হুমায়ূন আহমেদের স্মরণসভায় অঝরে কাঁদলেন গুলতেকিন খান
কথার মায়াজালে যিনি আচ্ছন্ন করে রেখেছিলেন লাখো কোটি পাঠককে, সেই কিংবদন্তি কথাশিল্পী হুমায়ূন আহমেদের স্মরণসভায় দাঁড়িয়ে দেশের বিশিষ্টজনরা যেন কথা হারিয়ে ফেলেন। অনেকেই স্মৃতিকাতর হয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। অশ্রুসজল চোখ আর রুদ্ধকণ্ঠে তাঁরা স্মরণ করেন সদ্যপ্রয়াত কথার জাদুকরকে। বক্তারা বলেন, হুমায়ূন ছিলেন বিবেকের কণ্ঠস্বর, গল্পের জাদুকর ও স্বপ্নের কারিগর, যিনি নিজে স্বপ্ন দেখতেন এবং স্বপ্ন দেখাতেন।
তিনিই এ দেশের প্রকাশনা শিল্পের ভিত তৈরি করে দিয়ে গেছেন। ঘরে ঘরে পাঠাভ্যাস গড়ে তুলেছেন। তাঁর কাছে ঋণ অশেষ। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট গতকাল বিকেলে পাবলিক লাইব্রেরির শওকত ওসমান স্মৃতি মিলনায়তনে এ নাগরিক স্মরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। শারমীন সাথী ইসলামের কণ্ঠে রজনীকান্তের শোকসংগীত 'আমি অকৃতি অধম বলেও তো কিছু কম করে মোরে দাওনি' গানের মধ্য দিয়ে শুরু হয় স্মরণসভা। এরপর হুমায়ূন আহমেদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করেন উপস্থিত সবাই।
স্মরণসভায় হুমায়ূন আহমেদের প্রথম স্ত্রী গুলতেকিন খান, ছেলে নুহাশ হুমায়ূন, দুই বোন সুফিয়া হায়দার ও মমতাজ আহমেদ, ছোট ভাই মুহম্মদ জাফর ইকবাল, তাঁর স্ত্রী ইয়াসমিন হক, ছোট ভাই কার্টুনিস্ট আহসান হাবীব প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। গুলতেকিন খানকে মিডিয়াকর্মীরা ঘিরে ধরলেও তিনি কোনো কথা বলেননি। সভায় বক্তাদের কথার নানা পর্যায়ে গুলতেকিনের চোখ থেকে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছিল। হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যুর পর এই প্রথম তিনি কোনো অনুষ্ঠানে যোগ দিলেন।
সভায় বক্তব্য দেন ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, নাট্যজন রামেন্দু মজুমদার, সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক, নাট্যজন আসাদুজ্জামান নূর এমপি, মুহম্মদ জাফর ইকবাল, চলচ্চিত্র নির্মাতা মোরশেদুল ইসলাম ও অন্যপ্রকাশের প্রধান নির্বাহী মাজহারুল ইসলাম। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সহসভাপতি গোলাম কুদ্দুসের সভাপতিত্বে সাধারণ সম্পাদক হাসান আরিফ অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন।
অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, 'হুমায়ূন আহমেদ মানুষের জীবনকে কোনো না কোনোভাবে স্পর্শ করেছেন। সেই স্পর্শ এমনই গভীর ছিল, তাঁরা প্রতিকূল আবহাওয়ার মধ্যেও তাঁকে শ্রদ্ধা জানাতে এসেছিলেন। তিনি তাঁর লেখা, নাটক ও চলচ্চিত্রে সৃষ্টিশীলতার যে বিস্ময়কর প্রকাশ ঘটিয়েছেন তা সম্পূর্ণ উপলব্ধি করতে আমাদের কিছুটা সময় লাগবে। আমরা তাঁর জন্য শোক নয়, গৌরব করব। তিনি অনন্তকাল আমাদের মধ্যে বেঁচে থাকবেন।'
