প্রসঙ্গ তত্ত্বাবধায়ক- সংসদে প্রস্তাব চায় আওয়ামী লীগ বিএনপি বলছে ফাঁদ
নির্বাচনকালীন ‘তত্ত্বাবধায়ক’ সরকার নিয়ে
সংসদে বিরোধী দলের প্রস্তাব চায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। নির্বাচন প্রশ্নে
দুই দলের মধ্যে সংলাপের আলোচনা হলেও আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে,
জাতীয়
সংসদেই এ বিষয়ে আলোচনা হতে পারে। বিরোধী দল এ বিষয়ে তাদের প্রস্তাব থাকলে
তা উপস্থাপন করা হতে পারে। ক্ষমতাসীন দলের সিনিয়র কয়েকজন নেতা জানিয়েছেন,
সংখ্যার বিবেচনায় নয়। বিরোধী দল প্রস্তাব দিলে তা নিয়ে আলোচনা হবে। তবে
সরকারি দলের নেতাদের এমন প্রতিশ্রুতি আমলে নিচ্ছে না বিরোধী দল। বরং সরকারি
দলের এ আহ্বানকে ‘ফাঁদ’ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য
ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া। তিনি জানিয়েছেন, বিরোধী দল তত্ত্বাবধায়ক
সরকার বিষয়ে মুলতবি প্রস্তাব সংসদে তুললেও সরকারি দল সংখ্যাগরিষ্ঠতা দিয়ে
তা বাতিল করে দিতো। এটি জানতে পেরেই সংসদে মুলতবি প্রস্তাব দিয়েও
প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছে। বিরোধী দল এমন যুক্তি দিলেও সরকারি দলের শীর্ষ
নেতারা আলোচনার পক্ষেই কার্যত তাদের অবস্থান তুলে ধরেছেন। আওয়ামী লীগ
সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল দলের এক সভায় বিরোধী দলের
মুলতবি প্রস্তাবের প্রসঙ্গ টেনে বলেছেন, বিরোধী দলই আলোচনার পথ বন্ধ করে
দিচ্ছে। তারা নির্বাচনকালীন সরকার বিষয়ে মুলতবি প্রস্তাব দিয়েছিল। যদিও এটি
বিধিসম্মত হয়নি। তারপরও কার্যউপদেষ্টা কমিটি তা সংসদের কার্যসূচিতে
আলোচনার জন্য রাখে। কিন্তু পরে তারা প্রস্তাব প্রত্যাহার করে নেয়। এতে বোঝা
যায় তারা আলোচনা চান না। তারা আলোচনার পথ বন্ধ করে দিচ্ছেন।
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে যেমনটা অভিযোগ ছিল তেমনি আলোচনার বিষয়ে তার
আগ্রহের বিষয়টিও প্রকাশ পায়। এদিকে গতকাল জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন
শারমিন চৌধুরীও আলোচনার বিষয়ে ইতিবাচক কথা বলেছেন।
তিনি জানিয়েছেন, এখনও আলোচনার সুযোগ আছে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বাজেট আলোচনার সময় অন্য কোন প্রস্তাব নিয়ে আলোচনার সুযোগ সীমিত। তবে বাজেট পাসের পরও যে ক’দিন সংসদ চলবে তখন আলোচনার সুযোগ আছে। বিরোধী দল চাইলে যে কোন আলোচনার সুযোগ দেয়া হবে। গতকাল রাজধানীর একটি হোটেলে ‘জেন্ডার মেইনস্ট্রিমিং ইন বাংলাদেশ পার্লামেন্ট’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্পিকার এসব কথা বলেন।
আবারও মুলতবি প্রস্তাব দিন: আশরাফ
এদিকে গতকাল এক অনুষ্ঠানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফিরিয়ে আনার দাবিতে বিএনপিকে আবারও সংসদে মুলতবি প্রস্তাব দেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। বিরোধী দলকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, আপনারা গণতন্ত্রের স্বার্থে, দেশের স্বার্থে আবার মুলতবি প্রস্তাব দিন। আগামী নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে সংসদে এসে প্রাণবন্ত আলোচনা করুন। আমরা কথা দিচ্ছি সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে আমরা যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করবো না। রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশনে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অসামপ্রদায়িক