আরাফাতকে বিয়ে করতে চেয়েছিলেন বেনজির -রক্ত ও তরবারির গান by ফাতিমা ভুট্টো
বেনজির হলেন তাঁর পরিবারের প্রথম মেয়ে, যিনি প্রথাগত বিয়েতে রাজি হয়েছেন। তিনি ভেবেছেন, তিনি দেশের সর্বোচ্চ পদের অধিকারী হচ্ছেন এবং প্রত্যহ পুরুষের সঙ্গে কাজ করতে হবে, তাই তাঁর কুমারী থাকা ঠিক নয়। এটি তাঁর ভাবমূর্তির জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বেনজির মাথায় দোপাট্টা পরার সিদ্ধান্ত নিলেন। এ ক্ষেত্রেও তিনি ভুট্টো পরিবারের প্রথম মেয়ে, যিনি ‘হিজাব’ পরলেন। কিন্ত জাতির প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর বোন ফাতিমা জিন্নাহ কখনো মাথায় কাপড় পরতেন না। এমনকি বেনজিরের মা নুসরাতও না। ফাতিমা জিন্নাহ ষাটের দশকে জেনারেল আইয়ুব খানের বিরুদ্ধে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন।
দামেস্কে তাঁদের কথোপকথনের কথা উল্লেখ করে মা বলেছেন, বেনজিরের বক্তব্য হলো, এ ক্ষেত্রে তাঁর বিকল্প ছিল না। কে তাঁকে বিয়ে করবেন? একজন ক্ষমতাবান নারী এবং জনগণের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর ব্যস্ত জীবনের পেছনের সারিতে বসতে রাজি থাকবেন? তিনি ইয়াসির আরাফাতের কথাও ভেবেছিলেন। মা বললেন, তাঁর (আরাফাত) কথা বলায় বেনজিরের মুখে মৃদু হাসির রেখা ফুটে উঠেছিল। তিনি ভেবেছিলেন, আরাফাতই হতে পারেন তাঁর উপযুক্ত সঙ্গী।
করাচির মানুষের ধারণা, জিয়াউল হকের সচিব রোয়েদাদ খান আসিফের মাকে বেনজিরের কাছে প্রস্তাব পাঠানোর পরামর্শ দিলেন। আসিফের মা ধারণাটি দিলেন জুলফিকার আলী ভুট্টোর বোন মান্নাকে।
লারকানার বাসিন্দা ড. সিকান্দার জাতুই আসিফ জারদারির নাম শুনেই মন্তব্য করেছেন, ‘বিয়ের আগে তিনি ছিলেন রাস্তার ছেলে, কে তাঁকে চিনত? কেউ না।’
পিপিপি কর্মীসোহেল জবাব দিয়েছেন কূটনৈতিক ভাষায়। ‘তাঁর বাবা হাকিম জারদারি ১৯৭০ সালে শত বছরের পুরোনো শহর নওয়াবশাহ থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন এবং পিপিপিতে যোগ দিয়েছিলেন। প্রেসিডেন্ট হয়ে জারদারি শহরের নাম পরিবর্তন করে রেখেছেন ‘শহীদ মোহাতারেমা বেনজির ভুট্টো’র নামে। ভুট্টোর জীবদ্দশায়ই হাকিম ভুট্টো পিপিপি ত্যাগ করেন অথবা তাঁকে বের করে দেওয়া হয়। তিনি ভুট্টোর বিরোধী ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টিতে যোগ দিয়ে সিন্ধুর প্রাদেশিক প্রধান হয়েছিলেন। তিনি আরও জানান, ‘ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি তোমার দাদার (জুলফিকার আলী ভুট্টো) বিরোধী জোটের শরিক ছিল এবং জিয়াউল হককে সমর্থন করেছিল।’ তারা স্লোগান তুলেছিল, ‘একবার নয়, ভুট্টোকে শতবার ফাঁসি দাও।’ তবে সোহেলও স্বীকার করেন, মি. বেনজির হওয়ার আগে আসিফ জারদারিকে কেউ চিনত না। করাচির সুধী মহলে তিনি ছিলেন অনাহূত ব্যক্তি।
