দিনাজপুর গম ও ভুট্টা গবেষণা ইনস্টিটিউটে নজিরবিহীন ঘটনা
জানা গেছে, তাদের রাহুগ্রাস থেকে প্রতিষ্ঠানটি বাঁচাতে কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ এলাকাবাসী আন্দোলন শুরু করলে তাতে বাধা দিয়ে আন্দোলন দমনের পাঁয়তারা করে ফারুক গং। তাদের হাত থেকে বাংলাদেশ গম ও ভুট্টা গবেষণা ইনস্টিটিউটকে উদ্ধার করাই এখন প্রতিষ্ঠানটির সকল কর্মকর্তা-কর্মচারী ও দিনাজপুরবাসীর প্রাণের দাবি। ইতিমধ্যে ড. গোলাম ফারুক পরিচালকের পদ থেকে পদত্যাগের দাবিতে কৃষি উপদেষ্টাসহ বিভিন্ন দপ্তরে স্মারকলিপি প্রদান করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ। সূত্র মতে সাম্প্রতিক ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের আগের দিন রাজধানীর খামারবাড়ীতে ‘শান্তি সমাবেশে’ কর্মকর্তাদের আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে মাঠে নামান কৃষি মন্ত্রণালয়ের সাবেক সিনিয়র সচিব ও শেখ হাসিনার উপদেষ্টা মসিউর রহমানের ভাগ্নি ওয়াহেদা আক্তার। এ কারণে কৃষি মন্ত্রণালয়ে তার একচ্ছত্র আধিপত্য ছিল। ক্ষমতা ব্যবহার করে বিভিন্ন অধিদপ্তরে নিজের পছন্দের লোককে বসিয়েছেন। ওয়াহিদা দু’জন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাকে ডিঙিয়ে নিজের ক্লাসমেট গোলাম ফারুককে গম ও ভুট্টা গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক পদে বসান। তিনি ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমাতে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যখন মাঠে নামান, তখন তারই অনুগত ও আস্থাভাজন কর্মকর্তা দিনাজপুরের গম ও ভুট্টা গবেষণা ইনস্টিটিউটের তৎকালীন মহাপরিচালক ড. গোলাম ফারুক খামারবাড়ীর ওই শান্তি সমাবেশে পোস্টার-প্ল্যাকার্ড নিয়ে অংশ নেন।
২০২১ সালের ২৬শে নভেম্বর ড. গোলাম ফারুককে মহাপরিচালকের দায়িত্ব দেয়া হয়। ইনস্টিটিউটের তৎকালীন পরিচালক (অর্থ ও প্রশাসন) সিনিয়র বিজ্ঞানী ড. মো. আবু জামান সরকার ও পরিচালক (পরিকল্পনা, মূল্যায়ন ও প্রযুক্তি হস্তান্তর) ড. সালাহ্উদ্দিন আহমেদকে ডিঙিয়ে তাকে এ পদে বসানো হয়। আর গোলাম ফারুক ডিজি হওয়ার পর তিনিও জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে কর্মকর্তাদের পদায়ন করেছেন। তৎকালীন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের দলীয় সমর্থক হিসেবে পরিচিত জুনিয়র কর্মকর্তাদের নানা সুযোগ-সুবিধা দিয়েছেন। দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে পুরস্কৃত করেছেন। গবেষণা প্রতিষ্ঠানটিকে তিনি ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছেন। বর্তমানে সব জায়গা থেকে বিগত সরকারের আশীর্বাদপুষ্টরা বিদায় নিচ্ছেন। অথচ ড. গোলাম ফারুককে শুধু পদাবনতি করা হয়েছে। পরবর্তীতে তাকে পরিচালক হিসেবে পদায়ন করে তার দুর্নীতির রাজত্ব চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দেয়া হয়েছে। ফলে তিনি বহাল তবিয়তেই আছেন। একাধিক বিজ্ঞানী জানান, ড. গোলাম ফারুক বিভিন্ন প্রকল্পের পরিচালকদের কাছ থেকে নিয়মিত ঘুষ নিতেন। প্রতি মাসে দু’-তিনবার ঢাকায় যাওয়ার সময় সচিবের নাম করে বিভিন্ন প্রকল্প থেকে ১০-১২ লাখ টাকা নিতেন।
ড. গোলাম ফারুকের পদাবনতি নয়, পুরোপুরি অপসারণ চান প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ এলাকাবাসী। বিক্ষুব্ধ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জানান, আমরা ইনস্টিটিউটের সামনে দিনাজপুর-দশমাইল মহাসড়কে মানববন্ধন কর্মসূচির প্রস্তুতি নিতে গেলে এসএ রুবেল ও ডিজি’র গাড়িচালক মিজানুর রহমানের নেতৃত্বে ইনস্টিটিউটের একজন কর্মকর্তা, শ্রমিক-কর্মচারী হামলা চালায়। এতে ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানী মো. আসাদুজ্জামান চৌধুরী ও মো. নূরে আলম আহত হন। কিন্তু এসব হামলা ও ভয়ভীতি দেখিয়ে কোনো লাভ নেই। সকল প্রকার বৈষম্যের বিরুদ্ধে, দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান অত্যন্ত পরিষ্কার। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা বলেন, গোলাম ফারুক বিগত ফ্যাসিবাদী সরকারের দোসর ছিলেন। তিনি ও তার সহযোগী প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা বঙ্গবন্ধু কৃষিবিদ পরিষদের নেতা ও সাবেক হাবিপ্রবি ছাত্রলীগের নেতা ড. মো. আব্দুল হাকিম ঢাকায় ছাত্র-জনতার বিরুদ্ধে মাঠে নেমে আন্দোলন করেছেন। তারা অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটিকে ধ্বংস করেছেন। দুর্নীতিবাজ এই হাকিমের বিরুদ্ধে দুদকের একটি মামলায় তদন্ত চলমান রয়েছে। আমরা তাদের শুধু পদাবনতি নয়, পুরোপুরি অপসারণ বা বদলি চাই। এই সম্ভাবনাময় ইনস্টিটিউটটি তাদের জন্য ধ্বংস হোক- তা আমরা কেউই চাই না। এ ব্যাপারে গম ও ভুট্টা গবেষণা ইনস্টিটিউটের বর্তমান পরিচালক ড. গোলাম ফারুকের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
No comments