বাংলাদেশ গঠনে প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক কর্মীদের ঐক্যের লক্ষ্যে আয়োজিত কনভেনশনে তিনি এসব কথা বলেন। সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেন, আমরা আশা করেছিলাম বিএনপি সংসদের মাধ্যমে জাতির কাছে তাদের বক্তব্য তুলে ধরবে। আমরাও সংসদের মাধ্যমে জাতির কাছে আমাদের বক্তব্য তুলে ধরবো। এটাই রাজনীতির সংস্কৃতি। কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যে বেগম জিয়া সংসদে এসে সে প্রস্তাব তুলে নিলেন। এর মাধ্যমে প্রমাণিত হলো তারা আলোচনা চান না। তারা ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে চান। তিনি বলেন, ৩০ লাখ প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীন দেশে রাজনীতির প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে গণতন্ত্রে বিশ্বাসীদের মধ্যে। যে রাজনীতি প্রতিষ্ঠার জন্য দেশ স্বাধীন করা হয়েছিল আমরা তা বাস্তবায়ন করতে পারি নি। আজকে আওয়ামী লীগের বিকল্প বিএনপি নয়। বিএনপির বাজেট প্রতিক্রিয়ার সমালোচনা করে তিনি বলেন, বাজেট প্রতিক্রিয়ায় মওদুদ সাহেব বাজেট বিশ্লেষণে গেলেন না। তিনি ছোট একটি কথা বললেন, বিগ বিউটিফুল বেলুন। আসলে বিরোধী দল রাজনৈতিক ভাবে দেউলিয়া। তাই তারা সরকারকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করতে চায় না। তারা আশ্রয় নিয়েছে হেফাজত ও জামায়াতের কাছে। সিপিডি’র মতো ইনস্টিটিউটও দেউলিয়া হয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, একটি রাজনৈতিক সরকারের বিরোধী একটি এনজিও হতে পারে না। বুদ্ধিজীবীদের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘কিছু সংখ্যক তথাকথিত বুদ্ধিজীবী টেলিভিশনে টকশোতে আসেন। তুলা উৎপাদন ব্যাহত, অকাল বন্যার কারণ, বাজেট ইত্যাদি সব বিষয়ে তারা পণ্ডিত। পৃথিবীর সকল বিষয় ও ডিসিপ্লিনে তারা পণ্ডিত। এরা তত্ত্বাবধায়ক সরকার চান, নির্বাচন চান না। এরা চান কিছু দিনের জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হতে। কনভেনশন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক পঙ্কজ ভট্টাচার্যের সভাপতিত্বে সভায় আরও বক্তব্য রাখেন সিপিবি সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, জাসদের সাধারণ সম্পাদক শরীফ নূরুল আম্বিয়া, গণতন্ত্রী পার্টির সাধারণ সম্পাদক নুরুর রহমান সেলিম প্রমুখ।
ফাঁদে পা দেয়নি বিএনপি: রফিকুল
নির্র্দলীয় সরকার পুনর্বহালে সংসদে মুলতবি প্রস্তাব নিয়ে সরকারের ফাঁদে পা দেয়নি বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া। বলেছেন, সংসদে আওয়ামী লীগ ও তার জোটের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে। ৩০-৪১ জনের বিরোধী দল মুলতবি প্রস্তাব দিলে তা গ্রহণের কোন সম্ভাবনাই ছিল না। ক্ষমতাসীন দল সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে ওই প্রস্তাবটি ভোটে দিয়ে ‘না’ ‘না’ বলে বাতিল করে দিতো। ওই মুলতবি প্রস্তাবটির মাধ্যমে সরকারি দল নির্দলীয় সরকারের বিষয়টির কবর রচনা করতে চেয়েছিল। বিএনপি সেই ফাঁদে পা দেয়নি। