কারা কর্তাদের সহায়তায় রাজার হালে ওরা by ওমর ফারুক

একাত্তরে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত বন্দিরা রাজার হালে আছেন কারাগারে। খাবার-দাবার থেকে শুরু করে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হচ্ছে তাঁদের নিয়মবহির্ভূতভাবে। ওই বন্দিরা বিভিন্ন কারাগারে রয়েছেন। সেই সব কারাগারে তাঁদের ভালোভাবে রাখার জন্য আইজি প্রিজন্স নির্দেশ দিয়ে রেখেছেন।


সে অনুযায়ী তাঁদের রাখা হচ্ছে বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কারা কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
অভিযোগ পাওয়া গেছে, মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত বন্দিদের সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার ক্ষেত্রে মুখ্য ভূমিকা রয়েছে আইজি প্রিজন্স ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আশরাফুল ইসলাম খান এবং ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার মাহবুবুল ইসলামের। সব দলের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো রাখার উদ্দেশ্যে তাঁরা এমন কৌশল অবলম্বন করছেন বলে কারাগারের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন। এ ব্যাপারে কথা বলার জন্য গতকাল শুক্রবার দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বহুবার আইজি প্রিজন্সের মোবাইল ফোনে চেষ্টা করা হলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়। একই সময়ে জেলার মাহবুবুল ইসলামের মোবাইল ফোনে কল করা হলেও তিনি ধরেননি।
কারা সূত্র জানায়, মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের মধ্যে একজন জামিনে, একজন হাসপাতালের প্রিজন সেলে এবং অন্যরা দেশের বিভিন্ন কারাগারে রয়েছেন। মাঝেমধ্যে তাঁদের ঢাকা কেন্দ্রীয় করাগারে আনা হয়। ওই সময় আইজি প্রিজন্স কারাগারে গিয়ে তাঁদের সঙ্গে দেখা করে কথা বলেন। আর তাঁর নির্দেশে নিয়মবহির্ভূতভাবে ওই বন্দিদের সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়। অভিযোগ পাওয়া গেছে, কারা কর্মকর্তারা মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে ওই বন্দিদের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক গড়ে তুলছেন। সেই সঙ্গে ভবিষ্যতের হিসাব-নিকাশও মাথায় আছে তাঁদের।
সূত্র জানায়, জামায়াত নেতা মতিউর রহমান নিজামীর সঙ্গে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার মাহবুবুল ইসলামের গভীর সখ্য গড়ে উঠেছে। বৈষয়িক সুবিধা নিয়ে মাহবুব জামায়াতের এ নেতাকে দেশ-বিদেশে টেলিফোনে কথা বলার সুযোগও করে দিচ্ছেন।
মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্তরা কে কোথায় আছেন- জানতে চাইলে ডেপুটি জেলার মাসুদ হাসান জুয়েল গত শুক্রবার কালের কণ্ঠকে জানান, বর্তমানে সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ নারায়ণগঞ্জে, মতিউর রহমান নিজামী, আবদুল কাদের মোল্লা ও কামারুজ্জামান কাশিমপুরে এবং মীর কাসেম আলী ও দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে রয়েছেন।
এক কারা কর্মকর্তা জানান, এক-এগারোর পর শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়াকে গ্রেপ্তার করা হলে সংসদ ভবন চত্বরের দুটি ভবনকে বিশেষ আদালত ঘোষণা করে সেখানে তাঁদের রাখা হয়েছিল। ওই দুটি কারাগারের দায়িত্বে ছিলেন ডেপুটি জেলার মাহবুব ও ফারুক। তাঁরা দুজনই পরে পদোন্নতি পেয়ে জেলার হয়েছেন। মাহবুব বেশির ভাগ সময় দায়িত্ব পালন করতেন শেখ হাসিনাকে যে ভবনে রাখা হয়েছিল সেই ভবনে। আর অন্যটির দায়িত্বে ছিলেন ফারুক। ওই সময় দায়িত্বে থাকা কারা অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা গতকাল কালের কণ্ঠকে জানান, ওই দুই ডেপুটি জেলারকে মাঝেমধ্যে দুই বিশেষ কারাগারে পালা করে দায়িত্ব দেওয়া হতো।
এক কারা কর্মকর্তা জানান, ওই সময় শেখ হাসিনার ওখানে দায়িত্ব পালন করার পর থেকে জেলার মাহবুব নিজেকে শেখ হাসিনার খুব ঘনিষ্ঠ বলে পরিচয় দিয়ে আসছেন। শেখ হাসিনা তাঁকে শেখ রাসেলের জায়গায় বসিয়েছেন বলেও নানাজনের কাছে মন্তব্য করেন মাহবুব। এ ছাড়া তিনি কারাগারে এ-ও বলে থাকেন, যদি বিএনপি ক্ষমতায় আসে, তা হলেও তিনি দাপটের সঙ্গেই থাকতে পারবেন। তাঁকে খালেদা জিয়াও খুব পছন্দ করেন। বিএনপি ও জামায়াত নেতাদের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ রয়েছে। ওই কারা কর্মকর্তা আরো বলেন, 'চোখের সামনে মাহবুব প্রধানমন্ত্রীর নাম ভাঙিয়ে কারা বিভাগের অনেককে ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন। কারা বিভাগে কাকে চাকরিচ্যুত করতে হবে, কাকে ওএসডি করতে হবে- সে পরামর্শও আইজি প্রিজন্সকে মাহবুবই দিয়ে থাকেন। আর আইজি প্রিজন্সের খুব ঘনিষ্ঠ হওয়ায় সেই সুযোগ সহজেই কাজে লাগাতে পারছেন তিনি।'
সূত্র মতে, বর্তমানে কারা বিভাগে নিয়োগ, টেন্ডার বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত থেকে আইজি প্রিজন্স, ঢাকা বিভাগের ডিআইজি প্রিজন্স গোলাম হায়দার ও জেলার মাহবুব বিপুল অর্থের মালিক হয়েছেন। আইজি প্রিজন্সের দুর্নীতির কারণে চাপা ক্ষোভ রয়েছে কারা কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মধ্যে। এরই মধ্যে তাঁর বিভিন্ন অপকর্মের বিষয়ে কারা কর্মকর্তাদের স্বজনরা প্রধানমন্ত্রী এবং সংসদীয় কমিটির কাছে অভিযোগ পাঠিয়েছে। জানা গেছে, গোয়েন্দা সংস্থা থেকেও তাঁর বিরুদ্ধে প্রতিবেদন পাঠানো হয় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০০৭ সালের জুন মাসে অতিরিক্ত আইজি প্রিজন্স হিসেবে কারা অধিদপ্তরে প্রেষণে যোগদান করেন আশরাফুল ইসলাম খান।

No comments

Powered by Blogger.