সমঝোতা প্রস্তাবের নামে রাজনৈতিক প্রহসন by বদরুদ্দীন উমর
১৮
অক্টোবর সন্ধ্যায় রেডিও ও টেলিভিশনের মাধ্যমে এক বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনা আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক অচলাবস্থা নিরসনের
উদ্দেশ্যে সমঝোতার নামে এক প্রস্তাব হাজির করেছেন। কেউ কেউ মনে করেছিলেন,
শেখ হাসিনা তার এই বক্তৃতায় এমন কিছু প্রস্তাব করবেন যার ফলে পরিস্থিতির
মধ্যে পরিবর্তন ঘটবে এবং প্রকৃত সমঝোতার শর্ত তৈরি হবে। কিন্তু সে রকম কিছু
হয়নি। আসলে হওয়ার কথাও ছিল না, কারণ আওয়ামী লীগ নেতা প্রতিদিন যেসব
বক্তব্য সভা-সমিতি, দলীয় বৈঠক ইত্যাদিতে দিয়ে যাচ্ছেন, তার থেকে এটা মনে
করার কোনো কারণ ছিল না যে, হঠাৎ করে তিনি এমন কোনো প্রস্তাব উপস্থিত করবেন
যা তাদের নির্বাচনী রাজনীতিতে সৃষ্ট সংকট দূর করতে সহায়ক হবে। শাসকশ্রেণীর
সংকট, আওয়ামী লীগের দলীয় সংকট এবং সর্বোপরি শেখ হাসিনার জমিদারি
দৃষ্টিভঙ্গি থেকে সৃষ্ট যেনতেন প্রকারে ক্ষমতা আঁকড়ে থাকার চেষ্টা থেকে
উদ্ভূত সংকট যুক্ত হয়ে এমন এক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, যার ফলে এদের পক্ষে
বিদ্যমান সংকট থেকে বের হয়ে আসার কোনো পথ নির্দেশ করা সম্ভব নয়।
আশির দশকে এরশাদবিরোধী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের শেষে নব্বই দশক থেকে সংসদীয় শাসন ব্যবস্থা শুরু হওয়া সত্ত্বেও গণতন্ত্রের কোনো প্রকৃত চর্চা এদেশের শাসকশ্রেণীর পক্ষে সম্ভব হয়নি। ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়ে বিএনপি যে শাসন কায়েম করেছিল, তাকে বলা চলে গণতান্ত্রিক স্বৈরতন্ত্র। অল্প দিনের মধ্যেই আওয়ামী লীগ সংসদ বর্জন করে যে রাজনৈতিক তাণ্ডব শুরু করে, তার মধ্যেও গণতন্ত্রের কোনো উপাদান ছিল না। কাজেই সরকারি ও বিরোধী দল উভয়ে মিলে স্বৈরতন্ত্রের এমন এক ঐকতান সৃষ্টি করেছিল, যার ফলে বাংলাদেশে নতুনভাবে গণতন্ত্র চর্চার পরিবর্তে শুরু হয়েছিল বেসামরিক স্বৈরতন্ত্রের এক নতুন অধ্যায়। সেই থেকে এখন পর্যন্ত এদিক দিয়ে পরিস্থিতির কোনো পরিবর্তন হয়নি। প্রথম থেকেই বাংলাদেশে শাসক দলের নেতৃত্বে ও পরিচালনায় যে নতুন শাসকশ্রেণী গড়ে উঠেছিল, তার মূল লুণ্ঠনজীবী চরিত্রের কারণে বাংলাদেশে গণতন্ত্রের চর্চা রুদ্ধ হয়েছিল। ১৯৭২ সালের সংবিধানে গণতন্ত্রকে শাসন ব্যবস্থার চার খুঁটির অন্যতম বলে ঘোষণা করা হলেও গণতন্ত্রের সেই তথাকথিত খুঁটি ধ্বংস করে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল বাকশাল নামে সরকারি এক ফ্যাসিস্ট রাজনৈতিক দল। জরুরি অবস্থার অধীনে সব বেসরকারি দল, সব বেসরকারি পত্রপত্রিকা নিষিদ্ধ ঘোষণা করে নির্যাতনের এক রাজত্ব