কামাল হোসেন সব সত্য লিখেননি: কুলদীপ নায়ার
অপরাধ সংঘটনের চার দশক পরেও যখন স্বাধীনতা
ও ন্যায়বিচারের জন্য বিপ্লব হয় তখন এর অর্থ হলো- সেই স্বাধীনতা ও
ন্যায়বিচার অনেক দূরে সরে গেছে।
যদি হরতাল ও প্রতিবাদ
বিক্ষোভ একই তালে চলতে থাকে তখন যে দৃশ্যের সৃষ্টি হয় তা আরও বেশি বিষাদময়
হয়ে ওঠে। বাংলাদেশে ঠিক এই ঘটনাই ঘটছে। এ বিষয়ে বর্ণনা দিতে বাংলাদেশের
প্রথম পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্যারিস্টার কামাল হোসেন একটি বই লিখেছেন। আমি আশা
করেছিলাম তিনি এতে বাংলাদেশের জন্ম ও কাঙিক্ষত ধর্মনিরপেক্ষ ধারণার
অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার ব্যর্থতা নিয়ে অধিকতর কথা বলবেন। এটা ছিল একটি বিরল
অভ্যুত্থান। ধর্মোন্মত্ততা ও দলাদলির ঊর্ধ্বে ছিল তা। ধর্মের সঙ্গে সম্পর্ক
ছিন্ন না করেই এ অভ্যুত্থান দেখিয়েছিল গণতান্ত্রিক একটি কাঠামোর
আলোকবর্তিকা। কামাল হোসেনের বর্ণনা অপর্যাপ্ত। যে দেশ দৃঢ় প্রতিজ্ঞার মধ্য
দিয়ে ধর্মীয় গোঁড়ামির বিরুদ্ধে লড়াই করেছে সেখানে যখন জঙ্গিরা মাথা তুলে
তাকায় তখন কেন এ দেশটি গুহার মধ্যে লুকিয়ে থাকে সে বিষয়ে তিনি কিছু বলেননি।
বেশি দিন আগের কথা নয়। ১৯৭০ সালে পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশীরা যখন নিজেদের
মুক্ত করে তখন তারা বাংলাদেশী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। একটি মুসলিম দেশ
আরেকটি মুসলিম দেশের বিরুদ্ধে ধর্মীয় কারণে যুদ্ধ করেছে এমন আবেদনের কোন
অর্থ নেই। দুর্ভাগ্যজনকভাবে, স্বাধীনতার পর, বাংলাদেশীরা ধর্মভিত্তিক
যুদ্ধে ও সংকীর্ণ ধারণার কাছে খেই হারিয়ে ফেলে। কামাল হোসেনের এই সত্যটি
জোর দিয়ে বর্ণনা করা উচিত ছিল যে, সেই স্বপ্ন চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে গেছে। এর
কারণ, ধর্মনিরপেক্ষতার চেয়ে ভাল অবস্থান পেয়েছে ধর্মীয় বিষয়। বাংলাদেশের
আজকের দৃশ্য দেখে মনে হয় যে, কট্টরপন্থা প্রায় অমোচনীয় এবং এর ঊর্ধ্বে উঠতে
পারে খুব কম মানুষই।
স্বাধীনতা আন্দোলনে বাংলাদেশীদের ধৈর্য ও আত্মগরিমা প্রশংসার যোগ্য। এটা একটি আদর্শ, যা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ধারণাকে জয় করেছে। স্বাধীনতার ইতিহাস শুধু রাওয়ালপিন্ডি থেকে দূরত্ব বজায় রাখার জন্যই লড়াই নয়। সবার জন্য সমতাভিত্তিক একটি সমাজের আদর্শের জন্ম ছিল সেটা- যা লড়াই করবে ধর্মনিরপেক্ষতা ও ধর্মীয় বিভাজনের বিরুদ্ধে। পাকিস্তানের সেনারা ৯ মাসের যে অভিযান চালিয়েছিল তার মধ্য দিয়ে তারা প্রশাসনিক সব নিয়ম, সরকারের প্রশাসনকে ছিন্ন ভিন্ন করে ফেলেছিল এবং এর মধ্য দিয়ে তারা স্বৈরশাসকের মতো শাসন চাপিয়ে দিয়েছিল। যেসব বাংলাদেশী তাদের পরিচয় দেয়ার সাহস করেছিলেন একটি পক্ষ সেই দুর্বল ও গরিব বাংলাদেশীদের দিকে ঘৃণা ছড়িয়ে দিয়েছিল। ফলে তাদের সামনে বিপ্লব ছাড়া আর কোন পথ ছিল না। জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন, যখন পাকিস্তানি সরকার প্রতিটি বাংলাদেশীকে হত্যার চেষ্টা করে এবং বাংলাদেশকে ধ্বংস করে তখন আমরা কি করতে পারি?
