মানবপাচারের ১০৯ গডফাদার নজরদারিতে by শুভ্র দেব
অবৈধভাবে
বিদেশে পাঠানোর সঙ্গে জড়িত শতাধিক গডফাদার সারা দেশে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে।
স্বল্প খরচে ইউরোপের দেশে যাওয়ার লোভ দেখিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা এখন পর্যন্ত মানবপাচারের সঙ্গে জড়িত অন্তত ১০৯
গডফাদারের তালিকা করেছে। তাদের রয়েছে দেশ-বিদেশে আলাদা আলাদা সিন্ডিকেট।
বেশ কিছুদিন আগে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের রাজনৈতিক শাখা থেকে ১০৯ জনের একটি
তালিকা পাঠানো হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের ফিনান্সিয়াল ইনটেলিজেন্স ইউনিটে
(বিএফআইইউ)। এদের ব্যাংক হিসাব পর্যালোচনা করে পাওয়া গেছে অস্বাভাবিক
লেনদেনের তথ্য। একই ব্যক্তির নামে রয়েছে একাধিক ব্যাংক হিসাব। কোনো কোনো
অ্যাকাউন্টে আবার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নাম ব্যবহার করে করা হয়েছে। বাস্তবে
এসব হিসাবে যে লেনদেন হয়েছে সেটা প্রতিষ্ঠানের লেনদেনের সঙ্গে কোনো মিল
পাওয়া যায়নি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এ গডফাদারদের নজরদারিতে রেখেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কম খরচে মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপ যেতে আগ্রহী এমন লোকদের মানব পাচারকারীরা টার্গেট করে। আগ্রহীদের সঙ্গে ৮ থেকে ১০ লাখ টাকা চুক্তি করা হয়। আর মধ্যপ্রাচ্য যেতে আগ্রহীদের কাছে দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা নেয়া হয়। এ প্রক্রিয়ায় বেশিরভাগ সময় সমুদ্র পথ ব্যবহার করা হয়। আগ্রহীদের সুদান, মিশর, আলজেরিয়া, দুবাই, জর্ডান হয়ে লিবিয়ায় নিয়ে রাখা হয়। লিবিয়া থেকে তাদের ভূ-মধ্যসাগর দিয়ে ছোট-বড় নৌকা দিয়ে ইউরোপের দেশ ইতালি, গ্রিস, স্পেন পৌঁছানো হয়। আর যুক্তরাষ্ট্র প্রবেশ করানোর জন্য পেরু, আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল, থেকে গুয়েতেমালা, বেলিজসহ ক্যারিবীয় বিভিন্ন দ্বীপ ব্যবহার করা হয়। ইউরোপীয় ইউনিয়নের পরিসংখ্যান সংস্থা ইউরোস্ট্যাটের হিসাব অনুযায়ী, গত ১০ বছরে এক লাখেরও বেশি বাংলাদেশি অবৈধভাবে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে প্রবেশ করেছেন। এর মধ্যে ২০১৬ সালে ১৭ হাজার ২১৫ জন রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন করেন। তাঁদের মধ্যে ১১ হাজার ৭১৫ জনের আবেদন বাতিল হয়েছে। অভিবাসী কর্মী উন্নয়ন প্রোগ্রাম (ওকাপ) বাংলাদেশ থেকে ইতালির অনিয়মিত অভিবাসন প্রক্রিয়ার ওপর সম্প্রতি এক গবেষণায় উল্লেখ করেছে, বাংলাদেশ থেকে ভূমধ্যসাগর ব্যবহার করে লিবিয়া হয়ে ইতালি যাওয়ার মাত্রা চরম আকার ধারণ করেছে। ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইতালি যাওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ দ্বিতীয় বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর তালিকায় ২০১৭ সালের প্রথম ভাগে অবস্থান করে।