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৩২তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে জাতীয় প্রেস ক্লাবে স্বেচ্ছাসেবক দল আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন। ব্যারিস্টার রফিকুল বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহাল নিয়ে মুুলতবি প্রস্তাব তোলা হলে সরকারদলীয় এমপিদের না ভোটে তা বাতিল হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা ছিল। আর এ কারণেই মুলতবি প্রস্তাবের নোটিশ দিয়েও অধিবেশন শুরুর আগে তা প্রত্যাহার করে নেয়া হয়। তিনি বলেন, বিএনপি বিশ্বাস করে- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দিয়ে নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব হবে না। সরকার যদি সুপ্রিম কোর্টের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতো তাহলে তারা তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা বাতিল করতো না। ক্ষমতা চিরস্থায়ী করার স্বপ্নেই তারা এটা করেছে। কিন্তু বিএনপি এ সরকারের অধীনে কোন নির্বাচনে যাবে না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক সততায় বিশ্বাস নেই। তাই তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিষয়ে আলোচনারও সুযোগ নেই। আয়োজক সংগঠনের সিনিয়র সহ-সভাপতি মনির হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রো-ভিসি আফম ইউসুফ হায়দার, ঢাকা মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব আবদুস সালাম ও স্বেচ্ছাসেবক দলের সহ-সভাপতি গোলাম সরওয়ার বক্তব্য দেন।
আওয়ামী লীগ টোটালি কনফিউজড: বিএনপি
এদিকে সংলাপ নিয়ে আওয়ামী লীগ ‘টোটালি কনফিউজড’ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান। বলেছেন, আওয়ামী লীগ একদিন বলে, সংলাপ সংসদের ভেতরে হবে। আরেকদিন বলে, বাইরে হবে। পরে বলে- আমরা সংলাপে বিশ্বাস করি না। এরকম হাজারো কথা শুনতে পাচ্ছি। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৩২তম শাহাদত বার্ষিকী উপলক্ষে গতকাল দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘জাতীয়তাবাদী মুক্তিযুদ্ধের প্রজন্ম’ আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন। প্রস্তাবিত বাজেট প্রসঙ্গে ড. মঈন খান বলেন, সরকারের মেয়াদ হচ্ছে, ছয় মাস। আর বাজেট দিয়েছে এক বছরের। এ বাজেটের কার্যকারিতা নেই। এটা লেইম ডার্ক (খোঁড়া হাঁস)। তিনি বলেন, কেউ কেউ বিএনপির জন্ম নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তারা বলেন, বিএনপির জন্ম নাকি ক্যান্টনমেন্টে। জন্ম নিয়ে তারাই প্রশ্ন তোলেন, যারা গণতন্ত্র বিশ্বাস করেন না। তারা বিশ্বাস করেন রাজতন্ত্রে। যারা ১০ মিনিটের মধ্যে সংসদে গণতন্ত্র হত্যা করেছে, সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করেছে তারা নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে গেলে প্রার্থী হিসেবে নয়, দল হিসেবেই জামানত বাজেয়াপ্ত হবে। সেনাবাহিনীর বিষয়ে ড. মঈন খান বলেন, সেনাবাহিনী কখনও গণতন্ত্র হরণ করে না। যখন আওয়ামী লীগ বোঝে তাদের পরাজয় সুনিশ্চিত, তখনই আওয়ামী লীগ সেনাবাহিনীকে আমন্ত্রণ করে ক্ষমতায় নিয়ে আসে। সংগঠনের সভাপতি শামা ওবায়েদের সভাপতিত্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি প্রফেসর মনিরুজ্জামান মিয়া, চলচ্চিত্রকার চাষী নজরুল ইসলাম ও ইসমাইল হোসেন বেঙ্গল বক্তব্য দেন।
সরকার ধার করে ঘি খাচ্ছে: মাহবুব
