ঋণ সুবিধার জন্য চার উপদেষ্টা ও গভর্নরকে বেক্সিমকো’র চিঠি
অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুরের কাছে এই চিঠি দিয়েছে বেক্সিমকো’র টেক্সটাইল ও অ্যাপারেল বিভাগ।
ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওসমান কায়সার চৌধুরী স্বাক্ষরিত গত ১৯শে সেপ্টেম্বর পাঠানো চিঠিতে বেক্সিমকো’র সব দেনা সুদমুক্ত ব্লক অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর করার অনুরোধ করা হয়। সুদমুক্ত ব্লক অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর করার অর্থ হলো কোম্পানিকে তার দেনা পরিশোধে বিলম্বের জন্য কোনো সুদ দিতে হবে না।
উল্লেখ্য, চলতি বছরের জুন শেষে জনতা ব্যাংকের কাছে বেক্সিমকো’র মোট ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৫,০০০ কোটি টাকা। সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বেক্সিমকো’র ভাইস চেয়ারম্যান, যিনি বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন। বেক্সিমকো গ্রুপে প্রায় ৪০ হাজার মানুষ কর্মরত।
আবেদনপত্রে বলা হয়, গত ৫ই আগস্ট বিগত সরকার পতনের পর বেক্সিমকো’র রপ্তানিভিত্তিক পণ্য, কারখানা এবং সংশ্লিষ্ট অবকাঠামোগুলোয় দুর্বৃত্তরা অগ্নিসংযোগ ও ব্যাপক লুটতরাজ চালিয়েছে। এর ফলে বেক্সিমকো’র হাতে কোনো কার্যকরী মূলধন অবশিষ্ট নেই, যা দিয়ে রপ্তানি কার্যক্রম চালু রাখা সম্ভব। এরই মধ্যে প্রতিষ্ঠানটির কিছু গ্রাহক তাদের ক্রয়াদেশ (অর্ডার) বিকল্প গন্তব্যে স্থানান্তর শুরু করেছে এবং উৎপাদন ক্ষমতার তুলনায় এখন বেক্সিমকো’র কাছে পণ্যের ক্রয়াদেশ অনেক কম। এই পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে কোম্পানি তার গ্রাহকদের চিরতরে হারাবে। বর্তমান পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে কর্মী ছাঁটাইয়ের পাশাপাশি অন্যান্য ব্যয় হ্রাসের পদক্ষেপ নিতে হবে বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
বিদ্যমান ও ভবিষ্যতের সব রপ্তানি ঋণপত্রের (এলসি) বিপরীতে প্রয়োজনীয় ব্যাক-টু-ব্যাক ঋণপত্র খোলার (প্রাথমিক রপ্তানি ঋণপত্রের নিরাপত্তা হিসেবে) ক্ষেত্রে জনতা ব্যাংকের সহযোগিতা চেয়েছে বেক্সিমকো গ্রুপ। আবেদনপত্রে প্রতিটি রপ্তানি ঋণপত্রের বিপরীতে স্থানীয়ভাবে সংগ্রহ করা কাপড় ও আনুষঙ্গিক উপকরণ সরবরাহের ক্ষেত্রে ১০ মার্জিনে বিল ডিসকাউন্ট সুবিধা ও প্যাকিংয়ে ১৫ শতাংশ ক্রেডিট সুবিধা চাওয়া হয়েছে।
এছাড়া, সংশ্লিষ্ট রপ্তানি আয় থেকে সুদ ও অন্যান্য চার্জ সমন্বয়ের পর মেয়াদপূর্ণ অর্থ (ম্যাচিউরিটি অ্যামাউন্ট) প্রদানের অনুরোধ করেছে বেক্সিমকো। সাধারণত ঋণ বা ক্রেডিট সুবিধার মেয়াদ শেষে মেয়াদপূর্তির অর্থ প্রদান করা হয়। এক্ষেত্রে, রপ্তানিকারকের নেয়া ঋণ বা অগ্রিম যেমন ব্যাক-টু-ব্যাক এলসি বা প্যাকিং ক্রেডিটকে বোঝানো হয়।
বেক্সিমকো জনতা ব্যাংকের কাছ থেকে ৫৫ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে আগস্টের জন্য ৬৯ কোটি ৫ লাখ টাকা কর্মীদের বেতন হিসেবে পরিশোধ করেছে। তবে সেপ্টেম্বরের ৬৫ কোটি টাকার কর্মীদের বেতন কীভাবে দেয়া হবে তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে কর্তৃপক্ষ। এ পর্যন্ত প্রাপ্ত ও প্রাপ্য রপ্তানি আয় থেকে এ পরিমাণ অর্থ সমন্বয় করতে জনতা ব্যাংকের কাছে বিশেষভাবে অনুরোধ জানিয়েছে বেক্সিমকো।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, বেক্সিমকো ২০২৪ সালের ১৪ই মে’র পর থেকে বেক্সিমকো জনতা ব্যাংকের কাছ থেকে কোনো ধরনের ক্রেডিট সুবিধা পায়নি।
No comments