ভেতরের দানবগুলোকে চিনিয়েছেন মির্জা ওয়াহিদ by তাহা কেহার
মির্জা ওয়াহিদ, ছবি: হোয়াইট স্টার |
মির্জা
ওয়াহিদের সর্বশেষ উপন্যাস টেল হার এভরিথিংয়ের প্রথম বাক্যটিই আপনাকে
স্তব্ধ করে দেবে: ‘আমি এ কাজ করি টাকার জন্য।’ এই বক্তব্য ডা. কের।
বিবেক-তাড়িত এই চিকিৎসক তার বইতে এই স্বীকারোক্তি দিয়েছেন। যাদেরকে তিনি
রক্ষা করতে চেয়েছেন, তাদেরই জীবন নষ্ট করার যে ভুলগুলো তিনি করেছেন, সেই
অপরাধ থেকেই কথাটা বলেছেন। শুরুর বাক্যগুলোর মাধ্যমেই তিনি তার প্রিয়জনদের
জন্য যে নীরব আত্মত্যাগ তিনি করেছেন, তার ইঙ্গিতও তিনি দিয়েছেন। সরল আর
জটিল সঙ্ঘাতের এসব বক্তব্যের মাধ্যমে আমাদের জীবনের অস্থির বাস্তবতা তিনি
তুলে ধরেছেন, এসব বাস্তবতার মধ্যে আমরা যেসব বিকল্প গ্রহণ করি, সেগুলো
সামনে এনেছেন।
ডা. কে একজন অবসরপ্রাপ্ত সফল চিকিৎসক, বাস করেন লন্ডনে টেমস নদীর তীরে একটি আরামদায়ক ফ্লাটে। যদিও তিনি তার উচ্চাভিলাষ পূরণ করেছেন, সাফল্য লাভ করেছেন, কিন্তু তবুও শেষ বয়সে তিনি শান্তি পাচ্ছিলেন না। ঝামেলাপূর্ণ অতীতের স্মৃতি আর তার বিচ্ছেদের শিকার মেয়ে সারার সাথে তার অস্বস্তিকর সম্পর্ক তাকে তাড়িয়েই বেড়াতে থাকে। মুক্তির সন্ধান ও ভুল সংশোধনের অস্পষ্ট আশায় তিনি তার কৃতকর্মের নাটকীয় স্বগোক্তি করেছেন। এই স্বাগোক্তিই তাকে সারার সাথে ভবিষ্যতের সংলাপের প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে দেয়। তিনি তার মেয়েকে জানাতে চান, তার মায়ের মৃত্যুর পর কেন তিনি তাকে আমেরিকার বোর্ডিং স্কুলে পাঠিয়েছিলেন।
ডা. কে স্বীকার করেন যে তার কৃতকর্ম ও উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করা জটিল হলেও তিনি এখনো তার জীবনের সত্যিকারের বক্তব্যটি তুলে ধরতে চান, যাতে তার মেয়ে তার সঠিক চিত্র তুলে ধরতে পারে। তিনি মনে মনে বলেন, নিজের সন্তানের সামনে তার মাথা নত করতে তার কোনোই লজ্জা নেই।
কোনো রৈখিক ভাষ্য ছাড়াই টেল হার এভরিথিং পাঠককে ডা. কের জীবনের প্রধান প্রধান ঘটনায় নিয়ে যায়। যেমন ভারতের সাহারানপুরের ছোট্ট শহরে এক গরিব বাবার সন্তান হিসেবে তার বেড়ে ওঠা। তিনি জানাচ্ছেন, মহাজন এসে তাদের দরজায় নক করতো। তিনি আতিয়াকে বিয়ে করেছিলেন। এই মৌনভাষী নারী ডা. কের জন্য নিজের শিক্ষা ক্যারিয়ার কোরবানি করেছিলেন।
ডা. কে প্রায়ই তার মৃত স্ত্রীর স্মৃতি সামনে নিয়ে এসেছেন তার মেয়ের সাথে একটি তাৎক্ষণিক সংযোগ সৃষ্টির জন্য। এমনকি নিজের অতীতের সমস্যাপূর্ণ ঘটনাগুলো বলার আগেও আতিয়ার প্রসঙ্গ টেনে এনেছেন।
তিনি ও তার স্ত্রীর লন্ডনে অভিবাসনের প্রথম দিকের কাহিনীও বলেছেন। তিনি জানাচ্ছেন, তুমি সবসময় মনে করতে চাও না যে তুমি অভিবাসী। কিন্তু তোমার আশপাশের সবকিছুই তোমাকে তা মনে করিয়ে দেবে।