সৈয়দ শামসুল হক বলেন, 'এই শোক সহন ও বরণ কষ্টসাধ্য। বিশেষ করে আমার জন্য। যখন আমার চেয়ে কম বয়সের একজন লেখক বিদায় নেন, তখন অগ্রজ হিসেবে আমি অত্যন্ত শূন্য বোধ করি।' তিনি বলেন, হুমায়ূন নিরালোকে, দিব্যালোকে চলে গেছেন। তিনি ছিলেন বিবেকের কণ্ঠস্বর, গল্পের জাদুকর ও স্বপ্নের কারিগর। সত্য, শুদ্ধতা এবং সুন্দর এ তিনের প্রতিটি তাঁর অঙ্গের ভেতর প্রবাহিত। বাংলাদেশ কাঁদছে তাঁর জন্য। যেখানে বাংলাভাষী আছেন, তাঁরা কাঁদছেন। প্রকৃতিও উদাসীন নয়, প্রকৃতিও কাঁদছে।
রামেন্দু মজুমদার বলেন, 'হুমায়ূন অনেক সময় আমাদের আন্দোলনে যুক্ত হননি। একবার একটা বিবৃতিতে তাঁর সই নেওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়েছিলাম। তিনি সই করেননি। মন খারাপ হয়েছিল। কিন্তু তিনি আমাদের আন্দোলনে যুক্ত না হলেও তাঁর লেখা দিয়ে আমাদের আন্দোলনের সহযোগী হয়েছেন।' রামেন্দু আরো বলেন, 'ক্যান্সার হাসপাতাল করার তাঁর যে ইচ্ছা ছিল, তা পূরণ করার জন্য আমরা জাফর ইকবালকে সামনে রেখে নাগরিক উদ্যোগ নিলে সফল হব।'
আসাদুজ্জামান নূর বলেন, 'নাটকের মধ্য দিয়ে তাঁর সঙ্গে আমার যে সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল, সে সম্পর্ক দিনকে দিন বেড়েছে। গভীর থেকে গভীরতর হয়েছে। আমি হুমায়ূনকে নিয়ে শোক করতে চাই না। আমরা অনেক আনন্দে ছিলাম। সে আনন্দের স্মৃতি নিয়ে থাকতে চাই।' তিনি হুমায়ূন আহমেদের সঙ্গে তাঁর শেষ সময়ের স্মৃতিচারণ করে বলেন, 'হুমায়ূন আহমেদ মে মাসে দেশে ফিরলে তাঁকে বললাম_আমি নিউ ইয়র্কে আসছি, আপনার সাথে সময় কাটাতে। খুশি হয়ে বলেছিলেন, চলে আসেন, আড্ডা দেওয়া যাবে। আমি আড্ডা মারতে গিয়েছিলাম। কিন্তু তা হয়নি। ১৫ জুলাই আমি গিয়েছি। ১৬, ১৭ ও ১৭ জুলাই তাঁর সাথে সময় কাটিয়েছি। পাশে গিয়ে কথা বলার চেষ্টা করেছি। আজই দেশে ফিরলাম। ফিরেই শোকসভা। না ভাবতে পারছি না।' কথাগুলো বলেই কান্নায় ভেঙে পড়েন নূর।
মোরশেদুল ইসলাম বলেন, 'মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সঞ্চারিত করতে যে ভূমিকা তিনি রেখেছেন, তা অনবদ্য। তিনি চলচ্চিত্রের জন্য উচ্চকিত কোনো ভূমিকা রেখেছেন সেটা বলব না, তবে সূক্ষ্মভাবে কাজ করেছেন। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা যে সময় মুছে দেওয়ার চেষ্টা চলছিল, তিনি সে সময় 'আগুনের পরশমণি' নিয়ে দাঁড়িয়েছেন। তিনি আমাদের চলচ্চিত্র দেখার জন্য হল-বিমুখ মধ্যবিত্তকে আবার হলে ফিরিয়ে এনেছেন। একজন চলচ্চিত্রের লোক হিসেবে এটা আমাদের জন্য কম আনন্দের ছিল না।'
প্রকাশক মাজহারুল ইসলাম কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি বলেন, 'হাসপাতালে তিনি শোয়া। জাফর ইকবাল ও ইয়াসমীন ভাবি এলেন। জাফর ইকবাল বললেন, দাদাভাই আমরা এসেছি। ডাক্তার বলেছেন, আপনারা কথা বলেন। তিনি শুনতে পাচ্ছেন। এর মধ্যে মানুষটা চলে গেলো।'