চলতি বছরের এপ্রিল থেকে জুলাই পর্যন্ত ইউরোপের দেশে পাড়ি জমানোর জন্য সে দেশের কোস্টগার্ডের হাতে আটক হয়েছেন অন্তত ২৮০ বাংলাদেশি। তারা এখনও লিবিয়ার কারাগারে বন্দি জীবন কাটাচ্ছেন। লিবিয়ায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের কার্যালয় থেকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বিষয়টি জানানো হয়েছে। এ নিয়ে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কাজ শুরু করেছে। পুলিশের বিশেষ শাখা (এসবি) এসব বন্দীদের নাম ঠিকানা যাচাই-বাছাই করছে।
পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) মানবপাচার চক্রের এক গডফাদারকে আগস্ট মাসে আটক করেছিল। শিক্ষকতার আড়ালে সে গত এক দশক ধরে মানবপাচারের সঙ্গে জড়িত ছিল। তেজগাঁও কলেজের এই শিক্ষকের নাম মো. আছেম। সিআইডি বনানী থানার মানি লন্ডারিং মামলায় ১৪ই আগস্ট তাকে গ্রেপ্তার করেছিল। তিন দিন রিমান্ডে থাকার পর দ্বিতীয় দফায় রিমান্ডের আবেদন করলে আদালত তাকে জামিন দেন। পরে অন্য একটি মামলায় ১৯শে আগস্ট সিআইডি আবারও তাকে কারওয়ান বাজার থেকে গ্রেপ্তার করে। ২০শে আগস্ট তাকে আদালতে হাজির করে রিমান্ড আবেদন করা হয়। কিন্তু আদালত তার রিমান্ড না-মঞ্জুর করে তাকে জামিন দেন। সিআইডি জানিয়েছে, আছেম শিক্ষকতার আড়ালে প্রায় এক দশক ধরে গড়ে তুলেছেন মানব পাচার চক্রের বড় এক সিন্ডিকেট। ২০০৯ সাল থেকে অবৈধভাবে সাগর পথে মানুষকে পাচার করে হাতিয়ে নিয়েছেন অন্তত শতকোটি টাকা। আছেমের বাবা আনোয়ার হোসেন ও তার বড় ভাই মোহাম্মদ খোবায়েদ দীর্ঘদিন ধরে মালয়েশিয়া অবস্থান করছেন। সেই সুবাদেই আছেম তার ছোট ভাই জাবেদকে নিয়ে বিভিন্ন এলাকায় মানবপাচারের একটি সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন। আছেমের সহযোগীরা লোকজন সংগ্রহ করে টেকনাফ থেকে ট্রলারযোগে মিয়ানমার হয়ে থাইল্যান্ডের জঙ্গলে নিয়ে আটকে রাখেন। থাইল্যান্ডের জঙ্গলে নিয়ে যাওয়ার পর তাদের আসল চেহারা ফুটে ওঠে। সেখানে তাদেরকে আটকে রেখে বেধড়ক পেটানো হয়। মৃত্যুর হুমকি দিয়ে দেশের স্বজনদের কাছে মোটা অঙ্কের মুক্তিপণ দাবি করা হয়। মুক্তিপণ দিতে না চাইলে অত্যাচারের মাত্রা আরো বেড়ে যায়। দেখানো হয় নানা রকম ভয়ভীতি। একপর্যায়ে স্বজনরা যখন আছেম ও তার সহযোগীদের কাছে টাকা পাঠায় তখন তাদের মালয়েশিয়া পাঠানো হয়। আর যারা টাকা দিতে ব্যর্থ হয় তাদেরকে থাইল্যান্ডের জঙ্গলে মেরে ফেলা হয়। এমনকি যাদেরকে মালয়েশিয়া পাঠানো হতো তাদের কাছ থেকেও আদায় করা হতো আরও টাকা। