জন্মান্ধ আশার বেঁচে থাকা by পিয়াস সরকার
চলছে
মেট্রোরেলের কাজ। বন্ধ হয়ে গেছে প্রজাপতি গুহা। এই আন্ডারপাসে ভিক্ষা করতো
১২ বছর বয়সী জন্মান্ধ আশা। জন্মের পর থেকেই কষ্টে বাস তার। আন্ডারপাসে
ভিক্ষা করার সময় মাথার উপর ছিল ছায়া। এটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এখন সারা দিনের
রোদ তার মাথার ওপর দিয়ে যায়। দিনে ভিক্ষা করে ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা।
আগে ভিক্ষা করতো বসে। কিন্তু এতে আয় কম হয়। তাই বাধ্য হয়ে দাঁড়িয়ে ভিক্ষা করতে হচ্ছে। সকালে সে ভিক্ষা করে ধানমন্ডি-১৫তে। দুপুরে চলে আসে বসুন্ধরা মার্কেটের সামনে। আর শুক্রবার সকালে একটু বিশ্রাম। জুম্মার নামাজের সময় তার স্থান হয় ধানমন্ডি তাকওয়া মসজিদের সামনে। এরপর ফের বসুন্ধরা মার্কেটে। গত শনিবার দুপুরে বসুন্ধরা
মার্কেটের সামনে ভিক্ষা করছিলো আশা। কথা বলতে চাইলেই সে চমকে ওঠে। কোন প্রশ্নের জবাব দেয় না। শুধু বলে, ‘ভাইয়া আপনি যান’। এমন সময় একলোক চলে আসে। তার প্রশ্ন কী হইছে ভাই? তাকে উল্টা প্রশ্ন করা হয়, আপনি কে? আমি আশার চাচা। মধ্য বয়সী এই লোক আসতেই কিছুটা আশ্বস্ত হয় আশা। লোকজন জমা হয়ে যাওয়ায় সেখান থেকে চলে আসতে হয়। এরপর প্রায় ঘণ্টাখানেক দুর থেকে আশার উপর নজর রাখা হয়। এসময় দেখা যায়, প্রায় ২০ জন আশার হাতে টাকা দিয়েছেন। আর আশার চাচা পরিচয়দানকারী জজ মিয়া ৪ বার তার হাত থেকে টাকা নিয়ে নিজের কাছে রেখে দেয়। জজ মিয়া চলে যাবার পর আবার কথা বলার চেষ্টা আশার সঙ্গে। কিন্তু চেহারায় ভয়ের ছাপ স্পষ্ট।
এরপর আশাকে আশ্বস্ত করতে এক বান্ধবীকে নিয়ে হাজির। মেয়ের কণ্ঠ শুনে কিছুটা আশ্বস্ত হয় আশা। সাংবাদিক পরিচয় দেয়া হয়। কিন্তু সাংবাদিক কী জিনিস সেটাই বুঝে না সে। তবে কথা বলতে শুরু করে। কথার ফাঁকে বারবার বলছিলো, চাচা দেখলে ঝামেলা করবে।
জন্মান্ধ আশা, জন্মের কিছুদিন পরেই হারায় মাকে। বাবা বিয়ে করে আরেকটি। তখন থেকে চাচার কাছে মানুষ। আশা খুব ছোট বেলা থেকেই ভিক্ষা করে। নির্দিষ্ট করে বলতে না পারলেও প্রায় ৭ থেকে ৮ বছর।
সকাল ৭টার দিকে বের হয়। উদ্দেশ্য অফিসগামীদের থেকে ভিক্ষা নেয়া। সেখানে প্রায় ৩ ঘণ্টা ভিক্ষা করে। এরপর বাসায় যায়। তারা থাকে রায়ের বাজার বস্তিতে। সকালে কোন দিন মুড়ি আর কোন দিন না খাইয়ে পাঠানো হয়। এরপর বাসায় ফিরে গোসল শেষে পায় ভাত। কখনো পান্তা। এরপর ফের বেরিয়ে পড়তে হয় বসুন্ধরার উদ্দেশ্যে। তার চাচা সঙ্গে করে নিয়ে আসে। অধিকাংশ সময় হেঁটে আনা হয়। আর মাঝে মধ্যে রিকশায়।
