ঢাবি ক্যাম্পাস-ছাত্র সংগঠনের সহাবস্থানই কাম্য
ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটি গঠনের পর বৃহস্পতিবার সমকালে 'প্রকৃত ছাত্রদেরই নেতৃত্বে আসা উচিত' শিরোনামে সম্পাদকীয়তে লেখা হয়, 'ছাত্রলীগ ও ছাত্রদল দেশের মূল রাজনীতির ক্ষেত্রেও যথেষ্ট প্রভাবশালী ভূমিকা রাখে। যেহেতু ছাত্রদের সংগঠন, সঙ্গত কারণেই সেখানে প্রকৃত ছাত্ররা নেতৃত্ব দেবেন_ সেটাই কাঙ্ক্ষিত।'
এটা দুর্ভাগ্যজনক যে, ছাত্রদলের জাতীয় ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখাগুলোর নতুন নেতৃত্ব মনোনয়ন প্রদানকালে তাদের 'অভিভাবক' রাজনৈতিক দল বিএনপির নেতৃত্ব এ বিষয়টি বিবেচনায় রাখেনি। তাই বলে তাদের ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না_ ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনের এ মনোভাব গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। শুক্রবার সমকালে 'ছাত্রদল ঢাবি ক্যাম্পাসে ঢুকতে চায়, প্রতিহত করবে ছাত্রলীগ' শিরোনামের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, 'ক্যাম্পাসে ছাত্রদল এলে সংঘর্ষের আশঙ্কা করছেন অনেকে।' বিএনপি ক্ষমতায় থাকার সময় ছাত্রদল নেতৃত্ব একইভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রধান প্রতিপক্ষ ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের এ অধিকার অস্বীকার করেছিল। দেশের ছাত্র রাজনীতির ঐতিহ্যের সঙ্গে এ মনোভাব একেবারেই বেমানান। দেশবাসী ও শিক্ষার্থীরা দেখেছে, ছাত্র সংগঠনগুলোর নেতৃত্ব প্রতিদিন মধুর ক্যান্টিন কিংবা এ ধরনের স্থানে পাশাপাশি টেবিলে বসে গল্প করছে। কখনও কখনও তর্ক-বিতর্ক হয়েছে। মতবিরোধ থেকে সংঘাতও ঘটেছে। কিন্তু তা স্থায়ী বৈরিতার রূপ নেয়নি। অথচ দুই যুগের সংসদীয় গণতান্ত্রিক শাসনামলে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠন প্রধান প্রতিপক্ষকে সহ্য করতে পারছে না। এর দায়দায়িত্ব কেবল ছাত্র সংগঠনের নয়; তাদের 'অভিভাবক' রাজনৈতিক দলকেও নিতে হবে। শিক্ষকদের কারও কারও ভূমিকাও এ ক্ষেত্রে সমীচীন বলে মনে হয় না। তারা ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীদের মধ্যে সমঝোতা স্থাপনে যত না সচেষ্ট, তার চেয়ে বেশি তৎপর হয়ে ওঠেন নিজ নিজ দলের সক্রিয় কর্মীর মতো। শিক্ষাঙ্গনে পড়াশোনার যথাযথ পরিবেশ বজায় রাখতে হলে এ অনাকাঙ্ক্ষিত ধারায় ছেদ টানতেই হবে।
অছাত্রদের নিয়ে ছাত্র সংগঠনের নেতৃত্ব গঠনকে আমরা সমর্থন করি না। সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের মতামতও অভিন্ন বলেই আমরা জানি। অছাত্ররা ক্যাম্পাসে গিয়ে অশান্তি সৃষ্টি করলে সেটা মেনে নেওয়ার প্রশ্নই আসে না। কিন্তু তারা পড়াশোনার পরিবেশ নষ্ট করছে কি-না সেটা দেখার ভার ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনের ওপর বর্তায় না। কর্তৃপক্ষকেই এ দায়িত্ব নিতে হবে। তাদের নিরপেক্ষ থাকাও আবশ্যক। এ ক্ষেত্রে শাসক দলের সংগঠনের প্রতি আনুকূল্য এবং প্রতিপক্ষের প্রতি তারা বিরাগ প্রদর্শন করলে সমস্যা বাড়ে, যা চূড়ান্ত বিচারে শিক্ষাঙ্গনকেও অশান্ত করে তোলে। 'চলি্লশোর্ধ্ব বিবাহিত, একাধিক সন্তানের জনক এবং হত্যা মামলাসহ অনেক মামলার আসামিরা' সুষ্ঠু ধারার ছাত্র আন্দোলন গড়ে তোলায় কার্যকর ভূমিকা রাখবেন_ এ প্রত্যাশা মোটেই যথাযথ হবে না। কিন্তু তাদের ক্যাম্পাসে প্রবেশ প্রতিহত করতে গিয়ে নতুন অশান্তি সৃষ্টি কোনোভাবেই কাম্য নয়। এর দায় কিন্তু চূড়ান্ত বিচারে সরকার এবং ক্ষমতাসীন দলের ওপরেই বর্তাবে। প্রতিপক্ষকে ক্যাম্পাস থেকে জোর করে বিতাড়ন করলেই যে নিজেদের পক্ষে ছাত্রছাত্রীদের সমর্থন বাড়বে_ তার নিশ্চয়তাও কিন্তু নেই। এ ধরনের নিরঙ্কুশ কর্তৃত্ব নানা ধরনের স্বেচ্ছাচারিতা ডেকে আনে, যা কার্যত সংগঠনকে সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছে আরও অপ্রিয় করে তোলে। অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বর্তমানে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনের কিছুসংখ্যক নেতাকর্মীর বদনামের মূলে এই
অবাঞ্ছিত আচরণই।
No comments