বাংলাদেশে কায়েম হয়েছিল। সেই নির্যাতক শাসনকে প্রচার করা হয়েছিল আওয়ামী লীগের ‘দ্বিতীয় বিপ্লবের’ সূচনা হিসেবে! এর থেকে বড় মিথ্যা এবং জনগণের জন্য বড় বিপদ আর কিছুই ছিল না। সেই দুঃশাসনের অবসানের পর জিয়াউর রহমান সব রাজনৈতিক দল ও পত্রপত্রিকার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করলেও শেখ মুজিবের যোগ্য উত্তরাধিকারী হিসেবে তিনি বাংলাদেশে স্বৈরশাসনের ঐতিহ্য গড়ে তোলার ক্ষেত্রে অনেক অবদান রেখেছিলেন। জিয়াউর রহমানের পর এরশাদ এসে যা করেছিলেন, তাকে জিয়াউর রহমানের পদাঙ্ক অনুসরণ ছাড়া আর কিছুই বলা যায় না।
শেখ মুজিবের স্বৈরতন্ত্র, জিয়াউর রহমান ও এরশাদের সামরিক শাসন পার হয়ে ১৯৯১ সালে বাংলাদেশে সংসদীয় শাসন ব্যবস্থা প্রবর্তিত হলেও ১৯৭২ সাল থেকে এদেশে যে রাজনৈতিক ঐতিহ্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল তাকে পরিবর্তন ও অতিক্রম করা কোনো দলের পক্ষেই সম্ভব হয়নি। এদিক দিয়ে বলা চলে, লাখ লাখ মানুষের জীবনের বিনিময়ে যে বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, সে রাষ্ট্রে জনগণ কোনোদিনই প্রকৃত গণতন্ত্রের দেখা পাননি। ১৮ তারিখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী নির্বাচন সামনে রেখে যে সমঝোতা ফর্মুলা উপস্থিত করেছেন, তার মধ্যেও স্বৈরতান্ত্রিক উপাদান ছাড়া আর কিছুই নেই। তিনি বলেছেন নির্বাচনের আগে এক নতুন মন্ত্রিসভা গঠনের কথা, যা বর্তমান জাতীয় সংসদের সদস্যদের নিয়েই গঠিত হবে। এই মন্ত্রিসভা হবে সর্বদলীয়। এজন্য তিনি বিরোধী দলের কাছে আহ্বান জানিয়েছেন তাদের কয়েকজন দলীয় সংসদ সদস্যের নাম তাকে দেয়ার জন্য, যারা মন্ত্রিসভার সদস্য হবেন! কে সেই মন্ত্রিসভার প্রধান হবেন, কতজন মন্ত্রিসভার সদস্য হবেন, কোন দল থেকে কতজন নেয়া হবে, কখন এই মন্ত্রিসভা গঠিত হবে- এসব কথা তার বক্তৃতায় পাওয়া যায়নি। প্রকৃতপক্ষে যেভাবে এ প্রস্তাব দেয়া হয়েছে তাতে মনে হয় যে, শেখ হাসিনাই প্রধানমন্ত্রী থাকবেন এবং বিএনপিসহ বিরোধী দলের কয়েকজনকে তিনি তার মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত করবেন! বিরোধী দলের কয়েকজনকে নিজের মন্ত্রিসভায় স্থান দিলেই যে সেই মন্ত্রিসভা কোনো নিরপেক্ষ জাতীয় সরকার হবে এটা মনে করার থেকে অর্বাচীন চিন্তা আর কী হতে পারে? এই প্রস্তাব যে প্রধান বিরোধী দল বিএনপির পক্ষে কোনোক্রমেই গ্রহণযোগ্য হবে না, এটা জেনেশুনেই কি শেখ হাসিনা তার এই অদ্ভুত ও অকার্যকর প্রস্তাব ঢাকঢোল পিটিয়ে হাজির করেননি? বাংলাদেশের শাসকশ্রেণী এবং বিশেষ করে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী জোট সরকারের এমনই করুণ অবস্থা যে, অন্য কোনো রকম রাজনৈতিক খেলা দেখানোর ক্ষমতা তাদের নেই।