বসুন্ধরায় আসতে আসতে বেজে যায় দুপুর ১ টা। আশাকে নিয়ে আসে তার চাচা। তাকে দেয়ার পর আশে পাশেই থাকে চাচা জজ মিয়া। তবে মাঝে মধ্যে অন্যত্র যায়। কোথায় যায় তা জানে না আশা। দীর্ঘ সময়ের জন্য বাইরে যায় তখন তার টাকা রেখে দিতে বলে পায়জামার পকেটে। আর এসময় তাকে দিয়ে যাওয়া হয় এক বোতল পানি।
রোদের মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকতে প্রচণ্ড কষ্ট হয় তার। মাথা গরম হয়ে যায়। প্রসাবের চাপ দিলে জানায় চাচাকে। সে তখন ব্যবস্থা করে। থাকে রাত ১০ টা পর্যন্ত। কখনো অরো বেশি সময়। এই দীর্ঘ সময়ে ভরসা কেউ যদি কোন খাবার খেতে দেয়। খাবার না পেলে চাচা একটা রুটি কিনে দেয় শুধু। সারাদিন দাঁড়িয়ে থাকতে পায়ে প্রচণ্ড ব্যাথা হয় আশার। এরপর বাড়ি ফেরবার পর চাচী তাকে দিয়ে করিয়ে নেয় নানা কাজ। খারাপ ব্যবহার করে চাচা, চাচী। চাচা-চাচীর পাশাপাশি চাচাতো ভাই বোনরাও গায়ে হাত তোলে।
উত্যক্তের শিকারও হয় মেয়েটি। আজে বাজে কথা শুনতে হয় প্রায়শই। একবার তার শরীরে কয়েকটি ছেলে স্পর্শকাতর স্থানে স্পর্শ করে। অন্ধ মেয়েটি চাচা চাচা বলে চিৎকার করতে থাকে। তখন আন্ডারপাসে থাকা কেউ একজন তাকে রক্ষা করে। আশা জানায়, তার চাচা কিছু করে না। তার সঙ্গেই থাকে। তবে তার চাচী মানুষের বাসায় কাজ করে।
পরদিন রোববার গন্তব্য রায়ের বাজার বস্তিতে। অনেক খোঁজাখুজির পরেও মেলে না আশাদের বাড়ি। ছবি দেখালে আশাকে চেনে এক ভিক্ষুক। জানায় থাকে উত্তর বস্তিতে।
উত্তর বস্তিতে গিয়ে ছবি দেখালেও বাড়ি কোনটা বলতে পারে না কেউ। এই বস্তিতে বেশ কয়েকজন আছেন যারা আশাদের বসার স্থান নিয়ন্ত্রণ করেন। ২ শিফটে চলে তাদের ব্যবসা। সকালে লক্ষ্য অফিসগামী ও লেকে হাঁটতে আসা লোক। আর দুপুর থেকে চলে আরেক শিফট। জনবহুল স্থানে বসার জন্য প্রতি শিফটে দিতে হয় ৩০ টাকা করে। আর ২ শিফটে বসতে চাইলে দিতে হয় ৫০ টাকা। আর শুক্রবার মসজিদের সামনে বসতে দিতে হয় ২০ টাকা।
বস্তিতে আরো কয়েকজনের বরাদ দিয়ে জানা যায়, আশার চাচা কর্মক্ষম। তবে কোন কাজ করে না। আশার সঙ্গে থেকেই ভালো আয় হয়। আগে রিকশা চালাতো। এরপর কুলির কাজও করে কিছুদিন। এখন তার আয়ের উৎস আশা। বস্তিতে এমন প্রায় ৪ থেকে ৫ জন আছে যারা এসব ভিক্ষুকদের স্থান ঠিক করে দেয়। এরবিনিময়ে পায় অর্থ।
রোকন নামের এক ব্যক্তি ১২ জন ভিক্ষুকের বসার ব্যবস্থা করে দেয় বসুন্ধরা, পান্থপথ এলাকায়। রোকনকে টাকা দিয়েই আশা বসে বসুন্ধরার সামনে। এছাড়া রোকনের আছে একটি চায়ের দোকান। এই বস্তিতে এমন কাজ করে ৪ জন বলে জানা যায়। তাদের নাম জাহিদ, পলাশ, মিরন, শিকদার। তবে কাউকেই সে সময় পাওয়া যায়নি বস্তিতে।
