পাখির চোখে বগুড়া (ফটোস্টোরি) by তৌহিদ পারভেজ বিপ্লব
বগুড়া
উত্তরবঙ্গের ঐতিহাসিক নিদর্শন ও শিল্পের শহর। এটি রাজশাহী বিভাগের
অন্তর্গত। দইয়ের জন্য বগুড়া বিখ্যাত। প্রাচীন বাংলার রাজধানী মহাস্থানগড়
এখানেই অবস্থিত। ক্যামেরার কবি তৌহিদ পারভেজ বিপ্লব ড্রোন দিয়ে ছবি তুলে
খুঁজে পেয়েছেন বগুড়ার নান্দনিক সৌন্দর্য। সেগুলোর মধ্যে কয়েকটি স্থিরচিত্র
নিয়ে এই ফটোস্টোরি।
বগুড়ার মহাস্থানগড় (ছবি: তৌহিদ পারভেজ বিপ্লব) |
*
মহাস্থানগড়। এর বিস্তীর্ণ ধ্বংসাবশেষ প্রাচীন পুন্ড্রনগরের সুদীর্ঘ প্রায়
আড়াই হাজার বছরের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসের এক নীরব সাক্ষী। এটি বগুড়া জেলা
শহরের ১৩ কিলোমিটার উত্তরে করতোয়া নদীর পশ্চিম তীরে অবস্থিত। প্রত্নতাত্বিক
নিদর্শন থেকে জানা যায়, কয়েক শতাব্দী পর্যন্ত জায়গাটি পরাক্রমশালী মৌর্য,
গুপ্ত ও পাল শাসক বর্গের প্রাদেশিক রাজধানী ও পরবর্তী সময়ে হিন্দু সামন্ত
রাজাদের রাজধানী ছিল। দুর্গের বাইরে উত্তর, পশ্চিম, দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিম
৭-৮ কিলোমিটারের মধ্যে এখনও বিভিন্ন ধরনের বহু প্রাচীন নিদর্শন রয়েছে, যা
উপ-শহরের সাক্ষ্য বহন করে।
বগুড়ার বেহুলার বাসরঘর (ছবি: তৌহিদ পারভেজ বিপ্লব) |
*
বেহুলার বাসরঘর। বগুড়া শহর থেকে ১০ কিলোমিটার উত্তরে ও মহাস্থানগড় থেকে ২
কিলোমিটার দক্ষিণে গোকুল গ্রামের দক্ষিণ-পশ্চিম প্রান্তে এটি অবস্থিত।
প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের মতে, আনুমানিক খ্রিষ্টাব্দ সপ্তম শতাব্দী থেকে ১২০০
শতাব্দীর মধ্যে এটি নির্মিত। গবেষকদের মতে, এটি ৮০৯ থেকে ৮৪৭ খ্রিষ্টাব্দে
দেবপাল নির্মিত একটি বৈদ্যমঠ।
ভাসু বিহার (ছবি: তৌহিদ পারভেজ বিপ্লব) |
* ভাসু বিহার। স্থানীয়ভাবে এই প্রত্নস্থল ‘নরপতির ধাপ’ নামে এটি পরিচিত।
প্রায় ৮০০ প্রত্নবস্তুর মধ্যে ব্রোঞ্জের ক্ষুদ্রাকৃতির মূর্তি, পোড়ামাটির
ফলক ও পোড়ামাটির সীল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া সংগৃহীত হয়েছে মূল্যবান
পাথরের গুটিকা, লোহার পেরেক, মাটির গুটিকা, নকসাংকিত ইট, মাটির প্রদীপ ও
অন্যান্য দৈনন্দিন ব্যবহারের দ্রব্যাদি ও প্রচুর মৃন্ময় পাথর টুকরা।
*
এডওয়ার্ড পার্ক। ১৯০১-১৯০৫ খ্রিষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত হয় এটি। মহারানি
ভিক্টোরিয়ার পুত্র আলব্রেট এডওয়ার্ডের নামানুসারে এর নামকরণ হয়। পার্কে তার
একটি আবক্ষ মূর্তি আছে। পার্কের ভেতর আছে আনন্দ সরোবর, কৃত্রিম ফোয়ারা,
গ্রিন হাউস, কৃত্রিম পাহাড়, উডবার্ন পাবলিক লাইব্রেরি, শহীদ টিটু মিলনায়তন ও
শিশুদের চিত্তবিনোদনের জন্য খেলাধুলার উপকরণ।
*
সাতমাথা। বগুড়া সদরে অবস্থিত এই ঐতিহাসিক স্থাপনাকে বগুড়ার প্রাণকেন্দ্র