শেখ হাসিনা ১৮ তারিখে যে প্রস্তাব উপস্থিত করেছেন, এর মধ্যেও কোনো নতুনত্ব নেই। তিনি এ প্রস্তাব আগেও তার নানা বক্তৃতায় দিয়েছেন এবং তা বিএনপি কর্তৃক প্রত্যাখ্যাত হয়েছে, যা হওয়ারই কথা। কাজেই যে প্রস্তাব ইতিমধ্যে বিরোধী দলের দ্বারা প্রত্যাখ্যাত হয়েছে, সে প্রস্তাব আবার নতুন করে হাজির করার মধ্যে সততা ও আন্তরিকতার লেশমাত্র যে নেই, এটা বোঝা কারও পক্ষে কঠিন নয়। সব থেকে বড় কথা হল, শেখ হাসিনার এই ঘোষণা সবার কাছেই এমনভাবে বোধগম্য যে, এর দ্বারা আওয়ামী লীগের কোনো লাভ হয়নি। উপরন্তু এর মাধ্যমে তারা নিজেদের রাজনৈতিক দেউলিয়াপনার স্বাক্ষরই ভালোভাবে রেখেছেন।
বর্তমান সরকার অথবা শেখ হাসিনার প্রস্তাবিত ‘সর্বদলীয়’ সরকারের অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিরপেক্ষ হতে পারে না। এ ধরনের কোনো নির্বাচনের চেষ্টা করলে তাতে দেশে চরম বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি ছাড়া অন্য কিছুই হবে না। মূলত একই অবস্থান গ্রহণ করে ১৯৯৬ সালে বিএনপি তার প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে সক্ষম হলেও এবার আওয়ামী লীগ কোনো নির্বাচন এককভাবে করার চেষ্টা করলে সে নির্বাচন তারা করতে পারবে এটা মনে হয় না। এ পরিস্থিতিতে ফখরুদ্দীন-মঈনুদ্দিন ধরনের একটি বেনামি সামরিক সরকারের ক্ষমতায় আসার পথই শেখ হাসিনা বেশ জেনেশুনেই তৈরি করছেন, যদিও তিনি এ ধরনের সরকারের বিরোধী এমন ভাব দেখিয়ে কথাবার্তা বলছেন। আওয়ামী লীগ যতই বিগত পাঁচ বছরে নিজেদের কৃতিত্ব জাহির করে বক্তব্য প্রচার করুক, তাদের নির্বাচন জয়ের কোনো সম্ভাবনা যে নেই এটা তারা ভালো করেই বোঝে। এ অবস্থায় শেখ হাসিনা নিজের নাক কেটে পরের যাত্রা ভঙ্গের চেষ্টাতেই নিয়োজিত আছেন। তার ১৮ অক্টোবরের বক্তৃতার মাধ্যমেও তিনি সেই চেষ্টাই করেছেন।
বদরুদ্দীন উমর : সভাপতি, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল
আশির দশকে এরশাদবিরোধী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের শেষে নব্বই দশক থেকে সংসদীয় শাসন ব্যবস্থা শুরু হওয়া সত্ত্বেও গণতন্ত্রের কোনো প্রকৃত চর্চা এদেশের শাসকশ্রেণীর পক্ষে সম্ভব হয়নি। ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়ে বিএনপি যে শাসন কায়েম করেছিল, তাকে বলা চলে গণতান্ত্রিক স্বৈরতন্ত্র। অল্প দিনের মধ্যেই আওয়ামী লীগ সংসদ বর্জন করে যে রাজনৈতিক তাণ্ডব শুরু করে, তার মধ্যেও গণতন্ত্রের কোনো উপাদান ছিল না। কাজেই সরকারি ও বিরোধী দল উভয়ে মিলে স্বৈরতন্ত্রের এমন এক ঐকতান সৃষ্টি করেছিল, যার ফলে বাংলাদেশে নতুনভাবে গণতন্ত্র চর্চার পরিবর্তে শুরু হয়েছিল বেসামরিক