বস্তিতে থাকা বিভিন্ন অসহায় পঙ্গু, অন্ধ, অপুষ্টি, মাথা বড় বাচ্চাকে তাদের পরিবারের লোকজন নিয়ে ভিক্ষা করায়। আবার এদের বাবা মা নিজে উপস্থিত না থাকতে পারলে শিশুগুলোকে ভাড়া দেয়। এসব বাচ্চার ভাড়া দেয়া হয় দৈনিক ৮০ থেকে ১০০ টাকায়।
আগে ভিক্ষা করতো বসে। কিন্তু এতে আয় কম হয়। তাই বাধ্য হয়ে দাঁড়িয়ে ভিক্ষা করতে হচ্ছে। সকালে সে ভিক্ষা করে ধানমন্ডি-১৫তে। দুপুরে চলে আসে বসুন্ধরা মার্কেটের সামনে। আর শুক্রবার সকালে একটু বিশ্রাম। জুম্মার নামাজের সময় তার স্থান হয় ধানমন্ডি তাকওয়া মসজিদের সামনে। এরপর ফের বসুন্ধরা মার্কেটে। গত শনিবার দুপুরে বসুন্ধরা
মার্কেটের সামনে ভিক্ষা করছিলো আশা। কথা বলতে চাইলেই সে চমকে ওঠে। কোন প্রশ্নের জবাব দেয় না। শুধু বলে, ‘ভাইয়া আপনি যান’। এমন সময় একলোক চলে আসে। তার প্রশ্ন কী হইছে ভাই? তাকে উল্টা প্রশ্ন করা হয়, আপনি কে? আমি আশার চাচা। মধ্য বয়সী এই লোক আসতেই কিছুটা আশ্বস্ত হয় আশা। লোকজন জমা হয়ে যাওয়ায় সেখান থেকে চলে আসতে হয়। এরপর প্রায় ঘণ্টাখানেক দুর থেকে আশার উপর নজর রাখা হয়। এসময় দেখা যায়, প্রায় ২০ জন আশার হাতে টাকা দিয়েছেন। আর আশার চাচা পরিচয়দানকারী জজ মিয়া ৪ বার তার হাত থেকে টাকা নিয়ে নিজের কাছে রেখে দেয়। জজ মিয়া চলে যাবার পর আবার কথা বলার চেষ্টা আশার সঙ্গে। কিন্তু চেহারায় ভয়ের ছাপ স্পষ্ট।
এরপর আশাকে আশ্বস্ত করতে এক বান্ধবীকে নিয়ে হাজির। মেয়ের কণ্ঠ শুনে কিছুটা আশ্বস্ত হয় আশা। সাংবাদিক পরিচয় দেয়া হয়। কিন্তু সাংবাদিক কী জিনিস সেটাই বুঝে না সে। তবে কথা বলতে শুরু করে। কথার ফাঁকে বারবার বলছিলো, চাচা দেখলে ঝামেলা করবে।
জন্মান্ধ আশা, জন্মের কিছুদিন পরেই হারায় মাকে। বাবা বিয়ে করে আরেকটি। তখন থেকে চাচার কাছে মানুষ। আশা খুব ছোট বেলা থেকেই ভিক্ষা করে। নির্দিষ্ট করে বলতে না পারলেও প্রায় ৭ থেকে ৮ বছর।
সকাল ৭টার দিকে বের হয়। উদ্দেশ্য অফিসগামীদের থেকে ভিক্ষা নেয়া। সেখানে প্রায় ৩ ঘণ্টা ভিক্ষা করে। এরপর বাসায় যায়। তারা থাকে রায়ের বাজার বস্তিতে। সকালে কোন দিন মুড়ি আর কোন দিন না খাইয়ে পাঠানো হয়। এরপর বাসায় ফিরে গোসল শেষে পায় ভাত। কখনো পান্তা। এরপর ফের বেরিয়ে পড়তে হয় বসুন্ধরার উদ্দেশ্যে। তার চাচা সঙ্গে করে নিয়ে আসে। অধিকাংশ সময় হেঁটে আনা হয়। আর মাঝে মধ্যে রিকশায়।
বসুন্ধরায় আসতে আসতে বেজে যায় দুপুর ১ টা। আশাকে নিয়ে আসে তার চাচা। তাকে দেয়ার পর আশে পাশেই থাকে চাচা জজ মিয়া। তবে মাঝে মধ্যে অন্যত্র যায়। কোথায় যায় তা জানে না আশা। দীর্ঘ সময়ের জন্য বাইরে যায় তখন তার টাকা রেখে দিতে বলে পায়জামার পকেটে। আর এসময় তাকে দিয়ে যাওয়া হয় এক বোতল পানি।