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) বিশেষ পুলিশ সুপার মোল্যা নজরুল ইসলাম মানবজমিনকে বলেন, আমরা আছেমকে গ্রেপ্তার করেছিলাম কিন্তু সে আদালত থেকে জামিন নিয়েছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে সারাদেশে মানবপাচারের সংক্রান্ত মামলা হয়েছে ৩৯টি। গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৭৮ জনকে। ফেব্রুয়ারি মাসে মামলা হয়েছে ৪০টি। গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৯০ জনকে। মার্চ মাসে মামলা হয়েছে ৩৫টি। গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৬৫ জনকে। এপ্রিল মাসে মামলা হয়েছে ৪৪টি। গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৭০ জনকে। মে মাসে মামলা হয়েছে ৫৭টি। গ্রেপ্তার করা হয়েছে ১৩৩ জন। জুন মাসে মামলা হয়েছে ৫২টি। গ্রেপ্তার করা হয়েছে ১৩৫ জন ও জুলাই মাসে মামলা হয়েছে ৬০টি। গ্রেপ্তার করা হয়েছে ১১৫ জন।
শুধু দেশেই নয়, মানবপাচারে জড়িত অনেক চক্রের সদস্যরা বিদেশে গ্রেপ্তার হচ্ছেন। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে মালয়েশিয়ার শাহ আলমে মানবপাচার চক্রের সঙ্গে জড়িত ১টি বাংলাদেশি সিন্ডিকেটকে গ্রেপ্তার করেছে সে দেশের ইমিগ্রেশন পুলিশ। মালয়েশিয়ার মেঘা নামক স্থান থেকে আটক ওই ব্যক্তির নাম আব্দুর রউফ (৪৩)। একই সময় ওই এলাকার একটি বাসা থেকে ৫০ জন বাংলাদেশীকে আটক করা হয়। যারা অবৈধভাবে মালয়েশিয়া প্রবেশ করেছিলেন। মালয়েশিয়ার ইমিগ্রেশন পুলিশের সূত্র মতে আব্দুর রউফ দীর্ঘ দিন ধরে বাংলাদেশ থেকে ইন্দোনেশিয়া হয়ে চোরাই পথে মানবপাচার করতেন। এক্ষেত্রে প্রতিজনের কাছ থেকে তিনি ৩-৪ লাখ টাকা নিতেন।
পুলিশ সদর দপ্তরের এ আইজি মো. সোহেল রানা মানবজমিনকে বলেন, মানব পাচারের একটা দৃশ্যমানতা রয়েছে। এ নিয়ে পুলিশের বিশেশায়িত টিম সিআইডি, গোয়েন্দা শাখাসহ আরো কয়েকটা টিম কাজ করছে। মনিটরিংয়ের পাশাপাশি পাচারকারীদের শনাক্ত করে নিয়মিত ও বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। গ্রেপ্তার করে অনেককে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হচ্ছে। তিনি বলেন, পুলিশের অর্গানাইজড ক্রাইম মানবপাচার রোধে সব সময় তৎপর আছে। আমরা দেশের ভেতরে এধরনের অপরাধে কাজ করতে পারি। কিন্তু এধরনের ঘটনায় অনেক সময় আন্তর্জাতিক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতা প্রয়োজন পড়ে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কম খরচে মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপ যেতে আগ্রহী এমন লোকদের মানব পাচারকারীরা টার্গেট করে। আগ্রহীদের সঙ্গে ৮ থেকে ১০ লাখ টাকা চুক্তি করা হয়। আর মধ্যপ্রাচ্য যেতে আগ্রহীদের কাছে দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা নেয়া হয়। এ প্রক্রিয়ায় বেশিরভাগ সময় সমুদ্র পথ ব্যবহার করা হয়। আগ্রহীদের সুদান, মিশর, আলজেরিয়া, দুবাই, জর্ডান হয়ে লিবিয়ায় নিয়ে রাখা হয়। লিবিয়া থেকে তাদের ভূ-মধ্যসাগর দিয়ে ছোট-বড় নৌকা দিয়ে ইউরোপের দেশ ইতালি, গ্রিস, স্পেন পৌঁছানো হয়। আর যুক্তরাষ্ট্র প্রবেশ করানোর জন্য পেরু, আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল, থেকে গুয়েতেমালা, বেলিজসহ ক্যারিবীয় বিভিন্ন দ্বীপ ব্যবহার করা