হরতাল দিলে কাজ নাই, খাবো কী? by মাহবুব আলম
‘হরতাল থাকলে পণ্য আমদানি কম থাকে। এসময়
পণ্য উঠা-নামানোর কোন কাজ থাকে না। পরিবার পরিজন নিয়ে না খেয়ে-আধ পেটে
থাকতে হয়।’ হরতাল নিয়ে কথাগুলো বলছিলেন ঠেলাগাড়ি চালক আবু বকর ছিদ্দিক।
পাঁচ সদস্যের পরিবারের কর্তা বৃদ্ধ আবু বকর বলেন,‘হরতাল দিলে কাজ নাই, খাবো কী?’
দাবি আদায়ের অন্যতম ‘ভাষা’ হরতালকে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষই এখন আর চাননা। ঠেলাগাড়ি চালক আবু বকরের মত সমাজের সর্বস্তরের লোক সহিংস কর্মসূচির বিপক্ষে।
সমাজের বিভিন্ন শ্রেণির লোকজন বলেন,“দাবি আদায়ের জন্যে হরতাল পালিত হলেও বর্তমানে তা মানুষের সর্বোচ্চ ক্ষতির কারণ হয়ে গেছে। কেননা এদিন রাস্তায় যেমন জীবন ‘হাতে’ নিয়ে বের হতে হয় তেমনি যানবাহনেরও অনেক ক্ষয়ক্ষতিসহ নানা ধরণের সহিংসতা সৃষ্টি হয়।”
সোমবার বন্দরনগরীর বিভিন্ন পয়েণ্টে চাকরিজীবী থেকে শুরু করে ফুটপাতের দোকানী, গাড়িচালক,রিকশাচালকসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ বাংলানিউজের সঙ্গে আলাপকালে হরতাল নিয়ে এসব কথা বলেছেন।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার বহালের দাবিতে কয়েকদিন পরপর হরতাল দিয়ে আসছে দেশের প্রধান বিরোধীদল বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট। মাঝে মাঝে তাদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নানা ইস্যু নিয়ে দেশব্যাপী তাণ্ডব চালাচ্ছে যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত জামায়াত ইসলামী ও ছাত্র শিবির।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুলসহ শীর্ষ নেতাদের মুক্তির দাবিতে ফের মঙ্গলবার থেকে টানা ৩৬ ঘণ্টার সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ডেকেছে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দল।
নগরীর নিউমার্কেট এলাকার ফুটপাতে শার্ট-প্যান্ট বিক্রি করেন মো. ইয়াসিন। তার কাছে হরতাল মানেই পরিবার নিয়ে অর্ধাহারে ও অনাহারে থাকার দিন। কেননা ওই দোকানের ওপর নির্ভর করে চলে তার ছয় সদস্যের সংসার।
তিনি বাংলানিউজকে বলেন,‘হরতাল হলে দোকান খুলতে ভয় হয়। অনেক সময় এ এলাকায় বিভিন্ন গাড়ি ও দোকান পাট ভাংচুর ও আগুন জ্বালিয়ে দেয় হরতালকারীরা। সেদিন দোকান খুলতে পারিনা। আর দোকান না খুললে তো আয়ও নেই।’
চট্গ্রাম রেলস্টেশন এলাকায় সিএনজি অটোরিক্সা চালক মো. মিজানুর রহমান বলেন,‘আমরা সাধারণ মানুষ। রাজনৈতিক দলগুলো জনগনের কথা বলে হরতাল দিলেও ক্ষতি জনগনের (আমাদেরই) বেশি হচ্ছে।’
নগরীর শাহ আমানত মার্কেটের সামনে হরতাল নিয়ে কথা হচ্ছিল টেম্পুচালক রেজা মিয়ার সঙ্গে।
তিনি বলেন,‘হরতালে গাড়ি নিয়ে রাস্তায় বের হতে পারি না। পেটের দায়ে আতঙ্ক নিয়ে বের হলেও মোড়ে মোড়ে ভাংচুর ও আগুন জ্বালিয়ে দেয় হরতালকারীরা।’
রেজার সঙ্গে কথা বলার সময় স্ট্যান্ডে এসে জড়ো হন টেম্পুচালক সফিকুল ইসলাম, রফিক এবং সাইদুর।
তারাও বলেন,‘হরতালে গাড়ি-ভাংচুর ও পুড়ানো হয়। এতে সবার ক্ষতি।’
কাজীরদেউরী মোড়ে কথা হয় চটপটি বিক্রেতা আব্দুর রহমানের সঙ্গে। তিনি বলেন,‘অন্যান্য দিন গড়ে ৫০০-৭০০ টাকা বিক্রি হলেও হরতালের দিন ২শ’ টাকার বেশী হয় না।’
