চিত্তের বৈভবে ঐশ্বর্যশালী নারী by কাজী সুফিয়া আখ্তার
বেলা আপা আমাদের সবাইকে কাঁদিয়ে চলে গেলেন ১৪১৬ সনের ২৭ চৈত্রে।
বেলা আপার সঙ্গে পরিচয় ১৯৮০ সালের দিকে। প্রয়াত শিক্ষাবিদ, সমাজকর্মী রোকেয়া রহমান কবীরের বাসায়। প্রতি মাসে রোকেয়া খালাম্মার বাসায় তিনি যেতেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির জন্য দেওয়া চাঁদা সংগ্রহ করতে। স্নিগ্ধ, ধীর-স্থির, মার্জিত পোশাক ও সুশ্রী চেহারার বেলা নবীকে প্রথম দেখায় অনেকেরই ভালো লাগত। আমারও লেগেছিল। শান্ত কণ্ঠে স্পষ্ট উচ্চারণে কথা বলছিলেন তিনি। খালাম্মা পরিচয় করিয়ে দিলেন—‘তোদের মহিলা পরিষদ’। বেলা আপাকে আমি তারও আগে দেখেছিলাম চট্টগ্রামে মহিলা পরিষদের এক অনুষ্ঠানে। কথা হয়নি। শুধু দূর থেকে দেখা।
আমাদের মহিলা পরিষদের নেত্রীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়ল সপ্তগ্রাম নারী স্বনির্ভর পরিষদের অফিসে বসেই, ঐক্যবদ্ধ নারী সমাজ এবং ‘সামাজিক অনাচার প্রতিরোধ ও নারী নির্যাতন বন্ধে’র উদ্দেশ্যে গঠিত কমিটির সুবাদে। সেই সময়ে সেগুনবাগিচার সপ্তগ্রাম নারী স্বনির্ভর পরিষদের অফিসে উল্লিখিত দুই কমিটির অনেক সভা হতো। প্রকৌশলী, চিকিৎসক, সমাজকর্মী, চাকরিজীবীসহ মানবতাবাদী সবাই উপস্থিত থাকতেন। মহিলা পরিষদ থেকে মালেকা বেগম অথবা বেলা নবী প্রায় সময়ই উপস্থিত থাকতেন। সপ্তগ্রামে কর্মরত থাকায় শারমীন, আমি, কৃষ্ণা প্রায় প্রতিটি সভায় উপস্থিত থাকতাম। ঐক্যবদ্ধ নারী সমাজ ছিল ১৭টি সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ থেকে ঐক্যবদ্ধ নারী সমাজের নেতৃত্বে ছিলেন বেলা নবী।
এই পরিচয় আরও গভীর হলো ১৯৮৫ সালে। আমি তখন মহিলা পরিষদ পরিচালিত নির্যাতনের শিকার মেয়েদের সাময়িক আশ্রয়কেন্দ্র ‘রোকেয়া সদন’-এর দায়িত্বে। সুফিয়া কামাল সংগঠনের সভানেত্রী। মালেকা বেগম সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক। বেলা নবী নারী নির্যাতন প্রতিরোধ ও আইন সহায়তা উপ-পরিষদের সম্পাদক। আয়শা খানম সাংগঠনিক সম্পাদক। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের চার দশকের ইতিহাসে সবচেয়ে উজ্জ্বল অধ্যায় আশির দশক। অনেক অগ্রগতির বাঁক এই দশকে। মহিলা পরিষদ মনুবালা, অনিমা, শবমেহের, সালেহা হত্যা মামলা একের পর এক হাতে নিচ্ছে আর মামলায় জয়লাভ করছে। সাংবাদিক, আইনজীবী এবং প্রশাসন সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। সামাজিক পুঁজি বাড়ছে। প্রচলিত আইনের সংস্কার এবং ব্যক্তি, সমাজ ও দেশের স্বার্থে নতুন আইন তৈরির লক্ষ্যে সর্বজনীন পারিবারিক আইনের খসড়া প্রণয়নে ঢাকায় এবং ঢাকার বাইরে সব