স্বৈরতন্ত্রের এক নতুন অধ্যায়। সেই থেকে এখন পর্যন্ত এদিক দিয়ে পরিস্থিতির কোনো পরিবর্তন হয়নি। প্রথম থেকেই বাংলাদেশে শাসক দলের নেতৃত্বে ও পরিচালনায় যে নতুন শাসকশ্রেণী গড়ে উঠেছিল, তার মূল লুণ্ঠনজীবী চরিত্রের কারণে বাংলাদেশে গণতন্ত্রের চর্চা রুদ্ধ হয়েছিল। ১৯৭২ সালের সংবিধানে গণতন্ত্রকে শাসন ব্যবস্থার চার খুঁটির অন্যতম বলে ঘোষণা করা হলেও গণতন্ত্রের সেই তথাকথিত খুঁটি ধ্বংস করে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল বাকশাল নামে সরকারি এক ফ্যাসিস্ট রাজনৈতিক দল। জরুরি অবস্থার অধীনে সব বেসরকারি দল, সব বেসরকারি পত্রপত্রিকা নিষিদ্ধ ঘোষণা করে নির্যাতনের এক রাজত্ব বাংলাদেশে কায়েম হয়েছিল। সেই নির্যাতক শাসনকে প্রচার করা হয়েছিল আওয়ামী লীগের ‘দ্বিতীয় বিপ্লবের’ সূচনা হিসেবে! এর থেকে বড় মিথ্যা এবং জনগণের জন্য বড় বিপদ আর কিছুই ছিল না। সেই দুঃশাসনের অবসানের পর জিয়াউর রহমান সব রাজনৈতিক দল ও পত্রপত্রিকার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করলেও শেখ মুজিবের যোগ্য উত্তরাধিকারী হিসেবে তিনি বাংলাদেশে স্বৈরশাসনের ঐতিহ্য গড়ে তোলার ক্ষেত্রে অনেক অবদান রেখেছিলেন। জিয়াউর রহমানের পর এরশাদ এসে যা করেছিলেন, তাকে জিয়াউর রহমানের পদাঙ্ক অনুসরণ ছাড়া আর কিছুই বলা যায় না।
শেখ মুজিবের স্বৈরতন্ত্র, জিয়াউর রহমান ও এরশাদের সামরিক শাসন পার হয়ে ১৯৯১ সালে বাংলাদেশে সংসদীয় শাসন ব্যবস্থা প্রবর্তিত হলেও ১৯৭২ সাল থেকে এদেশে যে রাজনৈতিক ঐতিহ্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল তাকে পরিবর্তন ও অতিক্রম করা কোনো দলের পক্ষেই সম্ভব হয়নি। এদিক দিয়ে বলা চলে, লাখ লাখ মানুষের জীবনের বিনিময়ে যে বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, সে রাষ্ট্রে জনগণ কোনোদিনই প্রকৃত গণতন্ত্রের দেখা পাননি। ১৮ তারিখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী নির্বাচন সামনে রেখে যে সমঝোতা ফর্মুলা উপস্থিত করেছেন, তার মধ্যেও স্বৈরতান্ত্রিক উপাদান ছাড়া আর কিছুই নেই। তিনি বলেছেন নির্বাচনের আগে এক নতুন মন্ত্রিসভা গঠনের কথা, যা বর্তমান জাতীয় সংসদের সদস্যদের নিয়েই গঠিত হবে। এই মন্ত্রিসভা হবে সর্বদলীয়। এজন্য তিনি বিরোধী দলের কাছে আহ্বান জানিয়েছেন তাদের কয়েকজন দলীয় সংসদ সদস্যের নাম তাকে দেয়ার জন্য, যারা মন্ত্রিসভার সদস্য হবেন! কে সেই মন্ত্রিসভার প্রধান হবেন, কতজন মন্ত্রিসভার সদস্য হবেন, কোন দল থেকে কতজন নেয়া হবে, কখন এই মন্ত্রিসভা গঠিত হবে- এসব কথা তার বক্তৃতায় পাওয়া যায়নি। প্রকৃতপক্ষে যেভাবে এ প্রস্তাব দেয়া হয়েছে তাতে মনে হয় যে, শেখ হাসিনাই প্রধানমন্ত্রী