অভিমতঃ কক্সবাজার টেকনাফ ও সেন্টমার্টিনকে বিশ্বমানের পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে দেখতে চাই by মোঃ নূরুল আমিন
কক্সবাজার, টেকনাফ ও সেন্টমার্টিনকে বিশ্বমানের পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে দেখতে চাই। আশা করি, একদিন এসব এলাকা বিশ্বের সেরা পর্যটন নগরীগুলোকে ছাড়িয়ে যাবে। কোটি কোটি পর্যটক এ দেশে আসবে। বাংলাদেশের ভাগ্য বদলে দেবে ওই পর্যটন এলাকা।
পর্যটন এলাকার আয় দিয়েই দেশের অনেক উন্নয়ন করা সম্ভব হবে। কক্সবাজারের পর্যটন এলাকায় দেশী বিনেয়োগের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মানের হোটেল, শপিং মল ও অন্যান্য ক্লাবসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে হলে বিদেশি বিনিয়োগের প্রয়োজন আছে। কক্সবাজার, টেকনাফ সেন্টমার্টিনকে আধুনিক পর্যটন নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে হলে বিদেশি বিনেয়োগকারীদের উত্সাহিত করতে হবে। সরকার ৫০টি দেশের ৫০টি প্রতিষ্ঠানকে সেখানে বিনিয়োগের সুযোগ দিলে তাদের টানে ৫০টি দেশের পর্যটকরা এখানে আসবে। প্রয়োজনে ওইসব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে প্রবাসী বাংলাদেশীরা যৌথ বিনিয়োগে করতে পারবে। এছাড়া আমাদের যে ৬৫ লাখ লোক বিদেশে বাস করে তাদেরও এ ব্যাপারে সচেতন করতে হবে, যাতে করে তারা বিদেশ থেকে বিভিন্নভাবে পর্যটকদের উত্সাহিত করতে পারেন। এছাড়া স্থানীয় বিনিয়োগকারীদের জন্যও সরকারকে বিশেষ সুযোগ সৃষ্টি করে দিতে হবে, যাতে করে এসব এলাকায় বিনিয়োগে তারা উত্সাহিত হন। কক্সবাজার, টেকনাফ, সেন্টমার্টিন এলাকায় পর্যটন শিল্পের অপার সম্ভাবনা থাকায় সরকার দীর্ঘ মেয়াদে জমি লিজ দিলে দেশি বিনিয়োগকারীরা আরও স্বল্প খরচে সেখানে অনেক স্থাপনা করতে পারবে।
দিন যতই যাচ্ছে কক্সবাজারে জমির দাম ততই বাড়ছে। আগামী ২০২৫ সালে কক্সবাজারে জমির দাম আমার মনে হয় টোকিও নগরীর চেয়েও বেশি হবে। দেশি বিনিয়োগকারীদের দীর্ঘময়াদে জমি লিজ দেয়া হলে সেখানে তারা নতুন নতুন আধুনিক প্রকল্প হাতে নিতে ও বাস্তবায়ন করতে পারবে। এছাড়া জমি তো সরকার ফেলেই রেখেছে, ওই সব জমি ফেলে না রেখে তাতে স্থাপনা তৈরি হলে ভালো হবে। উঁচু ভবন তৈরি হলে ওইসব ভবন পাহাড়ের মতো সমুদ্র উপকূলীয় এলাকাকেও রক্ষা করবে। ভাঙন রোধ করবে। কারণ ওইসব ভবনের নির্মাণশৈলীটা তেমনভাবেই করা হবে।
