দুর্নীতি প্রধান সমস্যা গণতন্ত্রে আস্থা, তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা, আগাম নির্বাচনের পক্ষে মত, সরকারের জনপ্রিয়তা বেড়েছে
গণতন্ত্রে
নানা ত্রুটি থাকা সত্ত্বেও গণতন্ত্রেই বেশির ভাগ বাংলাদেশীর আস্থা।
দুর্নীতি ও রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতাকে দেশের সবচেয়ে বড় সমস্যা বলে মনে করেন
বাংলাদেশীরা। মার্কিন প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউটের
(আইআরআই) এক জরিপে এমন তথ্য উঠে এসেছে। জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ৮১ শতাংশের
মতো হলো, নানা সমস্যা সত্ত্বেও অন্য যে কোন সরকার ব্যবস্থার তুলনায়
গণতন্ত্র উত্তম। এদের মধ্যে ৫৩ শতাংশ অত্যন্ত দৃঢ়ভাবে এমনটা মনে করেন। এ
ধারণায় বাকি ২৮ শতাংশের কিছুটা সমর্থন রয়েছে। ৮৩ শতাংশ মানুষ বিশ্বাস করেন
আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় গণতন্ত্র কার্যকর। এর মধ্যে জোরালো সমর্থন ৪১ শতাংশের
আর কিছুটা একমত ৪২ শতাংশ। তবে, জরিপে অপর এক প্রশ্নের জবাবে ৬৮ শতাংশ
মানুষের মতো হলো গণতন্ত্র ভীষণ কলহপূর্ণ। আর গণতন্ত্রে অর্থনৈতিক ব্যবস্থা
মন্দভাবে পরিচালিত হয় বলে মনে করেন ৪৫ ভাগ মানুষ। অপর এক প্রশ্নের উত্তরে-
সমৃদ্ধ অর্থনীতি আর গণতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থায় মধ্যে গণতন্ত্রকেই অধিক
গুরুত্বপূর্ণ বলে বেছে নিয়েছেন ৬৮ শতাংশ মানুষ। এর মধ্যে ৫৯ শতাংশ দৃঢ়তার
সঙ্গে গণতন্ত্রে সমর্থন ব্যক্ত করেছেন। পক্ষান্তরে সমৃদ্ধ অর্থনীতিকে বেছে
নিয়েছেন মাত্র ২৭ শতাংশ যা গত বছর ছিল ৩০ শতাংশ। জরিপে আরও উঠে এসেছে,
সেনাবাহিনী, গণমাধ্যম, নাগরিক সমাজ ও র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের
(র্যাব) প্রতি তাদের কর্তব্য পালনের ভিত্তিতে মানুষের সমর্থন বেড়েছে।
জরিপে অংশগ্রহণকারীদের দেয়া সমর্থন রেটিংয়ে সেনাবাহিনী ৮৬ শতাংশ, গণমাধ্যম
৮৩ শতাংশ নাগরিক সমাজ ৮০ শতাংশ এবং র্যাব ৭৬ শতাংশ মানুষের সমর্থন পেয়েছে।
জরিপে রাজনীতি নিয়ে হতাশাব্যাঞ্জক অভিমত দিয়েছেন বেশির ভাগ মানুষ। কর্তব্য
পালনের বিচারে সব চেয়ে আস্থা হরিয়েছে সংসদ, পুলিশ ও রাজনৈতিক দলগুলো।
সংসদের কর্মকাণ্ডে সমর্থন দিয়েছেন মাত্র ২১ শতাংশ মানুষ। আর ৬৭ শতাংশ
আস্থাহীনতার মত দিয়েছেন। পুলিশের প্রতি সমর্থন রয়েছে ৪৩ শতাংশ মানুষের আর
আস্থাহীনতা প্রকাশ করেছেন ৫৩ শতাংশ। আর রাজনৈতিক দলগুলোর কর্মকাণ্ডের পক্ষে
ও বিপক্ষে উভয় ক্ষেত্রেই ৪৬ শতাংশ মানুষের অবস্থান। নির্বাচন প্রসঙ্গে, ৮৮
শতাংশ মানুষ মনে করেন দেশের সিদ্ধান্ত গ্রহণে প্রভাব রাখার সুযোগ করে দেয়
নির্বাচন। ৬৭ শতাংশ জোরালোভাবে এটা মনে করেন। আর ২১ শতাংশের কিছুটা হলেও
এতে সমর্থন রয়েছে। তবে গত বছর সেপ্টেম্বরের জরিপে এ সংখ্যা ছিল ৯৪। পরবর্তী
সংসদ নির্বাচন আয়োজনের আগে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা
ফিরিয়ে আনা উচিত বলে মনে করেন ৬৭ শতাংশ মানুষ। পরবর্তী জাতীয় নির্বাচন
আয়োজন যত দ্রুত সম্ভব দেখতে চান ৪৩ শতাংশ। আর ৪০ শতাংশ মানুষ মনে করেন
বর্তমান সরকারের মেয়াদ পূর্ণ করা উচিত। এছাড়া জরিপে দেশের সব থেকে বড়