সম্প্রতি হরতালে ককটেল বিস্ফোরণ থেকে শুরু করে সহিংসতার মাত্রা বেড়ে গেছে। হরতালের সমর্থনে আগের দিন থেকে গাড়ি ভাংচুর ও পোড়ানো হয়, যা হরতালের দিনও চলে।
নগরীতে চলাচলকারী ৭ নম্বর রুটের একটি বাসের সহকারী ফারুক হোসেন বলেন,‘হরতালের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে আমাদের চারদিন লাগে।’
তিনি বলেন,‘হরতাল থাকলে মালিক গাড়ি দেয় না। কোনো আয়-রোজগার নেই। এছাড়াও এসময় রাস্তায় ভাংচুর-আগুনে গাড়ি পুড়ানোর ভয় থাকে।’
তার সঙ্গে সুর মিলিয়ে একই রুটের বাসের চালক ফাইজুল ইসলাম বলেন,‘আমরা হরতাল চাই না। দেশের কোন মানুষই হরতাল পছন্দ করে না।’
এদিকে যানবাহনে আগুন ও ভাংচুর সহিংসতায় শুধু চালক-মালিক নয়, অনেক সাধারণ মানুষকেও পোহাতে নানা দুর্ভোগ তেমনি আজীবন বয়ে বেড়াতে হয় এর ক্ষতচিহ্ন।
চট্টগ্রাম ইপিজেডে একটি কারখানার কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম, প্রতিদিনই কালুরঘাট থেকে তাকে সিইপিজেডে যেতে হয়।
তিনি বলেন,‘ প্রতিদিনই বাসে করে অফিসে যাই।সর্বোচ্চ খরচ হয় ২৫টাকা। কিন্তু হরতালের দিন দু’শ টাকা দিয়েও আসা যাওয়া হয় না।’
রফিকুল বলেন, ‘ওই দিন বাসে যেতে ভয় হয়। তাই বাধ্য হয়ে রিকশায় যেতে হয়।’
হরতাল তাদের মত নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য কষ্ট ও দুর্দশা বয়ে আনে বলে জানান তিনি।
হরতালে খুচরা কাঁচাবাজারে যেমন প্রভাব পড়ে তেমনি পাইকারী বাজারের চিত্রও একই।
নগরীর রিয়াজুদ্দিন বাজারে কাঁচামালের আড়ৎদার গোলাম মোস্তফা সওদাগর বলেন,‘হরতাল ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে ট্রাক ভাড়া বেড়ে যায়। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে মালামাল আনতে খরচ দ্বিগুণ বৃদ্ধি পায়।’
তিনি জানান, বেচা কেনা কম হলেও কর্মচারীর বেতনসহ আনুসঙ্গিক খরচ ঠিকই চালাতে হয়। এতে সার্বিকভাবে ব্যবসায় লোকসান বাড়ছে।
দাবি আদায়ের অন্যতম ‘ভাষা’ হরতালকে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষই এখন আর চাননা। ঠেলাগাড়ি চালক আবু বকরের মত সমাজের সর্বস্তরের লোক সহিংস কর্মসূচির বিপক্ষে।
সমাজের বিভিন্ন শ্রেণির লোকজন বলেন,“দাবি আদায়ের জন্যে হরতাল পালিত হলেও বর্তমানে তা মানুষের সর্বোচ্চ ক্ষতির কারণ হয়ে গেছে। কেননা এদিন রাস্তায় যেমন জীবন ‘হাতে’ নিয়ে বের হতে হয় তেমনি যানবাহনেরও অনেক ক্ষয়ক্ষতিসহ নানা ধরণের সহিংসতা সৃষ্টি হয়।”
সোমবার বন্দরনগরীর বিভিন্ন পয়েণ্টে চাকরিজীবী থেকে শুরু করে ফুটপাতের দোকানী, গাড়িচালক,রিকশাচালকসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ বাংলানিউজের সঙ্গে আলাপকালে হরতাল নিয়ে এসব কথা বলেছেন।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার বহালের দাবিতে কয়েকদিন পরপর হরতাল দিয়ে আসছে দেশের প্রধান বিরোধীদল বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট। মাঝে মাঝে তাদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নানা ইস্যু নিয়ে দেশব্যাপী তাণ্ডব চালাচ্ছে যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত জামায়াত ইসলামী ও ছাত্র শিবির।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুলসহ শীর্ষ নেতাদের মুক্তির দাবিতে ফের মঙ্গলবার থেকে টানা ৩৬ ঘণ্টার সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ডেকেছে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দল।