দেশের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র কক্সবাজারে দিনে দিনে বেড়ে চলেছে পর্যটকদের সংখ্যা। আর তাদের চাহিদাকে সামনে রেখে সেখানে গড়ে উঠছে বিভিন্ন হোটেল, মোটেল, স্যুট এবং শপিং সেন্টার। এছাড়াও নতুন সংযোজন ঘটেছে স্টুডিও টাইপ সার্ভিস এপার্টমেন্ট ও ফ্ল্যাটের। বিভিন্ন রিয়েল স্টেট কোম্পানি নানা সুবিধা দিয়ে সেখানে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহী করে তোলার চেষ্টা করছে। দিচ্ছে হোটেল ও শপিং মলের একটি অংশের মালিক হওয়ার সুযোগ। আর এসব সুবিধা শুরু হয়েছে বেশ কিছুদিন ধরেই। দিন যতই যাচ্ছে কক্সবাজারের সি-বিচের কাছাকাছি গড়ে উঠছে নানা ধরনের হোটেল-মোটেল। এখন সেখানে পাঁচ তারকা ও তিন তারকা হোটেলও গড়ে উঠছে। পাশাপাশি শপিং মল। তবে সেখানে যেভাবে ওইসব ইমারত গড়ে উঠছে তা আরও পরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠা প্রয়োজন। তা না হলে সেখানেও এক সময়ে পর্যটকদের নানা রকমের ভোগান্তি পোহাতে হবে। কারণ রাস্তা যতটুকু চওড়া হওয়া দরকার তা হচ্ছে না। হাইড্রোলিক হর্ণের গাড়ি চলছে দিন রাত। এতে পর্যটকদের ঘুমে ব্যাঘাত ঘটছে। পরিবেশকে আকর্ষণীয় করার উদ্যোগ নিলেও তা এখনও পুরোপুরি হয়নি। সব জায়গা থেকে জোয়ার-ভাটার সিগন্যালও দেখা যায় না ঠিকভাবে। এগুলোরও প্রয়োজন। সবাই ব্যবসার দিকে আগ্রহী হলেও পর্যটকদের ওইসব ছোটখাটো বিষয়গুলোকে গভীরভাবে চিন্তা করতে হবে। সেভাবে পরিকল্পনা নিতে হবে।
দেশের অন্যতম পর্যটন এলাকা কক্সবাজার টেকনাফ সেন্টমার্টিনে এই প্রথমবারের মতো দীর্ঘমেয়াদে জমি লিজ দিতে যাচ্ছে সরকার। এ জন্য সংরক্ষিত পর্যটন নীতিমালায় একটি বিধান রাখা হয়েছে। এতদিন কক্সবাজার, টেকনাফ, সেন্টমার্টিনে কাউকেই সরকার কোনো জমি লিজ না দেয়ায় সেখানে বিনিয়োগকারীদের অনেকের আগ্রহ থাকলেও তেমনভাবে গড়ে ওঠেনি আধুনিক পর্যটন নগরী। সেখানে নেই অত্যাধুনিক হোটেল, মোটেল, রেস্টুরেন্ট, পার্ক, ক্লাব, শপিং মলসহ বিভিন্ন ধরনের বিনোদন কেন্দ্র। কক্সবাজারে সমপ্রতি কিছু হোটেল হলেও সেন্টমার্টিন আর টেকনাফে তা নেই। প্রতিবছর ওইসব এলাকায় বিপুলসংখ্যক দেশি-বিদেশি পর্যটক যাচ্ছেন, তবে তাদের জন্য নেই পর্যাপ্ত কোনো সুযোগ-সুবিধা। নেই কোনো বিনোদনের ব্যবস্থা। প্রকৃতির দেয়া যে অপারদান দেখতে মানুষ বার বার সেখানে ছুটে যায়। তবে বিদেশি পর্যটককে আকৃষ্ট করার জন্য আরও যেসব স্থাপনা প্রয়োজন তা গড়ে উঠেনি। এ বাস্তবতা উপলব্ধি করে সরকার বিশ্বমানের সুযোগ-সুবিধা সংবলিত পর্যটন নগরী হিসেবে গড়ে তোলার জন্য বিশেষ করে এক্সক্লুসিভ জোন হিসেবে বিভিন্ন এলাকাকে গড়ে তোলার জন্য মহাপরিকল্পনা হাতে নিয়েছে।
কক্সবাজারে এখন অফ সিজনেও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক পর্যটক যায়। পিক সিজনে সি-বিচ এলাকা থাকে কানায় কানায় পূর্ণ। ওই সময়ে উত্সব যেন লেগেই থাকে। তখন পুরো কক্সবাজার পর্যটকদের ভিড়ে ঠাসা থাকে। হোটেল-মোটেলগুলোতে রুম খালি পাওয়া কঠিন। এসব চাহিদা সামনে রেখে সেখানে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন হোটেল-মোটেল অ্যাপার্টমেন্ট আর স্যুট নির্মিত হচ্ছে। শতাধিক প্রকল্প সেখানে বাস্তবায়িত হচ্ছে। পাইপ লাইনেও রয়েছে সমসংখ্যক প্রকল্প। আগে স্থানীয় ও চট্টগ্রামের রিয়েল স্টেট ব্যবসায়ীরা সেখানে হোটেল-মোটেল নির্মাণে তেমন আগ্রহী না হলেও এখন আগ্রহী হচ্ছেন। তাদের এগিয়ে নিয়ে এসেছে বিভিন্ন হাউসিং কোম্পানিগুলো।