আগস্টের শেষ দিকে মা ও আমি একসঙ্গে পাকিস্তান সফর করি। এটি ছিল তাঁর প্রথম ও আমার দ্বিতীয় সফর। করাচিতে এসে বাড়ির চেয়েও বেশি আপন মনে হয়। কিন্তু মায়ের জন্য এটি ছিল বেশ কঠিন। তিনি বললেন, ‘মীর (মুর্তজা) কখনো দেশের বাইরে থাকার কথা ভাবেননি। তিনি সব সময় দেশে ফেরার কথা বলতেন, কিন্তু আমার কাছে মনে হতো তা সম্ভব নয়। যখনই আমি ফ্ল্যাটের কিছু পরিবর্তন করতে চাইতাম। মীর বলতেন, এটি আমাদের নয়। আমরা শিগগিরই দেশে ফিরে যাব।’
মুর্তজা দেশে ফেরা নিয়ে তাঁর মায়ের (নুসরাত) সঙ্গেও আলোচনা করতেন। জিয়াউল হকের আমলে শুরু হওয়া নির্বাসিত জীবন তাঁর মৃত্যুর পরই শেষ হওয়া উচিত। নুসরাতও তাঁকে সমর্থন করতেন। কিন্তু পরিবারের অন্য সদস্য বেনজির বাধা দিতেন।
মুর্তজা যখন দেশে ফিরে সামরিক শাসনামলের রাষ্ট্রদোহসহ সব মামলা মোকাবিলা করবেন বলে জানালেন, তখন বেনজির বললেন, ‘মীর, দয়া করে এখনই এসো না। সেটি হবে আমার জন্য আরও কঠিন অবস্থা।’
বেনজির আরও বললেন, আইএসআই তাঁর (মুর্তজার) ফাইলগুলো হারিয়ে ফেলেছে। ফলে কেউ জানেন না তাঁর বিরুদ্ধে সামরিক জান্তা কতগুলো মামলা ঠুকেছিল। তিনি এও জানালেন, ‘তাঁর (বেনজির) হাত বাঁধা।’
বেনজির সরকারের বিদায়টা সুখকর হয়নি। জাতিগত ও সম্প্রদায়গত সহিংসতা বেনজিরের দ্বিতীয় সরকারকেও মেঘাচ্ছন্ন করে তুলল। ব্যাপকভিত্তিক মানবাধিকার লাঞ্ছিত হওয়ার অভিযোগ উঠল, যার সূচনা হয়েছিল তাঁর প্রথম সরকারের আমলেই। ১৯৮৯ সালে, দেশ বিভাগের পর ভারত থেকে আসা মোহাজির ও স্থানীয় সিন্ধ জনগোষ্ঠীর সংঘাত-সংঘর্ষ এমন পর্যায়ে পৌঁছাল যে প্রধানমন্ত্রী নিজেও স্বীকার করতে বাধ্য হলেন, সিন্ধুতে যা ঘটেছে তা নিয়ন্ত্রণের বাইরে এবং ‘মিনি বিদ্রোহ’।
সোহেল বললেন, ‘বেনজিরের ২০ মাস স্থায়ী সরকারের আমলে মুর্তজা নীরব ছিলেন। এমনকি যা ঘটেছে তার সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করলেও কিছু বলেননি। তিনি রাজনৈতিক ও গণতান্ত্রিক পথই বেছে নিলেন। তিনি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার সিদ্ধান্ত নিলেন। কিন্তু নির্বাসনে থেকে কজন নির্বাচনে জয়ী হতে পারেন? ১৯৯৩ সালের গ্রীষ্মে মুর্তজা তাঁর মনস্থির করে ফেললেন, দেশে ফিরবেন। তিনি নির্বাচনে দলীয় প্রার্থিতার জন্য নুসরাতকে দরখাস্ত করতে বললেন। কিন্তু পিপিপির অস্থায়ী চেয়ারপারসন বেনজির ও তাঁর স্বামী জারদারিই দলীয় প্রার্থী বাছাই করতেন। বেনজির সরাসরি মুর্তজার সঙ্গে কথা বললেন। বেনজির তাঁকে দলীয় মনোনয়ন দিতে অস্বীকৃতি জানালেন এবং বললেন, ‘সত্যিই যদি মুর্তজা দেশে ফিরতে চান, তাহলে তাঁকে সিরিয়া ছেড়ে লন্ডনে কয়েক বছর থাকতে হবে, সমাজতন্ত্রের চিন্তা বাদ দিতে হবে। তারপরই এবার বা পরের নির্বাচনে তাঁর মনোনয়নের ব্যাপারে আলোচনা করা যেতে পারে।’