যখন মুজিব ক্ষমতায় এলেন, তিনি বললেন সব কিছু ঠিকঠাক করতে তার সময় প্রয়োজন। কিন্তু তার দেশবাসী চাইছিলেন বিপ্লবের মধ্য দিয়ে একটি সুফল, তারা সেই আবেদন ওই সব মানুষের কাছে খুব কমই সন্তুষ্টি জাগিয়েছিল। তারা একটি মিরাকল ঘটনা দেখতে পেয়েছিলেন। তা ছিল স্বাধীনতা। কিন্তু তারা চেয়েছিলেন অন্য কিছু। তাহলো অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি। তা গড়ে তুলতে সময়ের প্রয়োজন ছিল। কিন্তু জনগণের সেই ধৈর্য ছিল না। স্বাধীনতার আগুন তখনও জ্বলজ্বল করে হৃদয়ে জ্বলছিল। কিন্তু দিন যতই যাচ্ছিল ততই তার ধার কমে আসছিল। অন্যদিকে স্বাধীনতাবিরোধী অনেক চক্র, যারা ততদিনে নীরব ছিল তারা সক্রিয় হয়ে ওঠে। তারা প্রমাণ করতে চেষ্টা করে যে, স্বাধীনতা অর্জিত হয়নি কখনও। তারা আরও প্রমাণ করতে চেষ্টা করে যে, পাকিস্তানকে কখনও ভাঙা যাবে না। স্বাধীনতার বিরোধী এই চক্রটি ক্ষমতাসীনদের থেকে সমর্থন পাওয়ার আশা করে।
বাংলাদেশে প্রচুর অস্ত্র ছিল। মৌলবাদীরাই শুধু তাদের প্রয়োজনীয় হিসেবে দেখতে থাকে না। বিভিন্ন রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ায় আরও অনেকে কোন রাজনৈতিক না হওয়া সত্ত্বেও একটি পক্ষ ছিল। তারা অস্ত্র সমর্পণ করেনি। মুজিবের ব্যক্তিগত ম্যাজিক একটি সীমা পর্যন্ত কাজ করেছিল। এক হিসাব মতে, ১ লাখ থেকে ২ লাখ অস্ত্র সমর্পণ করা হয়নি কখনও। সহিংসতা রয়েই যায়। স্বাধীনতাযুদ্ধ শেষ হয়ে যাওয়ার পর দৃশ্যত প্রতিশোধ নেয়ার প্রবণতা দেখা দেয়।
যাই হোক, বাংলাদেশী নেতাদের সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা হলো এখানে ভারতবিরোধী একটি প্রারম্ভিক অনুভূতি জেগে ওঠে। ভারত সেই দেশ যে বাংলাদেশকে স্বাধীন হতে সহায়তা করেছে। এক সময়ের প্রধানমন্ত্রী তাজুদ্দিন আহমেদ আমাকে বলেছিলেন, ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সম্পর্ক এখন এত ভাল যে আমি এখন মরে যেতে চাই। এ অবস্থার অবনতি আমি দেখতে চাই না।
আমি যখন মুজিবের সঙ্গে সাক্ষাৎ করি তখন তিনি উদ্বিগ্ন ছিলেন না। তিনি বলেছিলেন- আমি জানি বিদেশীদের স্বার্থ দেখার জন্য একটি গোষ্ঠী ভারতের বিরুদ্ধে প্রচারণা ছড়িয়ে দিতে কাজ করছে। কিন্তু তারা বাংলাদেশের সঙ্গে আপনার মহান দেশ (ভারত)-এর সঙ্গে সম্পর্কে সাবোটাজ করতে পারবে না। কেউ যদি শুধু এক গ্লাস পানি দেয় তার কথা কখনও বাঙালি ভুলে যায় না। এখানে, আপনাদের সেনারা আমার দেশবাসীর জন্য তাদের জীবন উৎসর্গ করেছেন। কি করে তারা আপনাদের এই আত্মত্যাগের কথা ভুলে যেতে পারে? আপনারা ১০ লাখ শরণার্থীকে ১০ মাসেরও বেশি সময় খাইয়েছেন। এমনকি আপনারা এখনও আমাদের খাদ্য দিচ্ছেন। সহায়তা দিচ্ছেন। আমি আপনাকে নিশ্চয়তা দিতে পারি যে, আমার দেশবাসী অকৃতজ্ঞ নয়। তারপরও যারা সমস্যা সৃষ্টি করার চেষ্টা করছে তারা তাদের পরিকল্পনায় সফল হবে না।