বলা হয়। শহরের গুরুত্বপূর্ণ সাতটি সড়কের মিলিতস্থান এটি। এখানেই রয়েছে
বগুড়া জিলা স্কুল, শহীদ খোকন পার্ক, জিপিও, সার্কিট হাউসসহ অনেক
গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান।
সাতমাথা থেকে কবি নজরুল ইসলাম সড়ক (থানা রোড) দিয়ে এগিয়ে গেলেই বগুড়ার ব্যিখাত দইয়ের দোকানগুলো পাওয়া যায়।
*
চাতাল। উত্তরবঙ্গে দুপচাঁচিয়া উপজেলায় পাঁচ শতাধিক চাতাল ও চাল কল
রয়েছে। উপজেলা সদর, তালোড়া, চৌমুহনী ও সাহারপুকুরে এ ধরনের মিল চাতাল
বেশি। এই উপজেলা চাল রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন মোকামে বিক্রি হয়।
*
শহীদ চান্দু স্টেডিয়াম। এর নাম ছিল বগুড়া বিভাগীয় স্টেডিয়াম। বগুড়া
জেলার উত্তর-পশ্চিম প্রান্তে বগুড়া পৌরসভার মালগ্রাম এলাকায় এর অবস্থান।
এই স্টেডিয়ামে ২০০৬ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বাংলাদেশ টেস্ট খেলেছিল।
স্টেডিয়ামটিতে অনুষ্ঠিত পাঁচটি ওয়ানডের মধ্যে চারটিতেই জিতেছে বাংলাদেশ।
বর্তমানে বিভিন্ন লিগের খেলা গড়ায় এই মাঠে।
*
সারিয়াকান্দি যমুনার চর। নদীর বুকে জেগে ওঠা এই চরকে স্থানীয়রা মনে করে
ফসল উৎপাদনের চারণভূমি। যমুনার বুকে অনাবাদি জমিকে আবাদি জমিতে পরিণত করে
বিভিন্ন সবজি ফসলের চাষ হয়।
*
শীতের সবজি। শীত মৌসুমে তোলা ছবিটিতে দেখা যাচ্ছে শীতকালীন সবজি।
গ্রীষ্মকালীন সবজির পরপরই জেলার কৃষকেরা শীতকালীন সবজি চাষের প্রস্তুতি
নেন। তখন সবুজে সবুজে শীতের সবজিতে ভরে ওঠে মাঠের পর মাঠ।
*
ধান কাটার মৌসুম। বগুড়ার শেরপুর উপজেলার অধিকাংশ এলাকার মাঠে মাঠে
রোপা-আমন মৌসুমে চলে ধান কাটার ধুম। বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনায় সোনালি ধান
মাড়িয়ে গোলায় ভরেন কৃষকেরা। তাদের চোখে-মুখে তখন দেখা যায় তৃপ্তির হাসি।
*
লাল মরিচে রাঙা যমুনার চর। ড্রোন দিয়ে তোলা ছবিতে মনে হচ্ছে যেন, মরিচের
লালগালিচা! বগুড়ার সারিয়াকান্দি ও সোনাতলা উপজেলার যমুনা নদীর বিভিন্ন চরে
বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে মরিচের ক্ষেত। দিনভর ক্ষেতেই দেখা যায় মরিচের কেনাবেচা।
*
করতোয়া নদীতে হাঁস। রাজশাহী বিভাগের অন্তর্গত এই নদী খুব বেশি বড় নয়। এর
একটি গতিপথ বর্তমানে বগুড়া জেলার মহাস্থানগড় দিয়ে প্রবহমান। মহাভারতে
বলা আছে, তিন দিন উপবাসের পর করতোয়া নদীতে ভ্রমণ করা অশ্বমেধার (ঘোড়া
বলিদান) সমান পুণ্যের সমান।
*
যমুনা নদীতে জেলে নৌকা। বগুড়ায় যমুনা নদীতে মাছ ধরার দৃশ্য নিত্যদিনের।
জেলেরা নদীর তীরে ছোট ছোট নৌকায় দলবেবেঁধে বসবাস করেন। রাতে মাছ ধরে দিনে
জাল মেরামতে ব্যস্ত থাকেন তারা। অনেকে জাল শুকাতে দেন।
* সবুজের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ছড়িয়ে আছে বগুড়া জুড়ে। ড্রোন দিয়ে তোলা ছবিতে কী সুন্দর আবহ! এ যেন সবুজের সমুদ্র।
No comments