ব্যবসা-বাণিজ্যে নীতি-নৈতিকতা by মুহাম্মদ আবদুল মুনিম খান
ব্যবসা-বাণিজ্য মানুষের আয়-উপার্জনের একটি অন্যতম বৈধ পেশা। ইসলাম ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে কল্যাণ ও অকল্যাণের বিষয়গুলো নৈতিকতার আলোকে সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করেছে। একটি পূর্ণাঙ্গ ও স্থায়ী জীবন বিধানের ধারক-বাহক হিসেবে মুসলমান ব্যবসায়ীদের নীতি-নৈতিকতাবর্জিত হলে চলবে না। ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক কর্মময় জীবন এবং মৃত্যু-পরবর্তী জীবনের কোনোটিই এর আওতামুক্ত নয়। ব্যক্তিজীবনে একজন মুসলমান ব্যবসায়ীকে যেমন ধর্মীয় নীতি-নৈতিকতা মেনে চলতে হয়, অনুরূপভাবে কর্মজীবনেও জীবন-দর্শনের মৌলিক শিক্ষা, ন্যায়নীতি ও সামাজিক মূল্যবোধের বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই। ব্যবসা-বাণিজ্য সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে মৌলিক দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা একে অন্যের ধন-সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করবে না, তবে তোমাদের পারস্পরিক সন্তুষ্টির ভিত্তিতে ব্যবসা করবে।’ (সূরা আন-নিসা, আয়াত-২৯)
ইসলাম ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে যেমন কিছু মৌলিক নীতিমালা ঘোষণা করেছে, তেমনি নিষিদ্ধ কতিপয় অসৌজন্যমূলক কর্মকাণ্ড থেকে ধর্মপ্রাণ ব্যবসায়ীদের বিরত থাকতে উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছে। ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে অনুসরণীয় মৌলিক নীতিমালার মধ্যে অন্যতম হলো সত্যবাদিতা, বিশ্বস্ততা, সদিচ্ছা, ভ্রাতৃত্ববোধ ও ন্যায়বিচার। অপরদিকে নিষিদ্ধ ও বর্জনীয় কার্যাবলির মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে মজুদদারি, ওজনে কম দেওয়া, মুনাফাখোরি, মিথ্যা প্রচারণা, চুক্তিভঙ্গ, সুদ আরোপ, ভেজাল মিশ্রণ, কারসাজি ও প্রতারণা প্রভৃতি। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ তাআলা বেচাকেনাকে বৈধ ও সুদকে অবৈধ করেছেন।’ (সূরা আল-বাকারা, আয়াত-২৭৫)
ব্যবসা-বাণিজ্যের লক্ষ্যই মুনাফা লাভ। অভিজ্ঞ ও বুদ্ধিমান লোকদের সুবিবেচনায় যা স্বাভাবিক ও সহনীয়, তা-ই বৈধ মুনাফা। ইসলাম কখনো তা অর্জন নিষিদ্ধ করে না বা ব্যবসায়ীকে মুনাফা থেকে বঞ্চিত করে না। কেননা মুনাফা পাওয়ার অধিকার না থাকলে কেউ ব্যবসা করত না। তবে অত্যধিক ও সীমাহীন মুনাফা গ্রহণ ইসলামের দৃষ্টিতে হারাম। যেহেতু তা একধরনের শোষণ, অন্যদের ওপর বিশেষ জুুলুম; তাই আদর্শবান ব্যবসায়ীদের উচিত ন্যূনতম নৈতিক ও মানবিক মূল্যবোধ লালন করা এবং সেবামূলক মনোবৃত্তির পরিচয় দেওয়া। সর্বোচ্চ জনস্ব্বার্থের সঙ্গে জড়িত এ মহৎ পেশাটির ক্ষেত্রে ইসলাম যেমন সুসংবাদ দিয়েছে, তেমনি অনৈতিকতা ও স্ব্বেচ্ছাচারিতার জন্য কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে। হাদিস শরিফে বলা হয়েছে, ‘ব্যবসায়ী যদি সীমাতিরিক্ত মূল্য গ্রহণ করে এ সুযোগে যে ক্রেতা পণ্যের প্রকৃত মূল্য জানে না, তাহলে এই অতিরিক্ত পরিমাণের মূল্য সুদ পর্যায়ে গণ্য হবে।’
