বনের বাইরের বন্যপ্রাণী-প্রাণবৈচিত্র্য রক্ষার উপায় কী?
বন্যেরা বনে সুন্দর। কিন্তু পরম আরাধ্য বনই যদি না থাকে তবে বন্যপ্রাণীর আবাস কোথায় হবে? আর আবাস না থাকলে তাদের জীবনবৃত্তিই-বা অব্যাহত থাকবে কীভাবে? বলাবাহুল্য, বনবিহীন বন্যপ্রাণীদের বংশ বিস্তার থেকে শুরু করে স্বাভাবিক বিচরণের কোনো নিশ্চয়তা নেই।
অথচ প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষার জন্য এ প্রাণীদের অস্তিত্ব অতিপ্রয়োজনীয়। অতীতে বাংলাদেশের অধিকাংশ গ্রামের নিকটবর্তী অঞ্চলে ছোট বন বা জঙ্গলের দেখা মিলত। সে জঙ্গল আশ্রয় করে সাপ, ব্যাঙ, বেজি, বনবিড়াল, বাগডাশ, শৃগাল, মেছোবাঘ, খরগোশ, কাঠবিড়ালিসহ বিচিত্র প্রাণীর দেখা মিলত। কিন্তু বসতি ও কৃষিজমি বিস্তারের সঙ্গে সঙ্গে আবাসসংলগ্ন এ জঙ্গলগুলো মিলিয়ে গেছে। এখন খুব কম গ্রামেই বড় জঙ্গল দেখা যায়। আশ্রয়ের অভাবে এ প্রাণীরা হয় নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে, নয়তো দূরবর্তী স্থানে চলে গেছে। বাস্তবতা এমনই যে, এখন ব্যক্তিমালিকানাধীন জঙ্গলে এদের আশ্রয় মেলা কঠিন। শুধু তা-ই নয়, সরকারি বনাঞ্চলও যেভাবে দখলের শিকার হচ্ছে তাতে সেখানেও এদের আশ্রয় কতদিন থাকবে তা নিয়ে প্রশ্ন। এই নিরাশ্রয় বন্যপ্রাণীদের সংরক্ষণের উপায় কী তবে? নতুন করে জঙ্গল সৃষ্টি করা কি সম্ভব? নাকি লোকালয়ে এদের বিচরণ নিশ্চিত করার জন্য জনসচেতনতা বৃদ্ধিই একমাত্র উপায়? সাধারণ মানুষ সচেতন হলেও এদের অস্তিত্ব কতদিন থাকবে তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। তবু সচেতন করার প্রয়োজন আছে। বিশেষত, বন্যপ্রাণী শিকারের প্রবণতা দূর করা দরকার। আদিবাসী জনগোষ্ঠীর কেউ কেউ চিরায়ত অভ্যাসবশত শিকারে প্রলুব্ধ হন। আবার আদিবাসী নন এমন মানুষও বন্যপ্রাণীর প্রতি সহজাত বিরাগবশত প্রাণীহত্যা করেন। এ প্রবণতা বন্ধ হওয়া দরকার। এর জন্য সচেতনতার বিকল্প নেই। বনবিড়াল, শৃগালের মতো প্রাণীগুলো গৃহস্থদের কিছু ক্ষতি করে বটে, কিন্তু জীবনচক্রে এদের অবদানের তুলনায় ক্ষতি সামান্যই। ফলে গ্রামবাসী সচেতন হলে সহজেই বন্যপ্রাণীদের রক্ষা করা সম্ভব। পাশাপাশি, সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে বন সৃজনের কার্যক্রম হাতে নেওয়া যেতে পারে। বন থাকলে বন্যপ্রাণীদের আশ্রয় নিশ্চিত হতে পারে। কিন্তু তেমন উদ্যোগ কি কেউ নেবে?
No comments