কক্সবাজারকে একটি ভালো পর্যটন নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে হলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সক্রিয় উদ্যোগ প্রয়োজন। আমি মনে করি, বাংলাদেশে বিদেশি পর্যটকদের আকৃষ্ট করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের জন্য কক্সবাজার থেকে টেকনাফ পর্যন্ত সমুদ্র এলাকাকে আন্তর্জাতিক মানের পর্যটন নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।
চট্টগ্রামের সঙ্গে রাজধানী ঢাকার যোগাযোগের যে মহাসড়কটি রয়েছে সেটিকে ছয় লেনের রাস্তা করা প্রয়োজন। কক্সবাজার পর্যন্ত ট্রেন যোগাযোগ স্থাপন করতে হবে। কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হিসেবে গড়ে তুললে সেখানে অনেক পর্যটক যাবে।
আমরা যারা আবাসন শিল্পের সঙ্গে জড়িত রয়েছি তারা প্রধানমন্ত্রীর কাছে তেমন কিছুই চাই না। আমরা চাই সরকার যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করে দিক, আমরা পর্যটন নগরীকে সাজাব। যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হলে আমাদের সঙ্গে বিদেশী কোম্পানিগুলোও কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে আগ্রহী হবে। ফলে দেশে লাখ লাখ বেকারের কর্মসংস্থান হবে। তখন শিক্ষিত যুব সমাজ বিদেশে গিয়ে প্রতারণার শিকার হবে না। দেশে কাজ করে তারা পরিবারের উন্নয়ন ঘটাতে পারবেন। আমি বিশ্বাস করি, প্রধানমন্ত্রী যদি পর্যটন নগরীর আমূল পরিবর্তন এবং বিশ্বমানের উন্নয়ন করতে পারেন তাহলে বৈদেশিক মুদ্রায় এদেশ রেমিটেন্সে আরও বেশি হবে।
প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করেছি আপনি অন্তত একবার গাড়িতে করে কক্সবাজার থেকে টেকনাফ, সেন্টমার্টিন ঘুরে আসুন। মন্ত্রিপরিষদের সদস্যদের নিয়ে একদিনের একটি অনুষ্ঠানসূিচ করুন। তারাও দেখুক। এরপর আপনারা বসে সিদ্ধান্ত নিন এ খাতে কী করবেন। কীভাবে পর্যটন নগরীকে সাজানো হলে পর্যটকরা মাসের পর মাস এখানে এসে থাকবে সে ব্যবস্থা করার সুযোগ আমাদের দিন। আমরা সব করব। আপনি কেবল প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দিন।
