
বলেন, “এখন প্রত্যন্ত অঞ্চলেও শিশুদের জন্য গরুর দুধ পাওয়া যায় না। অবশ্যই
সুযোগ। ভারতের গরু পাঠানো বন্ধের কারণে শুধু যে বাংলাদেশে গবাদি পশুরই
উন্নয়ন হবে তা নয়, সেই সঙ্গে দুধের উৎপাদনও বাড়বে, যা পুষ্টিমান
বাড়াবে।” হান্নান শাহ বলেন, “আগামী ১০-১৫ বছরে আমরা এ সমস্যার (গরু)
সমাধান করতে পারব না।” এইচ টি ইমাম বলেন, “ভারত গরু পাঠানো বন্ধ করে দিলেও
কোনো সমস্যা নেই। গরুর পরিমাণ প্রচুর বেড়ে গেছে। দুধ উৎপাদনও বাড়বে।”
বিবিসি মিডিয়া অ্যাকশন এবং বিবিসি বাংলার যৌথভাবে আয়োজিত অনুষ্ঠানটি
প্রযোজনা করেন ওয়ালিউর রহমান মিরাজ এবং উপস্থাপনা করেন আকবর হোসেন।
No comments