হয়। ইউরোপীয় ইউনিয়নের পরিসংখ্যান সংস্থা ইউরোস্ট্যাটের হিসাব অনুযায়ী, গত ১০ বছরে এক লাখেরও বেশি বাংলাদেশি অবৈধভাবে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে প্রবেশ করেছেন। এর মধ্যে ২০১৬ সালে ১৭ হাজার ২১৫ জন রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন করেন। তাঁদের মধ্যে ১১ হাজার ৭১৫ জনের আবেদন বাতিল হয়েছে। অভিবাসী কর্মী উন্নয়ন প্রোগ্রাম (ওকাপ) বাংলাদেশ থেকে ইতালির অনিয়মিত অভিবাসন প্রক্রিয়ার ওপর সম্প্রতি এক গবেষণায় উল্লেখ করেছে, বাংলাদেশ থেকে ভূমধ্যসাগর ব্যবহার করে লিবিয়া হয়ে ইতালি যাওয়ার মাত্রা চরম আকার ধারণ করেছে। ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইতালি যাওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ দ্বিতীয় বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর তালিকায় ২০১৭ সালের প্রথম ভাগে অবস্থান করে।
চলতি বছরের এপ্রিল থেকে জুলাই পর্যন্ত ইউরোপের দেশে পাড়ি জমানোর জন্য সে দেশের কোস্টগার্ডের হাতে আটক হয়েছেন অন্তত ২৮০ বাংলাদেশি। তারা এখনও লিবিয়ার কারাগারে বন্দি জীবন কাটাচ্ছেন। লিবিয়ায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের কার্যালয় থেকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বিষয়টি জানানো হয়েছে। এ নিয়ে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কাজ শুরু করেছে। পুলিশের বিশেষ শাখা (এসবি) এসব বন্দীদের নাম ঠিকানা যাচাই-বাছাই করছে।
পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) মানবপাচার চক্রের এক গডফাদারকে আগস্ট মাসে আটক করেছিল। শিক্ষকতার আড়ালে সে গত এক দশক ধরে মানবপাচারের সঙ্গে জড়িত ছিল। তেজগাঁও কলেজের এই শিক্ষকের নাম মো. আছেম। সিআইডি বনানী থানার মানি লন্ডারিং মামলায় ১৪ই আগস্ট তাকে গ্রেপ্তার করেছিল। তিন দিন রিমান্ডে থাকার পর দ্বিতীয় দফায় রিমান্ডের আবেদন করলে আদালত তাকে জামিন দেন। পরে অন্য একটি মামলায় ১৯শে আগস্ট সিআইডি আবারও তাকে কারওয়ান বাজার থেকে গ্রেপ্তার করে। ২০শে আগস্ট তাকে আদালতে হাজির করে রিমান্ড আবেদন করা হয়। কিন্তু আদালত তার রিমান্ড না-মঞ্জুর করে তাকে জামিন দেন। সিআইডি জানিয়েছে, আছেম শিক্ষকতার আড়ালে প্রায় এক দশক ধরে গড়ে তুলেছেন মানব পাচার চক্রের বড় এক সিন্ডিকেট। ২০০৯ সাল থেকে অবৈধভাবে সাগর পথে মানুষকে পাচার করে হাতিয়ে নিয়েছেন অন্তত শতকোটি টাকা। আছেমের বাবা আনোয়ার হোসেন ও তার বড় ভাই মোহাম্মদ খোবায়েদ দীর্ঘদিন ধরে মালয়েশিয়া অবস্থান করছেন। সেই সুবাদেই আছেম তার ছোট ভাই জাবেদকে নিয়ে বিভিন্ন এলাকায় মানবপাচারের একটি সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন। আছেমের সহযোগীরা লোকজন সংগ্রহ করে টেকনাফ থেকে ট্রলারযোগে মিয়ানমার হয়ে থাইল্যান্ডের জঙ্গলে নিয়ে আটকে রাখেন। থাইল্যান্ডের জঙ্গলে নিয়ে যাওয়ার পর তাদের আসল চেহারা ফুটে ওঠে। সেখানে তাদেরকে আটকে রেখে