‘চীনের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন হলে হুমকিতে পড়বে ইউরোপের বৃহত্তম অর্থনীতিও’

চীনের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করলে জার্মানির বেশিরভাগ শিল্প হুমকিতে পড়বে। বিলাসবহুল গাড়ি নির্মাতা কোম্পানি মার্সিডিজ বেঞ্জের সিইও ওলা ক্যালেনিয়াস এমন সাবধান বার্তা দিয়েছেন। রোববার চীনে এক ব্যবসায়িক সফর শেষে জার্মানিতে ফেরেন তিনি। ফেরার পর তার সাক্ষাৎকার নিয়েছে জার্মান গণমাধ্যম বিল্ড। সেখানেই তিনি চীনের সঙ্গে পশ্চিমাদের সম্পর্ক ধরে রাখার গুরুত্বের ওপরে জোর দেন।

আরটি জানিয়েছে, মার্সিডিজ- বেঞ্জের সবথেকে বড় ক্রেতা চীন। ফলে চীনের বাজার গাড়ি কোম্পানিটির জন্য সবথেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে জার্মানিসহ গোটা ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গেই চীনের সম্পর্ক নানা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। ইইউ ক্রমশ চীনের উপরে নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে বলে উদ্বেগ রয়েছে একটি পক্ষের মধ্যে। তবে ওলা মনে করেন, বিশ্ব অর্থনীতির তিনটি বড় খেলোয়াড় হচ্ছে চীন, ইইউ ও যুক্তরাষ্ট্র। তারা একে অপরের সঙ্গে এত বেশি যুক্ত যে কাউকে আলাদা করে দেয়ার কোনো অর্থই হয় না।

তিনি আরও বলেন, চীনের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার চিন্তা একটি ভ্রম মাত্র, এটি মোটেও কাম্য কিছু নয়। 

চীনের আছে বিশ্বের সবথেকে বড় গাড়ির বাজার। বিশ্বের গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর টার্গেটই থাকে চীনের বাজার। জার্মানি গাড়ি নির্মাতা কোম্পানিগুলোর আয়ের বড় একটি অংশই আসে চীন থেকে। মার্সিডিজ-বেঞ্জের সবথেকে বড় শেয়ারহোল্ডার হচ্ছে চীনের বিএআইসি গ্রুপ এবং গিলি চেয়ারম্যান লি শুফু। রয়টার্সের হিসাবে, ২০২২ সালে যত মার্সিডিজ-বেঞ্জ গাড়ি বিক্রি হয়েছে তার ৩৭ শতাংশই হয়েছে চীনে। আয়ের ১৮ শতাংশ গিয়েছে চীন থেকে। 

তবে ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযান শুরুর পর চীনের সঙ্গে পশ্চিমাদের দূরত্ব বাড়ছে। নিন্দা জানানোর পরিবর্তে চীন রাশিয়াকে পরম মিত্রের মতো কাছে টেনে নিয়েছে। পশ্চিমাদের আশঙ্কা, রাশিয়ার কোনো অস্ত্র ঘাটতি দেখা দিলে চীন তা পূরণে এগিয়ে আসতে পারে। এ বছর চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং মস্কো সফর করেছেন এবং রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারে নানা বিষয়ে আলোচনা করেছেন। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য এখন ২০০ বিলিয়ন ডলারের মাইলফলক ছুঁই ছুঁই করছে। 

এছাড়া উদ্বেগ আছে তাইওয়ান নিয়েও। চীন তাইওয়ান দ্বীপকে নিজের অংশ মনে করে। কিন্তু পশ্চিমাদের উদ্বেগ যে, আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই তাইওয়ানকে নিজের নিয়ন্ত্রণে আনতে রাশিয়ার মতো সামরিক অভিযান চালাবে চীন। তাইওয়ানের প্রতি পশ্চিমাদের অব্যাহত সমর্থনকে চীনও ভালোভাবে দেখছে না। ফলে যে দূরত্বের সৃষ্টি হয়েছে তাতে যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউ ব্লকের সঙ্গে বাণিজ্যেও প্রভাব পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করার পর যেভাবে দেশটির বিরুদ্ধে নজিরবিহীন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছিল, চীনের বিরুদ্ধেও একই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে।

যদিও চীনের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞাকে ‘অচিন্তনীয়’ বলে বর্ণনা করেছেন মার্সিডিজ-বেঞ্জের সিইও। তিনি বলেন, এটি হলে গোটা জার্মানির শিল্পের জন্য অচিন্তনীয় ক্ষতি হয়ে যাবে। ইউরোপের যত রেয়ার-আর্থ ম্যাটেরিয়ালস দরকার পড়ে তার ৯৮ শতাংশই সরবরাহ করে চীন। এগুলো ব্যবহার করেই উইন্ড-পাওয়ার জেনারেশন, হাইড্রোজেন সংরক্ষণ এবং ব্যাটারি তৈরি করা হয়। ব্যাটারি তৈরিতে যে লিথিয়াম প্রয়োজন তার ৯৭ শতাংশই আসে চীন থেকে। রেয়ার আর্থ ম্যাটেরিয়াল প্রসেসিং-এ বিশ্বে শীর্ষ স্থানে রয়েছে চীন। বিশ্বের যত লিথিয়াম রয়েছে তার ৬০ শতাংশই পূর্ব এশিয়ার এই দেশটি রিফাইন করে। এছাড়া ইইউভুক্ত দেশগুলোর সোলার প্যানেলের ৮০ শতাংশই আসে চীন থেকে। 


No comments

Powered by Blogger.