রোদের মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকতে প্রচণ্ড কষ্ট হয় তার। মাথা গরম হয়ে যায়। প্রসাবের চাপ দিলে জানায় চাচাকে। সে তখন ব্যবস্থা করে। থাকে রাত ১০ টা পর্যন্ত। কখনো অরো বেশি সময়। এই দীর্ঘ সময়ে ভরসা কেউ যদি কোন খাবার খেতে দেয়। খাবার না পেলে চাচা একটা রুটি কিনে দেয় শুধু। সারাদিন দাঁড়িয়ে থাকতে পায়ে প্রচণ্ড ব্যাথা হয় আশার। এরপর বাড়ি ফেরবার পর চাচী তাকে দিয়ে করিয়ে নেয় নানা কাজ। খারাপ ব্যবহার করে চাচা, চাচী। চাচা-চাচীর পাশাপাশি চাচাতো ভাই বোনরাও গায়ে হাত তোলে।
উত্যক্তের শিকারও হয় মেয়েটি। আজে বাজে কথা শুনতে হয় প্রায়শই। একবার তার শরীরে কয়েকটি ছেলে স্পর্শকাতর স্থানে স্পর্শ করে। অন্ধ মেয়েটি চাচা চাচা বলে চিৎকার করতে থাকে। তখন আন্ডারপাসে থাকা কেউ একজন তাকে রক্ষা করে। আশা জানায়, তার চাচা কিছু করে না। তার সঙ্গেই থাকে। তবে তার চাচী মানুষের বাসায় কাজ করে।
পরদিন রোববার গন্তব্য রায়ের বাজার বস্তিতে। অনেক খোঁজাখুজির পরেও মেলে না আশাদের বাড়ি। ছবি দেখালে আশাকে চেনে এক ভিক্ষুক। জানায় থাকে উত্তর বস্তিতে।
উত্তর বস্তিতে গিয়ে ছবি দেখালেও বাড়ি কোনটা বলতে পারে না কেউ। এই বস্তিতে বেশ কয়েকজন আছেন যারা আশাদের বসার স্থান নিয়ন্ত্রণ করেন। ২ শিফটে চলে তাদের ব্যবসা। সকালে লক্ষ্য অফিসগামী ও লেকে হাঁটতে আসা লোক। আর দুপুর থেকে চলে আরেক শিফট। জনবহুল স্থানে বসার জন্য প্রতি শিফটে দিতে হয় ৩০ টাকা করে। আর ২ শিফটে বসতে চাইলে দিতে হয় ৫০ টাকা। আর শুক্রবার মসজিদের সামনে বসতে দিতে হয় ২০ টাকা।
বস্তিতে আরো কয়েকজনের বরাদ দিয়ে জানা যায়, আশার চাচা কর্মক্ষম। তবে কোন কাজ করে না। আশার সঙ্গে থেকেই ভালো আয় হয়। আগে রিকশা চালাতো। এরপর কুলির কাজও করে কিছুদিন। এখন তার আয়ের উৎস আশা। বস্তিতে এমন প্রায় ৪ থেকে ৫ জন আছে যারা এসব ভিক্ষুকদের স্থান ঠিক করে দেয়। এরবিনিময়ে পায় অর্থ।
রোকন নামের এক ব্যক্তি ১২ জন ভিক্ষুকের বসার ব্যবস্থা করে দেয় বসুন্ধরা, পান্থপথ এলাকায়। রোকনকে টাকা দিয়েই আশা বসে বসুন্ধরার সামনে। এছাড়া রোকনের আছে একটি চায়ের দোকান। এই বস্তিতে এমন কাজ করে ৪ জন বলে জানা যায়। তাদের নাম জাহিদ, পলাশ, মিরন, শিকদার। তবে কাউকেই সে সময় পাওয়া যায়নি বস্তিতে।
বস্তিতে থাকা বিভিন্ন অসহায় পঙ্গু, অন্ধ, অপুষ্টি, মাথা বড় বাচ্চাকে তাদের পরিবারের লোকজন নিয়ে ভিক্ষা করায়। আবার এদের বাবা মা নিজে উপস্থিত না থাকতে পারলে শিশুগুলোকে ভাড়া দেয়। এসব বাচ্চার ভাড়া দেয়া হয় দৈনিক ৮০ থেকে ১০০ টাকায়।
No comments