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি ‘নয়া দিল্লির কার্বন কপি’ বলে বাইরের দেশগুলো অভিমত দিয়ে থাকে। তা নিয়ে ঢাকার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এখনও অসন্তোষ প্রকাশ করে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা আমাকে বলেছেন, যদি আমরা আপনাদের কোনও ভাবে বিরোধিতা করতে পারি, তাহলে আমরা আমাদের স্বাধীনতার ইমেজ ফিরে পাবো। এ কথায় তিনি ক্ষুদ্র জাতির একটি হীনম্মন্যতা ফুটিয়ে তুলেছেন। প্রমাণ দিতে চেয়েছেন, আলাদা একটি পরিচয়ের প্রমাণ সম্পর্কে। এমন কর্মকর্তারা মাঝেমধ্যেই ভারত বিরোধিতার জিকির তোলেন।
ভারতের আকার বিশাল। অনেক সরকারি কর্মকর্তা হঠাৎ করে সচকিত হয়ে দেখেন যে, তারা একটি ক্ষুদ্র ও এখনও অনুন্নত দেশের জন্য লড়াই করেছেন, যেখানে ভারতবিরোধী কথাকে প্রশ্রয় দেয়া হয়। তারা বলেন, তোমাদের দেশ অনেক বড়। তোমাদের প্রতিবেশীরা পছন্দ করুক অথবা না করুক তাদের তোমাদের কাছে কৃতজ্ঞতা স্বীকার করতে হবে। এটা কি তাদের পুরনো সংকীর্ণতার প্রকাশ নাকি তাদের দেশের অপর্যাপ্ততার বিরুদ্ধে অভিযোগ?
আনন্দ ও হতাশার পরের এই অনুভূতির বিষয়গুলো নেই কামাল হোসেনের বইয়ে। এসব বইয়ে যেসব প্রতিশ্রুতি দেয়া হয় তেমন কোন উন্মোচন এতে নেই। কামাল হোসেন তার নেতা মুজিব সম্পর্কে কিছু বলেছেন। কিন্তু শাসক হিসেবে তার দক্ষতার দুর্বলতা নিয়ে বহুল কথিত বিষয়টিকে তিনি এড়িয়ে গেছেন। প্রচার হয়েছিল যে, মুজিবকে পাকিস্তানের সামরিক শাসকরা শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন এবং পাকিস্তানের জনপ্রিয় নেতা জুলফিকার আলী ভুট্টোর হস্তক্ষেপে ছাড়া পেয়েছেন- এ প্রচার সত্য না মিথ্যা সে বিষয়ে কিছু লেখেননি কামাল। হয়তো, কামাল হোসেন বাংলাদেশের অকথিত কাহিনী পরে প্রকাশ করবেন। আমাদেরকে সে জন্য অপেক্ষা করতে হবে।
স্বাধীনতা আন্দোলনে বাংলাদেশীদের ধৈর্য ও আত্মগরিমা প্রশংসার যোগ্য। এটা একটি আদর্শ, যা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ধারণাকে জয় করেছে। স্বাধীনতার ইতিহাস শুধু রাওয়ালপিন্ডি থেকে দূরত্ব বজায় রাখার জন্যই লড়াই নয়। সবার জন্য সমতাভিত্তিক একটি সমাজের আদর্শের জন্ম ছিল সেটা- যা লড়াই করবে ধর্মনিরপেক্ষতা ও ধর্মীয় বিভাজনের বিরুদ্ধে। পাকিস্তানের সেনারা ৯ মাসের যে অভিযান চালিয়েছিল তার মধ্য দিয়ে তারা প্রশাসনিক সব নিয়ম, সরকারের প্রশাসনকে ছিন্ন ভিন্ন করে ফেলেছিল এবং এর মধ্য দিয়ে তারা স্বৈরশাসকের মতো শাসন চাপিয়ে দিয়েছিল। যেসব বাংলাদেশী তাদের পরিচয় দেয়ার সাহস করেছিলেন একটি পক্ষ সেই দুর্বল ও গরিব বাংলাদেশীদের দিকে ঘৃণা ছড়িয়ে দিয়েছিল। ফলে তাদের সামনে বিপ্লব ছাড়া আর কোন পথ ছিল না। জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন, যখন পাকিস্তানি সরকার প্রতিটি বাংলাদেশীকে হত্যার চেষ্টা করে এবং বাংলাদেশকে ধ্বংস করে তখন আমরা কি করতে পারি?
