সন্ধ্যা হলেই আলোকিত হয় ধরন্তির হাওর by অর্পিতা চৌধুরী
পশ্চিমে
মেঘনা, পূর্বে তিতাস। মাঝে সুবিশাল হাওর। সূর্যের আলোয় চিকচিক করছে
জলরাশি। হাওরের পেট কেটে চলে গেছে সরাইল-নাসিরনগর সড়ক। ধরন্তি গ্রামে এই
সড়কটিতে দাঁড়ালে দিন শেষে দেখা যাবে সূর্য লুকাচ্ছে পানির নিচে। সেই
সূর্যের আলো নিয়ে আলোকিত হচ্ছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার এই ধরন্তির হাওর। প্রতিদিন
বিকেলে নৈসর্গিক সৌন্দর্য দেখার জন্য হাওরের ওপর দিয়ে চলমান সরাইল-নাসিরনগর
সড়কের দুই পাশে ভিড় করে অসংখ্য মানুষ। এই পথচারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত
করতে ও হাওরের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের
অধীনে এবং ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি লিমিটেডের (ইডকল)
সার্বিক তত্ত্বাবধানে পরিচালিত টিআর/কাবিটা প্রকল্পের আওতায় বিনা মূল্যে
দেওয়া হয়েছে সৌরবাতি।
সন্ধ্যা হলেই ব্রাহ্মণবাড়িয়ার এই ধরন্তির হাওরসহ উপজেলা সরাইল বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়কের দুই পাশ স্বয়ংক্রিতভাবে জ্বলে ওঠে সৌরবিদ্যুত্-চালিত সড়কবাতি। আবার সকাল হলেই স্বয়ংক্রিতভাবে নিভে যায় বাতিগুলো। কিন্তু রাতে দিনের মতো ঝলমলে আলো দিয়ে থাকে। দৃষ্টিনন্দন এসব সৌরবাতির আলো হাওরের শোভা বাড়িয়ে তুলেছে অনেকগুণ। বিদ্যুত্সাশ্রয়ী এই প্রকল্প ইতিমধ্যেই উপজেলায় প্রশংসা অর্জনেও সক্ষম হয়েছে। স্বয়ংক্রিয় সৌরবিদ্যুত্-চালিত সড়কবাতির প্রশংসায় পঞ্চমুখ হাওরবাসী। শুধু তা-ই নয়, এসব সড়কবাতির ব্যবহারে উপজেলা চুরি, ছিনতাইসহ অন্যান্য অপকর্মকাণ্ড কমে আসছে। স্থানীয়রা জানায়, আগে হাওরের দুই পাশে বাতি না থাকার কারণে অনেক সময় চুরি, ছিনতাই হতো। মাদকসেবীরা এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে মাদক সেবন করত। তবে এই সৌরবাতি স্থাপনের পর এই চিত্র পরিবর্তিত হয়েছে। চুরি-ডাকাতি কমে আসছে। রাতে হাওরের দুই পারের মানুষ নির্ভয়ে চলতে পারে। ধরন্তি হাওরপারের চায়ের দোকানদার আনোয়ার হোসেন বলেন, বিগত দিনে হাওরের এই দীর্ঘ সড়কে কোনো আলোর ব্যবস্থা ছিল না। এখানে অনেক ডাকাতির ঘটনা ঘটত। রাতে এই সড়কে কোনো মানুষ চলাচল করত না। সৌরবিদ্যুতায়িত সড়ক বাতি স্থাপনের পর আমরা নিরাপদে চলাচল করতে পারছি। এখন রাতের বেলায় সার্বক্ষণিক আলোকিত থাকে। তবে দীর্ঘ এই সড়কের এই কিছু অংশ এখনো অন্ধকার রয়ে গেছে। সরকার যদি বাকি অংশটুকু সৌরবাতির ব্যবস্থা করে দিত, তাহলে এই এলাকার মানুষের জন্য অনেক উপকার হবে। এই এলাকার বাসিন্দা হাতিম বলেন, এক বছর আগে বসানো হয়েছে এই সৌরবাতিগুলো এবং এখন পর্যন্ত কোনো যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেয় নাই। এখন আর রাতে চলাচল করতে কোনো অসুবিধা হয় না। আগে ডাকাতির ভয়ে রাত হলে এই সড়ক দিয়ে কোনো মানুষ চলাচল করতে পারত। এখন এই ভয় আর নেই।