হয়রানির আরেক নাম রাইড শেয়ারিং by শুভ্র দেব
লাস্ট আপডেট- মানবজমিন, ৩০ জুন ২০১৯: যানজটের
নগরে অ্যাপসভিত্তিক রাইড শেয়ারিং সেবা স্বস্তি নিয়ে এসেছিল। কিন্তু সময়ের
ব্যবধানে এটি এখন অনেকের কাছে হয়রানির বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। যাত্রীদের
অভিযোগ, রাইডাররা অ্যাপসের চেয়ে চুক্তিতে যেতে বেশি আগ্রহ প্রকাশ করে।
যাত্রীর গন্তব্য রাইডারদের পছন্দ না হলে আবেদন গ্রহণ করে তা বাতিল করে
দিচ্ছে। গন্তব্যে পৌঁছার পর অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। নারী যাত্রীদের
হয়রানি করা হচ্ছে। গন্তব্যে পৌঁছে না দিয়ে মাঝ পথে নামিয়ে দেয়া হচ্ছে।
কিন্তু ভুক্তভোগী যাত্রীরা অভিযোগ দেয়ার মত পথ খোঁজে পাচ্ছে না।
কারণ এসব প্রতিষ্ঠানে অ্যাপস ছাড়া সরাসরি অভিযোগ দেয়ার সুযোগ নাই। তাদের নাই কোন কাস্টমার সার্ভিস।
২০১৬ সালের ২২শে নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক রাইড শেয়ারিং কোম্পানি উবার বাংলাদেশে ব্যবসা শুরু করে। প্রথম দিকে গ্রাহকের নজরে আসতে বেশ সময় লাগলেও ২০১৭ ও ২০১৮ সাল থেকে রাইড সেবার প্রতি যাত্রীদের আগ্রহ বাড়ে। স্বল্প খরচে, কম সময়ে ব্যস্ততম শহরের এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাওয়ার বাহন হিসাবে ঢাকাবাসী অ্যাপস ভিত্তিক এই সেবাটিকে বেছে নেয়। চাহিদা থাকায় এ ধরনের আরও কিছু প্রতিষ্ঠান কার্যক্রমে আসে। সবাই নিজেদের মতো ব্যবসা শুরু করে। এক্ষেত্রে যাত্রীদের সেবা দিয়ে রাইডারের (চালক) বাড়তি আয়ের একটি ব্যবস্থা হয়।
দুই ও চার চাকার যানবাহন দিয়ে অ্যাপস ভিত্তিক এই সেবাটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠে। তারপর সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তর এ নিয়ে কাজ শুরু করে। ২০১৮ সালের ১৫ই জানুয়ারি সরকার রাইড শেয়ারিং নীতিমালা-২০১৭ প্রণয়ণ করে। এরপর এ ধরনের সেবার সঙ্গে জড়িত ১৬ কোম্পানি বাংলাদেশ রোড অ্যান্ড ট্রান্সপোর্ট অথরিটিতে (বিআরটিএ) আবেদন করে।
বিআরটিএ সূত্র জানিয়েছে তাদের কাছে এখন পর্যন্ত যেসকল রাইড শেয়ারিং কোম্পানির আবেদন আছে তাদের মধ্যে রয়েছে, উবার বাংলাদেশ লিমিটেড, পাঠাও লিমিটেড, সহজ ডট কম, চাল ডাল লিমিটেড, আকাশ টেকনোলজি লিমিটেড, গোল্ডেন রেন লিমিটেড, ও ভাই সলিউশন লিমিটেড, রাইডার রাইড শেয়ারিং এন্টারপ্রাইজ ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড, পিকমি, ইঞ্জিনিয়ার টেকনোলজি লিমিটেড, আকিজ অনলাইন লিমিটেড, হোস্ট ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড, প্রবাহন লিমিটেড, কম্পিউটার নেটওয়ার্ক সিস্টেম, বাড্ডি লিমিটেড ও সেজেস্টা লিমিটেড। বিআরটিএ বলছে আগামি পহেলা জুলাই থেকে যাচাই-বাচাইয়ের মাধ্যমে এসব প্রতিষ্ঠানকে এনলিস্টেড সার্টিফিকেট দেয়া হবে।