ওদিকে সরকার ‘ধার করে ঘি’ খাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান। বলেছেন, ঘি খেতেই হবে এমন তো নয়। নিজেদের সামর্থ্য অনুযায়ী খাওয়া উচিত, আর দেশের সামর্থ্য অনুযায়ী বাজেট হওয়া উচিত। গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক-সাংস্কৃতিক জোট আয়োজিত ‘সংলাপের অপরিহার্যতা ও আগামী’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন। মাহবুব বলেন, প্রস্তাবিত বাজেট অনেকটাই কল্পিত। অন্তঃসারশূন্য। অর্থমন্ত্রী নিজেও বলেছেন, এটি উচ্চাভিলাষী বাজেট, বাস্তবায়ন করা যায় না। তিনি বলেন, সরকার জানে- এটা তাদের শেষ বাজেট। তাই জনগণকে বিভ্রান্ত করতে ও দলীয় উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতে এমন বাজেট প্রস্তাব করা হয়েছে। মাহবুব বলেন, সরকারের এ নিয়ে চারটি বাজেটেই কালো টাকা সাদা করার বিষয়টি এসেছে। কালো টাকা তো টাকাই, কালো টাকা মানেই দুর্নীতি, মিথ্যা ও অন্যায়। কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দিয়ে সরকার এসবকেই সুযোগ দিচ্ছে। সংগঠনের সমন্বয়কারী হুমায়ুন কবির বেপারির সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় এনডিপির চেয়ারম্যান গোলাম মতুর্জা ও বিএনপির শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক খায়রুল কবির খোকন বক্তব্য দেন।
তিনি জানিয়েছেন, এখনও আলোচনার সুযোগ আছে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বাজেট আলোচনার সময় অন্য কোন প্রস্তাব নিয়ে আলোচনার সুযোগ সীমিত। তবে বাজেট পাসের পরও যে ক’দিন সংসদ চলবে তখন আলোচনার সুযোগ আছে। বিরোধী দল চাইলে যে কোন আলোচনার সুযোগ দেয়া হবে। গতকাল রাজধানীর একটি হোটেলে ‘জেন্ডার মেইনস্ট্রিমিং ইন বাংলাদেশ পার্লামেন্ট’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্পিকার এসব কথা বলেন।
আবারও মুলতবি প্রস্তাব দিন: আশরাফ
এদিকে গতকাল এক অনুষ্ঠানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফিরিয়ে আনার দাবিতে বিএনপিকে আবারও সংসদে মুলতবি প্রস্তাব দেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। বিরোধী দলকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, আপনারা গণতন্ত্রের স্বার্থে, দেশের স্বার্থে আবার মুলতবি প্রস্তাব দিন। আগামী নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে সংসদে এসে প্রাণবন্ত আলোচনা করুন। আমরা কথা দিচ্ছি সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে আমরা যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করবো না। রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশনে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অসামপ্রদায়িক বাংলাদেশ গঠনে প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক কর্মীদের ঐক্যের লক্ষ্যে আয়োজিত কনভেনশনে তিনি এসব কথা বলেন। সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেন, আমরা আশা করেছিলাম বিএনপি সংসদের মাধ্যমে জাতির কাছে তাদের বক্তব্য তুলে ধরবে। আমরাও সংসদের মাধ্যমে জাতির কাছে আমাদের বক্তব্য তুলে ধরবো। এটাই রাজনীতির সংস্কৃতি। কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যে বেগম জিয়া সংসদে এসে সে প্রস্তাব তুলে নিলেন। এর মাধ্যমে প্রমাণিত হলো তারা আলোচনা চান না। তারা ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে চান। তিনি বলেন, ৩০ লাখ প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীন দেশে রাজনীতির প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে গণতন্ত্রে বিশ্বাসীদের মধ্যে। যে রাজনীতি প্রতিষ্ঠার জন্য দেশ স্বাধীন করা হয়েছিল আমরা তা বাস্তবায়ন করতে পারি নি। আজকে আওয়ামী লীগের বিকল্প