মুর্তজা দৃঢ়তার সঙ্গে তাঁকে বললেন, ‘আমি এবারের নির্বাচনেই লড়ব।’ তিনি নয়টি আসনের কথা বললেন, যা ইতিমধ্যে জারদারি ও তাঁর ঘনিষ্ঠদের দেওয়া হয়ে গেছে। বেনজির তাঁর অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করে বললেন, ‘আমি তোমাকে ও তোমার লোককে নয়টি আসন দিতে পারব না।’
তিনি মুর্তজাকে প্রাদেশিক পরিষদের একটি আসনের প্রস্তাব দিলেন।
মুর্তজা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সিদ্ধান্ত নিলেন। ১৯৯০ সালের আগস্টে মা জুলফিকে নিয়ে পাকিস্তানে এলেন বাবার মনোনয়নপত্র জমা দিতে।
মুর্তজা যখন পাকিস্তান অবতরণ করলেন, তখন রাত। পুলিশ ছিল খুবই আক্রমণাত্মক। তাঁরা রাতের আঁধারে বহু পার্টি-কর্মীকে জেলখানায় নিয়ে গেল এবং জনসমাবেশ ভেঙে দিতে মরিয়া হয়ে উঠল, কিন্তু জনসমাবেশ ভাঙা সম্ভব হলো না। মুর্তজাকে অভ্যর্থনা জানাতে আসা জনতাকে পুলিশ ছত্রভঙ্গ করতে গেলে তাঁরা তাদের যানবাহনে পাথর ছুড়ে মারে।
মুর্তজা একা নিচে নেমে এলেন এবং প্রথমবারের মতো রাতের করাচি প্রত্যক্ষ করলেন। তিনি টারমাকে নামলেন ও মাটিতে চুমু খেলেন। সেখানে উপস্থিত নুসরাত আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন এবং কাঁদতে থাকেন। মুর্তজা তাঁর মাকে জড়িয়ে ধরলেন। এরপর পুলিশ তাঁকে নিয়ে গেল এবং করাচির ল্যান্ডি জেলখানায় পাঠিয়ে দিল। পরবর্তী আট মাস সেটাই ছিল তাঁর ঘর।
আগামীকাল: জারদারি, নায়ক না খলনায়ক?
গ্রন্থনা ও ভাষান্তর: সোহরাব হাসান।
দামেস্কে তাঁদের কথোপকথনের কথা উল্লেখ করে মা বলেছেন, বেনজিরের বক্তব্য হলো, এ ক্ষেত্রে তাঁর বিকল্প ছিল না। কে তাঁকে বিয়ে করবেন? একজন ক্ষমতাবান নারী এবং জনগণের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর ব্যস্ত জীবনের পেছনের সারিতে বসতে রাজি থাকবেন? তিনি ইয়াসির আরাফাতের কথাও ভেবেছিলেন। মা বললেন, তাঁর (আরাফাত) কথা বলায় বেনজিরের মুখে মৃদু হাসির রেখা ফুটে উঠেছিল। তিনি ভেবেছিলেন, আরাফাতই হতে পারেন তাঁর উপযুক্ত সঙ্গী।
করাচির মানুষের ধারণা, জিয়াউল হকের সচিব রোয়েদাদ খান আসিফের মাকে বেনজিরের কাছে প্রস্তাব পাঠানোর পরামর্শ দিলেন। আসিফের মা ধারণাটি দিলেন জুলফিকার আলী ভুট্টোর বোন মান্নাকে।
লারকানার বাসিন্দা ড. সিকান্দার জাতুই আসিফ জারদারির নাম শুনেই মন্তব্য করেছেন, ‘বিয়ের আগে তিনি ছিলেন রাস্তার ছেলে, কে তাঁকে চিনত? কেউ না।’