পেশাজীবী, আইনজীবীর সঙ্গে মতবিনিময়, সেমিনারের আয়োজন চলছে। এখানে ব্যারিস্টার কামাল হোসেন যেমন কর্মরত, তেমনি ব্যারিস্টার ইশতিয়াকও সক্রিয়। আওয়ামী লীগ, বিএনপি নয়। সব আইনেই নারী বৈষম্যের শিকার। হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান—সব নারীর জন্য একই আইন করা জরুরি এই প্রত্যয় দৃঢ় হতে শুরু করেছে। ভিন্ন মতের, ভিন্ন শ্রেণীর, ভিন্ন ধারার মানুষজনকে একত্র করার দুরূহ কাজটি অত্যন্ত সতর্কভাবে, আন্তরিক প্রচেষ্টায় সম্পন্ন করেছিলেন মালেকা বেগম ও বেলা নবী। আন্তর্জাতিক নারী দশক উপলক্ষে বহুমাত্রিক পদ্ধতিতে নারী নির্যাতন প্রতিরোধের কাজ চলছে। ফতোয়া বন্ধের সোচ্চার দাবি জানানো হচ্ছে।
বেলা নবী বরিশাল শহরের সবুজ প্রকৃতির মধ্যে বেড়ে উঠেছিলেন। পরিবারে রাজনৈতিক আবহ ছিল। চার ভাইবোনের মধ্যে বেলা নবী ছিলেন সর্বকনিষ্ঠ এবং একমাত্র কন্যা। অনেক আদরের। ফলে জীবনের ওপর দিয়ে অনেক ঝড়ঝাপটা গেলেও আজীবন মনের সজীবতা ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছিলেন।
বাংলাদেশ সোভিয়েত মৈত্রী সমিতির সঙ্গে সম্পর্কিত ছিলেন। স্বামী মোহাম্মদ নবী কমিউনিস্ট পার্টি করতেন। স্বামীর সঙ্গে ডেন-এ জীবনযাপন করেছেন দাম্পত্য জীবনের শুরুর দিকে। সব কাজই অত্যন্ত নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সঙ্গে করতেন।
রবীন্দ্রনাথ, লালন প্রিয় ছিল তাঁর। মানুষকে ভালোবাসতেন। বিশ্বাস করতেন মানব মুক্তিতে, নারী মুক্তিতে। সেই লক্ষ্যেই কাজ করে গেছেন আমৃত্যু। ঢাকা সিটি করপোরেশনের গুলশান এলাকার নির্বাচিত প্রথম মহিলা কমিশনার ছিলেন।
বেলা নবী ও মোহাম্মদ নবী দুজনই সুফিয়া কামালকে ‘মা-মণি’ বলে সম্বোধন করতেন। সুফিয়া খালাম্মার বাড়ি বরিশালে ছিল বলে একটু গর্বও অনুভব করতেন। তাঁর সঙ্গে প্রাগ ও মস্কোতে গিয়েছিলেন। নোয়াখালীতে বন্যা-ত্রাণের কাজে গেছেন। ‘মুক্তধারা’র মালিকের বাড়িতে উঠেছেন। সে বাড়িতেও পানি। উঠোন জলমগ্ন। বারান্দা, ঘরের মেঝেতে পানি। ইট বিছিয়ে তার ওপর তক্তা পেতে বিছানা করা হলো। দুজনের কারোরই কোনো অসুবিধা হলো না। সব কাজ ঠিকভাবে করেই ঢাকায় ফিরলেন।
অমায়িক, বন্ধুবৎসল বেলা আপার সঙ্গে মহিলা পরিষদের কাজে একাধিকবার চট্টগ্রাম, নাটোর, নরসিংদী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ফরিদপুর, বরিশাল, বেলাব, নওগাঁ গিয়েছি। তাঁর সঙ্গে ভ্রমণ এতটাই আনন্দদায়ক ছিল যে পথের কোনো ক্লান্তি কখনো আমাকে স্পর্শ করেনি। সংসার, কমিউনিস্ট পার্টি, বাংলাদেশ সোভিয়েত মৈত্রী সমিতি ও বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের কাজ পেশাগত দক্ষতা নিয়ে করেছেন। স্টেপস টুওয়ার্ডস