বিএনপি নয়। বিএনপির বাজেট প্রতিক্রিয়ার সমালোচনা করে তিনি বলেন, বাজেট প্রতিক্রিয়ায় মওদুদ সাহেব বাজেট বিশ্লেষণে গেলেন না। তিনি ছোট একটি কথা বললেন, বিগ বিউটিফুল বেলুন। আসলে বিরোধী দল রাজনৈতিক ভাবে দেউলিয়া। তাই তারা সরকারকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করতে চায় না। তারা আশ্রয় নিয়েছে হেফাজত ও জামায়াতের কাছে। সিপিডি’র মতো ইনস্টিটিউটও দেউলিয়া হয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, একটি রাজনৈতিক সরকারের বিরোধী একটি এনজিও হতে পারে না। বুদ্ধিজীবীদের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘কিছু সংখ্যক তথাকথিত বুদ্ধিজীবী টেলিভিশনে টকশোতে আসেন। তুলা উৎপাদন ব্যাহত, অকাল বন্যার কারণ, বাজেট ইত্যাদি সব বিষয়ে তারা পণ্ডিত। পৃথিবীর সকল বিষয় ও ডিসিপ্লিনে তারা পণ্ডিত। এরা তত্ত্বাবধায়ক সরকার চান, নির্বাচন চান না। এরা চান কিছু দিনের জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হতে। কনভেনশন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক পঙ্কজ ভট্টাচার্যের সভাপতিত্বে সভায় আরও বক্তব্য রাখেন সিপিবি সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, জাসদের সাধারণ সম্পাদক শরীফ নূরুল আম্বিয়া, গণতন্ত্রী পার্টির সাধারণ সম্পাদক নুরুর রহমান সেলিম প্রমুখ।
ফাঁদে পা দেয়নি বিএনপি: রফিকুল
নির্র্দলীয় সরকার পুনর্বহালে সংসদে মুলতবি প্রস্তাব নিয়ে সরকারের ফাঁদে পা দেয়নি বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া। বলেছেন, সংসদে আওয়ামী লীগ ও তার জোটের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে। ৩০-৪১ জনের বিরোধী দল মুলতবি প্রস্তাব দিলে তা গ্রহণের কোন সম্ভাবনাই ছিল না। ক্ষমতাসীন দল সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে ওই প্রস্তাবটি ভোটে দিয়ে ‘না’ ‘না’ বলে বাতিল করে দিতো। ওই মুলতবি প্রস্তাবটির মাধ্যমে সরকারি দল নির্দলীয় সরকারের বিষয়টির কবর রচনা করতে চেয়েছিল। বিএনপি সেই ফাঁদে পা দেয়নি। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৩২তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে জাতীয় প্রেস ক্লাবে স্বেচ্ছাসেবক দল আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন। ব্যারিস্টার রফিকুল বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহাল নিয়ে মুুলতবি প্রস্তাব তোলা হলে সরকারদলীয় এমপিদের না ভোটে তা বাতিল হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা ছিল। আর এ কারণেই মুলতবি প্রস্তাবের নোটিশ দিয়েও অধিবেশন শুরুর আগে তা প্রত্যাহার করে নেয়া হয়। তিনি বলেন, বিএনপি বিশ্বাস করে- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দিয়ে নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব হবে না। সরকার যদি সুপ্রিম কোর্টের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতো তাহলে তারা তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা বাতিল করতো না। ক্ষমতা চিরস্থায়ী করার স্বপ্নেই তারা এটা করেছে। কিন্তু বিএনপি এ সরকারের অধীনে কোন নির্বাচনে যাবে না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক সততায় বিশ্বাস নেই। তাই তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিষয়ে আলোচনারও সুযোগ নেই। আয়োজক সংগঠনের সিনিয়র সহ-সভাপতি মনির হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রো-ভিসি আফম ইউসুফ হায়দার, ঢাকা মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব আবদুস সালাম ও স্বেচ্ছাসেবক দলের সহ-সভাপতি গোলাম সরওয়ার বক্তব্য দেন।