এদিকে অ্যাপস ভিত্তিক রাইড শেয়ারিং কোম্পানিগুলো বাজারে আসার পর থেকে ঢাকা শহরে মুড়ি মুড়কির মত বাড়ছে মোটরসাইকেল। বাড়তি আয়ের আশায় অনেকেই দীর্ঘদিন ধরে পড়ে থাকা অনিবন্ধিত মোটরসাইকেল রেজিষ্ট্রেশন করে রাইড শেয়ারিংয়ের জন্য নিবন্ধন করছেন। অনেকেই তাদের পূর্বের পেশা পরিবর্তন করে রাইডার হিসাবে নতুন পেশা শুরু করেছেন। শুধু ঢাকা নয় ঢাকার বাইরে থেকে শুধুমাত্র রাইড শেয়ার করার জন্য অনেকেই ঢাকায় আসছে। বিআরটিএ সূত্র বলছে, ২০১৬ সালে যে বছরে রাইড শেয়ারিং কোম্পানি বাজারে এসেছে ওই বছর ঢাকা শহরে রেজিষ্ট্রেশনের জন্য আবেদন করা হয়েছিল ৫৩ হাজার ৭৩৮ টি মোটরসাইকেল। অথচ ২০১৭ সালে সেটা বেড়ে হয়েছে ৭৫ হাজার ২৫১টি। ২০১৮ সালে সেটা আরও বেড়ে হয়েছে ১ লাখ ৪ হাজার ৬৪টি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রাইড সেবা সাধারণত নিজের অবসর সময়ে হওয়া উচিত। যানজট নিরসন, কম খরচে সেবা ও বাড়তি আয়ই এর মূল উদ্দেশ্য ছিল। কিন্তু এই নীতিতে এখন আর চলছে না। রাইড শেয়ারিং এখন ব্যবসায় পরিণত হয়েছে। মানুষ নতুন নতুন গাড়ি কিনে রাইড শেয়ার করাচ্ছে। এতে করে সেবার মান কমছে। সুবিধার স্থলে অসুবিধাই বেশি হচ্ছে। একটা প্রতিযোগীতা তৈরি হয়েছে। সেবা গ্রহিতা নানা হয়রানির শিকার হচ্ছেন।
রাইড শেয়ারিং কোম্পানির নানা হয়রানি ও যাত্রীর অভিযোগের বিষয়ে বিআরটিএ বলছে, আবেদনকৃত কোম্পানিগুলোকে যাচাই বাচাই করে এবং যারা নিয়মনীতি মেনে চলবে তাদের পহেলা জুলাই থেকে এনলিস্টেট সার্টিফিকেট দেয়া হবে। যাদের সার্টিফিকেট দেয়া হবে তাদের নিয়মিত মনিটরিংয়ের আওতায় নিয়ে আসা হবে। তাদের অ্যাপসের সঙ্গে বিআরটিএর একটা লিংক থাকবে। যাত্রীদের অভিযোগের বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে কিনা বিষয়টি তদারকি করা হবে। এছাড়া পুলিশের জাতীয় সেবা ৯৯৯-এর সঙ্গে অ্যাপসের একটা সম্পর্ক থাকবে। যদি কোন যাত্রী বিশেষ করে নারী যাত্রী যদি কোন হয়রানি বা বিপদের সম্ভাবনা দেখে তবে একটি এসওএস বাটনে টিপ দিলে ওই চালকের যাবতীয় তথ্য চলে যাবে পুলিশের কাছে। পুলিশ দেখতে পারবে ওই চালক ও যাত্রী কোথায় অবস্থান করছে। সে অনুযায়ী তারা ব্যবস্থা নিতে পারবে।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, রাইড শেয়ারিং কোম্পানিগুলো যাত্রীদের সঙ্গে প্রায়ই অশোভন আচরণ করছে যেটা কোন ভাবেই কাম্য নয়। এসব প্রতিষ্ঠানকে মনিটরিংয়ের আওতায় আনতে হবে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) মফিজ উদ্দিন আহম্মেদ মানবজমিনকে বলেন, রাইডশেয়ারিং কোম্পানিগুলো নিয়ন্ত্রণের মধ্যে থাকতে হবে। তা না হলে সেটা বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়াবে। ঢাকায় গণপরিবহন ব্যবস্থা উন্নত না থাকার কারণে পাঠাও-উবারের মত রাইড শেয়ারিং কোম্পানিগুলোর প্রতি ঝুঁকছেন যাত্রীরা। তবে মোটরসাইকেলে করে রাইড শেয়ারিং খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। বিশেষ করে নারীরা যখন চালকের পেছনে উঠেন তখন তারা ঠিকমত ধরে বসতে পারেন না। চালকের সঙ্গে তাদের একটা ব্যবধানও রাখতে হয়। এ কারণে অনেক