থাকবেন এবং বিএনপিসহ বিরোধী দলের কয়েকজনকে তিনি তার মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত করবেন! বিরোধী দলের কয়েকজনকে নিজের মন্ত্রিসভায় স্থান দিলেই যে সেই মন্ত্রিসভা কোনো নিরপেক্ষ জাতীয় সরকার হবে এটা মনে করার থেকে অর্বাচীন চিন্তা আর কী হতে পারে? এই প্রস্তাব যে প্রধান বিরোধী দল বিএনপির পক্ষে কোনোক্রমেই গ্রহণযোগ্য হবে না, এটা জেনেশুনেই কি শেখ হাসিনা তার এই অদ্ভুত ও অকার্যকর প্রস্তাব ঢাকঢোল পিটিয়ে হাজির করেননি? বাংলাদেশের শাসকশ্রেণী এবং বিশেষ করে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী জোট সরকারের এমনই করুণ অবস্থা যে, অন্য কোনো রকম রাজনৈতিক খেলা দেখানোর ক্ষমতা তাদের নেই।
শেখ হাসিনা ১৮ তারিখে যে প্রস্তাব উপস্থিত করেছেন, এর মধ্যেও কোনো নতুনত্ব নেই। তিনি এ প্রস্তাব আগেও তার নানা বক্তৃতায় দিয়েছেন এবং তা বিএনপি কর্তৃক প্রত্যাখ্যাত হয়েছে, যা হওয়ারই কথা। কাজেই যে প্রস্তাব ইতিমধ্যে বিরোধী দলের দ্বারা প্রত্যাখ্যাত হয়েছে, সে প্রস্তাব আবার নতুন করে হাজির করার মধ্যে সততা ও আন্তরিকতার লেশমাত্র যে নেই, এটা বোঝা কারও পক্ষে কঠিন নয়। সব থেকে বড় কথা হল, শেখ হাসিনার এই ঘোষণা সবার কাছেই এমনভাবে বোধগম্য যে, এর দ্বারা আওয়ামী লীগের কোনো লাভ হয়নি। উপরন্তু এর মাধ্যমে তারা নিজেদের রাজনৈতিক দেউলিয়াপনার স্বাক্ষরই ভালোভাবে রেখেছেন।
বর্তমান সরকার অথবা শেখ হাসিনার প্রস্তাবিত ‘সর্বদলীয়’ সরকারের অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিরপেক্ষ হতে পারে না। এ ধরনের কোনো নির্বাচনের চেষ্টা করলে তাতে দেশে চরম বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি ছাড়া অন্য কিছুই হবে না। মূলত একই অবস্থান গ্রহণ করে ১৯৯৬ সালে বিএনপি তার প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে সক্ষম হলেও এবার আওয়ামী লীগ কোনো নির্বাচন এককভাবে করার চেষ্টা করলে সে নির্বাচন তারা করতে পারবে এটা মনে হয় না। এ পরিস্থিতিতে ফখরুদ্দীন-মঈনুদ্দিন ধরনের একটি বেনামি সামরিক সরকারের ক্ষমতায় আসার পথই শেখ হাসিনা বেশ জেনেশুনেই তৈরি করছেন, যদিও তিনি এ ধরনের সরকারের বিরোধী এমন ভাব দেখিয়ে কথাবার্তা বলছেন। আওয়ামী লীগ যতই বিগত পাঁচ বছরে নিজেদের কৃতিত্ব জাহির করে বক্তব্য প্রচার করুক, তাদের নির্বাচন জয়ের কোনো সম্ভাবনা যে নেই এটা তারা ভালো করেই বোঝে। এ অবস্থায় শেখ হাসিনা নিজের নাক কেটে পরের যাত্রা ভঙ্গের চেষ্টাতেই নিয়োজিত আছেন। তার ১৮ অক্টোবরের বক্তৃতার মাধ্যমেও তিনি সেই চেষ্টাই করেছেন।
বদরুদ্দীন উমর : সভাপতি, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল
No comments