প্রতারণার কারণে ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি হয়, মানবিক মূল্যবোধ বিনষ্ট হয়, সামাজিক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির আশঙ্কা দেখা দেয়। এ কারণে ইসলামে ব্যবসায় ধোঁকাবাজি ও প্রতারণা না করার জন্য জোরালো নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যদি তারা উভয়েই সততা অবলম্বন করে এবং পণ্যের দোষ-ত্রুটি প্রকাশ করে, তাহলে তাদের পারস্পরিক এ ক্রয়-বিক্রয়ে বরকত হবে। আর যদি তারা মিথ্যার আশ্রয় নেয় এবং দোষ গোপন করে, তাহলে তাদের এ ক্রয়-বিক্রয়ের বরকত শেষ হয়ে যাবে।’ (বুখারি)
ইসলামের প্রাথমিক যুগে ক্রয়-বিক্রয় ও ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে আল্লাহর দেওয়া বিধি-বিধান পুরোপুরি মেনে চলা হতো। অথচ বর্তমানে ব্যবসাক্ষেত্রে অন্যায় ও অপরাধ প্রকট আকার ধারণ করেছে। সমাজের সর্বক্ষেত্রে অনৈতিক কর্মকাণ্ড, দুর্নীতি ও দুরাচার পিছু ছাড়ছে না। বৈধভাবে ব্যবসা-বাণিজ্যের মাধ্যমে যতটুকু ধনসম্পদ উপার্জন করা হয়, এতেই আল্লাহর অবারিত বরকত নিহিত থাকে। সৎ ব্যবসায়ীরা পরকালে আম্বিয়া, সিদ্দিকীন ও শহীদদের সঙ্গে থাকবেন। নবী করিম (সা.) ঘোষণা করেছেন, ‘যে বক্তি বৈধভাবে জীবিকা অর্জন করে, কিয়ামতের দিন তার মুখমণ্ডল পূর্ণিমার চাঁদের মতো উজ্জ্বল হয়ে উঠবে।’
সমাজে যারা অসাধু উপায়ে ব্যবসার মাধ্যমে অঢেল অর্থ উপার্জন করে, জোর-জুলুম করে অন্যকে ঠকিয়ে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের চরম ভোগান্তির মধ্যে নিপতিত করে অবৈধ সম্পদ অর্জনের লক্ষ্যে যে ধরনের অসৎ পন্থা বেছে নেয় এবং বিপুল পরিমাণ টাকার পাহাড় গড়ে তোলে—ইসলামে এটি সম্পূর্ণ অবৈধ। এসব অসৎ ব্যবসায়ী লোকসমাজে সুনাম অর্জনের জন্য স্ব স্ব এলাকার স্কুল-কলেজ, মসজিদ-মাদ্রাসা, এতিমখানা, রাস্তাঘাট, পুল-সেতুসহ বিবিধ সামাজিক কর্মকাণ্ডে প্রচুর অর্থ দান করে বদান্যতা দেখাতে চায়, এদের প্রতি আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (সা.)-এর ধিক্কার রয়েছে। মানুষকে ঠকিয়ে লোক দেখানো দান বা জনসেবা করা অতীব জঘন্য। কেননা অবৈধভাবে আহরিত সম্পদ অপবিত্র। নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ পবিত্র। তিনি পবিত্র জিনিস ব্যতীত অন্য কিছু গ্রহণ করেন না।’ (মুসলিম)
ব্যবসায়ে মূল্য প্রবাহকে কেউ যেন ঊর্ধ্বমুখী করে না তোলে, সে ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। সমাজে এমন কিছু অসৎ ব্যবসায়ী আছে, যারা অতিশয় মুনাফা লাভের জন্য ব্যবসা-বাণিজ্যে মন্দা অবস্থায় নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্য ও পণ্যদ্রব্যের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে মজুদদারি করে এবং ক্রেতা সাধারণ মানুষকে চরম দুর্দশা ও ভোগান্তির মধ্যে ফেলে অন্যায়ভাবে বিভিন্ন ধোঁকাবাজিতে দুর্নীতির দ্বারা প্রচুর অর্থ-সম্পদ লাভ করে, তাদের প্রতি আল্লাহ, রাসুলুল্লাহ (সা.) ও মানুষের অভিসম্পাত বর্ষিত হয়। এ ধরনের অস্বস্তিকর কর্মকাণ্ডকে ইসলামে কঠিন শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। হাদিস শরিফে বর্ণিত হয়েছে যে ‘কোনো ব্যক্তি মুসলমানদের লেনদেনে হস্তক্ষেপের মাধ্যমে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণ ঘটালে কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা আগুনের হাড়ের ওপর তাকে বসিয়ে শাস্তি দেবেন।’