জাফর ইকবাল বলেন, 'কোনো আনুষ্ঠানিকতা তিনি পছন্দ করতেন না। আমি কখনো বুঝতে পারিনি, একজন লেখকের এত জনপ্রিয়তা থাকতে পারে। সেদিন শহীদ মিনারে দেখলাম, বলপয়েন্ট দিয়ে যিনি কাগজে লিখেছেন, এ রকম একজন মানুষের জন্য এত ভালোবাসা। হুমায়ূন অসম্ভব ক্রিয়েটিভ ছিলেন। এ বিষয়ে আমার বড় বোনের ব্যাখ্যা হলো_তিনবার মায়ের দুধ খেলে একজন মানুষ অসম্ভব ক্রিয়েটিভ হতে পারে। ভাই তা-ই হয়েছেন। প্রথমবার জন্মের পর মায়ের দুধ খেয়েছেন। মায়ের অসুখের পর আবার মায়ের দুধ খেয়েছেন এবং তার পরে বোনের জন্মের পর তাঁর দুধেও ভাগ বসিয়েছেন।' তিনি বলেন, 'তাঁর লেখা নিয়ে অনেক কথা হয়েছে। তাঁর জীবিতকালে অনেকে বলেছেন, তাঁর লেখা হালকা, বাণিজ্যিক, উপন্যাস তো নয় অপন্যাস_এমন কোনো কথা নেই, যা বলেননি। কিন্তু যাঁরা এসব বলেছেন, তাঁরা ঈদসংখ্যা এলে তাঁর কাছে লেখার জন্য ছুটতেন।' তিনি আরো বলেন, 'তিনি কী লেখা লেখেন, তা আমরা ছেড়ে দিলাম। এ দেশের অনেক মানুষ আগেও জোছনা দেখেছে। বৃষ্টিও। কিন্তু জোছনা উপভোগ করা যায়, বৃষ্টি উপভোগ করা যায়_তা তারা জানত না। তাঁর আরো অনেক প্রতিভা ছিল। তিনি ভালো ছবি আঁকতে পারতেন। এটা এমন নয় যে বিখ্যাত হলে যাঁরা ছবি আঁকেন, সে রকম নয়। তাঁর ছবি ছবির মতো। তিনি তাঁর ছবিতে নিজের সই পর্যন্ত করেননি। নিউ ইয়র্কে ওই সব ছবি আছে। দেশে আনলে আপনারা তা দেখবেন। তিনি ম্যাজিক দেখাতে পারতেন। ভালো অভিনয় করতে পারতেন। ঈদের দিন আমাদের বাড়ির নিজস্ব অনুষ্ঠানে তিনি অভিনয় করতেন।'
জাফর ইকবাল বলেন, 'তিনি কোনো নিয়মকানুন মানতেন না। তাই আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁর জন্য কুলখানি করিনি। এতিমখানায় গিয়ে আমরা তাদের ইফতার ও খাওয়াদাওয়া করিয়ে দোয়া চেয়েছি।' নিউ ইয়র্কে ক্যান্সারের চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ১৯ জুলাই মারা যান হুমায়ূন আহমেদ।
স্মরণসভায় হুমায়ূন আহমেদের প্রথম স্ত্রী গুলতেকিন খান, ছেলে নুহাশ হুমায়ূন, দুই বোন সুফিয়া হায়দার ও মমতাজ আহমেদ, ছোট ভাই মুহম্মদ জাফর ইকবাল, তাঁর স্ত্রী ইয়াসমিন হক, ছোট ভাই কার্টুনিস্ট আহসান হাবীব প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। গুলতেকিন খানকে মিডিয়াকর্মীরা ঘিরে ধরলেও তিনি কোনো কথা বলেননি। সভায় বক্তাদের কথার নানা পর্যায়ে গুলতেকিনের চোখ থেকে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছিল। হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যুর পর এই প্রথম তিনি কোনো অনুষ্ঠানে যোগ দিলেন।