সময় বিপদের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, কিছু দিন আগে শ্যামলী এলাকায় এক নারী চালকের পেছন থেকে ছিটকে পড়ে মারা গেছেন। এছাড়া প্রায়ই এভাবে আহত হওয়ার ঘটনা ঘটছে। ট্রাফিকের এই কর্মকর্তা বলেন, আমরা ঢাকার গণপরিবহণ ব্যবস্থা উন্নত করার জন্য কাজ করছি। আশা করছি মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, বেশ কিছু চক্রাকার, দ্বিতল বাস চালু হলে মোটরসাইকেলের প্রতি নির্ভরতা কমে যাবে।
বাংলাদেশ রোড অ্যান্ড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) পরিচালক (ইঞ্জিনিয়ার) লোকমান হোসেন মোল্লা রাইডশেয়ারিং কোম্পানি নিয়ে কাজ করেন। তিনি মানবজমিনকে বলেছেন, যখন এ জাতীয় কোম্পানিগুলো এনলিস্টেড হয়ে যাবে তখন তাদের আইনের আওতায় আনা যাবে। তিনি বলেন, সার্টিফিকেট দেয়ার ক্ষেত্রে নীতিমালায় যা যা উল্লেখ আছে সেগুলো অনুসরণ করা হচ্ছে। এছাড়া জাতীয় সেবা ৯৯৯ নিয়ে পুলিশের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। এর মাধ্যমে আমরা যাত্রীদের নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করব।
ভুক্তভোগীরা যা বলছেন: মিজান হাবিব নামের এক ভুক্তভোগী জানান, ২৫ জুন মঙ্গলবার সকালে হাতিরঝিল মহানগর প্রজেক্টের তিন নম্বর সড়ক থেকে গাবতলী যাওয়ার জন্য অ্যাপসের মাধ্যমে উবারের একটি গাড়ি কল করি। তখন ভাড়া দেখায় ২৭০ টাকা। কিন্তু গন্তব্য পৌঁছার পর ভাড়া হয়ে যায় ৫০২ টাকা। ২৭০ টাকার ভাড়া কিভাবে ৫০২ টাকা হলো এটা চালকের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সড়কে যানজট ছিল। অথচ ওই দিন ওই সড়কে তেমন যানজট ছিল না। তিনি বলেন, এরকম ঘটনার শিকার প্রায়ই হচ্ছি। কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করেও কোন কাজ হচ্ছে না। আতাউর রহমান নামের আরেক যাত্রী বলেন, আমি উবার-পাঠাওতে নিয়মিত চলাচল করি। কিন্তু সম্প্রতি রাইডারের কাছ থেকে বেশ অপ্রীতিকর ব্যবহার পাচ্ছি। তারা রিকশা চালকের মত আচরণ শুরু করেছে। যানজট থাকলে যেতে চায় না। কল রিসিভ করে গন্তব্য পছন্দ না হলে রাইড বাতিল করে দিচ্ছে। রাতের বেলা অ্যাপসের চালকের চেহারার সঙ্গে বাস্তবের চালকের চেহারার মিল পাওয়া যায় না। আর রহমান নামের এক যাত্রী বলেন, মিরপুর থেকে উত্তরা পর্যন্ত উবার প্রিমিয়ার এ একটি ট্রিপ নেই ২৭৯ টাকায়। কিন্তু উত্তরা যাওয়ার পর ভাড়া দেখায় ৫১৪ টাকা। তিনি বলেন, উবারের ওই চালক সহজ পথে না গিয়ে অনেক স্থান ঘুরিয়ে ৫১৪ টাকা ভাড়া করেছে। চালকের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলে কোন লাভ হয়নি। জাকির আহমেদ নামের এক যাত্রী বলেন, উবার-পাঠাওর বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ করেছি তাদের অফিসে। অফিসে সরাসরি অভিযোগ করার কোন উপায় নাই। তাই তারা কি ব্যবস্থা নেয় তা জানা যায় না। শুনেছি বিদেশি কোম্পানিগুলোর অভিযোগের বিষয়ে বিদেশ থেকে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এক্ষেত্রে ঝামেলাটা বেশি হচ্ছে। সিনথিয়া রউফ নামের নারী যাত্রী বলেন, বারিধারার অফিসে যাওয়ার জন্য আমি প্রতিদিন রাইড সেবা নেই। প্রথম প্রথম কিছু দিন ভাল সেবা পেলেও ইদানিং সেবার মান খুবই খারাপ হয়ে গেছে। চালকরা নানাভাবে হয়রানি করে। বিশেষ করে সড়কে তারা বেপরোয়াভাবে চলাচল করে। কিছু বললে উল্টো ধমক দেয়। সঠিক স্থানে পৌঁছে না দিয়ে মেইন সড়কে নামিয়ে দিচ্ছে।