একজন মুসলমান হয়ে অন্যায়ভাবে, জোর-জুলুম করে অসহায় নিরীহ মানুষ ঠকানো এবং সর্বস্বান্ত করার ব্যবসায়িক অসৎ মানসিকতা বর্জন করার দৃপ্ত শপথ নিতে হবে এবং সৎভাবে হালাল পথে জীবিকা অর্জনের জন্য আজীবন বৈধপথে আয় উপার্জন করতে সচেষ্ট হতে হবে। তাই আসুন, আমরা ক্রয়-বিক্রয় এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ইসলামের নীতি-নৈতিকতা ও বিধি-বিধান মেনে চলি। ঘুষ-দুর্নীতি, মুনাফাখোরি, মজুদদারি, ধোঁকাবাজি, কারসাজিসহ অবৈধ পন্থায় অর্থ উপার্জন থেকে বিরত থাকি।
ড. মুহাম্মদ আবদুল মুনিম খান: বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, গবেষক ও কলাম লেখক।
dr.munimkhan@yahoo.com
ইসলাম ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে যেমন কিছু মৌলিক নীতিমালা ঘোষণা করেছে, তেমনি নিষিদ্ধ কতিপয় অসৌজন্যমূলক কর্মকাণ্ড থেকে ধর্মপ্রাণ ব্যবসায়ীদের বিরত থাকতে উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছে। ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে অনুসরণীয় মৌলিক নীতিমালার মধ্যে অন্যতম হলো সত্যবাদিতা, বিশ্বস্ততা, সদিচ্ছা, ভ্রাতৃত্ববোধ ও ন্যায়বিচার। অপরদিকে নিষিদ্ধ ও বর্জনীয় কার্যাবলির মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে মজুদদারি, ওজনে কম দেওয়া, মুনাফাখোরি, মিথ্যা প্রচারণা, চুক্তিভঙ্গ, সুদ আরোপ, ভেজাল মিশ্রণ, কারসাজি ও প্রতারণা প্রভৃতি। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ তাআলা বেচাকেনাকে বৈধ ও সুদকে অবৈধ করেছেন।’ (সূরা আল-বাকারা, আয়াত-২৭৫)
ব্যবসা-বাণিজ্যের লক্ষ্যই মুনাফা লাভ। অভিজ্ঞ ও বুদ্ধিমান লোকদের সুবিবেচনায় যা স্বাভাবিক ও সহনীয়, তা-ই বৈধ মুনাফা। ইসলাম কখনো তা অর্জন নিষিদ্ধ করে না বা ব্যবসায়ীকে মুনাফা থেকে বঞ্চিত করে না। কেননা মুনাফা পাওয়ার অধিকার না থাকলে কেউ ব্যবসা করত না। তবে অত্যধিক ও সীমাহীন মুনাফা গ্রহণ ইসলামের দৃষ্টিতে হারাম। যেহেতু তা একধরনের শোষণ, অন্যদের ওপর বিশেষ জুুলুম; তাই আদর্শবান ব্যবসায়ীদের উচিত ন্যূনতম নৈতিক ও মানবিক মূল্যবোধ লালন করা এবং সেবামূলক মনোবৃত্তির পরিচয় দেওয়া। সর্বোচ্চ জনস্ব্বার্থের সঙ্গে জড়িত এ মহৎ পেশাটির ক্ষেত্রে ইসলাম যেমন সুসংবাদ দিয়েছে, তেমনি অনৈতিকতা ও স্ব্বেচ্ছাচারিতার জন্য কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে। হাদিস শরিফে বলা হয়েছে, ‘ব্যবসায়ী যদি সীমাতিরিক্ত মূল্য গ্রহণ করে এ সুযোগে যে ক্রেতা পণ্যের প্রকৃত মূল্য জানে না, তাহলে এই অতিরিক্ত পরিমাণের মূল্য সুদ পর্যায়ে গণ্য হবে।’
প্রতারণার কারণে ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি হয়, মানবিক মূল্যবোধ বিনষ্ট হয়, সামাজিক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির আশঙ্কা দেখা দেয়। এ কারণে ইসলামে ব্যবসায় ধোঁকাবাজি ও প্রতারণা না করার জন্য জোরালো নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যদি তারা উভয়েই সততা অবলম্বন করে এবং পণ্যের দোষ-ত্রুটি প্রকাশ করে, তাহলে তাদের পারস্পরিক এ ক্রয়-বিক্রয়ে বরকত হবে। আর যদি তারা মিথ্যার আশ্রয় নেয় এবং দোষ গোপন করে, তাহলে তাদের এ ক্রয়-বিক্রয়ের বরকত শেষ হয়ে যাবে।’ (বুখারি)