সভায় বক্তব্য দেন ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, নাট্যজন রামেন্দু মজুমদার, সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক, নাট্যজন আসাদুজ্জামান নূর এমপি, মুহম্মদ জাফর ইকবাল, চলচ্চিত্র নির্মাতা মোরশেদুল ইসলাম ও অন্যপ্রকাশের প্রধান নির্বাহী মাজহারুল ইসলাম। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সহসভাপতি গোলাম কুদ্দুসের সভাপতিত্বে সাধারণ সম্পাদক হাসান আরিফ অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন।
অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, 'হুমায়ূন আহমেদ মানুষের জীবনকে কোনো না কোনোভাবে স্পর্শ করেছেন। সেই স্পর্শ এমনই গভীর ছিল, তাঁরা প্রতিকূল আবহাওয়ার মধ্যেও তাঁকে শ্রদ্ধা জানাতে এসেছিলেন। তিনি তাঁর লেখা, নাটক ও চলচ্চিত্রে সৃষ্টিশীলতার যে বিস্ময়কর প্রকাশ ঘটিয়েছেন তা সম্পূর্ণ উপলব্ধি করতে আমাদের কিছুটা সময় লাগবে। আমরা তাঁর জন্য শোক নয়, গৌরব করব। তিনি অনন্তকাল আমাদের মধ্যে বেঁচে থাকবেন।'
সৈয়দ শামসুল হক বলেন, 'এই শোক সহন ও বরণ কষ্টসাধ্য। বিশেষ করে আমার জন্য। যখন আমার চেয়ে কম বয়সের একজন লেখক বিদায় নেন, তখন অগ্রজ হিসেবে আমি অত্যন্ত শূন্য বোধ করি।' তিনি বলেন, হুমায়ূন নিরালোকে, দিব্যালোকে চলে গেছেন। তিনি ছিলেন বিবেকের কণ্ঠস্বর, গল্পের জাদুকর ও স্বপ্নের কারিগর। সত্য, শুদ্ধতা এবং সুন্দর এ তিনের প্রতিটি তাঁর অঙ্গের ভেতর প্রবাহিত। বাংলাদেশ কাঁদছে তাঁর জন্য। যেখানে বাংলাভাষী আছেন, তাঁরা কাঁদছেন। প্রকৃতিও উদাসীন নয়, প্রকৃতিও কাঁদছে।
রামেন্দু মজুমদার বলেন, 'হুমায়ূন অনেক সময় আমাদের আন্দোলনে যুক্ত হননি। একবার একটা বিবৃতিতে তাঁর সই নেওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়েছিলাম। তিনি সই করেননি। মন খারাপ হয়েছিল। কিন্তু তিনি আমাদের আন্দোলনে যুক্ত না হলেও তাঁর লেখা দিয়ে আমাদের আন্দোলনের সহযোগী হয়েছেন।' রামেন্দু আরো বলেন, 'ক্যান্সার হাসপাতাল করার তাঁর যে ইচ্ছা ছিল, তা পূরণ করার জন্য আমরা জাফর ইকবালকে সামনে রেখে নাগরিক উদ্যোগ নিলে সফল হব।'
আসাদুজ্জামান নূর বলেন, 'নাটকের মধ্য দিয়ে তাঁর সঙ্গে আমার যে সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল, সে সম্পর্ক দিনকে দিন বেড়েছে। গভীর থেকে গভীরতর হয়েছে। আমি হুমায়ূনকে নিয়ে শোক করতে চাই না। আমরা অনেক আনন্দে ছিলাম। সে আনন্দের স্মৃতি নিয়ে থাকতে চাই।' তিনি হুমায়ূন আহমেদের সঙ্গে তাঁর শেষ সময়ের স্মৃতিচারণ করে বলেন, 'হুমায়ূন আহমেদ মে মাসে দেশে ফিরলে তাঁকে বললাম_আমি নিউ ইয়র্কে আসছি, আপনার সাথে সময় কাটাতে। খুশি হয়ে বলেছিলেন, চলে আসেন, আড্ডা দেওয়া যাবে। আমি আড্ডা মারতে গিয়েছিলাম। কিন্তু তা হয়নি। ১৫ জুলাই আমি গিয়েছি। ১৬, ১৭ ও ১৭ জুলাই তাঁর সাথে সময় কাটিয়েছি। পাশে গিয়ে কথা বলার চেষ্টা করেছি। আজই দেশে ফিরলাম। ফিরেই শোকসভা। না ভাবতে পারছি না।' কথাগুলো বলেই কান্নায় ভেঙে পড়েন নূর।