প্রধানমন্ত্রী চাইলেই পারবেন দেশের পর্যটন নগরী কক্সবাজার, টেকনাফ, সেন্টমার্টিন, তেঁতুলিয়া, কুয়াকাটা, সুন্দরবন, বান্দরবান, সিলেটের জাফলং, নোয়াখালীর নিঝুম দ্বীপকে আধুনিক পর্যটন নগরী হিসেবে গড়ে তোলার সব ব্যবস্থা করে দিতে। পর্যটন এলাকাগুলোর উন্নয়ন সরকারের একার পক্ষে সম্ভব না হলে বিদেশিদের সহায়তার মাধ্যমে হতে পারে। দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের জন্য সাহায্য নিতে হবে। আগামী এক বছরের মধ্যে ঢাকা-কক্সবাজার মহাসড়ক ছয় লেন করে দিলে লাখ লাখ মানুষ ছুটি বা অবসরের দিনে ঢাকা থেকে কক্সবাজার যাবেন, আবার ফিরে এসে অফিস করবেন।
দেশের সব শিল্প মালিক ও বিনিয়োগকারীকে আহ্বান জানাই আপনারা পর্যটন এলাকায় বিনিয়োগ করে দেশের উন্নয়নে এগিয়ে আসুন। তবেই দেশপ্রেমের পরিচয় ঘটবে। বিশ্বের মানচিত্রে আমরা আর দরিদ্র থাকতে চাই না। মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে চাই। আমরা যখন পর্যটন নগরীর আয় দিয়ে অর্থনৈতিকভাবে স্বয়ংসম্পূর্ণ হবো তখন বিশ্ববাসীকে বলব আমরাও পারি।
লেখক : গ্রিন ডেল্টা হাউজিংয়ের চেয়ারম্যান
দিন যতই যাচ্ছে কক্সবাজারে জমির দাম ততই বাড়ছে। আগামী ২০২৫ সালে কক্সবাজারে জমির দাম আমার মনে হয় টোকিও নগরীর চেয়েও বেশি হবে। দেশি বিনিয়োগকারীদের দীর্ঘময়াদে জমি লিজ দেয়া হলে সেখানে তারা নতুন নতুন আধুনিক প্রকল্প হাতে নিতে ও বাস্তবায়ন করতে পারবে। এছাড়া জমি তো সরকার ফেলেই রেখেছে, ওই সব জমি ফেলে না রেখে তাতে স্থাপনা তৈরি হলে ভালো হবে। উঁচু ভবন তৈরি হলে ওইসব ভবন পাহাড়ের মতো সমুদ্র উপকূলীয় এলাকাকেও রক্ষা করবে। ভাঙন রোধ করবে। কারণ ওইসব ভবনের নির্মাণশৈলীটা তেমনভাবেই করা হবে।
দেশের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র কক্সবাজারে দিনে দিনে বেড়ে চলেছে পর্যটকদের সংখ্যা। আর তাদের চাহিদাকে সামনে রেখে সেখানে গড়ে উঠছে বিভিন্ন হোটেল, মোটেল, স্যুট এবং শপিং সেন্টার। এছাড়াও নতুন সংযোজন ঘটেছে স্টুডিও টাইপ সার্ভিস এপার্টমেন্ট ও ফ্ল্যাটের। বিভিন্ন রিয়েল স্টেট কোম্পানি নানা সুবিধা দিয়ে সেখানে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহী করে তোলার চেষ্টা করছে। দিচ্ছে হোটেল ও শপিং মলের একটি অংশের মালিক হওয়ার সুযোগ। আর এসব সুবিধা শুরু হয়েছে বেশ কিছুদিন ধরেই। দিন যতই যাচ্ছে কক্সবাজারের সি-বিচের কাছাকাছি গড়ে উঠছে নানা ধরনের হোটেল-মোটেল। এখন সেখানে পাঁচ তারকা ও তিন তারকা হোটেলও গড়ে উঠছে। পাশাপাশি শপিং মল। তবে সেখানে যেভাবে ওইসব ইমারত গড়ে উঠছে তা আরও পরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠা প্রয়োজন। তা না হলে সেখানেও এক সময়ে পর্যটকদের নানা রকমের ভোগান্তি পোহাতে হবে। কারণ রাস্তা যতটুকু চওড়া হওয়া দরকার তা হচ্ছে না। হাইড্রোলিক হর্ণের গাড়ি চলছে দিন রাত। এতে পর্যটকদের ঘুমে ব্যাঘাত ঘটছে। পরিবেশকে আকর্ষণীয় করার উদ্যোগ নিলেও তা এখনও পুরোপুরি হয়নি। সব জায়গা থেকে জোয়ার-ভাটার সিগন্যালও দেখা যায় না ঠিকভাবে। এগুলোরও প্রয়োজন। সবাই ব্যবসার দিকে আগ্রহী হলেও পর্যটকদের ওইসব ছোটখাটো বিষয়গুলোকে গভীরভাবে চিন্তা করতে হবে। সেভাবে পরিকল্পনা নিতে হবে।