যখন মুজিব ক্ষমতায় এলেন, তিনি বললেন সব কিছু ঠিকঠাক করতে তার সময় প্রয়োজন। কিন্তু তার দেশবাসী চাইছিলেন বিপ্লবের মধ্য দিয়ে একটি সুফল, তারা সেই আবেদন ওই সব মানুষের কাছে খুব কমই সন্তুষ্টি জাগিয়েছিল। তারা একটি মিরাকল ঘটনা দেখতে পেয়েছিলেন। তা ছিল স্বাধীনতা। কিন্তু তারা চেয়েছিলেন অন্য কিছু। তাহলো অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি। তা গড়ে তুলতে সময়ের প্রয়োজন ছিল। কিন্তু জনগণের সেই ধৈর্য ছিল না। স্বাধীনতার আগুন তখনও জ্বলজ্বল করে হৃদয়ে জ্বলছিল। কিন্তু দিন যতই যাচ্ছিল ততই তার ধার কমে আসছিল। অন্যদিকে স্বাধীনতাবিরোধী অনেক চক্র, যারা ততদিনে নীরব ছিল তারা সক্রিয় হয়ে ওঠে। তারা প্রমাণ করতে চেষ্টা করে যে, স্বাধীনতা অর্জিত হয়নি কখনও। তারা আরও প্রমাণ করতে চেষ্টা করে যে, পাকিস্তানকে কখনও ভাঙা যাবে না। স্বাধীনতার বিরোধী এই চক্রটি ক্ষমতাসীনদের থেকে সমর্থন পাওয়ার আশা করে।
বাংলাদেশে প্রচুর অস্ত্র ছিল। মৌলবাদীরাই শুধু তাদের প্রয়োজনীয় হিসেবে দেখতে থাকে না। বিভিন্ন রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ায় আরও অনেকে কোন রাজনৈতিক না হওয়া সত্ত্বেও একটি পক্ষ ছিল। তারা অস্ত্র সমর্পণ করেনি। মুজিবের ব্যক্তিগত ম্যাজিক একটি সীমা পর্যন্ত কাজ করেছিল। এক হিসাব মতে, ১ লাখ থেকে ২ লাখ অস্ত্র সমর্পণ করা হয়নি কখনও। সহিংসতা রয়েই যায়। স্বাধীনতাযুদ্ধ শেষ হয়ে যাওয়ার পর দৃশ্যত প্রতিশোধ নেয়ার প্রবণতা দেখা দেয়।
যাই হোক, বাংলাদেশী নেতাদের সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা হলো এখানে ভারতবিরোধী একটি প্রারম্ভিক অনুভূতি জেগে ওঠে। ভারত সেই দেশ যে বাংলাদেশকে স্বাধীন হতে সহায়তা করেছে। এক সময়ের প্রধানমন্ত্রী তাজুদ্দিন আহমেদ আমাকে বলেছিলেন, ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সম্পর্ক এখন এত ভাল যে আমি এখন মরে যেতে চাই। এ অবস্থার অবনতি আমি দেখতে চাই না।
আমি যখন মুজিবের সঙ্গে সাক্ষাৎ করি তখন তিনি উদ্বিগ্ন ছিলেন না। তিনি বলেছিলেন- আমি জানি বিদেশীদের স্বার্থ দেখার জন্য একটি গোষ্ঠী ভারতের বিরুদ্ধে প্রচারণা ছড়িয়ে দিতে কাজ করছে। কিন্তু তারা বাংলাদেশের সঙ্গে আপনার মহান দেশ (ভারত)-এর সঙ্গে সম্পর্কে সাবোটাজ করতে পারবে না। কেউ যদি শুধু এক গ্লাস পানি দেয় তার কথা কখনও বাঙালি ভুলে যায় না। এখানে, আপনাদের সেনারা আমার দেশবাসীর জন্য তাদের