ডেভেলপমেন্টের কাজে যুক্ত হলেন বিগত শতাব্দীর নব্বইয়ের দশকে। চিত্তের বৈভবে ঐশ্বর্যশালী বেলা নবী নিজের মনের তারুণ্য দিয়ে সংগঠনের সব তরুণ-তরুণীর মন জয় করে নিলেন। বই পড়তে পছন্দ করতেন। পছন্দ করতেন বুদ্ধিদীপ্ত আলোচনা। প্রতিনিয়ত নিজেকে নতুন ধ্যান-ধারণায় আলোকিত করতে ভালোবাসতেন। এ দেশের সব গণতান্ত্রিক আন্দোলনে সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক আন্দোলনে, স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে তাঁর ছিল সক্রিয় ভূমিকা, উজ্জ্বল উপস্থিতি। অং সান সু চির মুক্তি, যুদ্ধ নয় শান্তি আন্দোলনে তিনি ছিলেন সম্মুখ সারিতে। আইন পড়েননি। কিন্তু বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের নারী নির্যাতন প্রতিরোধ ও আইন সহায়তা উপ-পরিষদটি তাঁরই নেতৃত্বে, শ্রমে, সযত্ন প্রয়াসে গড়ে উঠেছে। সংগঠনের প্রতি ছিল তাঁর অফুরন্ত ভালোবাসা। দেশপ্রেমিক, মানবিক, সদালাপী এই মানুষটি ৭৮ বছর বয়সে ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। সৃজনশীল এই মানবী মৃত্যুর কিছু দিন আগে আত্মকথা লিখেছেন।
তাঁর মৃত্যু অসহনীয় বেদনায় গ্রাস করে আমাদের। বাংলাদেশের সব গণতান্ত্রিক ও প্রগতিশীল আন্দোলনে তিনি থাকবেন আমাদের স্মরণে। কর্মে। তাঁর বিদেহী আত্মা শান্তি লাভ করুক। নারী ও মানবাধিকার আন্দোলনের এই নেত্রীকে জানাই শ্রদ্ধাঞ্জলি।
বেলা আপার সঙ্গে পরিচয় ১৯৮০ সালের দিকে। প্রয়াত শিক্ষাবিদ, সমাজকর্মী রোকেয়া রহমান কবীরের বাসায়। প্রতি মাসে রোকেয়া খালাম্মার বাসায় তিনি যেতেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির জন্য দেওয়া চাঁদা সংগ্রহ করতে। স্নিগ্ধ, ধীর-স্থির, মার্জিত পোশাক ও সুশ্রী চেহারার বেলা নবীকে প্রথম দেখায় অনেকেরই ভালো লাগত। আমারও লেগেছিল। শান্ত কণ্ঠে স্পষ্ট উচ্চারণে কথা বলছিলেন তিনি। খালাম্মা পরিচয় করিয়ে দিলেন—‘তোদের মহিলা পরিষদ’। বেলা আপাকে আমি তারও আগে দেখেছিলাম চট্টগ্রামে মহিলা পরিষদের এক অনুষ্ঠানে। কথা হয়নি। শুধু দূর থেকে দেখা।
আমাদের মহিলা পরিষদের নেত্রীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়ল সপ্তগ্রাম নারী স্বনির্ভর পরিষদের অফিসে বসেই, ঐক্যবদ্ধ নারী সমাজ এবং ‘সামাজিক অনাচার প্রতিরোধ ও নারী নির্যাতন বন্ধে’র উদ্দেশ্যে গঠিত কমিটির সুবাদে। সেই সময়ে সেগুনবাগিচার সপ্তগ্রাম নারী স্বনির্ভর পরিষদের অফিসে উল্লিখিত দুই কমিটির অনেক সভা হতো। প্রকৌশলী, চিকিৎসক, সমাজকর্মী, চাকরিজীবীসহ মানবতাবাদী সবাই উপস্থিত থাকতেন। মহিলা পরিষদ থেকে মালেকা বেগম অথবা বেলা নবী প্রায় সময়ই উপস্থিত থাকতেন। সপ্তগ্রামে কর্মরত থাকায় শারমীন, আমি, কৃষ্ণা প্রায় প্রতিটি সভায় উপস্থিত থাকতাম। ঐক্যবদ্ধ নারী সমাজ ছিল ১৭টি সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ থেকে ঐক্যবদ্ধ নারী সমাজের নেতৃত্বে ছিলেন বেলা নবী।