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সরাইল উপজেলার সরাইল গ্রামের অন্নদা সরকারি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবু বকর সিদ্দিক বলেন, সৌরবিদ্যুতের গ্রামের মানুষের অনেক উপকার হয়েছে। বিশেষ করে যেসব এলাকায় বিদ্যুত্ নেই। এ ছাড়া এই আলো নিতে সাধারণ মানুষের কোনো টাকা দিতে হয় না। অন্যদিকে পরিবেশের কোনো ক্ষতি সাধন করে না। আমার বিদ্যালয়ের সামনে আগামী মাসে বসানো হবে দুই সৌরবিদ্যুত্ বাতি, যা ছাত্রছাত্রীসহ গ্রামের মানুষের উপকারে আসবে আশা করি। শুধু হাওরের নয়, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সারাইল উপজেলায় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে এসব সৌরবাতি বসানো হয়েছে। সোলার কোম্পানির পক্ষে থেকে জানানো হয়েছে, গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ/ সংস্কার (টিআর/কাবিটা) কর্মসূচির আওতায় চার অর্থবছরে মসজিদে ও মাদ্রাসা স্কুল ও কলেজ, সরকারি কার্যালয় ও বসতবাড়িতে ৩ হাজার ২৪৭টি সোলার হোম সিস্টেম বসানো হয়েছে। এ ছাড়া গুরুত্বপূর্ণ মোড় ও সড়কে ৫৯২টি সোলার ও সড়কবাতি এবং ৪০টি সোলার এসি/ডিসি সিস্টেম স্থাপন করা হয়েছে। এতে টিআর ও কাবিটা প্রকল্পের ৮ কোটি ৫৮ লাখ ১৪ হাজার ৯৪৬ টাকা ব্যয় করা হয়েছে। রুরাল সার্ভিসেস ফাউন্ডেশন ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেছেন, ২০০৬ সাল থেকে প্রত্যন্ত অঞ্চলে নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারে সচেতনতা তৈরি এবং সম্প্রসারণে কাজ করে আসছে। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলকে আলোকিত করার পাশাপাশি এ প্রকল্পের মাধ্যমে নতুন ব্যবসা ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগ, বিনামূল্যে সোলার বিদ্যুত্’ এই স্লোগানকে সামনে রেখে উপজেলা প্রশাসনের সার্বিক সহযোগিতায় নিরলসভাবে কাজ করে এই প্রকল্পকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। সরকারের টিআর/কাবিটা কর্মসূচির আওতায় সোলার বিদ্যুত্ প্রকল্প বাস্তবায়নের ফলে গ্রামীণ জনপদের কৃষি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা এবং বেকার সমস্যা দূরীকরণসহ সার্বিকভাবে আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নতি হয়েছে। আমরা সরকারের টিআর/কাবিটা প্রকল্পের সার্বিক সাফল্য কামনা করছি।
>>>লেখক : উন্নয়নকর্মী
সন্ধ্যা হলেই ব্রাহ্মণবাড়িয়ার এই ধরন্তির হাওরসহ উপজেলা সরাইল বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়কের দুই পাশ স্বয়ংক্রিতভাবে জ্বলে ওঠে সৌরবিদ্যুত্-চালিত সড়কবাতি। আবার সকাল হলেই স্বয়ংক্রিতভাবে নিভে যায় বাতিগুলো। কিন্তু রাতে দিনের মতো ঝলমলে আলো দিয়ে থাকে। দৃষ্টিনন্দন এসব সৌরবাতির আলো হাওরের শোভা বাড়িয়ে তুলেছে অনেকগুণ। বিদ্যুত্সাশ্রয়ী এই প্রকল্প ইতিমধ্যেই উপজেলায় প্রশংসা অর্জনেও সক্ষম হয়েছে। স্বয়ংক্রিয় সৌরবিদ্যুত্-চালিত সড়কবাতির প্রশংসায় পঞ্চমুখ হাওরবাসী। শুধু তা-ই নয়, এসব সড়কবাতির ব্যবহারে উপজেলা চুরি, ছিনতাইসহ অন্যান্য অপকর্মকাণ্ড কমে আসছে। স্থানীয়রা জানায়, আগে হাওরের দুই পাশে বাতি না থাকার কারণে অনেক সময় চুরি, ছিনতাই হতো। মাদকসেবীরা এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে মাদক সেবন করত। তবে এই সৌরবাতি স্থাপনের পর এই চিত্র পরিবর্তিত হয়েছে। চুরি-ডাকাতি কমে আসছে। রাতে হাওরের দুই পারের মানুষ নির্ভয়ে চলতে পারে। ধরন্তি হাওরপারের চায়ের দোকানদার আনোয়ার হোসেন বলেন, বিগত