ফিকহ অব সোশ্যাল মিডিয়া: শায়খ সুলাইমান আর-রুহাইলি
যদি
সোশ্যাল মিডিয়া হারাম কাজে জড়ানোর মাধ্যম হয়ে দাঁড়ায়, তাহলে এটা অনেক বড়
জুলুমের পথ খুলে দেয়। যখন মানুষ বিভিন্ন হারাম কাজে জড়িয়ে পড়ে, কোনো সন্দেহ
নেই এটি নিজের প্রতি অনেক বড় জুলুম হিসেবে গণ্য হয়। সোশ্যাল মিডিয়ার
মাধ্যমে মানুষ যেসব হারামে জড়িয়ে পড়ে তার মধ...।
এক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করল : শায়খ, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করার ক্ষেত্রে আপনার নসিহত কী? কারণ অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অতিরিক্ত সময় কাটানোর ফলে অনেকে নিজের সন্তানদের সময় দেওয়া এবং অন্যান্য দায়িত্ব পালনে অবহেলা করেন।
উত্তর : প্রিয় ভাই, প্রথমে একটা মূলনীতি জেনে নিন। তা হলো, যে বিষয় মানুষকে ওয়াজিব তথা অত্যাবশ্যকীয় কাজ থেকে বিরত রাখে, তাতে লিপ্ত হওয়া হারাম। আর যে বিষয় মানুষকে ফজিলতপূর্ণ কোনো কাজ থেকে বিরত রাখে, তাতে লিপ্ত হওয়া মাকরুহ।
সুতরাং যদি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম কারও ওয়াজিব দায়িত্ব বা কর্তব্য পালনের ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়ায়; তবে এটি ব্যবহার করা তার জন্য হারাম হবে। যেমনÑ কেউ এটি ব্যবহার করার ফলে নিজের সন্তানের পরিচর্যা করে না, তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করে না; বরং এখন তো এমন অবস্থা হয়েছে যে, যারা চাকরিজীবী তারাও নিজের অফিসে এসব সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম নিয়েই পড়ে থাকে, নিজের দায়িত্ব ঠিকমতো পালন করে না। দেখা যায়, কয়েকজন সেবাপ্রার্থী অফিসে এসে দাঁড়িয়ে আছে আর ওই ব্যক্তি তার ফোন নিয়ে ব্যস্ত। কোনো কোনো সময় এমনও হয়, কেউ একজন এসে পাঁচ-দশ মিনিট দাঁড়িয়ে আছে আর ওই কর্মকর্তা তার মোবাইলে গেম খেলেই যাচ্ছে।
এক ব্যক্তি আমাকে নিজের ঘটনা বলেছিল, একবার আমি এক অফিসের কর্মকর্তার কাছে গেলাম। সে তার মোবাইল ফোনে কিছু একটা টাইপ করছিল। সে আমাকে বলল, ‘ভাই একটু অপেক্ষা করুন।’ আমি তাকে বললাম, ‘আপনার কাছে আমার একটু প্রয়োজন আছে। একটা কাজ সারার জন্য আপনার কাছে এলাম।’ সে আমাকে প্রত্যুত্তর করল, ‘তুমি দেখছ না আমি ব্যস্ত!’