দেশের অন্যতম পর্যটন এলাকা কক্সবাজার টেকনাফ সেন্টমার্টিনে এই প্রথমবারের মতো দীর্ঘমেয়াদে জমি লিজ দিতে যাচ্ছে সরকার। এ জন্য সংরক্ষিত পর্যটন নীতিমালায় একটি বিধান রাখা হয়েছে। এতদিন কক্সবাজার, টেকনাফ, সেন্টমার্টিনে কাউকেই সরকার কোনো জমি লিজ না দেয়ায় সেখানে বিনিয়োগকারীদের অনেকের আগ্রহ থাকলেও তেমনভাবে গড়ে ওঠেনি আধুনিক পর্যটন নগরী। সেখানে নেই অত্যাধুনিক হোটেল, মোটেল, রেস্টুরেন্ট, পার্ক, ক্লাব, শপিং মলসহ বিভিন্ন ধরনের বিনোদন কেন্দ্র। কক্সবাজারে সমপ্রতি কিছু হোটেল হলেও সেন্টমার্টিন আর টেকনাফে তা নেই। প্রতিবছর ওইসব এলাকায় বিপুলসংখ্যক দেশি-বিদেশি পর্যটক যাচ্ছেন, তবে তাদের জন্য নেই পর্যাপ্ত কোনো সুযোগ-সুবিধা। নেই কোনো বিনোদনের ব্যবস্থা। প্রকৃতির দেয়া যে অপারদান দেখতে মানুষ বার বার সেখানে ছুটে যায়। তবে বিদেশি পর্যটককে আকৃষ্ট করার জন্য আরও যেসব স্থাপনা প্রয়োজন তা গড়ে উঠেনি। এ বাস্তবতা উপলব্ধি করে সরকার বিশ্বমানের সুযোগ-সুবিধা সংবলিত পর্যটন নগরী হিসেবে গড়ে তোলার জন্য বিশেষ করে এক্সক্লুসিভ জোন হিসেবে বিভিন্ন এলাকাকে গড়ে তোলার জন্য মহাপরিকল্পনা হাতে নিয়েছে।
কক্সবাজারে এখন অফ সিজনেও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক পর্যটক যায়। পিক সিজনে সি-বিচ এলাকা থাকে কানায় কানায় পূর্ণ। ওই সময়ে উত্সব যেন লেগেই থাকে। তখন পুরো কক্সবাজার পর্যটকদের ভিড়ে ঠাসা থাকে। হোটেল-মোটেলগুলোতে রুম খালি পাওয়া কঠিন। এসব চাহিদা সামনে রেখে সেখানে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন হোটেল-মোটেল অ্যাপার্টমেন্ট আর স্যুট নির্মিত হচ্ছে। শতাধিক প্রকল্প সেখানে বাস্তবায়িত হচ্ছে। পাইপ লাইনেও রয়েছে সমসংখ্যক প্রকল্প। আগে স্থানীয় ও চট্টগ্রামের রিয়েল স্টেট ব্যবসায়ীরা সেখানে হোটেল-মোটেল নির্মাণে তেমন আগ্রহী না হলেও এখন আগ্রহী হচ্ছেন। তাদের এগিয়ে নিয়ে এসেছে বিভিন্ন হাউসিং কোম্পানিগুলো।
কক্সবাজারকে একটি ভালো পর্যটন নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে হলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সক্রিয় উদ্যোগ প্রয়োজন। আমি মনে করি, বাংলাদেশে বিদেশি পর্যটকদের আকৃষ্ট করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের জন্য কক্সবাজার থেকে টেকনাফ পর্যন্ত সমুদ্র এলাকাকে আন্তর্জাতিক মানের পর্যটন নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।