তাকে যে পশ্চিম এশিয়ার একটি দেশের হাসপাতালে চাকরি নিতে হয়েছিল, সে কথাও তিনি বলেছেন। এর ফলে তাকে দীর্ঘ সময় স্ত্রী ও সন্তানের কাছ থেকে দূরে থাকতে হতো। তার একমাত্র লক্ষ্য ছিল যতটা সম্ভব টাকা উপার্জন করে পরিবারের আর্থিক অবস্থার উন্নতি ঘটানো। তার টাকার পেছনে ছুটে চলার তীব্র সমালোচনা করেছেন তার বন্ধু বিজু। এই লোকটি টাকার ব্যাপারে ছিল বেপরোয়া।
সময়ের পরিক্রমায় ডা. কে দেশটির বিচারব্যবস্থায় সম্পৃক্ত হয়ে পড়েন। তাকে ‘পানিশমেন্ট সার্জেন্ট’ হিসেবে নিয়োগ করা হয়। দেশের আইন অনুযায়ী দণ্ডপ্রাপ্ত আসামির অঙ্গহানির কাজে কর্তৃপক্ষকে সহায়তা করতে হতো তাকে। এই কাজটি করতে গিয়ে তিনি মানসিক দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েন। নৃশংস কাজে জড়িত হওয়াটা তার ঠিক হচ্ছে কিনা তা নিয়ে তার মধ্যে প্রশ্নের জন্ম হয়।
তবে তার স্ত্রীর মৃত্যুর পর অপরাধবোধ তাকে আচ্ছন্ন করে। তিনি কর্তৃব্য পালন করে যাবেন না প্রিয়জনকে রক্ষা করবেন, তা নিয়ে তার মধ্যে আলোড়ন সৃষ্টি হয়।
তার একটির পর একটি ঘটনার উল্লেখ্যে এই চিকিৎসকের নানা দিক ভেসে ওঠে। তিনি তার উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা, হতাশা- সবকিছুই পাঠকের সামনে উপস্থাপন করতে থাকেন।
সবচেয়ে বড় কথা, লেখার এই পদ্ধতিই উপন্যাসটিকে আরো বাস্তবসম্মত ও মর্মভেদী করে তুলেছে। উচ্চাশা চরিতার্থ করতে গিয়ে আমাদের কত মূল্য দিতে হয়, ওয়াহিদ দারুণভাবে তা খতিয়ে দেখেছেন। তিনি অসহ্যকর অপরাধবোধ সূক্ষ্মভাবে উপস্থাপন করেছেন।
আবার উপন্যাসটি যে কাহিনীকে সামনে রেখে এগিয়েছে তথা চিকিৎসকের তার মেয়ের সাথে সাক্ষাত, সেটা কিন্তু বাস্তবে ঘটেইনি। অথচ মেয়ের প্রতিক্রিয়া কী হতে পারে, তা নিয়েও তিনি কল্পিত সংলাপ দিয়েছেন। এতেই বইটি আরো ভালো হয়েছে।
ডা. কে একজন অবসরপ্রাপ্ত সফল চিকিৎসক, বাস করেন লন্ডনে টেমস নদীর তীরে একটি আরামদায়ক ফ্লাটে। যদিও তিনি তার উচ্চাভিলাষ পূরণ করেছেন, সাফল্য লাভ করেছেন, কিন্তু তবুও শেষ বয়সে তিনি শান্তি পাচ্ছিলেন না। ঝামেলাপূর্ণ অতীতের স্মৃতি আর তার বিচ্ছেদের শিকার মেয়ে সারার সাথে তার অস্বস্তিকর সম্পর্ক তাকে তাড়িয়েই বেড়াতে থাকে। মুক্তির সন্ধান ও ভুল সংশোধনের অস্পষ্ট আশায় তিনি তার কৃতকর্মের নাটকীয় স্বগোক্তি করেছেন। এই স্বাগোক্তিই তাকে সারার সাথে ভবিষ্যতের সংলাপের প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে দেয়। তিনি তার মেয়েকে জানাতে চান, তার মায়ের মৃত্যুর পর কেন তিনি তাকে আমেরিকার বোর্ডিং স্কুলে পাঠিয়েছিলেন।
ডা. কে স্বীকার করেন যে তার কৃতকর্ম ও উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করা জটিল হলেও তিনি এখনো তার জীবনের সত্যিকারের বক্তব্যটি তুলে ধরতে চান, যাতে তার মেয়ে তার সঠিক চিত্র তুলে ধরতে পারে। তিনি মনে মনে বলেন, নিজের সন্তানের সামনে তার মাথা নত করতে তার কোনোই লজ্জা নেই।