জীবন উৎসর্গ করেছেন। কি করে তারা আপনাদের এই আত্মত্যাগের কথা ভুলে যেতে পারে? আপনারা ১০ লাখ শরণার্থীকে ১০ মাসেরও বেশি সময় খাইয়েছেন। এমনকি আপনারা এখনও আমাদের খাদ্য দিচ্ছেন। সহায়তা দিচ্ছেন। আমি আপনাকে নিশ্চয়তা দিতে পারি যে, আমার দেশবাসী অকৃতজ্ঞ নয়। তারপরও যারা সমস্যা সৃষ্টি করার চেষ্টা করছে তারা তাদের পরিকল্পনায় সফল হবে না।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি ‘নয়া দিল্লির কার্বন কপি’ বলে বাইরের দেশগুলো অভিমত দিয়ে থাকে। তা নিয়ে ঢাকার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এখনও অসন্তোষ প্রকাশ করে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা আমাকে বলেছেন, যদি আমরা আপনাদের কোনও ভাবে বিরোধিতা করতে পারি, তাহলে আমরা আমাদের স্বাধীনতার ইমেজ ফিরে পাবো। এ কথায় তিনি ক্ষুদ্র জাতির একটি হীনম্মন্যতা ফুটিয়ে তুলেছেন। প্রমাণ দিতে চেয়েছেন, আলাদা একটি পরিচয়ের প্রমাণ সম্পর্কে। এমন কর্মকর্তারা মাঝেমধ্যেই ভারত বিরোধিতার জিকির তোলেন।
ভারতের আকার বিশাল। অনেক সরকারি কর্মকর্তা হঠাৎ করে সচকিত হয়ে দেখেন যে, তারা একটি ক্ষুদ্র ও এখনও অনুন্নত দেশের জন্য লড়াই করেছেন, যেখানে ভারতবিরোধী কথাকে প্রশ্রয় দেয়া হয়। তারা বলেন, তোমাদের দেশ অনেক বড়। তোমাদের প্রতিবেশীরা পছন্দ করুক অথবা না করুক তাদের তোমাদের কাছে কৃতজ্ঞতা স্বীকার করতে হবে। এটা কি তাদের পুরনো সংকীর্ণতার প্রকাশ নাকি তাদের দেশের অপর্যাপ্ততার বিরুদ্ধে অভিযোগ?
আনন্দ ও হতাশার পরের এই অনুভূতির বিষয়গুলো নেই কামাল হোসেনের বইয়ে। এসব বইয়ে যেসব প্রতিশ্রুতি দেয়া হয় তেমন কোন উন্মোচন এতে নেই। কামাল হোসেন তার নেতা মুজিব সম্পর্কে কিছু বলেছেন। কিন্তু শাসক হিসেবে তার দক্ষতার দুর্বলতা নিয়ে বহুল কথিত বিষয়টিকে তিনি এড়িয়ে গেছেন। প্রচার হয়েছিল যে, মুজিবকে পাকিস্তানের সামরিক শাসকরা শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন এবং পাকিস্তানের জনপ্রিয় নেতা জুলফিকার আলী ভুট্টোর হস্তক্ষেপে ছাড়া পেয়েছেন- এ প্রচার সত্য না মিথ্যা সে বিষয়ে কিছু লেখেননি কামাল। হয়তো, কামাল হোসেন বাংলাদেশের অকথিত কাহিনী পরে প্রকাশ করবেন। আমাদেরকে সে জন্য অপেক্ষা করতে হবে।
কুলদীপ নায়ার: যুক্তরাজ্যে নিয়োজিত ভারতের সাবেক হাইকমিশনার ও রাজ্যসভার সাবেক সদস্য।
অনলাইন গালফ নিউজে ৭ই জুন প্রকাশিত লেখার অনুবাদ
No comments