কারণ এসব প্রতিষ্ঠানে অ্যাপস ছাড়া সরাসরি অভিযোগ দেয়ার সুযোগ নাই। তাদের নাই কোন কাস্টমার সার্ভিস।
২০১৬ সালের ২২শে নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক রাইড শেয়ারিং কোম্পানি উবার বাংলাদেশে ব্যবসা শুরু করে। প্রথম দিকে গ্রাহকের নজরে আসতে বেশ সময় লাগলেও ২০১৭ ও ২০১৮ সাল থেকে রাইড সেবার প্রতি যাত্রীদের আগ্রহ বাড়ে। স্বল্প খরচে, কম সময়ে ব্যস্ততম শহরের এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাওয়ার বাহন হিসাবে ঢাকাবাসী অ্যাপস ভিত্তিক এই সেবাটিকে বেছে নেয়। চাহিদা থাকায় এ ধরনের আরও কিছু প্রতিষ্ঠান কার্যক্রমে আসে। সবাই নিজেদের মতো ব্যবসা শুরু করে। এক্ষেত্রে যাত্রীদের সেবা দিয়ে রাইডারের (চালক) বাড়তি আয়ের একটি ব্যবস্থা হয়।
দুই ও চার চাকার যানবাহন দিয়ে অ্যাপস ভিত্তিক এই সেবাটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠে। তারপর সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তর এ নিয়ে কাজ শুরু করে। ২০১৮ সালের ১৫ই জানুয়ারি সরকার রাইড শেয়ারিং নীতিমালা-২০১৭ প্রণয়ণ করে। এরপর এ ধরনের সেবার সঙ্গে জড়িত ১৬ কোম্পানি বাংলাদেশ রোড অ্যান্ড ট্রান্সপোর্ট অথরিটিতে (বিআরটিএ) আবেদন করে।
বিআরটিএ সূত্র জানিয়েছে তাদের কাছে এখন পর্যন্ত যেসকল রাইড শেয়ারিং কোম্পানির আবেদন আছে তাদের মধ্যে রয়েছে, উবার বাংলাদেশ লিমিটেড, পাঠাও লিমিটেড, সহজ ডট কম, চাল ডাল লিমিটেড, আকাশ টেকনোলজি লিমিটেড, গোল্ডেন রেন লিমিটেড, ও ভাই সলিউশন লিমিটেড, রাইডার রাইড শেয়ারিং এন্টারপ্রাইজ ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড, পিকমি, ইঞ্জিনিয়ার টেকনোলজি লিমিটেড, আকিজ অনলাইন লিমিটেড, হোস্ট ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড, প্রবাহন লিমিটেড, কম্পিউটার নেটওয়ার্ক সিস্টেম, বাড্ডি লিমিটেড ও সেজেস্টা লিমিটেড। বিআরটিএ বলছে আগামি পহেলা জুলাই থেকে যাচাই-বাচাইয়ের মাধ্যমে এসব প্রতিষ্ঠানকে এনলিস্টেড সার্টিফিকেট দেয়া হবে।
এদিকে অ্যাপস ভিত্তিক রাইড শেয়ারিং কোম্পানিগুলো বাজারে আসার পর থেকে ঢাকা শহরে মুড়ি মুড়কির মত বাড়ছে মোটরসাইকেল। বাড়তি আয়ের আশায় অনেকেই দীর্ঘদিন ধরে পড়ে থাকা অনিবন্ধিত মোটরসাইকেল রেজিষ্ট্রেশন করে রাইড শেয়ারিংয়ের জন্য নিবন্ধন করছেন। অনেকেই তাদের পূর্বের পেশা পরিবর্তন করে রাইডার হিসাবে নতুন পেশা শুরু করেছেন। শুধু ঢাকা নয় ঢাকার বাইরে থেকে শুধুমাত্র রাইড শেয়ার করার জন্য অনেকেই ঢাকায় আসছে। বিআরটিএ সূত্র বলছে, ২০১৬ সালে যে বছরে রাইড শেয়ারিং কোম্পানি বাজারে