ইসলামের প্রাথমিক যুগে ক্রয়-বিক্রয় ও ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে আল্লাহর দেওয়া বিধি-বিধান পুরোপুরি মেনে চলা হতো। অথচ বর্তমানে ব্যবসাক্ষেত্রে অন্যায় ও অপরাধ প্রকট আকার ধারণ করেছে। সমাজের সর্বক্ষেত্রে অনৈতিক কর্মকাণ্ড, দুর্নীতি ও দুরাচার পিছু ছাড়ছে না। বৈধভাবে ব্যবসা-বাণিজ্যের মাধ্যমে যতটুকু ধনসম্পদ উপার্জন করা হয়, এতেই আল্লাহর অবারিত বরকত নিহিত থাকে। সৎ ব্যবসায়ীরা পরকালে আম্বিয়া, সিদ্দিকীন ও শহীদদের সঙ্গে থাকবেন। নবী করিম (সা.) ঘোষণা করেছেন, ‘যে বক্তি বৈধভাবে জীবিকা অর্জন করে, কিয়ামতের দিন তার মুখমণ্ডল পূর্ণিমার চাঁদের মতো উজ্জ্বল হয়ে উঠবে।’
সমাজে যারা অসাধু উপায়ে ব্যবসার মাধ্যমে অঢেল অর্থ উপার্জন করে, জোর-জুলুম করে অন্যকে ঠকিয়ে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের চরম ভোগান্তির মধ্যে নিপতিত করে অবৈধ সম্পদ অর্জনের লক্ষ্যে যে ধরনের অসৎ পন্থা বেছে নেয় এবং বিপুল পরিমাণ টাকার পাহাড় গড়ে তোলে—ইসলামে এটি সম্পূর্ণ অবৈধ। এসব অসৎ ব্যবসায়ী লোকসমাজে সুনাম অর্জনের জন্য স্ব স্ব এলাকার স্কুল-কলেজ, মসজিদ-মাদ্রাসা, এতিমখানা, রাস্তাঘাট, পুল-সেতুসহ বিবিধ সামাজিক কর্মকাণ্ডে প্রচুর অর্থ দান করে বদান্যতা দেখাতে চায়, এদের প্রতি আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (সা.)-এর ধিক্কার রয়েছে। মানুষকে ঠকিয়ে লোক দেখানো দান বা জনসেবা করা অতীব জঘন্য। কেননা অবৈধভাবে আহরিত সম্পদ অপবিত্র। নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ পবিত্র। তিনি পবিত্র জিনিস ব্যতীত অন্য কিছু গ্রহণ করেন না।’ (মুসলিম)
ব্যবসায়ে মূল্য প্রবাহকে কেউ যেন ঊর্ধ্বমুখী করে না তোলে, সে ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। সমাজে এমন কিছু অসৎ ব্যবসায়ী আছে, যারা অতিশয় মুনাফা লাভের জন্য ব্যবসা-বাণিজ্যে মন্দা অবস্থায় নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্য ও পণ্যদ্রব্যের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে মজুদদারি করে এবং ক্রেতা সাধারণ মানুষকে চরম দুর্দশা ও ভোগান্তির মধ্যে ফেলে অন্যায়ভাবে বিভিন্ন ধোঁকাবাজিতে দুর্নীতির দ্বারা প্রচুর অর্থ-সম্পদ লাভ করে, তাদের প্রতি আল্লাহ, রাসুলুল্লাহ (সা.) ও মানুষের অভিসম্পাত বর্ষিত হয়। এ ধরনের অস্বস্তিকর কর্মকাণ্ডকে ইসলামে কঠিন শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। হাদিস শরিফে বর্ণিত হয়েছে যে ‘কোনো ব্যক্তি মুসলমানদের লেনদেনে হস্তক্ষেপের মাধ্যমে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণ ঘটালে কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা আগুনের হাড়ের ওপর তাকে বসিয়ে শাস্তি দেবেন।’
একজন মুসলমান হয়ে অন্যায়ভাবে, জোর-জুলুম করে অসহায় নিরীহ মানুষ ঠকানো এবং সর্বস্বান্ত করার ব্যবসায়িক অসৎ মানসিকতা বর্জন করার দৃপ্ত শপথ নিতে হবে এবং সৎভাবে হালাল পথে জীবিকা অর্জনের জন্য আজীবন বৈধপথে আয় উপার্জন করতে সচেষ্ট হতে হবে। তাই আসুন, আমরা ক্রয়-বিক্রয় এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ইসলামের নীতি-নৈতিকতা ও বিধি-বিধান মেনে চলি। ঘুষ-দুর্নীতি, মুনাফাখোরি, মজুদদারি, ধোঁকাবাজি, কারসাজিসহ অবৈধ পন্থায় অর্থ উপার্জন থেকে বিরত থাকি।
ড. মুহাম্মদ আবদুল মুনিম খান: বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, গবেষক ও কলাম লেখক।
dr.munimkhan@yahoo.com
No comments