জেলা পরিষদের গাড়ি
সংবিধানে শক্তিশালী স্থানীয় সরকার সংস্থার কথা বলা হলেও স্বাধীনতার ৪০ বছর পরও কোনো পর্যায়ে তা বাস্তবায়িত না হওয়া দুর্ভাগ্যজনক। ক্ষমতাসীনেরা বরাবর স্থানীয় সরকার সংস্থাগুলোকে সক্রিয় করার চেয়ে দলীয় স্বার্থে ব্যবহারে সচেষ্ট হয়েছে। জনগণের প্রত্যাশা ছিল, দিনবদলের কথা বলে ক্ষমতায় আসা আওয়ামী লীগ তথা মহাজোট সরকারের আমলে পরিস্থিতির উন্নতি হবে। কিন্তু তার কোনো লক্ষণ নেই। দীর্ঘদিন পর বহুল আলোচিত উপজেলা পরিষদ নির্বাচন হলেও চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানদের ঠুঁটো জগন্নাথ করে রাখা হয়েছে। যদিও তাঁদের দামি গাড়ি ও আলিশান অফিস দেওয়া হয়েছে। এখন আবার প্রস্তাবিত জেলা পরিষদ এবং গাড়ি ও অফিসের জন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে বলে পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এ ছাড়া জেলা পরিষদের নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত অন্তর্বর্তী প্রশাসক নিয়োগসংক্রান্ত একটি প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। কোনো স্থানীয় সরকার সংস্থায় এ ধরনের প্রশাসক নিয়োগ গণতন্ত্র ও সংবিধানের পরিপন্থী। সংবিধানে নির্বাচিত স্থানীয় সরকার সংস্থার কথা বলা হয়েছে। আর জেলা পরিষদ গঠনের আগেই প্রশাসক/চেয়ারম্যানদের জন্য গাড়ি কেনাও যুক্তিযুক্ত নয়।
সরকারের কাছে স্থানীয় সরকারের সংজ্ঞা কী? তারা কি মনে করে, গাড়ি, অফিস ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সুযোগ-সুবিধা দিলেই স্থানীয় সরকার জোরদার হবে? না হলে জেলা পরিষদ গঠনের আগেই এর চেয়ারম্যানের অফিস সাজানো এবং তাঁদের গাড়ির জন্য ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হবে কেন? অজুহাত হিসেবে দেখানো হয়েছে, উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের পরও অনেক উপজেলা চেয়ারম্যান গাড়ি পাননি। তাঁরা তো দায়িত্ব ও ক্ষমতাও বুঝে পাননি। সেসব নিয়ে সরকারের কোনো মাথাব্যথা নেই। মনে হচ্ছে, সরকার জেলা-উপজেলা পরিষদের গাড়ি কেনার ব্যাপারে যতটা উদ্গ্রীব, ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণে ততটাই অনাগ্রহী।
জেলা পরিষদ সক্রিয় হোক, এর কার্যক্রম বাড়ুক—সেটি সবার প্রত্যাশা। তবে সেই জেলা পরিষদ হতে হবে নির্বাচিত। মনোনীত বা নিযুক্ত কোনো কর্মকর্তার দ্বারা স্থানীয় সরকার সংস্থা পরিচালিত হতে পারে না। যেখানে নির্বাচিত প্রতিনিধিরাই জনগণের কাছে দেওয়া প্রতিশ্রুতি পালন করেন না, সেখানে অনির্বাচিত ব্যক্তিরা কী করবেন, তা সহজেই অনুমান করা যায়। সরকারকে আগে মনস্থির করতে হবে, স্থানীয় সরকারের সংস্থাগুলো সক্রিয় ও কার্যকর হোক, তা তারা চায় কি না? চাইলে সংস্থাগুলোর আইন ও কার্যবিধিও সেভাবে তৈরি করতে হবে। জনগণের করের পয়সায় এ ধরনের নামকাওয়াস্তে স্থানীয় সরকার সংস্থা কাম্য নয়। অতীতে অনির্বাচিত ও সামরিক সরকার স্থানীয় সরকারের সংস্থাগুলোকে ক্ষমতার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছে। বিপুল ভোটে ক্ষমতায় আসা মহাজোট সরকারও যদি সেই সামরিক স্বৈরাচারের পথে হাঁটে, তা হবে দুর্ভাগ্যজনক। অতএব, নির্বাচনের মাধ্যমেই জেলা পরিষদ গঠনের উদ্যোগ নিতে হবে, অন্য কোনো উপায়ে নয়। ঘোড়ার আগে গাড়ি জুড়ে দেওয়ারও কোনো মানে নেই।
সরকারের কাছে স্থানীয় সরকারের সংজ্ঞা কী? তারা কি মনে করে, গাড়ি, অফিস ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সুযোগ-সুবিধা দিলেই স্থানীয় সরকার জোরদার হবে? না হলে জেলা পরিষদ গঠনের আগেই এর চেয়ারম্যানের অফিস সাজানো এবং তাঁদের গাড়ির জন্য ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হবে কেন? অজুহাত হিসেবে দেখানো হয়েছে, উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের পরও অনেক উপজেলা চেয়ারম্যান গাড়ি পাননি। তাঁরা তো দায়িত্ব ও ক্ষমতাও বুঝে পাননি। সেসব নিয়ে সরকারের কোনো মাথাব্যথা নেই। মনে হচ্ছে, সরকার জেলা-উপজেলা পরিষদের গাড়ি কেনার ব্যাপারে যতটা উদ্গ্রীব, ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণে ততটাই অনাগ্রহী।
জেলা পরিষদ সক্রিয় হোক, এর কার্যক্রম বাড়ুক—সেটি সবার প্রত্যাশা। তবে সেই জেলা পরিষদ হতে হবে নির্বাচিত। মনোনীত বা নিযুক্ত কোনো কর্মকর্তার দ্বারা স্থানীয় সরকার সংস্থা পরিচালিত হতে পারে না। যেখানে নির্বাচিত প্রতিনিধিরাই জনগণের কাছে দেওয়া প্রতিশ্রুতি পালন করেন না, সেখানে অনির্বাচিত ব্যক্তিরা কী করবেন, তা সহজেই অনুমান করা যায়। সরকারকে আগে মনস্থির করতে হবে, স্থানীয় সরকারের সংস্থাগুলো সক্রিয় ও কার্যকর হোক, তা তারা চায় কি না? চাইলে সংস্থাগুলোর আইন ও কার্যবিধিও সেভাবে তৈরি করতে হবে। জনগণের করের পয়সায় এ ধরনের নামকাওয়াস্তে স্থানীয় সরকার সংস্থা কাম্য নয়। অতীতে অনির্বাচিত ও সামরিক সরকার স্থানীয় সরকারের সংস্থাগুলোকে ক্ষমতার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছে। বিপুল ভোটে ক্ষমতায় আসা মহাজোট সরকারও যদি সেই সামরিক স্বৈরাচারের পথে হাঁটে, তা হবে দুর্ভাগ্যজনক। অতএব, নির্বাচনের মাধ্যমেই জেলা পরিষদ গঠনের উদ্যোগ নিতে হবে, অন্য কোনো উপায়ে নয়। ঘোড়ার আগে গাড়ি জুড়ে দেওয়ারও কোনো মানে নেই।
No comments