এই পরিচয় আরও গভীর হলো ১৯৮৫ সালে। আমি তখন মহিলা পরিষদ পরিচালিত নির্যাতনের শিকার মেয়েদের সাময়িক আশ্রয়কেন্দ্র ‘রোকেয়া সদন’-এর দায়িত্বে। সুফিয়া কামাল সংগঠনের সভানেত্রী। মালেকা বেগম সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক। বেলা নবী নারী নির্যাতন প্রতিরোধ ও আইন সহায়তা উপ-পরিষদের সম্পাদক। আয়শা খানম সাংগঠনিক সম্পাদক। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের চার দশকের ইতিহাসে সবচেয়ে উজ্জ্বল অধ্যায় আশির দশক। অনেক অগ্রগতির বাঁক এই দশকে। মহিলা পরিষদ মনুবালা, অনিমা, শবমেহের, সালেহা হত্যা মামলা একের পর এক হাতে নিচ্ছে আর মামলায় জয়লাভ করছে। সাংবাদিক, আইনজীবী এবং প্রশাসন সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। সামাজিক পুঁজি বাড়ছে। প্রচলিত আইনের সংস্কার এবং ব্যক্তি, সমাজ ও দেশের স্বার্থে নতুন আইন তৈরির লক্ষ্যে সর্বজনীন পারিবারিক আইনের খসড়া প্রণয়নে ঢাকায় এবং ঢাকার বাইরে সব পেশাজীবী, আইনজীবীর সঙ্গে মতবিনিময়, সেমিনারের আয়োজন চলছে। এখানে ব্যারিস্টার কামাল হোসেন যেমন কর্মরত, তেমনি ব্যারিস্টার ইশতিয়াকও সক্রিয়। আওয়ামী লীগ, বিএনপি নয়। সব আইনেই নারী বৈষম্যের শিকার। হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান—সব নারীর জন্য একই আইন করা জরুরি এই প্রত্যয় দৃঢ় হতে শুরু করেছে। ভিন্ন মতের, ভিন্ন শ্রেণীর, ভিন্ন ধারার মানুষজনকে একত্র করার দুরূহ কাজটি অত্যন্ত সতর্কভাবে, আন্তরিক প্রচেষ্টায় সম্পন্ন করেছিলেন মালেকা বেগম ও বেলা নবী। আন্তর্জাতিক নারী দশক উপলক্ষে বহুমাত্রিক পদ্ধতিতে নারী নির্যাতন প্রতিরোধের কাজ চলছে। ফতোয়া বন্ধের সোচ্চার দাবি জানানো হচ্ছে।
বেলা নবী বরিশাল শহরের সবুজ প্রকৃতির মধ্যে বেড়ে উঠেছিলেন। পরিবারে রাজনৈতিক আবহ ছিল। চার ভাইবোনের মধ্যে বেলা নবী ছিলেন সর্বকনিষ্ঠ এবং একমাত্র কন্যা। অনেক আদরের। ফলে জীবনের ওপর দিয়ে অনেক ঝড়ঝাপটা গেলেও আজীবন মনের সজীবতা ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছিলেন।
বাংলাদেশ সোভিয়েত মৈত্রী সমিতির সঙ্গে সম্পর্কিত ছিলেন। স্বামী মোহাম্মদ নবী কমিউনিস্ট পার্টি করতেন। স্বামীর সঙ্গে ডেন-এ জীবনযাপন করেছেন দাম্পত্য জীবনের শুরুর দিকে। সব কাজই অত্যন্ত নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সঙ্গে করতেন।
