কোন পথে ঢাকা-ইসলামাবাদ সম্পর্ক!
সমপ্রতি বাংলাদেশি একজন অধ্যাপকের একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। সেখানে দেখা গেছে যে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক শহীদুজ্জামান এক সমাবেশে বক্তব্য রাখতে গিয়ে ভারতকে মোকাবিলা করতে পাকিস্তানের সঙ্গে পারমাণবিক চুক্তির প্রস্তাব করেন। তিনি প্রস্তাব দেয়ার মুহূর্তেই হলঘরে করতালির বজ্রধ্বনি ওঠে। এমনকি তিনি প্রস্তাব করেছিলেন যে, বাংলাদেশের উচিত পাকিস্তানকে ভারতীয় সীমান্তে মাঝারি পাল্লার ঘৌরি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করতে বলা। একদিন পর আরেক অধ্যাপক একটি ভিডিও করেন এবং ধারণাটিকে সমর্থন করেন। মন্তব্যের ঘরে স্ক্রোল করে দেখা গেছে, পাকিস্তানের সঙ্গে পারমাণবিক চুক্তির ধারণাটি বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের কাছ থেকে অপ্রতিরোধ্য সমর্থন পেয়েছে। প্রস্তাবের বিরুদ্ধে একটি মন্তব্যও পাওয়া যায়নি। প্রফেসর ড. শহীদুজ্জামানের এ প্রস্তাব নিয়ে কলাম লিখেছেন দ্য এক্সপ্রেস ট্রিবিউনের আন্তর্জাতিক বিষয়ক বিশেষ প্রতিনিধি কামরান ইউসুফ। সেখানে তিনি লিখেছেন, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের মধ্যে পারমাণবিক চুক্তি সম্ভব কিনা তা নিয়ে আমরা এখানে বিতর্ক করবো না। এখানে আসল গল্পটি হচ্ছে, পারমাণবিক চুক্তির মাধ্যমে একটি দেশ সম্পর্কে অপ্রতিরোধ্য ইতিবাচক অনুভূতি, যে দেশটি দীর্ঘদিন ধরে বাঙালি জনগণের বিরুদ্ধে নিপীড়ন ও অবিচারের অভিযোগে অভিযুক্ত ছিল। যে অধ্যাপক একটি পারমাণবিক চুক্তির প্রস্তাব করেছিলেন তিনি আরও বলেছিলেন যে, তিনি জানেন ১৯৭১ সালে যা ঘটেছিল তাতে পাকিস্তানের জনগণও আহত হয়েছিল। কয়েক মাস আগেও বাংলাদেশে এই ধরনের অনুভূতির প্রকাশ কল্পনা করা যায় না। শেখ হাসিনার অধীনে পাকিস্তান-বাংলাদেশ সম্পর্ক আরও খারাপ হয়েছে। তার ১৫ বছরের দীর্ঘ শাসনামলে, ঢাকায় ভারতের তুলনায় পাকিস্তানি কূটনীতিকদের বাংলাদেশি নিরাপত্তা পরিষেবার কাছ থেকে বেশি হয়রানি সহ্য করতে হয়েছিল। সেই সময়ে সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করা একটি কঠিন কাজ ছিল। দুই দেশের সম্পর্কের প্রকৃতি এমনই ছিল যে ঢাকায় একজন পাকিস্তানি হাইকমিশনারকে অপহরণের চেষ্টার সম্মুখীন হতে হয়। হাসিনা ভারতের একজন কট্টর মিত্র ছিলেন এবং তিনি দিল্লির অনুমতি না নিয়ে কখনোই পাকিস্তানের দিকে এক ইঞ্চি অগ্রসর হননি। যদিও ১৯৭১ সালের যুদ্ধের সঙ্গে সম্পর্কিত ঘটনাগুলো দুঃখজনক ছিল এবং পাকিস্তানের অনেকেই এখন তা স্বীকার করছে। কিন্তু হাসিনা সরকার সর্বদা ভারতের বয়ানকে উস্কে দিয়েছে। তিনি সর্বদা ইসলামাবাদকে ক্ষমা চাওয়ার পাশাপাশি গণহত্যার অভিযোগও স্বীকার করার দাবি জানিয়েছেন। পাকিস্তান অতীতকে কবর দিতে ইচ্ছুক ছিল কিন্তু শেখ হাসিনার শর্তে নয়, যিনি ইসলামাবাদকে অপমান করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু কয়েক সপ্তাহের সহিংস বিক্ষোভের পর তাকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর, বাংলাদেশ-পাকিস্তান সম্পর্কের সংশোধনের জন্য নতুন সূচনা হয়েছে। উল্লিখিত অধ্যাপকের অনুভূতি এবং সাধারণ জনগণের সমর্থন তার একটি উদাহরণ হতে পারে। বাংলাদেশের সঙ্গে যারা ডিল করেন তারা আমাকে বলেছেন যে, পাকিস্তান ঢাকার সঙ্গে সম্পর্ক পুনঃস্থাপনের সুযোগ পেয়েছে এতে কোনো সন্দেহ নেই। পরিবর্তনের হাওয়া অনুমান করা যায় যে, শেখ হাসিনার পুরো ১৫ বছরের মেয়াদের চেয়ে গত দেড় মাসে পাকিস্তানি কূটনীতিকরা বাংলাদেশি কর্মকর্তাদের সঙ্গে বেশি বৈঠক করেছেন। যাই হোক, কর্মকর্তারা স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন যে, ১৯৭১ একটি সমস্যা রয়ে গেছে এবং এখান থেকে উত্তরণের জন্য যথাযথ উদ্যোগ প্রয়োজন। তাহলে, সেই করুণ অতীতকে পেছনে ফেলে সামনে এগিয়ে যাওয়ার এটাই কি সেরা সময়? অবশ্যই, এটা আওয়ামী লীগ সরকারের বিপরীতে, বাংলাদেশের বর্তমান সেট আপ এবং জনগণ পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্কের গতিবিধি দেখতে চায়। এটা বোধগম্য যে, ক্ষমা চাওয়ার প্রভাব রয়েছে। ঢাকায় এখন অনুকূল পরিবেশ থাকায় পাকিস্তান সাহসী পদক্ষেপ নিতে পারে। পাকিস্তান চাইলে বাংলাদেশি সরকারের সঙ্গে যুক্ত হতে পারে এবং একটি যৌথ বিবৃতিতে সম্মত হতে পারে; যার মাধ্যমে ১৯৭১ সালের ট্র্যাজেডির অবসান ঘটানো সম্ভব হবে। নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ এবং বাংলাদেশ সরকার প্রধান অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মধ্যে একটি বৈঠকের আশা করা হচ্ছে। বহু বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে দুই দেশের মধ্যে প্রথম বৈঠক, এতে বরফ ভাঙতে পারে। পাকিস্তানের কাছে বাংলাদেশের আলাদা গুরুত্ব রয়েছে। তাই, এটি বিশেষ মনোযোগের দাবি রাখে যে, বাংলাদেশের সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে হবে।
No comments