এসেছে ওই বছর ঢাকা শহরে রেজিষ্ট্রেশনের জন্য আবেদন করা হয়েছিল ৫৩ হাজার ৭৩৮ টি মোটরসাইকেল। অথচ ২০১৭ সালে সেটা বেড়ে হয়েছে ৭৫ হাজার ২৫১টি। ২০১৮ সালে সেটা আরও বেড়ে হয়েছে ১ লাখ ৪ হাজার ৬৪টি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রাইড সেবা সাধারণত নিজের অবসর সময়ে হওয়া উচিত। যানজট নিরসন, কম খরচে সেবা ও বাড়তি আয়ই এর মূল উদ্দেশ্য ছিল। কিন্তু এই নীতিতে এখন আর চলছে না। রাইড শেয়ারিং এখন ব্যবসায় পরিণত হয়েছে। মানুষ নতুন নতুন গাড়ি কিনে রাইড শেয়ার করাচ্ছে। এতে করে সেবার মান কমছে। সুবিধার স্থলে অসুবিধাই বেশি হচ্ছে। একটা প্রতিযোগীতা তৈরি হয়েছে। সেবা গ্রহিতা নানা হয়রানির শিকার হচ্ছেন।
রাইড শেয়ারিং কোম্পানির নানা হয়রানি ও যাত্রীর অভিযোগের বিষয়ে বিআরটিএ বলছে, আবেদনকৃত কোম্পানিগুলোকে যাচাই বাচাই করে এবং যারা নিয়মনীতি মেনে চলবে তাদের পহেলা জুলাই থেকে এনলিস্টেট সার্টিফিকেট দেয়া হবে। যাদের সার্টিফিকেট দেয়া হবে তাদের নিয়মিত মনিটরিংয়ের আওতায় নিয়ে আসা হবে। তাদের অ্যাপসের সঙ্গে বিআরটিএর একটা লিংক থাকবে। যাত্রীদের অভিযোগের বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে কিনা বিষয়টি তদারকি করা হবে। এছাড়া পুলিশের জাতীয় সেবা ৯৯৯-এর সঙ্গে অ্যাপসের একটা সম্পর্ক থাকবে। যদি কোন যাত্রী বিশেষ করে নারী যাত্রী যদি কোন হয়রানি বা বিপদের সম্ভাবনা দেখে তবে একটি এসওএস বাটনে টিপ দিলে ওই চালকের যাবতীয় তথ্য চলে যাবে পুলিশের কাছে। পুলিশ দেখতে পারবে ওই চালক ও যাত্রী কোথায় অবস্থান করছে। সে অনুযায়ী তারা ব্যবস্থা নিতে পারবে।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, রাইড শেয়ারিং কোম্পানিগুলো যাত্রীদের সঙ্গে প্রায়ই অশোভন আচরণ করছে যেটা কোন ভাবেই কাম্য নয়। এসব প্রতিষ্ঠানকে মনিটরিংয়ের আওতায় আনতে হবে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) মফিজ উদ্দিন আহম্মেদ মানবজমিনকে বলেন, রাইডশেয়ারিং কোম্পানিগুলো নিয়ন্ত্রণের মধ্যে থাকতে হবে। তা না হলে সেটা বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়াবে। ঢাকায় গণপরিবহন ব্যবস্থা উন্নত না থাকার কারণে পাঠাও-উবারের মত রাইড শেয়ারিং কোম্পানিগুলোর প্রতি ঝুঁকছেন যাত্রীরা। তবে মোটরসাইকেলে করে রাইড শেয়ারিং খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। বিশেষ করে নারীরা যখন চালকের পেছনে উঠেন তখন তারা ঠিকমত ধরে বসতে পারেন না। চালকের সঙ্গে তাদের একটা ব্যবধানও রাখতে হয়। এ কারণে অনেক সময় বিপদের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, কিছু দিন আগে শ্যামলী এলাকায় এক নারী চালকের পেছন থেকে ছিটকে পড়ে মারা গেছেন। এছাড়া প্রায়ই এভাবে আহত হওয়ার ঘটনা ঘটছে। ট্রাফিকের এই কর্মকর্তা বলেন, আমরা ঢাকার গণপরিবহণ ব্যবস্থা উন্নত করার জন্য কাজ করছি। আশা করছি মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, বেশ কিছু চক্রাকার, দ্বিতল বাস চালু হলে মোটরসাইকেলের প্রতি নির্ভরতা কমে যাবে।