তো দেখুন, এই লোকটি কিন্তু তার দায়িত্ব ঠিকভাবে পালন করছে না। সে কাজের সময়েও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম নিয়ে ব্যস্ত হয়ে আছে। হয়তো একজনকে মেসেজ পাঠাচ্ছে কিংবা অন্যজনের পাঠানো মেসেজ পড়ছে। এ রকম বিভিন্ন কাজে নিজেকে ব্যস্ত রেখেছে।
সুতরাং এ ধরনের কাজকর্ম, যা অত্যাবশ্যকীয় দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়ায়, তাতে লিপ্ত হওয়া সম্পূর্ণরূপে হারাম। আর যদি এমন হয়, ওই কাজটি ফজিলতপূর্ণ কোনো বিষয় থেকে তাকে বিরত রাখে, তাহলে সেটা করা মাকরুহ হবে।
যদি কাউকে জিজ্ঞেস করা হয়, ‘আপনি আজ কী পরিমাণ কোরআন তেলাওয়াত করেছেন?’ তিনি উত্তরে বলবেন, ‘না, আমি আজ তেলাওয়াত করিনি।’ যদি তাকে প্রশ্ন করা হয়, ‘আপনি সর্বশেষ কবে কোরআন তেলাওয়াত করেছেন?’ তিনি বলবেন, ‘সর্বশেষ গত শুক্রবার তেলাওয়াত করেছি।’ যদি এর কারণ জিজ্ঞেস করা হয়, ‘কেন তেলাওয়াত করেননি?’ জবাবে তিনি বলবেন, ‘আমি খুব ব্যস্ত ছিলাম। তাই তেলাওয়াত করার সময় পাইনি।’ যদি আমরা হিসাব করি তাহলে দেখব, তিনি যে পরিমাণ সময় এসব সোশ্যাল মিডিয়ায় নষ্ট করেছেন, যদি অর্ধেক সময়ও এসব থেকে বিরত থাকতেন, তাহলে প্রতিদিন প্রায় ৫ পারা কোরআন তেলাওয়াত করতে সক্ষম হতেন।
আর যদি এসব সোশ্যাল মিডিয়া হারাম কাজে জড়ানোর মাধ্যম হয়ে দাঁড়ায়, তাহলে এটা অনেক বড় জুলুমের পথ খুলে দেয়। যখন মানুষ বিভিন্ন হারাম কাজে জড়িয়ে পড়ে, কোনো সন্দেহ নেই এটি নিজের প্রতি অনেক বড় জুলুম হিসেবে গণ্য হয়। সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে মানুষ যেসব হারামে জড়িয়ে পড়ে তার মধ্যে রয়েছে অশ্লীল দৃশ্য দেখা, অশ্লীল কিছু পড়া অথবা এসব যোগাযোগ মাধ্যমে গাইরে মাহরাম মহিলাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা বা তাদের হয়রানি করা।
এ কারণে আমি বলি, প্রিয় ভাই আমার, এসব যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করার অনেক ভালো দিক রয়েছে, এতে বেশ কিছু ফায়দা রয়েছে। এটি দূরে অবস্থানকারীকে সহজেই কাছে নিয়ে আসছে। এসব মাধ্যম ব্যবহার করে মানুষ অনেক বইপত্র পড়তে পারছে, সংবাদ জানতে পারছে, মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করতে পারছে। তবে এগুলো ব্যবহারের ক্ষেত্রে আমাদের সতর্ক থাকা উচিত। এর ভেতরে হারাম কাজে জড়িয়ে পড়ার যেসব আশঙ্কা আছে, সেগুলো থেকে আমাদের দূরে থাকার জন্য সচেতন হতে হবে। কারণ আল্লাহ তায়ালা আমাদের দেখছেন। এসব যোগাযোগ মাধ্যমে জড়িয়ে আমরা যেন আমাদের অত্যাবশ্যকীয় কাজে অবহেলা না করি, সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। আরও লক্ষ রাখতে হবে, এগুলো ব্যবহার করার ক্ষেত্রে যেন আমরা অতিরিক্ত বাড়াবাড়িতে আক্রান্ত না হই।
আমি জানতে পেরেছি, এমন অনেক মানুষ রয়েছে, যারা একই বাড়িতে অবস্থান করা সত্ত্বেও একের সঙ্গে অপরের কোনো যোগাযোগ নেই। দেখা যায়, সন্তানরা পরস্পরে যোগাযোগ করছে হোয়াটসাপ বা এ জাতীয় বিভিন্ন সোশ্যাল অ্যাপসের মাধ্যমে। যেন একজন এক রুমে, অন্যজন আরেক রুমে। অথচ তারা দুজনে একই ঘরে অবস্থান করছে। কিন্তু কারও সঙ্গে কারও সাক্ষাৎ হচ্ছে না। যদি এক ভাইকে অপর ভাইয়ের কিছু বলার দরকার পড়ে, তখন সে তাকে নিজের রুমে বসে একটি মেসেজ পাঠিয়ে দেয়।