সমস্যা হিসেবে দুর্নীতিকে চিহ্নিত করেছেন বেশির ভাগ মানুষ। এরপরই স্থান
পেয়েছে রাজনৈতিক অস্থীতিশীলতা ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি। ২৪ শতাংশ মানুষ মনে
করেন দেশের সব থেকে বড় সমস্যা দুর্নীতি। রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিকে সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করেছে যথাক্রমে ১৬ ও ১৫
শতাংশ মানুষ। আইআরআই তাদের জরিপ প্রকাশের এক বিবৃতিতে বলেছে, নির্বাচনী
ইস্যুগুলো নিয়ে বিভক্তি থাকা সত্ত্বেও জরিপে উঠে এসেছে- জরিপে
অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে গত বছর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রতি সমর্থন বৃদ্ধি
পেয়েছে। এছাড়াও দেশের অর্থনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়েও জনগণের ইতিবাচক মনোভাবের
ইঙ্গিত মিলেছে। বিবৃতিতে বলা হয়, ‘৫ই জানুয়ারির জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর
১৮ মাসে ক্ষমতাসীন সরকার ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি সমর্থন পৌঁছেছে
যথাক্রমে ৬৬ ও ৬৭ শতাংশে।’ আরও বলা হয়, ‘দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে অব্যাহতভাবে
আশাবাদী বাংলাদেশীরা। জরিপে অংশগ্রহণকারী ৬২ শতাংশ ইঙ্গিত দিয়েছেন যে তারা
বিশ্বাস করেন দেশ সঠিক দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। গতবছরের জরিপে যা ছিল ৫৬ শতাংশ।
জরিপ অনুযায়ী, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সবথেকে বেশি সমর্থন উপভোগ করছেন
আওয়ামী লীগ। তাদের প্রতি জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ৬০ শতাংশ মানুষ সমর্থন
দিয়েছেন। আর অপছন্দ ব্যক্ত করেছেন ২৯ শতাংশ। বিএনপি’র প্রতি সমর্থন ব্যক্ত
করেছেন ৪৩ শতাংশ আর অপছন্দ বলে মত দিয়েছেন ৪৬ শতাংশ। এরশাদ নেতৃত্বাধীন
জাতীয় পার্টি ও জামায়াতে ইসলামী উভয় দলের পক্ষে ও বিপক্ষে মত দিয়েছেন ২৫ ও
৬০ শতাংশ। নেতৃত্বের বিচারে বিএনপি’র তুলনায় অনেক ভাল সমর্থন গেছে আওয়ামী
লীগের পক্ষে। শক্ত নেতৃত্ব থেকে শুরু করে তরুণ নেতৃত্ব, নারীদের প্রতি
সমর্থন, ভাল নীতি, গণতান্ত্রিক সংস্কার, দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই- এসব
ক্ষেত্রগুলোতে জরিপ অংশগ্রহণকারীরা বিএনপি’র চেয়ে বেশি পয়েন্ট দিয়েছে
আওয়ামী লীগকে। এছাড়া- শিক্ষার উন্নয়ন, অবকাঠামো, স্বাস্থ্যসেবা, নিরাপত্তা,
অর্থনীতি, জাতিগত দ্বন্দ্ব সমাপ্তি এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখার
ক্ষেত্রেও বিএনপি’র চেয়ে আওয়ামী লীগকেই বেছে নিয়েছেন জরিপে অংশগ্রহণকারীরা।
এ বছরের ২৩শে মে থেকে ১০ই জুন পর্যন্ত জরিপটি চালায় নিয়েলসেন-বাংলাদেশ। ১৮
বছর বয়সী ও তদূর্ধ্ব ২ হাজার ৫৫০ জনের মতামতের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি
করে আইআরআই। গ্লোবাল স্ট্র্যাটেজিক পার্টনারসের রব ভ্যারসালোন ও আইআরআই
জনমত জরিপটির তত্ত্বাবধানে ছিলেন। যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংগঠন
আইআরআই শক্তিশালী গণতন্ত্র গঠনে সহায়তামূলক কাজ করে থাকে।
No comments