পিপিপি কর্মীসোহেল জবাব দিয়েছেন কূটনৈতিক ভাষায়। ‘তাঁর বাবা হাকিম জারদারি ১৯৭০ সালে শত বছরের পুরোনো শহর নওয়াবশাহ থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন এবং পিপিপিতে যোগ দিয়েছিলেন। প্রেসিডেন্ট হয়ে জারদারি শহরের নাম পরিবর্তন করে রেখেছেন ‘শহীদ মোহাতারেমা বেনজির ভুট্টো’র নামে। ভুট্টোর জীবদ্দশায়ই হাকিম ভুট্টো পিপিপি ত্যাগ করেন অথবা তাঁকে বের করে দেওয়া হয়। তিনি ভুট্টোর বিরোধী ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টিতে যোগ দিয়ে সিন্ধুর প্রাদেশিক প্রধান হয়েছিলেন। তিনি আরও জানান, ‘ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি তোমার দাদার (জুলফিকার আলী ভুট্টো) বিরোধী জোটের শরিক ছিল এবং জিয়াউল হককে সমর্থন করেছিল।’ তারা স্লোগান তুলেছিল, ‘একবার নয়, ভুট্টোকে শতবার ফাঁসি দাও।’ তবে সোহেলও স্বীকার করেন, মি. বেনজির হওয়ার আগে আসিফ জারদারিকে কেউ চিনত না। করাচির সুধী মহলে তিনি ছিলেন অনাহূত ব্যক্তি।
আগস্টের শেষ দিকে মা ও আমি একসঙ্গে পাকিস্তান সফর করি। এটি ছিল তাঁর প্রথম ও আমার দ্বিতীয় সফর। করাচিতে এসে বাড়ির চেয়েও বেশি আপন মনে হয়। কিন্তু মায়ের জন্য এটি ছিল বেশ কঠিন। তিনি বললেন, ‘মীর (মুর্তজা) কখনো দেশের বাইরে থাকার কথা ভাবেননি। তিনি সব সময় দেশে ফেরার কথা বলতেন, কিন্তু আমার কাছে মনে হতো তা সম্ভব নয়। যখনই আমি ফ্ল্যাটের কিছু পরিবর্তন করতে চাইতাম। মীর বলতেন, এটি আমাদের নয়। আমরা শিগগিরই দেশে ফিরে যাব।’
মুর্তজা দেশে ফেরা নিয়ে তাঁর মায়ের (নুসরাত) সঙ্গেও আলোচনা করতেন। জিয়াউল হকের আমলে শুরু হওয়া নির্বাসিত জীবন তাঁর মৃত্যুর পরই শেষ হওয়া উচিত। নুসরাতও তাঁকে সমর্থন করতেন। কিন্তু পরিবারের অন্য সদস্য বেনজির বাধা দিতেন।
মুর্তজা যখন দেশে ফিরে সামরিক শাসনামলের রাষ্ট্রদোহসহ সব মামলা মোকাবিলা করবেন বলে জানালেন, তখন বেনজির বললেন, ‘মীর, দয়া করে এখনই এসো না। সেটি হবে আমার জন্য আরও কঠিন অবস্থা।’
বেনজির আরও বললেন, আইএসআই তাঁর (মুর্তজার) ফাইলগুলো হারিয়ে ফেলেছে। ফলে কেউ জানেন না তাঁর বিরুদ্ধে সামরিক জান্তা কতগুলো মামলা ঠুকেছিল। তিনি এও জানালেন, ‘তাঁর (বেনজির) হাত বাঁধা।’
বেনজির সরকারের বিদায়টা সুখকর হয়নি। জাতিগত ও সম্প্রদায়গত সহিংসতা বেনজিরের দ্বিতীয় সরকারকেও মেঘাচ্ছন্ন করে তুলল। ব্যাপকভিত্তিক মানবাধিকার লাঞ্ছিত হওয়ার অভিযোগ উঠল, যার সূচনা হয়েছিল তাঁর প্রথম সরকারের আমলেই। ১৯৮৯ সালে, দেশ বিভাগের পর ভারত থেকে আসা মোহাজির ও স্থানীয় সিন্ধ জনগোষ্ঠীর সংঘাত-সংঘর্ষ এমন পর্যায়ে পৌঁছাল যে প্রধানমন্ত্রী নিজেও স্বীকার করতে বাধ্য হলেন, সিন্ধুতে যা ঘটেছে তা নিয়ন্ত্রণের বাইরে এবং ‘মিনি বিদ্রোহ’।