আওয়ামী লীগ টোটালি কনফিউজড: বিএনপি
এদিকে সংলাপ নিয়ে আওয়ামী লীগ ‘টোটালি কনফিউজড’ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান। বলেছেন, আওয়ামী লীগ একদিন বলে, সংলাপ সংসদের ভেতরে হবে। আরেকদিন বলে, বাইরে হবে। পরে বলে- আমরা সংলাপে বিশ্বাস করি না। এরকম হাজারো কথা শুনতে পাচ্ছি। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৩২তম শাহাদত বার্ষিকী উপলক্ষে গতকাল দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘জাতীয়তাবাদী মুক্তিযুদ্ধের প্রজন্ম’ আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন। প্রস্তাবিত বাজেট প্রসঙ্গে ড. মঈন খান বলেন, সরকারের মেয়াদ হচ্ছে, ছয় মাস। আর বাজেট দিয়েছে এক বছরের। এ বাজেটের কার্যকারিতা নেই। এটা লেইম ডার্ক (খোঁড়া হাঁস)। তিনি বলেন, কেউ কেউ বিএনপির জন্ম নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তারা বলেন, বিএনপির জন্ম নাকি ক্যান্টনমেন্টে। জন্ম নিয়ে তারাই প্রশ্ন তোলেন, যারা গণতন্ত্র বিশ্বাস করেন না। তারা বিশ্বাস করেন রাজতন্ত্রে। যারা ১০ মিনিটের মধ্যে সংসদে গণতন্ত্র হত্যা করেছে, সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করেছে তারা নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে গেলে প্রার্থী হিসেবে নয়, দল হিসেবেই জামানত বাজেয়াপ্ত হবে। সেনাবাহিনীর বিষয়ে ড. মঈন খান বলেন, সেনাবাহিনী কখনও গণতন্ত্র হরণ করে না। যখন আওয়ামী লীগ বোঝে তাদের পরাজয় সুনিশ্চিত, তখনই আওয়ামী লীগ সেনাবাহিনীকে আমন্ত্রণ করে ক্ষমতায় নিয়ে আসে। সংগঠনের সভাপতি শামা ওবায়েদের সভাপতিত্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি প্রফেসর মনিরুজ্জামান মিয়া, চলচ্চিত্রকার চাষী নজরুল ইসলাম ও ইসমাইল হোসেন বেঙ্গল বক্তব্য দেন।
সরকার ধার করে ঘি খাচ্ছে: মাহবুব
ওদিকে সরকার ‘ধার করে ঘি’ খাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান। বলেছেন, ঘি খেতেই হবে এমন তো নয়। নিজেদের সামর্থ্য অনুযায়ী খাওয়া উচিত, আর দেশের সামর্থ্য অনুযায়ী বাজেট হওয়া উচিত। গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক-সাংস্কৃতিক জোট আয়োজিত ‘সংলাপের অপরিহার্যতা ও আগামী’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন। মাহবুব বলেন, প্রস্তাবিত বাজেট অনেকটাই কল্পিত। অন্তঃসারশূন্য। অর্থমন্ত্রী নিজেও বলেছেন, এটি উচ্চাভিলাষী বাজেট, বাস্তবায়ন করা যায় না। তিনি বলেন, সরকার জানে- এটা তাদের শেষ বাজেট। তাই জনগণকে বিভ্রান্ত করতে ও দলীয় উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতে এমন বাজেট প্রস্তাব করা হয়েছে। মাহবুব বলেন, সরকারের এ নিয়ে চারটি বাজেটেই কালো টাকা সাদা করার বিষয়টি এসেছে। কালো টাকা তো টাকাই, কালো টাকা মানেই দুর্নীতি, মিথ্যা ও অন্যায়। কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দিয়ে সরকার এসবকেই সুযোগ দিচ্ছে। সংগঠনের সমন্বয়কারী হুমায়ুন কবির বেপারির সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় এনডিপির চেয়ারম্যান গোলাম মতুর্জা ও বিএনপির শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক খায়রুল কবির খোকন বক্তব্য দেন।
No comments