মোরশেদুল ইসলাম বলেন, 'মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সঞ্চারিত করতে যে ভূমিকা তিনি রেখেছেন, তা অনবদ্য। তিনি চলচ্চিত্রের জন্য উচ্চকিত কোনো ভূমিকা রেখেছেন সেটা বলব না, তবে সূক্ষ্মভাবে কাজ করেছেন। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা যে সময় মুছে দেওয়ার চেষ্টা চলছিল, তিনি সে সময় 'আগুনের পরশমণি' নিয়ে দাঁড়িয়েছেন। তিনি আমাদের চলচ্চিত্র দেখার জন্য হল-বিমুখ মধ্যবিত্তকে আবার হলে ফিরিয়ে এনেছেন। একজন চলচ্চিত্রের লোক হিসেবে এটা আমাদের জন্য কম আনন্দের ছিল না।'
প্রকাশক মাজহারুল ইসলাম কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি বলেন, 'হাসপাতালে তিনি শোয়া। জাফর ইকবাল ও ইয়াসমীন ভাবি এলেন। জাফর ইকবাল বললেন, দাদাভাই আমরা এসেছি। ডাক্তার বলেছেন, আপনারা কথা বলেন। তিনি শুনতে পাচ্ছেন। এর মধ্যে মানুষটা চলে গেলো।'
জাফর ইকবাল বলেন, 'কোনো আনুষ্ঠানিকতা তিনি পছন্দ করতেন না। আমি কখনো বুঝতে পারিনি, একজন লেখকের এত জনপ্রিয়তা থাকতে পারে। সেদিন শহীদ মিনারে দেখলাম, বলপয়েন্ট দিয়ে যিনি কাগজে লিখেছেন, এ রকম একজন মানুষের জন্য এত ভালোবাসা। হুমায়ূন অসম্ভব ক্রিয়েটিভ ছিলেন। এ বিষয়ে আমার বড় বোনের ব্যাখ্যা হলো_তিনবার মায়ের দুধ খেলে একজন মানুষ অসম্ভব ক্রিয়েটিভ হতে পারে। ভাই তা-ই হয়েছেন। প্রথমবার জন্মের পর মায়ের দুধ খেয়েছেন। মায়ের অসুখের পর আবার মায়ের দুধ খেয়েছেন এবং তার পরে বোনের জন্মের পর তাঁর দুধেও ভাগ বসিয়েছেন।' তিনি বলেন, 'তাঁর লেখা নিয়ে অনেক কথা হয়েছে। তাঁর জীবিতকালে অনেকে বলেছেন, তাঁর লেখা হালকা, বাণিজ্যিক, উপন্যাস তো নয় অপন্যাস_এমন কোনো কথা নেই, যা বলেননি। কিন্তু যাঁরা এসব বলেছেন, তাঁরা ঈদসংখ্যা এলে তাঁর কাছে লেখার জন্য ছুটতেন।' তিনি আরো বলেন, 'তিনি কী লেখা লেখেন, তা আমরা ছেড়ে দিলাম। এ দেশের অনেক মানুষ আগেও জোছনা দেখেছে। বৃষ্টিও। কিন্তু জোছনা উপভোগ করা যায়, বৃষ্টি উপভোগ করা যায়_তা তারা জানত না। তাঁর আরো অনেক প্রতিভা ছিল। তিনি ভালো ছবি আঁকতে পারতেন। এটা এমন নয় যে বিখ্যাত হলে যাঁরা ছবি আঁকেন, সে রকম নয়। তাঁর ছবি ছবির মতো। তিনি তাঁর ছবিতে নিজের সই পর্যন্ত করেননি। নিউ ইয়র্কে ওই সব ছবি আছে। দেশে আনলে আপনারা তা দেখবেন। তিনি ম্যাজিক দেখাতে পারতেন। ভালো অভিনয় করতে পারতেন। ঈদের দিন আমাদের বাড়ির নিজস্ব অনুষ্ঠানে তিনি অভিনয় করতেন।'
জাফর ইকবাল বলেন, 'তিনি কোনো নিয়মকানুন মানতেন না। তাই আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁর জন্য কুলখানি করিনি। এতিমখানায় গিয়ে আমরা তাদের ইফতার ও খাওয়াদাওয়া করিয়ে দোয়া চেয়েছি।' নিউ ইয়র্কে ক্যান্সারের চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ১৯ জুলাই মারা যান হুমায়ূন আহমেদ।
No comments