সোহেল বললেন, ‘বেনজিরের ২০ মাস স্থায়ী সরকারের আমলে মুর্তজা নীরব ছিলেন। এমনকি যা ঘটেছে তার সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করলেও কিছু বলেননি। তিনি রাজনৈতিক ও গণতান্ত্রিক পথই বেছে নিলেন। তিনি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার সিদ্ধান্ত নিলেন। কিন্তু নির্বাসনে থেকে কজন নির্বাচনে জয়ী হতে পারেন? ১৯৯৩ সালের গ্রীষ্মে মুর্তজা তাঁর মনস্থির করে ফেললেন, দেশে ফিরবেন। তিনি নির্বাচনে দলীয় প্রার্থিতার জন্য নুসরাতকে দরখাস্ত করতে বললেন। কিন্তু পিপিপির অস্থায়ী চেয়ারপারসন বেনজির ও তাঁর স্বামী জারদারিই দলীয় প্রার্থী বাছাই করতেন। বেনজির সরাসরি মুর্তজার সঙ্গে কথা বললেন। বেনজির তাঁকে দলীয় মনোনয়ন দিতে অস্বীকৃতি জানালেন এবং বললেন, ‘সত্যিই যদি মুর্তজা দেশে ফিরতে চান, তাহলে তাঁকে সিরিয়া ছেড়ে লন্ডনে কয়েক বছর থাকতে হবে, সমাজতন্ত্রের চিন্তা বাদ দিতে হবে। তারপরই এবার বা পরের নির্বাচনে তাঁর মনোনয়নের ব্যাপারে আলোচনা করা যেতে পারে।’
মুর্তজা দৃঢ়তার সঙ্গে তাঁকে বললেন, ‘আমি এবারের নির্বাচনেই লড়ব।’ তিনি নয়টি আসনের কথা বললেন, যা ইতিমধ্যে জারদারি ও তাঁর ঘনিষ্ঠদের দেওয়া হয়ে গেছে। বেনজির তাঁর অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করে বললেন, ‘আমি তোমাকে ও তোমার লোককে নয়টি আসন দিতে পারব না।’
তিনি মুর্তজাকে প্রাদেশিক পরিষদের একটি আসনের প্রস্তাব দিলেন।
মুর্তজা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সিদ্ধান্ত নিলেন। ১৯৯০ সালের আগস্টে মা জুলফিকে নিয়ে পাকিস্তানে এলেন বাবার মনোনয়নপত্র জমা দিতে।
মুর্তজা যখন পাকিস্তান অবতরণ করলেন, তখন রাত। পুলিশ ছিল খুবই আক্রমণাত্মক। তাঁরা রাতের আঁধারে বহু পার্টি-কর্মীকে জেলখানায় নিয়ে গেল এবং জনসমাবেশ ভেঙে দিতে মরিয়া হয়ে উঠল, কিন্তু জনসমাবেশ ভাঙা সম্ভব হলো না। মুর্তজাকে অভ্যর্থনা জানাতে আসা জনতাকে পুলিশ ছত্রভঙ্গ করতে গেলে তাঁরা তাদের যানবাহনে পাথর ছুড়ে মারে।
মুর্তজা একা নিচে নেমে এলেন এবং প্রথমবারের মতো রাতের করাচি প্রত্যক্ষ করলেন। তিনি টারমাকে নামলেন ও মাটিতে চুমু খেলেন। সেখানে উপস্থিত নুসরাত আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন এবং কাঁদতে থাকেন। মুর্তজা তাঁর মাকে জড়িয়ে ধরলেন। এরপর পুলিশ তাঁকে নিয়ে গেল এবং করাচির ল্যান্ডি জেলখানায় পাঠিয়ে দিল। পরবর্তী আট মাস সেটাই ছিল তাঁর ঘর।
আগামীকাল: জারদারি, নায়ক না খলনায়ক?
গ্রন্থনা ও ভাষান্তর: সোহরাব হাসান।
No comments