কোনো রৈখিক ভাষ্য ছাড়াই টেল হার এভরিথিং পাঠককে ডা. কের জীবনের প্রধান প্রধান ঘটনায় নিয়ে যায়। যেমন ভারতের সাহারানপুরের ছোট্ট শহরে এক গরিব বাবার সন্তান হিসেবে তার বেড়ে ওঠা। তিনি জানাচ্ছেন, মহাজন এসে তাদের দরজায় নক করতো। তিনি আতিয়াকে বিয়ে করেছিলেন। এই মৌনভাষী নারী ডা. কের জন্য নিজের শিক্ষা ক্যারিয়ার কোরবানি করেছিলেন।
ডা. কে প্রায়ই তার মৃত স্ত্রীর স্মৃতি সামনে নিয়ে এসেছেন তার মেয়ের সাথে একটি তাৎক্ষণিক সংযোগ সৃষ্টির জন্য। এমনকি নিজের অতীতের সমস্যাপূর্ণ ঘটনাগুলো বলার আগেও আতিয়ার প্রসঙ্গ টেনে এনেছেন।
তিনি ও তার স্ত্রীর লন্ডনে অভিবাসনের প্রথম দিকের কাহিনীও বলেছেন। তিনি জানাচ্ছেন, তুমি সবসময় মনে করতে চাও না যে তুমি অভিবাসী। কিন্তু তোমার আশপাশের সবকিছুই তোমাকে তা মনে করিয়ে দেবে।
তাকে যে পশ্চিম এশিয়ার একটি দেশের হাসপাতালে চাকরি নিতে হয়েছিল, সে কথাও তিনি বলেছেন। এর ফলে তাকে দীর্ঘ সময় স্ত্রী ও সন্তানের কাছ থেকে দূরে থাকতে হতো। তার একমাত্র লক্ষ্য ছিল যতটা সম্ভব টাকা উপার্জন করে পরিবারের আর্থিক অবস্থার উন্নতি ঘটানো। তার টাকার পেছনে ছুটে চলার তীব্র সমালোচনা করেছেন তার বন্ধু বিজু। এই লোকটি টাকার ব্যাপারে ছিল বেপরোয়া।
সময়ের পরিক্রমায় ডা. কে দেশটির বিচারব্যবস্থায় সম্পৃক্ত হয়ে পড়েন। তাকে ‘পানিশমেন্ট সার্জেন্ট’ হিসেবে নিয়োগ করা হয়। দেশের আইন অনুযায়ী দণ্ডপ্রাপ্ত আসামির অঙ্গহানির কাজে কর্তৃপক্ষকে সহায়তা করতে হতো তাকে। এই কাজটি করতে গিয়ে তিনি মানসিক দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েন। নৃশংস কাজে জড়িত হওয়াটা তার ঠিক হচ্ছে কিনা তা নিয়ে তার মধ্যে প্রশ্নের জন্ম হয়।
তবে তার স্ত্রীর মৃত্যুর পর অপরাধবোধ তাকে আচ্ছন্ন করে। তিনি কর্তৃব্য পালন করে যাবেন না প্রিয়জনকে রক্ষা করবেন, তা নিয়ে তার মধ্যে আলোড়ন সৃষ্টি হয়।
তার একটির পর একটি ঘটনার উল্লেখ্যে এই চিকিৎসকের নানা দিক ভেসে ওঠে। তিনি তার উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা, হতাশা- সবকিছুই পাঠকের সামনে উপস্থাপন করতে থাকেন।
সবচেয়ে বড় কথা, লেখার এই পদ্ধতিই উপন্যাসটিকে আরো বাস্তবসম্মত ও মর্মভেদী করে তুলেছে। উচ্চাশা চরিতার্থ করতে গিয়ে আমাদের কত মূল্য দিতে হয়, ওয়াহিদ দারুণভাবে তা খতিয়ে দেখেছেন। তিনি অসহ্যকর অপরাধবোধ সূক্ষ্মভাবে উপস্থাপন করেছেন।
আবার উপন্যাসটি যে কাহিনীকে সামনে রেখে এগিয়েছে তথা চিকিৎসকের তার মেয়ের সাথে সাক্ষাত, সেটা কিন্তু বাস্তবে ঘটেইনি। অথচ মেয়ের প্রতিক্রিয়া কী হতে পারে, তা নিয়েও তিনি কল্পিত সংলাপ দিয়েছেন। এতেই বইটি আরো ভালো হয়েছে।
No comments