রবীন্দ্রনাথ, লালন প্রিয় ছিল তাঁর। মানুষকে ভালোবাসতেন। বিশ্বাস করতেন মানব মুক্তিতে, নারী মুক্তিতে। সেই লক্ষ্যেই কাজ করে গেছেন আমৃত্যু। ঢাকা সিটি করপোরেশনের গুলশান এলাকার নির্বাচিত প্রথম মহিলা কমিশনার ছিলেন।
বেলা নবী ও মোহাম্মদ নবী দুজনই সুফিয়া কামালকে ‘মা-মণি’ বলে সম্বোধন করতেন। সুফিয়া খালাম্মার বাড়ি বরিশালে ছিল বলে একটু গর্বও অনুভব করতেন। তাঁর সঙ্গে প্রাগ ও মস্কোতে গিয়েছিলেন। নোয়াখালীতে বন্যা-ত্রাণের কাজে গেছেন। ‘মুক্তধারা’র মালিকের বাড়িতে উঠেছেন। সে বাড়িতেও পানি। উঠোন জলমগ্ন। বারান্দা, ঘরের মেঝেতে পানি। ইট বিছিয়ে তার ওপর তক্তা পেতে বিছানা করা হলো। দুজনের কারোরই কোনো অসুবিধা হলো না। সব কাজ ঠিকভাবে করেই ঢাকায় ফিরলেন।
অমায়িক, বন্ধুবৎসল বেলা আপার সঙ্গে মহিলা পরিষদের কাজে একাধিকবার চট্টগ্রাম, নাটোর, নরসিংদী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ফরিদপুর, বরিশাল, বেলাব, নওগাঁ গিয়েছি। তাঁর সঙ্গে ভ্রমণ এতটাই আনন্দদায়ক ছিল যে পথের কোনো ক্লান্তি কখনো আমাকে স্পর্শ করেনি। সংসার, কমিউনিস্ট পার্টি, বাংলাদেশ সোভিয়েত মৈত্রী সমিতি ও বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের কাজ পেশাগত দক্ষতা নিয়ে করেছেন। স্টেপস টুওয়ার্ডস ডেভেলপমেন্টের কাজে যুক্ত হলেন বিগত শতাব্দীর নব্বইয়ের দশকে। চিত্তের বৈভবে ঐশ্বর্যশালী বেলা নবী নিজের মনের তারুণ্য দিয়ে সংগঠনের সব তরুণ-তরুণীর মন জয় করে নিলেন। বই পড়তে পছন্দ করতেন। পছন্দ করতেন বুদ্ধিদীপ্ত আলোচনা। প্রতিনিয়ত নিজেকে নতুন ধ্যান-ধারণায় আলোকিত করতে ভালোবাসতেন। এ দেশের সব গণতান্ত্রিক আন্দোলনে সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক আন্দোলনে, স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে তাঁর ছিল সক্রিয় ভূমিকা, উজ্জ্বল উপস্থিতি। অং সান সু চির মুক্তি, যুদ্ধ নয় শান্তি আন্দোলনে তিনি ছিলেন সম্মুখ সারিতে। আইন পড়েননি। কিন্তু বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের নারী নির্যাতন প্রতিরোধ ও আইন সহায়তা উপ-পরিষদটি তাঁরই নেতৃত্বে, শ্রমে, সযত্ন প্রয়াসে গড়ে উঠেছে। সংগঠনের প্রতি ছিল তাঁর অফুরন্ত ভালোবাসা। দেশপ্রেমিক, মানবিক, সদালাপী এই মানুষটি ৭৮ বছর বয়সে ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। সৃজনশীল এই মানবী মৃত্যুর কিছু দিন আগে আত্মকথা লিখেছেন।
তাঁর মৃত্যু অসহনীয় বেদনায় গ্রাস করে আমাদের। বাংলাদেশের সব গণতান্ত্রিক ও প্রগতিশীল আন্দোলনে তিনি থাকবেন আমাদের স্মরণে। কর্মে। তাঁর বিদেহী আত্মা শান্তি লাভ করুক। নারী ও মানবাধিকার আন্দোলনের এই নেত্রীকে জানাই শ্রদ্ধাঞ্জলি।
No comments