অনেক সময় এমনও দেখা যায়, স্বামী-স্ত্রী দুজনে একই সঙ্গে অবস্থান করছে। স্বামী মুখে মুখে বলছে, আমি আজ বাসায় সময় দেব। আজ আর বের হব না। অথচ সে তার পুরো সময়টা নিজের ফোনের মধ্যেই কাটিয়ে দিচ্ছে। ফোন নিয়েই সে ব্যস্ত হয়ে থাকছে। অপরদিকে স্ত্রীও নিজের ফোন নিয়ে ব্যস্ত থাকে। এসব যোগাযোগ মাধ্যমে অতিরিক্ত সময় কাটানোর কারণে দুজন শারীরিকভাবে কাছাকাছি থাকলেও মানসিকভাবে এবং অন্তরের দিক থেকে তারা একে অপর থেকে অনেক দূরে অবস্থান করে থাকে।
যাই হোক, নানা দিক বিবেচনায় আমি বলব, এসব যোগাযোগ মাধ্যমকে হারাম বলার কোনো দরকার নেই। বরং এগুলো ব্যবহার করা যাবে। কারণ এর মধ্যে অনেক উপকার রয়েছে। তবে আমাদের উচিত একে সঠিকভাবে ব্যবহার করা।
এক বৃদ্ধা মহিলার কাহিনি আমার খুব ভালো লেগেছিল। তার কয়েকজন ছেলে ছিল। তার সঙ্গে তারা প্রায়ই দেখা করতে আসত। যখন তিনি দেখলেন তার ছেলেরা একত্র হওয়ার সময়টাতেও যে যার ফোন নিয়ে ব্যস্ত থাকে; হয়তো একজন তার মেসেজ চেক করছে, আরেকজন কিছু টুইট করছে, তখন সেই বৃদ্ধা দরজার সামনে একটি বাক্স রাখলেন এবং বললেন, যে-ই ঘরে ঢুকবে সে যেন তার মোবাইল বাক্সে রেখে তারপর ঘরে ঢোকে। যেহেতু তোমরা আমার সঙ্গে দেখা করার জন্য ঘরের ভেতরে এসেছে সুতরাং আমার সঙ্গে তোমাদের বসতে হবে, আমার সঙ্গে কথা বলতে হবে এবং যখন এখান থেকে চলে যাবে, তখন বাক্স থেকে যার যার নিজের ফোন নিয়ে যাবে।
এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি নিয়ে যিনি প্রশ্ন করেছেন আল্লাহ তাকে জাজায়ে খাইর দান করুক। আমিন।
>>>মদিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের এ অধ্যাপকের মসজিদে নববির দরসে অনুষ্ঠিত প্রশ্নোত্তর থেকে ভাষান্তর : আবদুল্লাহ আল মাসউদ
এক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করল : শায়খ, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করার ক্ষেত্রে আপনার নসিহত কী? কারণ অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অতিরিক্ত সময় কাটানোর ফলে অনেকে নিজের সন্তানদের সময় দেওয়া এবং অন্যান্য দায়িত্ব পালনে অবহেলা করেন।
উত্তর : প্রিয় ভাই, প্রথমে একটা মূলনীতি জেনে নিন। তা হলো, যে বিষয় মানুষকে ওয়াজিব তথা অত্যাবশ্যকীয় কাজ থেকে বিরত রাখে, তাতে লিপ্ত হওয়া হারাম। আর যে বিষয় মানুষকে ফজিলতপূর্ণ কোনো কাজ থেকে বিরত রাখে, তাতে লিপ্ত হওয়া মাকরুহ।
সুতরাং যদি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম কারও ওয়াজিব দায়িত্ব বা কর্তব্য পালনের ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়ায়; তবে এটি ব্যবহার করা তার জন্য হারাম হবে। যেমনÑ কেউ এটি ব্যবহার করার ফলে নিজের সন্তানের পরিচর্যা করে না, তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করে না; বরং এখন তো এমন অবস্থা হয়েছে যে, যারা চাকরিজীবী তারাও নিজের অফিসে এসব সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম নিয়েই পড়ে থাকে, নিজের দায়িত্ব ঠিকমতো পালন করে না। দেখা যায়, কয়েকজন সেবাপ্রার্থী অফিসে এসে দাঁড়িয়ে আছে আর ওই ব্যক্তি তার ফোন নিয়ে ব্যস্ত। কোনো কোনো সময় এমনও হয়, কেউ একজন এসে পাঁচ-দশ মিনিট দাঁড়িয়ে আছে আর ওই কর্মকর্তা তার মোবাইলে গেম খেলেই যাচ্ছে।
এক ব্যক্তি আমাকে নিজের ঘটনা বলেছিল, একবার আমি এক অফিসের কর্মকর্তার কাছে গেলাম। সে তার মোবাইল ফোনে কিছু একটা টাইপ করছিল। সে আমাকে বলল, ‘ভাই একটু অপেক্ষা করুন।’ আমি তাকে বললাম, ‘আপনার কাছে আমার একটু প্রয়োজন আছে। একটা কাজ সারার জন্য আপনার কাছে এলাম।’ সে আমাকে প্রত্যুত্তর করল, ‘তুমি দেখছ না আমি ব্যস্ত!’