বাংলাদেশ রোড অ্যান্ড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) পরিচালক (ইঞ্জিনিয়ার) লোকমান হোসেন মোল্লা রাইডশেয়ারিং কোম্পানি নিয়ে কাজ করেন। তিনি মানবজমিনকে বলেছেন, যখন এ জাতীয় কোম্পানিগুলো এনলিস্টেড হয়ে যাবে তখন তাদের আইনের আওতায় আনা যাবে। তিনি বলেন, সার্টিফিকেট দেয়ার ক্ষেত্রে নীতিমালায় যা যা উল্লেখ আছে সেগুলো অনুসরণ করা হচ্ছে। এছাড়া জাতীয় সেবা ৯৯৯ নিয়ে পুলিশের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। এর মাধ্যমে আমরা যাত্রীদের নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করব।
ভুক্তভোগীরা যা বলছেন: মিজান হাবিব নামের এক ভুক্তভোগী জানান, ২৫ জুন মঙ্গলবার সকালে হাতিরঝিল মহানগর প্রজেক্টের তিন নম্বর সড়ক থেকে গাবতলী যাওয়ার জন্য অ্যাপসের মাধ্যমে উবারের একটি গাড়ি কল করি। তখন ভাড়া দেখায় ২৭০ টাকা। কিন্তু গন্তব্য পৌঁছার পর ভাড়া হয়ে যায় ৫০২ টাকা। ২৭০ টাকার ভাড়া কিভাবে ৫০২ টাকা হলো এটা চালকের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সড়কে যানজট ছিল। অথচ ওই দিন ওই সড়কে তেমন যানজট ছিল না। তিনি বলেন, এরকম ঘটনার শিকার প্রায়ই হচ্ছি। কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করেও কোন কাজ হচ্ছে না। আতাউর রহমান নামের আরেক যাত্রী বলেন, আমি উবার-পাঠাওতে নিয়মিত চলাচল করি। কিন্তু সম্প্রতি রাইডারের কাছ থেকে বেশ অপ্রীতিকর ব্যবহার পাচ্ছি। তারা রিকশা চালকের মত আচরণ শুরু করেছে। যানজট থাকলে যেতে চায় না। কল রিসিভ করে গন্তব্য পছন্দ না হলে রাইড বাতিল করে দিচ্ছে। রাতের বেলা অ্যাপসের চালকের চেহারার সঙ্গে বাস্তবের চালকের চেহারার মিল পাওয়া যায় না। আর রহমান নামের এক যাত্রী বলেন, মিরপুর থেকে উত্তরা পর্যন্ত উবার প্রিমিয়ার এ একটি ট্রিপ নেই ২৭৯ টাকায়। কিন্তু উত্তরা যাওয়ার পর ভাড়া দেখায় ৫১৪ টাকা। তিনি বলেন, উবারের ওই চালক সহজ পথে না গিয়ে অনেক স্থান ঘুরিয়ে ৫১৪ টাকা ভাড়া করেছে। চালকের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলে কোন লাভ হয়নি। জাকির আহমেদ নামের এক যাত্রী বলেন, উবার-পাঠাওর বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ করেছি তাদের অফিসে। অফিসে সরাসরি অভিযোগ করার কোন উপায় নাই। তাই তারা কি ব্যবস্থা নেয় তা জানা যায় না। শুনেছি বিদেশি কোম্পানিগুলোর অভিযোগের বিষয়ে বিদেশ থেকে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এক্ষেত্রে ঝামেলাটা বেশি হচ্ছে। সিনথিয়া রউফ নামের নারী যাত্রী বলেন, বারিধারার অফিসে যাওয়ার জন্য আমি প্রতিদিন রাইড সেবা নেই। প্রথম প্রথম কিছু দিন ভাল সেবা পেলেও ইদানিং সেবার মান খুবই খারাপ হয়ে গেছে। চালকরা নানাভাবে হয়রানি করে। বিশেষ করে সড়কে তারা বেপরোয়াভাবে চলাচল করে। কিছু বললে উল্টো ধমক দেয়। সঠিক স্থানে পৌঁছে না দিয়ে মেইন সড়কে নামিয়ে দিচ্ছে।
No comments