নগরীর নিউমার্কেট এলাকার ফুটপাতে শার্ট-প্যান্ট বিক্রি করেন মো. ইয়াসিন। তার কাছে হরতাল মানেই পরিবার নিয়ে অর্ধাহারে ও অনাহারে থাকার দিন। কেননা ওই দোকানের ওপর নির্ভর করে চলে তার ছয় সদস্যের সংসার।
তিনি বাংলানিউজকে বলেন,‘হরতাল হলে দোকান খুলতে ভয় হয়। অনেক সময় এ এলাকায় বিভিন্ন গাড়ি ও দোকান পাট ভাংচুর ও আগুন জ্বালিয়ে দেয় হরতালকারীরা। সেদিন দোকান খুলতে পারিনা। আর দোকান না খুললে তো আয়ও নেই।’
চট্গ্রাম রেলস্টেশন এলাকায় সিএনজি অটোরিক্সা চালক মো. মিজানুর রহমান বলেন,‘আমরা সাধারণ মানুষ। রাজনৈতিক দলগুলো জনগনের কথা বলে হরতাল দিলেও ক্ষতি জনগনের (আমাদেরই) বেশি হচ্ছে।’
নগরীর শাহ আমানত মার্কেটের সামনে হরতাল নিয়ে কথা হচ্ছিল টেম্পুচালক রেজা মিয়ার সঙ্গে।
তিনি বলেন,‘হরতালে গাড়ি নিয়ে রাস্তায় বের হতে পারি না। পেটের দায়ে আতঙ্ক নিয়ে বের হলেও মোড়ে মোড়ে ভাংচুর ও আগুন জ্বালিয়ে দেয় হরতালকারীরা।’
রেজার সঙ্গে কথা বলার সময় স্ট্যান্ডে এসে জড়ো হন টেম্পুচালক সফিকুল ইসলাম, রফিক এবং সাইদুর।
তারাও বলেন,‘হরতালে গাড়ি-ভাংচুর ও পুড়ানো হয়। এতে সবার ক্ষতি।’
কাজীরদেউরী মোড়ে কথা হয় চটপটি বিক্রেতা আব্দুর রহমানের সঙ্গে। তিনি বলেন,‘অন্যান্য দিন গড়ে ৫০০-৭০০ টাকা বিক্রি হলেও হরতালের দিন ২শ’ টাকার বেশী হয় না।’
সম্প্রতি হরতালে ককটেল বিস্ফোরণ থেকে শুরু করে সহিংসতার মাত্রা বেড়ে গেছে। হরতালের সমর্থনে আগের দিন থেকে গাড়ি ভাংচুর ও পোড়ানো হয়, যা হরতালের দিনও চলে।
নগরীতে চলাচলকারী ৭ নম্বর রুটের একটি বাসের সহকারী ফারুক হোসেন বলেন,‘হরতালের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে আমাদের চারদিন লাগে।’
তিনি বলেন,‘হরতাল থাকলে মালিক গাড়ি দেয় না। কোনো আয়-রোজগার নেই। এছাড়াও এসময় রাস্তায় ভাংচুর-আগুনে গাড়ি পুড়ানোর ভয় থাকে।’
তার সঙ্গে সুর মিলিয়ে একই রুটের বাসের চালক ফাইজুল ইসলাম বলেন,‘আমরা হরতাল চাই না। দেশের কোন মানুষই হরতাল পছন্দ করে না।’
এদিকে যানবাহনে আগুন ও ভাংচুর সহিংসতায় শুধু চালক-মালিক নয়, অনেক সাধারণ মানুষকেও পোহাতে নানা দুর্ভোগ তেমনি আজীবন বয়ে বেড়াতে হয় এর ক্ষতচিহ্ন।
চট্টগ্রাম ইপিজেডে একটি কারখানার কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম, প্রতিদিনই কালুরঘাট থেকে তাকে সিইপিজেডে যেতে হয়।
তিনি বলেন,‘ প্রতিদিনই বাসে করে অফিসে যাই।সর্বোচ্চ খরচ হয় ২৫টাকা। কিন্তু হরতালের দিন দু’শ টাকা দিয়েও আসা যাওয়া হয় না।’
রফিকুল বলেন, ‘ওই দিন বাসে যেতে ভয় হয়। তাই বাধ্য হয়ে রিকশায় যেতে হয়।’
হরতাল তাদের মত নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য কষ্ট ও দুর্দশা বয়ে আনে বলে জানান তিনি।
হরতালে খুচরা কাঁচাবাজারে যেমন প্রভাব পড়ে তেমনি পাইকারী বাজারের চিত্রও একই।
নগরীর রিয়াজুদ্দিন বাজারে কাঁচামালের আড়ৎদার গোলাম মোস্তফা সওদাগর বলেন,‘হরতাল ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে ট্রাক ভাড়া বেড়ে যায়। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে মালামাল আনতে খরচ দ্বিগুণ বৃদ্ধি পায়।’
তিনি জানান, বেচা কেনা কম হলেও কর্মচারীর বেতনসহ আনুসঙ্গিক খরচ ঠিকই চালাতে হয়। এতে সার্বিকভাবে ব্যবসায় লোকসান বাড়ছে।
No comments