তো দেখুন, এই লোকটি কিন্তু তার দায়িত্ব ঠিকভাবে পালন করছে না। সে কাজের সময়েও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম নিয়ে ব্যস্ত হয়ে আছে। হয়তো একজনকে মেসেজ পাঠাচ্ছে কিংবা অন্যজনের পাঠানো মেসেজ পড়ছে। এ রকম বিভিন্ন কাজে নিজেকে ব্যস্ত রেখেছে।
সুতরাং এ ধরনের কাজকর্ম, যা অত্যাবশ্যকীয় দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়ায়, তাতে লিপ্ত হওয়া সম্পূর্ণরূপে হারাম। আর যদি এমন হয়, ওই কাজটি ফজিলতপূর্ণ কোনো বিষয় থেকে তাকে বিরত রাখে, তাহলে সেটা করা মাকরুহ হবে।
যদি কাউকে জিজ্ঞেস করা হয়, ‘আপনি আজ কী পরিমাণ কোরআন তেলাওয়াত করেছেন?’ তিনি উত্তরে বলবেন, ‘না, আমি আজ তেলাওয়াত করিনি।’ যদি তাকে প্রশ্ন করা হয়, ‘আপনি সর্বশেষ কবে কোরআন তেলাওয়াত করেছেন?’ তিনি বলবেন, ‘সর্বশেষ গত শুক্রবার তেলাওয়াত করেছি।’ যদি এর কারণ জিজ্ঞেস করা হয়, ‘কেন তেলাওয়াত করেননি?’ জবাবে তিনি বলবেন, ‘আমি খুব ব্যস্ত ছিলাম। তাই তেলাওয়াত করার সময় পাইনি।’ যদি আমরা হিসাব করি তাহলে দেখব, তিনি যে পরিমাণ সময় এসব সোশ্যাল মিডিয়ায় নষ্ট করেছেন, যদি অর্ধেক সময়ও এসব থেকে বিরত থাকতেন, তাহলে প্রতিদিন প্রায় ৫ পারা কোরআন তেলাওয়াত করতে সক্ষম হতেন।
আর যদি এসব সোশ্যাল মিডিয়া হারাম কাজে জড়ানোর মাধ্যম হয়ে দাঁড়ায়, তাহলে এটা অনেক বড় জুলুমের পথ খুলে দেয়। যখন মানুষ বিভিন্ন হারাম কাজে জড়িয়ে পড়ে, কোনো সন্দেহ নেই এটি নিজের প্রতি অনেক বড় জুলুম হিসেবে গণ্য হয়। সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে মানুষ যেসব হারামে জড়িয়ে পড়ে তার মধ্যে রয়েছে অশ্লীল দৃশ্য দেখা, অশ্লীল কিছু পড়া অথবা এসব যোগাযোগ মাধ্যমে গাইরে মাহরাম মহিলাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা বা তাদের হয়রানি করা।
এ কারণে আমি বলি, প্রিয় ভাই আমার, এসব যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করার অনেক ভালো দিক রয়েছে, এতে বেশ কিছু ফায়দা রয়েছে। এটি দূরে অবস্থানকারীকে সহজেই কাছে নিয়ে আসছে। এসব মাধ্যম ব্যবহার করে মানুষ অনেক বইপত্র পড়তে পারছে, সংবাদ জানতে পারছে, মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করতে পারছে। তবে এগুলো ব্যবহারের ক্ষেত্রে আমাদের সতর্ক থাকা উচিত। এর ভেতরে হারাম কাজে জড়িয়ে পড়ার যেসব আশঙ্কা আছে, সেগুলো থেকে আমাদের দূরে থাকার জন্য সচেতন হতে হবে। কারণ আল্লাহ তায়ালা আমাদের দেখছেন। এসব যোগাযোগ মাধ্যমে জড়িয়ে আমরা যেন আমাদের অত্যাবশ্যকীয় কাজে অবহেলা না করি, সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। আরও লক্ষ রাখতে হবে, এগুলো ব্যবহার করার ক্ষেত্রে যেন আমরা অতিরিক্ত বাড়াবাড়িতে আক্রান্ত না হই।