দিনে হাওরের এই দীর্ঘ সড়কে কোনো আলোর ব্যবস্থা ছিল না। এখানে অনেক ডাকাতির ঘটনা ঘটত। রাতে এই সড়কে কোনো মানুষ চলাচল করত না। সৌরবিদ্যুতায়িত সড়ক বাতি স্থাপনের পর আমরা নিরাপদে চলাচল করতে পারছি। এখন রাতের বেলায় সার্বক্ষণিক আলোকিত থাকে। তবে দীর্ঘ এই সড়কের এই কিছু অংশ এখনো অন্ধকার রয়ে গেছে। সরকার যদি বাকি অংশটুকু সৌরবাতির ব্যবস্থা করে দিত, তাহলে এই এলাকার মানুষের জন্য অনেক উপকার হবে। এই এলাকার বাসিন্দা হাতিম বলেন, এক বছর আগে বসানো হয়েছে এই সৌরবাতিগুলো এবং এখন পর্যন্ত কোনো যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেয় নাই। এখন আর রাতে চলাচল করতে কোনো অসুবিধা হয় না। আগে ডাকাতির ভয়ে রাত হলে এই সড়ক দিয়ে কোনো মানুষ চলাচল করতে পারত। এখন এই ভয় আর নেই।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সরাইল উপজেলার সরাইল গ্রামের অন্নদা সরকারি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবু বকর সিদ্দিক বলেন, সৌরবিদ্যুতের গ্রামের মানুষের অনেক উপকার হয়েছে। বিশেষ করে যেসব এলাকায় বিদ্যুত্ নেই। এ ছাড়া এই আলো নিতে সাধারণ মানুষের কোনো টাকা দিতে হয় না। অন্যদিকে পরিবেশের কোনো ক্ষতি সাধন করে না। আমার বিদ্যালয়ের সামনে আগামী মাসে বসানো হবে দুই সৌরবিদ্যুত্ বাতি, যা ছাত্রছাত্রীসহ গ্রামের মানুষের উপকারে আসবে আশা করি। শুধু হাওরের নয়, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সারাইল উপজেলায় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে এসব সৌরবাতি বসানো হয়েছে। সোলার কোম্পানির পক্ষে থেকে জানানো হয়েছে, গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ/ সংস্কার (টিআর/কাবিটা) কর্মসূচির আওতায় চার অর্থবছরে মসজিদে ও মাদ্রাসা স্কুল ও কলেজ, সরকারি কার্যালয় ও বসতবাড়িতে ৩ হাজার ২৪৭টি সোলার হোম সিস্টেম বসানো হয়েছে। এ ছাড়া গুরুত্বপূর্ণ মোড় ও সড়কে ৫৯২টি সোলার ও সড়কবাতি এবং ৪০টি সোলার এসি/ডিসি সিস্টেম স্থাপন করা হয়েছে। এতে টিআর ও কাবিটা প্রকল্পের ৮ কোটি ৫৮ লাখ ১৪ হাজার ৯৪৬ টাকা ব্যয় করা হয়েছে। রুরাল সার্ভিসেস ফাউন্ডেশন ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেছেন, ২০০৬ সাল থেকে প্রত্যন্ত অঞ্চলে নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারে সচেতনতা তৈরি এবং সম্প্রসারণে কাজ করে আসছে। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলকে আলোকিত করার পাশাপাশি এ প্রকল্পের মাধ্যমে নতুন ব্যবসা ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগ, বিনামূল্যে সোলার বিদ্যুত্’ এই স্লোগানকে সামনে রেখে উপজেলা প্রশাসনের সার্বিক সহযোগিতায় নিরলসভাবে কাজ করে এই প্রকল্পকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। সরকারের টিআর/কাবিটা কর্মসূচির আওতায় সোলার বিদ্যুত্ প্রকল্প বাস্তবায়নের ফলে গ্রামীণ জনপদের কৃষি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা এবং বেকার সমস্যা দূরীকরণসহ সার্বিকভাবে আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নতি হয়েছে। আমরা সরকারের টিআর/কাবিটা প্রকল্পের সার্বিক সাফল্য কামনা করছি।
>>>লেখক : উন্নয়নকর্মী
No comments