বেধড়ক পেটানো হয়। মৃত্যুর হুমকি দিয়ে দেশের স্বজনদের কাছে মোটা অঙ্কের মুক্তিপণ দাবি করা হয়। মুক্তিপণ দিতে না চাইলে অত্যাচারের মাত্রা আরো বেড়ে যায়। দেখানো হয় নানা রকম ভয়ভীতি। একপর্যায়ে স্বজনরা যখন আছেম ও তার সহযোগীদের কাছে টাকা পাঠায় তখন তাদের মালয়েশিয়া পাঠানো হয়। আর যারা টাকা দিতে ব্যর্থ হয় তাদেরকে থাইল্যান্ডের জঙ্গলে মেরে ফেলা হয়। এমনকি যাদেরকে মালয়েশিয়া পাঠানো হতো তাদের কাছ থেকেও আদায় করা হতো আরও টাকা। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) বিশেষ পুলিশ সুপার মোল্যা নজরুল ইসলাম মানবজমিনকে বলেন, আমরা আছেমকে গ্রেপ্তার করেছিলাম কিন্তু সে আদালত থেকে জামিন নিয়েছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে সারাদেশে মানবপাচারের সংক্রান্ত মামলা হয়েছে ৩৯টি। গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৭৮ জনকে। ফেব্রুয়ারি মাসে মামলা হয়েছে ৪০টি। গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৯০ জনকে। মার্চ মাসে মামলা হয়েছে ৩৫টি। গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৬৫ জনকে। এপ্রিল মাসে মামলা হয়েছে ৪৪টি। গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৭০ জনকে। মে মাসে মামলা হয়েছে ৫৭টি। গ্রেপ্তার করা হয়েছে ১৩৩ জন। জুন মাসে মামলা হয়েছে ৫২টি। গ্রেপ্তার করা হয়েছে ১৩৫ জন ও জুলাই মাসে মামলা হয়েছে ৬০টি। গ্রেপ্তার করা হয়েছে ১১৫ জন।
শুধু দেশেই নয়, মানবপাচারে জড়িত অনেক চক্রের সদস্যরা বিদেশে গ্রেপ্তার হচ্ছেন। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে মালয়েশিয়ার শাহ আলমে মানবপাচার চক্রের সঙ্গে জড়িত ১টি বাংলাদেশি সিন্ডিকেটকে গ্রেপ্তার করেছে সে দেশের ইমিগ্রেশন পুলিশ। মালয়েশিয়ার মেঘা নামক স্থান থেকে আটক ওই ব্যক্তির নাম আব্দুর রউফ (৪৩)। একই সময় ওই এলাকার একটি বাসা থেকে ৫০ জন বাংলাদেশীকে আটক করা হয়। যারা অবৈধভাবে মালয়েশিয়া প্রবেশ করেছিলেন। মালয়েশিয়ার ইমিগ্রেশন পুলিশের সূত্র মতে আব্দুর রউফ দীর্ঘ দিন ধরে বাংলাদেশ থেকে ইন্দোনেশিয়া হয়ে চোরাই পথে মানবপাচার করতেন। এক্ষেত্রে প্রতিজনের কাছ থেকে তিনি ৩-৪ লাখ টাকা নিতেন।
পুলিশ সদর দপ্তরের এ আইজি মো. সোহেল রানা মানবজমিনকে বলেন, মানব পাচারের একটা দৃশ্যমানতা রয়েছে। এ নিয়ে পুলিশের বিশেশায়িত টিম সিআইডি, গোয়েন্দা শাখাসহ আরো কয়েকটা টিম কাজ করছে। মনিটরিংয়ের পাশাপাশি পাচারকারীদের শনাক্ত করে নিয়মিত ও বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। গ্রেপ্তার করে অনেককে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হচ্ছে। তিনি বলেন, পুলিশের অর্গানাইজড ক্রাইম মানবপাচার রোধে সব সময় তৎপর আছে। আমরা দেশের ভেতরে এধরনের অপরাধে কাজ করতে পারি। কিন্তু এধরনের ঘটনায় অনেক সময় আন্তর্জাতিক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতা প্রয়োজন পড়ে।
No comments