আমি জানতে পেরেছি, এমন অনেক মানুষ রয়েছে, যারা একই বাড়িতে অবস্থান করা সত্ত্বেও একের সঙ্গে অপরের কোনো যোগাযোগ নেই। দেখা যায়, সন্তানরা পরস্পরে যোগাযোগ করছে হোয়াটসাপ বা এ জাতীয় বিভিন্ন সোশ্যাল অ্যাপসের মাধ্যমে। যেন একজন এক রুমে, অন্যজন আরেক রুমে। অথচ তারা দুজনে একই ঘরে অবস্থান করছে। কিন্তু কারও সঙ্গে কারও সাক্ষাৎ হচ্ছে না। যদি এক ভাইকে অপর ভাইয়ের কিছু বলার দরকার পড়ে, তখন সে তাকে নিজের রুমে বসে একটি মেসেজ পাঠিয়ে দেয়।
অনেক সময় এমনও দেখা যায়, স্বামী-স্ত্রী দুজনে একই সঙ্গে অবস্থান করছে। স্বামী মুখে মুখে বলছে, আমি আজ বাসায় সময় দেব। আজ আর বের হব না। অথচ সে তার পুরো সময়টা নিজের ফোনের মধ্যেই কাটিয়ে দিচ্ছে। ফোন নিয়েই সে ব্যস্ত হয়ে থাকছে। অপরদিকে স্ত্রীও নিজের ফোন নিয়ে ব্যস্ত থাকে। এসব যোগাযোগ মাধ্যমে অতিরিক্ত সময় কাটানোর কারণে দুজন শারীরিকভাবে কাছাকাছি থাকলেও মানসিকভাবে এবং অন্তরের দিক থেকে তারা একে অপর থেকে অনেক দূরে অবস্থান করে থাকে।
যাই হোক, নানা দিক বিবেচনায় আমি বলব, এসব যোগাযোগ মাধ্যমকে হারাম বলার কোনো দরকার নেই। বরং এগুলো ব্যবহার করা যাবে। কারণ এর মধ্যে অনেক উপকার রয়েছে। তবে আমাদের উচিত একে সঠিকভাবে ব্যবহার করা।
এক বৃদ্ধা মহিলার কাহিনি আমার খুব ভালো লেগেছিল। তার কয়েকজন ছেলে ছিল। তার সঙ্গে তারা প্রায়ই দেখা করতে আসত। যখন তিনি দেখলেন তার ছেলেরা একত্র হওয়ার সময়টাতেও যে যার ফোন নিয়ে ব্যস্ত থাকে; হয়তো একজন তার মেসেজ চেক করছে, আরেকজন কিছু টুইট করছে, তখন সেই বৃদ্ধা দরজার সামনে একটি বাক্স রাখলেন এবং বললেন, যে-ই ঘরে ঢুকবে সে যেন তার মোবাইল বাক্সে রেখে তারপর ঘরে ঢোকে। যেহেতু তোমরা আমার সঙ্গে দেখা করার জন্য ঘরের ভেতরে এসেছে সুতরাং আমার সঙ্গে তোমাদের বসতে হবে, আমার সঙ্গে কথা বলতে হবে এবং যখন এখান থেকে চলে যাবে, তখন বাক্স থেকে যার যার নিজের ফোন নিয়ে যাবে।
এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি নিয়ে যিনি প্রশ্ন করেছেন আল্লাহ তাকে জাজায়ে খাইর দান করুক। আমিন।
>>>মদিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের এ অধ্যাপকের মসজিদে নববির দরসে অনুষ্ঠিত প্রশ্নোত্তর থেকে ভাষান্তর : আবদুল্লাহ আল মাসউদ
No comments