চট্টগ্রামের সঙ্গে রাজধানী ঢাকার যোগাযোগের যে মহাসড়কটি রয়েছে সেটিকে ছয় লেনের রাস্তা করা প্রয়োজন। কক্সবাজার পর্যন্ত ট্রেন যোগাযোগ স্থাপন করতে হবে। কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হিসেবে গড়ে তুললে সেখানে অনেক পর্যটক যাবে।
আমরা যারা আবাসন শিল্পের সঙ্গে জড়িত রয়েছি তারা প্রধানমন্ত্রীর কাছে তেমন কিছুই চাই না। আমরা চাই সরকার যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করে দিক, আমরা পর্যটন নগরীকে সাজাব। যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হলে আমাদের সঙ্গে বিদেশী কোম্পানিগুলোও কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে আগ্রহী হবে। ফলে দেশে লাখ লাখ বেকারের কর্মসংস্থান হবে। তখন শিক্ষিত যুব সমাজ বিদেশে গিয়ে প্রতারণার শিকার হবে না। দেশে কাজ করে তারা পরিবারের উন্নয়ন ঘটাতে পারবেন। আমি বিশ্বাস করি, প্রধানমন্ত্রী যদি পর্যটন নগরীর আমূল পরিবর্তন এবং বিশ্বমানের উন্নয়ন করতে পারেন তাহলে বৈদেশিক মুদ্রায় এদেশ রেমিটেন্সে আরও বেশি হবে।
প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করেছি আপনি অন্তত একবার গাড়িতে করে কক্সবাজার থেকে টেকনাফ, সেন্টমার্টিন ঘুরে আসুন। মন্ত্রিপরিষদের সদস্যদের নিয়ে একদিনের একটি অনুষ্ঠানসূিচ করুন। তারাও দেখুক। এরপর আপনারা বসে সিদ্ধান্ত নিন এ খাতে কী করবেন। কীভাবে পর্যটন নগরীকে সাজানো হলে পর্যটকরা মাসের পর মাস এখানে এসে থাকবে সে ব্যবস্থা করার সুযোগ আমাদের দিন। আমরা সব করব। আপনি কেবল প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দিন।
প্রধানমন্ত্রী চাইলেই পারবেন দেশের পর্যটন নগরী কক্সবাজার, টেকনাফ, সেন্টমার্টিন, তেঁতুলিয়া, কুয়াকাটা, সুন্দরবন, বান্দরবান, সিলেটের জাফলং, নোয়াখালীর নিঝুম দ্বীপকে আধুনিক পর্যটন নগরী হিসেবে গড়ে তোলার সব ব্যবস্থা করে দিতে। পর্যটন এলাকাগুলোর উন্নয়ন সরকারের একার পক্ষে সম্ভব না হলে বিদেশিদের সহায়তার মাধ্যমে হতে পারে। দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের জন্য সাহায্য নিতে হবে। আগামী এক বছরের মধ্যে ঢাকা-কক্সবাজার মহাসড়ক ছয় লেন করে দিলে লাখ লাখ মানুষ ছুটি বা অবসরের দিনে ঢাকা থেকে কক্সবাজার যাবেন, আবার ফিরে এসে অফিস করবেন।
দেশের সব শিল্প মালিক ও বিনিয়োগকারীকে আহ্বান জানাই আপনারা পর্যটন এলাকায় বিনিয়োগ করে দেশের উন্নয়নে এগিয়ে আসুন। তবেই দেশপ্রেমের পরিচয় ঘটবে। বিশ্বের মানচিত্রে আমরা আর দরিদ্র থাকতে চাই না। মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে চাই। আমরা যখন পর্যটন নগরীর আয় দিয়ে অর্থনৈতিকভাবে স্বয়ংসম্পূর্ণ হবো তখন বিশ্ববাসীকে বলব আমরাও পারি।
লেখক : গ্রিন ডেল্টা হাউজিংয়ের চেয়ারম্যান
No comments